বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছেন। নিয়মিত টিউন নিয়ে আসার ধারাবাহিকতায় আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি নতুন একটি টিউন।
সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি কমার্শিয়াল এবং নন-কমার্শিয়াল এরোপ্লেন আকাশে ওড়ে এবং আকাশে ওড়ার পর এরা কোথাও-না-কোথাও অবতরণ ও করে যায়। এরোপ্লেন উঠানামার এই ডেটার দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে, এরোপ্লেন ই হলো সবথেকে নিরাপদ যাতায়াত সিস্টেম। কারণ আকাশ পথে যাতায়াত করার ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার অনেক কম। খুব কমই মানুষ আছে, যাদের এরো প্লেন পছন্দ নয়। আকাশের উপর থেকে নিচের পৃথিবীটাকে দেখার মজাই অন্যরকম হয়।
আমাদের মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বারবার উঠে আসে। সেটা হলো, আমরা এরোপ্লেন কে ব্যবহার করে স্পেস এর মধ্যে কেন যেতে পারি না? আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আজকে এই টিউনটে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি যে, এরোপ্লেন এর সাহায্যে কেন আমরা মহাকাশে যেতে পারি না। তবে আপনাদের এটাও জেনে রাখা উচিত যে, এরো প্লেন এর সাহায্যে মহাকাশে যাওয়ার মত মানুষও আমাদের পৃথিবীতে আছে। এই কথাটি শুনে অবাস্তব মনে হলেও এটি আপনি এই টিউনের কোন একটি পর্যায়ে জানতে পারবেন। আর সেই ঘটনাটি কে জানার জন্য টিউনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্যই দেখবেন।
এয়ারক্রাফট এর ব্যাপারে আমরা যদি আলোচনা করি, তাহলে পৃথিবীতে অনেক ধরনের এয়ারক্রাফট আছে। এদের মধ্যে যেমনঃ ট্রান্সপোর্ট এন্ড ইউটিলিটি এয়ারক্রাফট, ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার, কোয়াডকপ্টার এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন রকমের ড্রোন ও এয়ারক্রাফট এর মধ্যেই পড়ে। তবে এটা জানার আগে মহাকাশে এরো প্লেন কেন যেতে পারে না, তার আগে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার এরোপ্লেন কিভাবে আকাশে উড়ে। এরো প্লেন কিভাবে আকাশে কিভাবে উড়ে, এটি এই টিউনে বিস্তারিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবুও আমি আপনাদেরকে এ বিষয়ে কিছুটা ধরনের চেষ্টা করছি।
এরোপ্লেন এর সাহায্যে আকাশে উঠতে গেলে প্রধানত দুটো জিনিসের দরকার পড়ে। প্রথমত এরো প্লেনের লম্বা-চওড়া ডানাগুলো; যেটা প্লেনকে উপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে এবং দ্বিতীয়তঃ এর ভারী এবং বড় ইঞ্জিনগুলো, যেটা এরোপ্লেন কে শক্তি প্রদান করে; অর্থাৎ যে ইঞ্জিনগুলো এরোপ্লেন থেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই ইঞ্জিনগুলো এরো প্লেনটিকে সামনের দিকে ধাক্কা দেয়, যাতে করে প্লেনটি সামনের দিকে চলে। আর এই দুইটি বিষয়ে একটি প্লেন কে আকাশে উড়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এবং এর জন্যই বিমান সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
অতএব এসব বিষয় থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, আমাদের বায়ুমণ্ডলের দুটো জিনিসের দরকার পড়ে একটা এরোপ্লেন কে আকাশে উড়ার জন্য। এছাড়া প্লেনটির আকাশে উঠতে গেলে দরকার পড়ে ডানার, যেটি প্লেনটিকে আকাশে ভাসিয়ে রাখে। আর দ্বিতীয়তঃ অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে, যেটা এরো প্লেনের ইঞ্জিনের জ্বালানিকে জ্বালিয়ে এরোপ্লেন কে শক্তি প্রদান করতে সমর্থ করে। প্লেন চালানোর জন্য এই দুটো জিনিসই আমাদের বায়ুমণ্ডলের অ্যাটমোস্ফিয়ার এর মধ্যে উপস্থিত।
প্রত্যেকটি প্লেন কত উচ্চতায় উঠতে পারবে এটি আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। অর্থাৎ সেই প্লেনটি কত উঁচুতে উঠতে পারবে, সেটা আগে থেকে নির্ধারিত থাকে। অধিকাংশ প্যাসেঞ্জার প্লেনগুলো ৪৫ হাজার ফিট, অর্থাৎ প্রায় ১৩ কিলোমিটার উপরে পর্যন্ত উঠতে পারে। কিন্তু কিছু কর্পোরেট জেড আছে, যেসব প্লেন গুলো ৫১ হাজার ফিট পর্যন্ত উপরে উঠতে পারে। তবে আমাদের মনে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, আমরা কি এর থেকে উপরে নিয়ে যেতে পারি না?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের প্রথমে আমাদের প্রথমে বায়ুমন্ডলকে জানতে হবে। পৃথিবী পৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুমণ্ডল অনেক ঘন হয়। কিন্তু যখনই আমরা পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠতে শুরু করব, তখনই আমাদের বায়ুমণ্ডল পাতলা হতে শুরু করবে। আর এর কারণটা সবাই হয়তোবা জানে, পৃথিবীপৃষ্ঠের কাছাকাছি অভিকর্ষজ বল অনেক বেশি হয় এবং যেভাবে আমরা উপরের দিকে উঠতে শুরু করব অভিকর্ষজ বল ধীরে ধীরে ততই কমতে শুরু করবে। আর এই কারনেই বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে পাতলা হতে শুরু করবে।
যেহেতু অভিকর্ষ বলের প্রভাবে বায়ুমণ্ডল বাতাসের স্তর গুলো নিচের দিকে রয়েছে, এ জন্য উপরের দিকে উঠতে থাকলে পাতলা অ্যাটমোস্ফিয়ার, অর্থাৎ, বায়ুর ঘনত্ব অনেক কম হবে। যদি সেখানে বায়ুর ঘনত্ব কমে যায় তবে সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা ও কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক। উপরের দিকে যতই ওঠা যাবে, সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কম থাকবে। যেহেতু বেশি উচ্চতায় বাতাসের ঘনত্ব কম হবে, সেইজন্য এরো প্লেনে বাতাসের চাপ অনেক কম থাকবে। সুতরাং, এরো প্লেনটিকে উপরের দিকে নিয়ে যাওয়া বেশি কঠিন হয়ে পড়বে, বা বলতে গেলে একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আর এখানে যেহেতু অক্সিজেনের পরিমাণ ও অনেক কম থাকবে, সেই কারণে ইঞ্জিনের ভেতরের জ্বালানিকে জ্বালানো ও অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। কেননা ইঞ্জিন এর ভেতরের জ্বালানিকে পুড়ানোর জন্য দরকার অক্সিজেন। অতএব ইঞ্জিনের ক্ষমতাও কমে যাবে এবং এই কারণের হাওয়ার মধ্যে ঠিক থাকতে পারবে না। কেননা যেখানে বাতাসের ঘনত্ব অনেক কম এবং নেই বললেই চলে সেখানে প্লেনের পাখার কোনো কাজ থাকবে না। ফলে প্লেনটি আবার নিচের দিকেই চলে আসবে।
Karman Line; এটা এমন একটা অদৃশ্য বাউন্ডারি যেটা আমাদের পৃথিবীর অ্যাটমোস্ফিয়ার এবং স্পেস কে আলাদা করে। অনুমান করা হয় পৃথিবী থেকে ১০০ কিলোমিটার উপরে কাল্পনিক লাইনটা আছে, আর এই বাউন্ডারির ওপরে, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে ১০০ কিলোমিটার উপরে যাওয়ার পর আমরা স্পেস মধ্যে প্রবেশ করি। এই কাল্পনিক বাউন্ডারি শেষ করার পর এখান থেকে থার্মোস্ফিয়ার এর শুরু হয়। অর্থাৎ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৮৪ ফিট উপরে। একটা কমার্শিয়াল এরোপ্লেন এর কাছাকাছিও যেতে পারে না।
কিন্তু কিছু স্পেশাল টাইপের প্লেন আছে, যেগুলো এই সীমানার উপরেও গিয়েছে। ১৯৭৭ সালের ৩১ শে আগস্ট একজন সোভিয়েত পাইলট Aleksandr Fedotov রাশিয়ার মিগ 25 এরোপ্লেন কে একটি ঐতিহাসিক উচ্চতা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। এনি এই সমুদ্রতল থেকে ৩৭ হাজার ৬৫০ মিটার উচ্চতায় অর্থাৎ, প্রায় ৩৭ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত উড়িয়েছিলেন। যেটা পৃথিবীতে কোন টেক অফ করা কোন প্লেনের সবথেকে বেশি উচ্চতা।
কিন্তু উচ্চতা ও Karman Line এর কেবল মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। এই উচ্চতায় উড়ার জন্য পাইলটদের একটা স্পেশাল টাইপের স্যুট পড়তে হয়; যাকে জি-স্যুট বলা হয়। আর এই জি-স্যুট এর মধ্যে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো থাকে। যেহেতু বায়ুমণ্ডলের এত উচ্চতায় অক্সিজেন স্বল্পতায় রয়েছে সেজন্য এখান থেকে অক্সিজেন বহন করা লাগবে সেই উচ্চতায় যাওয়ার জন্য।
১৯৬৩ একজন আমেরিকান পাইলট Joseph Albert Walker; যিনি তিনটি ফ্লাইট করেছিলেন। যার মধ্যে দু'বার X-15 Flight 90 এবং X-15 Flight 91, এদের সাহায্যে তিনি Karman Line কেও পার করে দিয়েছিলেন। ফ্লাইট টি যখন ১৯৬৩ সালে করা হয়েছিল, ওই সময় তিনি ১০৬ কিলোমিটার উচ্চতায় ওই ফ্লাইট টাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর তারপর X-15 Flight 91, যেটাকে ২২ শে আগস্ট ১৯৬৩ সালে করা হয়েছিল। এই সময় তিনি ১০৮ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে সমর্থ হয়েছিলেন।
X-15 একটা এক্সপেরিমেন্টাল প্লেন ছিল; যাকে নাসা এবং ইউএসএ এয়ার ফোর্স যৌথভাবে পরিচালনা করেছিল। X-15 একটা স্পেশাল টাইপের ডিজাইন করা প্লেন ছিল। এটা কোনো রানওয়ে থেকে টেক-অফ করতে পারত না। আকাশে ওড়ার জন্য একে অন্য প্লেন দিয়ে মাঝ আকাশের নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। X-15 এর মধ্যে ফাইটার জেটের ইঞ্জিন না লাগিয়ে এর মধ্যে রকেট ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল।
সুতরাং, আপনি বুঝতে পারছেন যে কোন সাধারণ প্লেন এত উচ্চতা পর্যন্ত বুঝতে সমর্থ নয়। কারণ একটা প্লেনকে এতটা উচ্চতায় উঠতে গেলে সম্পুর্ন ভাবে অ্যাটমোস্ফিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়। কেননা এরোপ্লেন চালানোর জন্য দরকার বাতাসের এবং এই বাতাস অ্যাটমোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যেই রয়েছে। আর এজন্য প্লেন অ্যাটমোস্ফিয়ার এর উপরে উঠতে পারে না।
কিন্তু তাহলে রকেট কিভাবে বিনা অ্যাটমোস্ফিয়ার, অর্থাৎ বিনা অক্সিজেন স্তরের সাহায্য নিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অতিক্রম করে? যেখানে অ্যাটমোস্ফিয়ার এর পরের তরে কোন অক্সিজেন থাকে না। রকেট এজন্যই মহাকাশের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে, কারণ রকেট ইঞ্জিনে জ্বালানিকে জ্বালানোর জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় সেটাও সেখানে স্টোর করা থাকে। অতএব, রকেট জ্বালানিকে পোড়ানোর জন্য করার জন্য অ্যাটমোস্ফিয়ার এর অক্সিজেনের কোন প্রয়োজন হয়না। এজন্য এরা কোন অসুবিধা ছাড়া বিনা অ্যাটমোস্ফিয়ারে ও ট্রাভেল করতে সমর্থ হয়।
রকেটের জ্বালানি সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন বহন করার ক্ষেত্রে এর ওজন ও অনেক অনেক বেশি হয়। আর এজন্যই অ্যাটমোস্ফিয়ার এর বাইরে গিয়েও রকেট জ্বালানি পোড়াতে পারে। তবে এরোপ্লেনের ক্ষেত্রে এই সুবিধাটি না থাকায় এরোপ্লেন এই সীমানার ওপরে উড়তে পারেনা। কেননা এরোপ্লেন চলার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাতাসের প্রয়োজন পড়বে। আর বায়ুমণ্ডলের জন্যই প্লেন আকাশে ভেসে থাকে ডানার সাহায্যে।
এরোপ্লেন কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য দরকার বাতাসের। যেখানে এরোপ্লেন এর কম্প্রেসার সামনের বাতাসকে প্রচন্ড জোরে পেছনে ফেলে দেয় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর সেই স্তরের যদি বাতাস না থাকে তবে সেখানে প্লেন উঠতে পারবে না। যদি কোন প্লেন কে বাতাসের স্তর ভেদ করে যেতে হয় তবে সেটি তে রকেট এর ইঞ্জিন লাগাতে হবে এবং সঙ্গে করে অক্সিজেন নিয়ে যেতে হবে। আর তাহলেই কোন একটি এরোপ্লেন মহাকাশে যেতে পারবে।
তবে তখন এটিকে আর এরোপ্লেন বলা যায়না। কেননা এরোপ্লেন যারা শুধুমাত্র বায়ুমণ্ডলের স্তরে থাকা আকাশযানকে বুঝায়। যদি বায়ুমণ্ডলের স্তর অতিক্রম করে কোন প্লেন যায় তবে সেটি হবে একটি রকেট। আর বায়ুমণ্ডলের স্তর ভেদ করে যাবার জন্য সেই এরোপ্লেন টিতে রকেটের ইঞ্জিন লাগাতে হবে। তাহলেই সেটি দিয়ে ভ্রমণ করা যাবে মহাকাশ পর্যন্ত।
এবার আমরা তবে বুঝতে পারলাম যে কেন একটি এরোপ্লেন মহাকাশে যেতে পারে না। যেখানে কোন একটি এরোপ্লেন কে মহাকাশের সীমানায় যাবার জন্য এসব ডানা এবং পাখাযুক্ত প্লেন হলে চলবে না। আমরা যেসব এরোপ্লেন এ করে যাতায়াত করি সেগুলো বাতাসের ওপর ভর করে চলে। মহাকাশে যেহেতু এই অক্সিজেন এবং বাতাস নেই এজন্য সেখানে প্লেন উড়ানো সম্ভব নয়। আর এ কারণেই সেখানে এরোপ্লেন চালানো সম্ভব নয়।
আশা করছি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝে থাকেন তবে আপনার বন্ধুদেরকে জানানোর জন্য শেয়ার করতে পারেন। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)