বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ! তথা স্মার্টফোনের যুগ! ২০১০ সালের পর থেকেই স্মার্টফোনগুলো তাদের কারিশমা প্রতি বছর আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। স্পিড, পারফরমেন্স, ব্যাটারী লাইফ সহ বিভিন্ন দিক দিয়ে দিন দিন স্মার্টফোন উন্নতি করছে। বিশেষ করে ক্যামেরার দিক দিয়ে আজকালকার স্মার্টফোন প্রায় ডিএসএলআর ক্যামেরাগুলোকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। আসলেই কি তাই? স্মার্টফোনের যুগের আগে ডিজিটাল ক্যামেরা অথবা ডিএসএলআর ক্যামেরাই ছিলো হাই ডেফিনেশন ছবি তোলার একমাত্র মাধ্যম। তবে স্মার্টফোনের ক্যামেরা কোয়ালিটি ভালো হলেও ডিএসএলআর এর মতো ফাংশনালিটিতে এখনো পৌছাতে পারে নি। আজ আমি এই বিষয়েই কিছু কথা বলতে এসেছি। আশা করবো আজকের এই টিউনটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
কথা হলো এই যে, ফটোগ্রাফিতে আপনার আসলেই ইন্টাররেস্ট থাকলে ডিএসএলআর নিয়ে নিতে পারেন, এর বিকল্প নেই। তবে শখের বসে ফটোগ্রাফিতে আগ্রহ থাকলে সেটা আপনি স্মার্টফোন দিয়েই চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু যখন স্মার্টফোনে আপনার লিমিট না ধরলে তখন আপনি ডিএসএলআরে আপগ্রেডের চিন্তা ভাবনা করতে পারেন।
নিচে কয়েকটি বিভাগে স্মার্টফোন এবং ডিএসএলআরের মধ্যে কিছু পাথর্ক্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি:
যদি আপনি ডিএসএলআরে ইভেস্ট করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনি চাইবেন যে বর্তমানের যুগের স্মার্টফোনের চাইতে আপনার ক্যামেরার পিকচার কোয়ালিটি যাতে অবশ্যই যাতে অনেক গুণে ভালো এবং উন্নত হয়। এই পিকচার কোয়ালিটি বিভাগে বিভিন্ন কথা বলা যায়। এখানে আমি একই ছবির শট আইফোন ৫ এবং ক্যানন EOS রেবেল T3 ক্যামেরা দিয়ে তুলে নিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।
এই আনএডিটেড ছবিগুলোতে ডিএসএলআর দিয়ে তোলা ছবিটির রেজুলেশন ছিলো ডিএসএলআর ক্যামেরার সর্বনিম্ন রেজুলেশন 5184 x 3456 আর অন্য দিকে আইফোনের ইমেজের রেজুলেশন ছিলো আইফোনের সর্বোচ্চ রেজুলেশন 3264 x 2448। তাই রেজুলেশনের দিক দিয়ে ডিএসএলআর এগিয়ে রয়েছে অনেকাংশেই। মূলত ছবির রেজুলেশন যত উন্নত ছবির মানও ততো উন্নত হবে এটাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে ডিএসএলআর দিয়ে তোলা ছবিটায় কলাটির নেচারাল রং তুলে এসেছে। আর এদিকে স্মার্টফোন দিয়ে তোলা ছবিতে ন্যাচারেলিই কালার ওয়াশ হয়ে গিয়েছে। তাই মনে রাখতে হবে যে এই দুটি প্লাটফর্মের ভিতর নিজস্ব কিছু পার্থক্য রয়েছে।
আর রেজুলেশনে দেখুন ডিএসএলআর এর জুমিং ইফেক্ট পরিছন্ন রয়েছে অন্যদিকে স্মার্টফোনের ছবিতে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। তো এখানে বলা যায় যে রেজুলেশন এবং কালারের দিক থেকে ডিএসএলআর এগিয়ে রয়েছে স্মার্টফোনের চাইতে। জুমিংয়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে ডিএসএলআর ছবিতে ফোকাস ঠিক আছে এবং স্মার্টফোনের ছবিতে কলাটি অমসৃণ হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি য়ে, ডিএসএলআর ডিভাইসটি শুধুমাত্র ছবি তোলার কাজেই তৈরি করা হয়েছে তাই ডিফল্ট সেটিংয়েও এটি যেকোনো স্মার্টফোনের চাইতেও ভালো এবং উন্নত মানের ছবি তুলতে সক্ষম।
বর্তমান যুগের হাই এন্ড স্মার্টফোনগুলো নিজস্ব স্টোরেজ দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। তবে এক্ষেত্রে হাই কোয়ালিটির ছবি এবং ভিডিও শ্যুাট করতে থাকলে আপনি শীঘ্রই আউট অফ ক্যাপাসিটি হয়ে পড়বেন। তবে অন্যদিকে ডিএসএলআরে এই সমস্যাটি হয় না। কারণ ৯৭% ডিএসএলআর ক্যামেরা এক্সটারনাল মেমোরি কার্ড সাপোর্ট করে। মেমোরি কার্ডের দাম তেমন বেশি না এবং এগুলো বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। তাই কয়েকটি মেমোরি কার্ড সাথে নিয়ে আপনি আপনার সকল চাহিদা পূরণ করে নিতে পারবেন ডিএসএলআরের মাধ্যমে।
বর্তমান যুগের অধিকাংশ স্মার্টফোনের ক্যামেরার এপ্লিকেশনটি ডিএসএলআরের অটো ফাংশনের মতোই সেটিং করে দেওয়া থাকে। যার সাহায্যে নরমাল সিচুয়েশনে আপনি মোটামুটি মানের পিকচার তুলে নিতে পারবেন। অন্যদিকে আপনার ডিএসএলআরের দিকে একটু সময় দিলেই আপনি এটার উপর মাস্টারি করে নিতে পারবেন এবং যেকোনো সিচুয়েশনে আপনি সবোর্চ্চ মানের ছবি তুলিয়ে নিতে পারবেন আপনার ডিএসএলআরটিকে দিয়ে। কারণ ফোকাসের ব্যাপারে স্মার্টফোনের থেকে ডিএসএলআর বহুগুনে ভালো সার্ভিস অফার করতে পারবে। যেটার সাহায্য নিয়ে আপনি আপনার নিজস্ব ইউনিক ফটোগ্রাফির স্কিল বের করিয়ে আনতে পারবেন।
এইটাতে দেখতে পাচ্ছেন যে ডিএসএলআর দিয়ে ছবির কাছের একটি নির্দিষ্ট অংশে ফোকাস করে Depth of Field সেটিং নির্বাচন করে দেওয়া হয়েছে। যেটি অন্যদিকে স্মার্টফোনে করা সম্ভব নয়। তবে ব্যাকগ্রাউন্ড ম্যানুয়ালী ব্লুর করে দিয়ে এটি ডিএসএলআরের ন্যাচারাল ইফেক্টের ধারে কাছেও যেতে পারবে না।
ধরুন আপনি মনের সুখে ছবি তুলছেন। কিন্তু বেওকুফ পয়েন্ট অ্যান্ড শুট সাবজেক্ট রেখে ফোকাস করল আশেপাশের অন্য কোন অফ টপিকের উপর। ভুক্তভুগি মাত্রই জানেন জিনিসটা কতটা বিরক্তিকর। আবার ধরুন রাতের বেলা চাঁদ মামার ছবি তুলতে চাচ্ছেন, কিন্তু ক্যামেরায় তো ফিক্সড লেন্স যেটায় ৩গুনের বেশী জুম হয়না। চাঁদ একটি ছোট্ট ডট হয়ে ধরা দেবে কামেরায়। আর রাতের বেলা কম আলোতে ছবি তোলার চেষ্টা করলেই বেরসিক ক্যামেরা তার কর্কশ ফ্ল্যাশ জ্বেলে দেয়। ফল হয় ভয়াবহ। মানুষের চেহারাই পালটে যায় তখন, স্কিন টোন হয় ধবল রুগীর মত এবং চোখ হয় রক্ত লাল (red eye প্রব্লেম জাকে বলে)। আর আপনি যদি ফ্ল্যাশ ছাড়া ছবি তুলতে যান তখন দেখবেন সবই আবছা ও অন্ধকার। কিছু যদি দেখাও যায় তাহলে সেখানে এত নয়েজ থাকবে যে বাবহারের অযোগ্য হয়ে পরবে।
ডিএসএলআর আপনাকে দিতে পারে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি। এটা দিয়ে আপনি পাচ্ছেন ছবির বিভিন্ন বিষয় আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার সুবিধা। ডিএসএলআর এ থাকে পয়েন্ট অ্যান্ড শুট এর চেয়ে অনেক বড় সেন্সর যেকারনে কম আলোতেও নয়েজ এর মাত্রা থাকে সামান্য এবং ছবির কোয়ালিটি থাকে অটুট। রাতের বেলা কাজ করতে লাগিয়ে নিতে পারেন একখানা ওয়াইড অ্যাপারচার এর প্রাইম লেন্স। এছারাও বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা আলাদা লেন্স লাগানর সুবিধাতো আছেই।
এবার আসি আসল বিষয়ে। আপনার আগে থেকেই হয়তো একটি স্মার্টফোন রয়েছে এবং এটা দিয়ে আপনি টুকিটাকি ফটোগ্রাফ মিটিয়ে থাকেন। তবে আপনি যদি ডিএসএলআর নিতে চান তাহলে আপনাকে বেশ ফাইনান্সিয়াল ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে।
যদি আপনি সত্যিকার অর্থেই ছবি তুলতে এবং ছবি তোলা শিখতে আগ্রহী হন শুধু তবেই সামনে আগান। আমরা সকলেই কিন্তু ছবি তুলতে আগ্রহী; বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অথবা কোথাও ঘুরতে গেলে আমাদের ক্যামেরা কিন্ত সবসময় ব্যাস্তই থাকে। তবে শুধু ছবি তুলতে আগ্রহী হলেই হবে না, ছবি তোলা শেখার প্রতি আগ্রহী হতে হবে। কারন ডিএসএলআর অপারেট করতে হলে বেশ কিছু টেকনিক্যাল জিনিস জানতে হবে এবং মাথায় রাখতে হবে। তা নাহলে ডিএসএলআর এর অটো মোড এই আটকে থাকবেন, তখন একটি ১০ হাজার টাকার পয়েন্ট অ্যান্ড শুট আর আপনার লাখ টাকার ক্যামেরা আর লেন্স এর মধ্যে তফাৎ টা কি থাকল?
তাই সবাই ডিএসএলআর কিনছে দেখে আমারো কিনতে হবে ব্যাপারটা যদি এমন হয় তাহলে নিজেকে সামলে নিন। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি আসলেই ছবি তোলা শিখতে সময় ও শ্রম দিতে প্রস্তুত? যদি উত্তর না হয় তাহলে টাকা অপচয় না করে একটা ভালো পয়েন্ট অ্যান্ড শুট কিনে ফেলুন, কারন ওতে অটো মোডে বেটার ছবি সহজে তুলতে পারবেন। আর যদি অপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর হয় হ্যাঁ, তবে আপনি ডিএসএলআর কেনার জন্য প্রস্তুত!
তো আজ এ পর্যন্তই থাকলো, আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে। আর টিউন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন, জিঙ্গাসা বা কোনো মতামত থাকলে সেটা নিচের টিউমেন্ট বক্সে আমাকে জানাতে ভুলবেন না যে। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!