আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক বেশি ভালো আছেন। বন্ধুরা, আজকে আমি আলোচনা করব আমেরিকা সম্পর্কে। কিভাবে আমেরিকা বিশ্বের সবচাইতে শক্তিধর রাষ্ট্রের পরিণত হল এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে এই টিউনে।
বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকা। যেখানে আমেরিকার কথা মত চলে পুরো বিশ্বের রাজনীতির এবং অর্থনীতি। আমেরিকার চাইলে যেকোন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়। কোন দেশ ভয় আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলতে চায় না। কিন্তু এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হয়েছে এবং পূর্বে আমেরিকায় কি রকম ছিল সেটি আমাদের হয়তোবা এখনো অজানা।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মতো আমেরিকা ও একটি দেশ। যেখানে আমেরিকার চাইতে অন্যান্য দেশগুলো আয়তনে অনেক বড় হতে পারে। কিন্তু শক্তির দিক থেকে বলতে গেলে বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকাকে বিবেচনা করা হয়। যেখানে, অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তির দিক বিবেচনা করলে সবার আগে চলে আসে আমেরিকার নাম। এবার তবে চলুন জেনে নেয়া যাক আমেরিকা গঠনের ইতিহাস সম্পর্কে।
আমেরিকা কিভাবে পরাশক্তি হয়ে উঠল, তা জানতে হলে ফিরে দেখতে হবে আমেরিকা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। ১৭৭৬ সালে আমেরিকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ইচ্ছা আমেরিকার ছিল না। উত্তর আমেরিকার বাইরে সাম্রাজ্য বিস্তার করার ব্যাপারেও তারা সন্দিহান ছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল যুক্তরাষ্ট্র যদি উত্তর আমেরিকার বাইরেও রাজ্য বিস্তার করে, তাহলে তথাকথিত নিচুজাতের লোকজন আমেরিকায় ঢুকে পড়বে। কিন্তু তাদের এই মনোভাব বেশিদিন স্থায়ী ছিল না।
পরবর্তীতে আমেরিকা পুরো বিশ্বে সাম্রাজ্য বিস্তার এবং একক আধিপত্য লাভের জন্য কাজ করতে থাকে। তাদের মনোভাব পরিবর্তন হবার পর থেকে যেটির প্রভাব আমরা লক্ষ্য করছি। বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং কোন দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক করে চলতে হয়। আর সবকিছুরই হয়েছে আমেরিকার অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য শক্তিতে এগিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু কিভাবে আমেরিকা তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করল?
আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে ১৮ শতকের শেষদিকে। ১৮৯৮ সালে আমেরিকা কিউবা এর দখল নিয়ে স্পেনের সাথে যুদ্ধ শুরু করে। বহির্বিশ্বে আমেরিকার প্রভাব বিস্তার করতে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উয়িলিয়াম ম্যাককিনলি স্পেনের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। এই যুদ্ধে আমেরিকা কিউবা, গুয়াম, পুয়ের্তো রিকো ও ফিলিপাইন স্পেনের কাছ থেকে দখল করে নেয়। পরবর্তী দুই বছরে আমেরিকা হাওয়াই, ওয়েক, আমেরিকান সামোয়া দ্বীপ দখল করে।
এর পরবর্তী বছরগুলোতে আমেরিকা পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ডমিনিকান রিপাবলিক দখল করে। এই অল্প সময়ে এতগুলো দূরবর্তী ভূখণ্ডের দখল আমেরিকাকে পৃথিবীর মানচিত্রে এক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। আমেরিকার সামরিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষায় বহির্বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে নিকারাগুয়া, পানামা, চিলি তে আমেরিকা এক ধরনের পুতুল সরকার ক্ষমতায় বসায়। বহির্বিশ্বে আমেরিকার জোরালো প্রভাব লক্ষ্য করা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। যদিও আমেরিকার শক্তিমত্তার প্রভাব বিশ্ব দেখতে পায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।
যখন আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে নিউক্লিয়ার বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু তবুও আমেরিকার অংশগ্রহণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। প্যারিস শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও আমেরিকার প্রধান ভূমিকা ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ইউরোপ যখন হিটলারের আগ্রাসন দেখছিল, আমেরিকা তখনও পর্যন্ত এসময় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ফলে আমেরিকা ও শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আমেরিকার দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরই বিশ্ব প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা দেখতে পায়। যেখানে আমেরিকা ই প্রথম দেশ, যারা প্রথমবারের মতো কোন স্থানে পারমাণবিক হামলা চালায়।
জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করলে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ আমেরিকার জন্য এক ধরনের আশীর্বাদ হয়ে আসে। এ বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী আমেরিকার অবস্থান চিরদিনের মত বদলে দেয়। ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের হিরোশিমা তে প্রথম পারমাণবিক বোমা ফেলে। যে বোমাটি কে যুক্তরাষ্ট্র নাম দিয়েছিল "লিটল বয়" নামে।
এর ঠিক তিন দিন পর আবার জাপানের নাগাসাকি শহরে আরো একটি পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় বিশ্ব দেখতে পারে পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা। তখনকার সময়ে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে আমেরিকা একচ্ছত্র মালিকানাধীন ছিল। যা পরবর্তীতে অন্যান্য দেশগুলোকে অনেক চাপের মধ্যে রাখে। তবে বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশের পারমাণবিক বোমার মজুত রয়েছে।
বর্তমানে অনেক দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শুধুমাত্র আমেরিকা ছিল একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। যে কারণে সে সময় পারমাণবিক হামলার পর তাদের শক্তি মাত্রা বিশ্ব জানতে পারে এবং তখন থেকেই তাদেরকে অন্যান্য দেশ ভয় করতে শুরু করে। আর যেটির প্রভাব এখন পর্যন্ত ও রয়েছে। যদিও বর্তমান সময়ে আমেরিকা সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু তবুও বিশ্বব্যাপী তাদের আধিপত্যের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে।
এ যুদ্ধের পরে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো পরাশক্তিগুলো অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। কারণ একে একে তাদের উপনিবেশগুলো স্বাধীন হয়ে যেতে থাকে। এর ফলে তারা তাদের ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিলো এবং যার কারণে শক্তিতে দুর্বল হচ্ছিল।
তৎকালীন সময়ে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে আমেরিকা এতটা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল যে, সংঘাত এড়াতে শান্তি চুক্তির শর্ত আমেরিকা একাই নির্ধারণ করে। তারা এ সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে। আর এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিতা। জাতিসংঘ সনদে তারা এমন কাঠামো তৈরি করে, যাতে নাৎসি বা জাপানের মতো আগ্রাসী যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয় এবং এমন একটি ফোরাম গঠন করা হয়, যেখানে দেশগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে।
১৯৪৪ সালে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রিটন উডস নামক অবকাশ যাপন কেন্দ্রে ৪৪ টি দেশের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এমন একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা; যা পরবর্তী বিশ্ব মন্দা ও যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে পারে। দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যা "ব্রিটন উডস" চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি বিশ্ব অর্থনীতির মেরুদণ্ড পরিণত হয়। ব্রিটন উডস চুক্তির ফসল হিসেবে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রতিষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশ্বব্যাপী আমেরিকার প্রভাব বলয়ের তৈরিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ব্রিটন উডস চুক্তির মাধ্যমেই স্বর্ণকে পাশ কাটিয়ে মার্কিন ডলার কে রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তৎকালীন বিশ্বের আরেক পরাশক্তি ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী সময়ে পূর্ব ইউরোপে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। সমাজতন্ত্রের বিস্তার ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন ঠেকাতে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো ন্যাটো গঠন করে। এর ফলে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয় এবং বিশ্বের ওপর একচ্ছত্র পরাশক্তি হিসেবে আমেরিকার অবস্থান সুদৃঢ় হয়। বর্তমানেও আমেরিকা বিশ্বের একচ্ছত্র মালিকানার অধিকারী। তবে বর্তমানে চীন ও রাশিয়ার মতো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র মালিকানার জন্য বাঁধা। বর্তমান বিশ্বের সামরিক শক্তির দিক থেকে বিবেচনা করলে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক শক্তির দিক থেকে প্রথমদিকে ধরা হয়। বিশ্বের সবচাইতে সামরিক বাজেট থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক খাতে।
কিন্তু বর্তমানের সামরিক বাজেট এর দিক থেকে চীন বিশ্বের প্রথম অবস্থানে রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে অত্যাধুনিক সব যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং অন্যান্য সামরিক অস্ত্র সমূহ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে সবথেকে বড় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। যাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা নিজ দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাদের গোয়েন্দা সংস্থা একটি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে পাল্টে দিতে পারে।
আধুনিক সাজে সজ্জিত এই সামরিক বাহিনীর কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে বর্তমানে রাজত্ব করে যাচ্ছে। আর এ কারণেই বিশ্বের সবথেকে শক্তিধর এই দেশকে সবাই ভয় করে চলে। এছাড়া অর্থনৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে ও সবার উপরে অবস্থান করে। যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই যে কোন দেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে এবং এ কারণে সে দেশের অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়তে পারে। আর এভাবে করেই যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বের সবথেকে বড় পরাশক্তি দেশ।
বন্ধুরা এই ছিল আজকের টিউন। যদি টিউনটির মাঝে কোন তথ্য-উপাত্তে ভুল হয়ে থাকে, তবে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি সবসময় চেষ্টা করি, আপনাদের জন্য সঠিক এবং নির্ভুল তথ্যগুলোকে উপস্থাপন করার জন্য। টিউনটি আপনার কাছে ভাল লেগে থাকলে, তবে আপনার বন্ধুর কাছেও শেয়ার করতে পারেন। পরবর্তী টিউন এর জন্য অপেক্ষা করুন। এছাড়া আপনার যদি টিউন সম্পর্কিত কোনো মতামত থাকে অথবা আপনার কোন অভিজ্ঞতার কথা আমাকে জানাতে নিচে টিউমেন্ট করতে পারেন।
এছাড়া পরবর্তী টিউন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আপনি আমার পূর্ববর্তী টিউনগুলো ও আমার প্রোফাইলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন। আশা করছি সেইসব টিউনগুলোও আপনার কাছে ভালো লাগবে। আমার পূর্বের টিউন গুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)