বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমরা প্রায়ই দেখি দেশে ঘূর্ণিঝড় হতে। যেসব ঘূর্ণিঝড় এর বেশিরভাগ গুলোর উৎপত্তিস্থল থাকে সমুদ্র। কিন্তু আমাদের হয়তোবা অনেকেরই অজানা কেন হয় এই ঘূর্ণিঝড় এবং এই ঘূর্ণিঝড় গুলোকে কোনটিকে কি নামে ডাকা হয়।
বন্ধুরা, আজকের এই টিউনটির মাধ্যমে আপনি ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। জানতে পারবেন, কত গতি সম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় কে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং সুপার সাইক্লোন বলে। প্রত্যেকটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ আলাদা আলাদা নামকরণ কারা করে এবং এটি কিভাবে নির্ধারিত হয় সেসব বিষয় সম্পর্কে আপনি এই টিউনে জানতে পাবেন। এজন্য অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণ টিউনটি মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে।
প্রকৃতির এক বিশাল ধ্বংসাত্মক ভৌগোলিক প্রক্রিয়া ঘূর্ণিঝড়। যে ঝড়ে বাতাস, বৃষ্টি ও বজ্র প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে চলে, তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৮০ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। যেখানে এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। এই টিউনে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনা গুলো করা হবে।
ঘূর্ণিঝড় সাধারণত বিষুবরেখার আশেপাশে বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রে উৎপন্ন হয়। সমুদ্রের যেসব অঞ্চলে প্রায় দেড়শ ফুটের বেশি গভীর পর্যন্ত তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে, সেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। গ্রীষ্মকালে কোন এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা বেশি হবার ফলে সেই এলাকার বাতাস গরম হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। তখন সেখানে বা সেই এলাকার বায়ুচাপ ব্যাপক হারে কমে যায়, একে নিম্নচাপ বলে। আর তখন উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে দ্রুত বেগে বাতাস নিম্নচাপ অঞ্চলের মধ্যে চলে আসতে থাকে।
এই বায়ুপ্রবাহ থেকেই ভয়ঙ্কর কালো মেঘের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে মেরু অঞ্চলের বাতাস সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে এবং উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে বেঁকে যায়, সে কারণেই দক্ষিণ গোলার্ধের ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাটার দিকে এবং উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে। প্রতিবছর যতগুলো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তার খুব কম সংখ্যকই উপকূলে আঘাত হানে। অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড় ই সমুদ্রে উৎপন্ন হয়ে, সমুদ্রেই শেষ হয়ে যায়। সমুদ্রের ভেতরে যত ঘূর্ণিঝড় উৎপন্ন হতে দেখা যায় সেগুলোর মাত্র কিছু ঘূর্ণিঝড় উপকূলে কিংবা কোন দেশে আঘাত হানে।
কোন ঝড়ো বাতাস ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার এর কম বেগে ধাবিত হলে, তাকে সাধারন মৌসুমী ঝড় হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। যে সমস্ত ঝড় ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ অর্জন করে, সেগুলো মূলত ঘূর্ণিঝড়। এছাড়া ঘূর্ণি ঝড়ের গতিবেগ যদি ৮৮ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে, তাহলে তাকে বলে তীব্র ঘূর্ণিঝড়। ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার গতিবেগে চলার ঝড়কে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং ২২০ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি গতিতে প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড় কে বলা হয় সুপার সাইক্লোন। যেমনভাবে কয়েকদিন আগে আমরা ভারতে আঘাত হানা সুপার সাইক্লোন দেখতে পেলাম।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রকে Eyes of the cyclone বা ঘূর্ণিঝড়ের চোখ বলে। ঘূর্ণিঝড়ের এই কেন্দ্র থাকে অনেক বেশি শক্তিশালী। আর ঘূর্ণিঝড়ের এই কেন্দ্র ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে; এবং ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস বা চারদিকে পরিধি ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার পর সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো জলোচ্ছ্বাস। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাসের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের জল ২০ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে যেতে পারে, যার ফলে সমুদ্র তীরবর্তী ১০০ কিলোমিটার এলাকা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৯০% মারা যায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে।
ঘূর্ণিঝড় কোন এলাকার মানুষের জন্য বা উপকূলীয় অঞ্চলের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হলেও এটি পৃথিবীর আবহাওয়ার অত্যন্ত জরুরি একটি প্রক্রিয়া। যেখানে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে আমাদের পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে।
পৃথিবীর অধিক ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা গুলোকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। অঞ্চলভেদে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোকে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয়। যেমনঃ ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কে বলা হয় "সাইক্লোন", এভাবে করে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর এবং উত্তর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় কে বলা হয় "হারিকেন"; এবং উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে উৎপত্তি হওয়া ঘূর্ণিঝড় কে "টাইফুন" বলা হয়। তবে এসব নয় ছাড়াও আরো নামের ঘূর্ণিঝড় কে অন্য নাম দেওয়া হয়।
যদি কোন সমুদ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার অতিক্রম করে থাকে, তবে এক্ষেত্রে সেটিকে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এটির একটি নাম দেওয়া হয়। কোন একটি সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটিগুলো সেটির নাম দেয়। এজন্য আগে থেকেই কিছু নাম ঠিক করে দেওয়া থাকে। এছাড়া কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে কয়েকটি দেশ থেকে সেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ এর জন্য নাম পাঠানো হয়। সেসব নামগুলো এর মধ্যে যে নামটি বেশি মানানসই সেটি নির্বাচন করে আবহাওয়া সংস্থা।
যেমন কয়েকবছর আগে বাংলাদেশের একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম বাংলাদেশ থেকে নির্ধারণ করা হয়েছিল। যে ঘূর্ণিঝড় টির নাম ছিল "ফনী"। সমুদ্রে কোন একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে সেটির নাম দেবার জন্য কয়েকটি দেশ থেকে আবেদন পড়ে যায়। সেসব নামগুলো এর মধ্যে যেটি এর জন্য উপযুক্ত মনে হয় সেই নামটি নির্বাচন করা হয় ঘূর্ণিঝড়টির জন্য। এক্ষেত্রে সেসময় "ফনী" ঘূর্ণিঝড় টি সাপের ফেনার মতো আচরণ করায় এটিকে "ফনী" নাম দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়।
তবে কিছু নিয়ম নীতি অনুসরণ করে কোন একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম বাছাই করা হয়। বঙ্গোপসাগরে এবং আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় গুলোর নাম, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, ওমান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এই আটটি দেশ করে থাকে। সাগরে কোন একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে, সেই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ দেওয়া নিয়ে সবার কাছে WMO বা World Meteorological Organisation, প্রত্যেকটি দেশ একটি করে নাম চেয়ে পাঠায়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার কর্মকর্তারা এসব নাম থেকে কোন একটি নাম কি পছন্দ করে সেই ঝড়ের নাম দিয়ে দেয়। যেখানে নাম নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে।
উপকূলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া এবং সমুদ্রে থাকার নৌযান গুলোকে সতর্ক করার জন্য ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া একই সময়ে একাধিক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে, তাদের নাম উল্লেখ করে সহজেই শনাক্ত করা যায়। যেটি মানুষকে সচেতন করতে কাজে লাগে।
সাম্প্রতিক সময়ে অতীতের তুলনায় অধিক পরিমাণে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। বৈশ্বিক উষ্ণতা এভাবে বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে এই দুর্যোগ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই এখন থেকেই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য। আমাদের মাধ্যমে যাতে করে পরিবেশ দূষণ না হয় সে বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে।
এইযে, বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করছি দিনের তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে। এরকম অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আমরা হয়তো বা পূর্বে কখনো লক্ষ্য করিনি। এভাবে করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাবার পেছনে হাত মূলত আমাদেরই। আমরা যদি পরিবেশকে দূষণ না করতাম, তবে আমাদেরকে ভবিষ্যতের এমন দিন দেখতে হতো না। যেখানে আমরা আমাদের পরিস্থিতির জন্য নিজেরাই দায়ী।
তবে এসব কিছু বলার পরে আরো একটি কথা না বললেই নয়। ঘূর্ণিঝড় বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাস্তবিক অর্থে আমাদের কর্মের ফল হলেও এটিকে আল্লাহর গজব অথবা মানুষের জন্য পরীক্ষা হতে পারে। তবে যাই হোক, এই পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু এভাবে করেই সম্পন্ন হচ্ছে। বিজ্ঞান মাঝে থেকে আমাদেরকে শুধুমাত্র এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করছে। তো আজ এ পর্যন্তই। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)