আশা করি ভালো আছেন সবাই। টাইটেল দেখে নিশ্চই বুঝতে পারছেন আরটিকেলের বিষয়বস্তু কি হতে পারে। হ্যাঁ, আউটসোর্সিং। আউটসোর্সিং নতুন কিছু নয়। অনেকেই অনেক কিছু জানেন আউটসোর্সিং সম্পর্কে, অনেকে আউটসোর্সিং এর সঙ্গে জড়িতও আছেন। তবু এই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে লেখার প্রয়োজন বোধ করছি। যারা এ ব্যাপারে জানেন না তারাতো বটেই এমনকি যারা জানেন তাদেরও হয়তো আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার জানা বাকি রয়ে গেছে। সেইসব ব্যাপারগুলিসহ আমি এই আর্টিকেল-এ আউটসোর্সিং আসলে কি, কেন, কার জন্যে, কিভাবে এইসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করব। কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল প্রসঙ্গে চলে যাই।
ইদানীং প্রায়ই শুনছেন এই শব্দটা। ফেসবুকে, ইউটিউবে, টিভিতে এমনকি গলির মোড়ের দেয়ালে সাঁটানো টিউনারেও লেখা দেখছেন "আজই আউটসোর্সিং শিখে ঘরে বসেই ইনকাম করুন." ইত্যাদি। কেউ কেউ হয়তো উৎসাহী হয়ে কোন কোর্সে ভর্তিও হয়ে গেছেন, কেউ কোর্স শেষ করে বেশ কাজও করছেন। কেউ বিরক্ত হয়ে বা অন্যান্য কাজের চাপে কোর্সের অর্ধেকে ক্ষান্ত দিয়েছেন আবার কারো এত সময় বা অর্থ নেই যে এসবের পেছনে ব্যয় করবেন। তবু যারা একটু কৌতূহলী বা বিস্তারিত জানতে চান তাদের মনে এই প্রশ্নটি থেকেই যায় যে আউটসোর্সিং আসলে কি?
আউটসোর্সিং হলো এক ধরনের ব্যাবসায়িক চর্চা যেটা সার্বিক ব্যয় কমানো বা কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্যে কোন কোম্পানী করে থাকে অন্য কোন তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে চুক্তিসাপেক্ষে। তৃতীয় পক্ষ তাদের কাজগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে করে থাকে। এইরকম কঠিন কঠিনভাবে না বলে একটা উদাহরন দিয়ে বোঝানো যেতে পারে ব্যাপারটা। ধরুন আপনার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
আপনার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত যেসব কর্মচারী রয়েছেন তাদের সংখ্যা সীমিত। মাঝে মাঝে প্রতিষ্ঠানের কাজের চাপ এত বেড়ে যায় যে সীমিত সংখ্যাক কর্মচারীরা সব কাজ একসঙ্গে শেষ করতে পারেন না। অথবা নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্যে দক্ষ কর্মচারী আপনার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত নেই। এবং সেই কাজগুলির জন্য আপনি বেতনভুক্ত নতুন কর্মচারী নিতে ইচ্ছুক নন।
এ ক্ষেত্রে আপনি যেটা করতে পারেন সেটা হলো আউটসোর্সিং। আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের কিছু কাজ কোন তৃতীয় পক্ষকে করতে দেবেন চুক্তিসাপেক্ষে। এক কালীন বা চলমান পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তৃতীয় পক্ষ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আপনার সেই কাজ গুলি করে দেবে বা করতে থাকবে। আশা করি এবার ব্যাপারটা একটু একটু বুঝতে পারছেন। এবার যাওয়া যাক আউটসোর্সিং কার জন্যে, এখানে কোন কোন পক্ষের ভূমিকা কি কি সেই প্রসঙ্গে।
আউটসোর্সিং-এ প্রথম পক্ষ বা তৃতীয় পক্ষ কিভাবে চুক্তিবদ্ধ হন এবং কিভাবে তাদের কাজগুলি সম্পাদনা করেন সেটা বুঝার জন্যে আরো একটা উদাহরন দিই। আগের উদাহরনে প্রথম পক্ষের অবস্থান মোটামুটি বলেই দিয়েছি তাই এবার তৃতীয় পক্ষের ভূমিকাটা দেখা যাক। ধরুন আপনি একজন সিভিল এঞ্জিনিয়ার। হয়তো আপনি এখনি কোথাও জব করছেন। আপনি কন্সট্রাকশন সংক্রান্ত কাজ বা আর্কিটেকচার ডিজাইনে দক্ষ।
আপনার রেগুলার কাজের পরেও আপনার হাতে যথেষ্ট সময় থাকে যেটা আপনি আরো কাজের জন্যে ব্যয় করতে পারেন। আপনার কাছে অপশন আছে সেইসব প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিসাপেক্ষে কাজ করার জন্যে যারা তাদের কিছু কাজকে কন্ট্রাক্ট আউট বা আউটসোর্স করছে। আপনি সেই কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে আপনার সুবিধা অনুযায়ী সময়ে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাদের কাজ করে দিতে পারেন।
এরকম অন্যান্য পেশার যারা আছেন তারাও করতে পারেন। এক্ষেত্রে সবসময় যে আপনাকে সরাসরি কোম্পানী বা প্রথম পক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে তাও না। যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এভাবে আউটসোর্স করছে এবং যারা ফ্রিল্যান্সার হিসাবে সেইসব প্রতিষ্ঠানের কাজ গুলি করতে ইচ্ছুক তাদেরকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার জন্যে কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেমন ফাইভার, আপওয়ার্ক ইত্যাদি। যেখানে আপনি কাজ দিতে বা নিতে পারবেন। আশা করছি এবার বুঝে গেছেন সবটা।
অনেকের ধারনা এমন যে শুধু কম্পিউটার জানলেই বুঝি আউটসোর্সিং করা যায়। এটা একটা ভুল ধারনা। আপনি যে কোন পেশায় দক্ষ হলে আউটসোর্সিং এর অংশ হতে পারবেন। আবার একেবারে কিছু না জেনেও তো আপনি কাজ করতে পারবেন না। যাহোক ইদানীং আউটসোর্সিং শেখানোর নামে অনেক নামী বেনামী প্রতিষ্ঠান এক ধরনের ধাপ্পাবাজি কোর্স করিয়ে আসছে যেগুলিতে আউটসোর্সিং এর নামে কিছুদিন টাইপিং শিখিয়ে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট বেইজড অ্যাড মার্কেটে ঢুকিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ক্লিক করা, একাউন্ট ওপেন করা, ফেক আর্টিকেল লেখা ইত্যাদি শেখানো হয়।
যেগুলি আসলে SEO বা সার্চ এঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের কাজ। SEO যে আউটসোর্স এর অংশ নয় তাও না। কিন্তু এসব SEO, এড ভিউয়িং বা অনলাইন বেটিং-ই আউটসোর্স না। যদি কোর্স করতেও হয় তবে জেনে নিন আসলে আপনি কি শিখছেন। কাজ করার জন্যে শেখারও অনেক কিছুই আছে।
কম্পিউটারে ব্রাউজ করা আর টাইপ করা ছাড়াও অনেক কিছু হয়। আপনি প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এনিমেশন ইত্যাদি অনেক কিছুই শিখতে পারবেন এবং সেগুলিতে দক্ষ হলে আউটসোর্সিং ছাড়াও আপনার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অনেক কাজ করতে পারবেন।
যারা আউটসোর্সিং নিয়ে কৌতূহলী তারা আশা করি এই লেখাটি পড়ে একটা মোটামুটি ধারনা পেয়েছেন। আমার লেখায় কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে, জ্ঞানীরা শুধরে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। ভালো থাকবেন সবাই।
আমি সালাহ উদ্দিন কানন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।