সেলফি! আধুনিক এই যুগে এই সেলফি কথাটি শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। আমাজনের জঙ্লী মানুষদের কথা আলাদা! হ্যাঁ আজ আমি সেলফি নিয়ে কিছু কথা বলতে এসেছি! যেহেতু সেলফি তোলা হয় ক্যামেরার সাহায্যে আর ক্যামেরা টেকনোলজি বিষয়ের ভিতর পড়ে তাই টেকটিউনসে এই বিষয়ে অবশ্যই একটি টিউন লেখা যায়! সময় পেয়ে বসে পড়লাম লিখতে। আপনি যদি সেলফি প্রেমী হয়ে থাকেন কিংবা আপনার কোনো বন্ধুবান্ধব (বিশেষ করে বান্ধবী!) যদি সেলফি প্রেমী হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে আমার আজকের টিউনটি দেখাতে পারেন। আজ আমি কথা বলবো কিভাবে পারফেক্ট সেলফি তুলতে হয়! আর এরজন্য ৭টি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। তো ভূমিকায় আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি টিউনের মূল বিষয়ে চলে যাচ্ছি।
প্রথমেই আমি সেলফির বিষয়ে বোনাস কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। আর তা হলো সেলফি আপনি কখন তুলবেন না বা কখন সেলফিকে এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। প্রথমেই বলে নিচ্ছি সেলফি কি বা সেলফির সংঙ্গা! সেলফি হলো একটি মর্ডান ফটোগ্রাফির একটি শাখা যেখানে কোনো ব্যক্তি নিজের ছবি নিজেই তুলে থাকেন। এই প্রক্রিয়ার জন্য তিনি ডিজিটাল ক্যামেরা, স্মার্টফোন কিংবা ওয়েবক্যামের সাহায্য নিয়ে থাকেন। সেলফি কথাটি সর্বপ্রথম ২০০২ সালে ব্যবহৃত হয় এবং ২০১৩ সাল থেকে এই সেলফির প্রচলন বৃদ্ধি পেতে থাকে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের কারণে আজকাল এইসব ডিজিটাল গ্যাজেট ছোট বাচ্চাদের থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের হাতে এমনকি বৃদ্ধ মানুষদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছে। এবার আমি বলবো কখন সেলফি এড়িয়ে যাবেন:
প্রাইভেট সেলফি বলতে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত মুর্হুতের সেলফিকে বোঝানো হয়। ব্যক্তিগত মুর্হুতের বলতে অনেক কিছুই বোঝানো যেতে পারে। যেমন আপনি আপনার কোম্পানির গোপনীয় কোনো সেন্সিটিভ মিটিংয়ে আছেন, তখন সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকা উত্তম। বাথরুমে প্রাকৃতিক কাজ সারছেন, তখনও সেলফি এড়িয়ে যাওয়া উচি। মোটরসাইকেলে, বাইসাইকেলে, গাড়ি চালানো অবস্থায় সেলফি তোলা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন নিজের সেফটির জন্য। এছাড়াও আপনার প্রাইভেসি নস্ট হয় এমন সেলফি তোলা এবং অবশ্যই সেগুলো কোথাও শেয়ারিং করা থেকে বিরত থাকাই আপনার জন্য উত্তম হবে।
এটি একধরণের আলাদা স্টাইল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল যুবক যুবতীর সেলফির অধিকাংশ তোলা হচ্ছে বাথরুমের আয়নায়। এটি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ বাথরুম একটি নোংরা স্থান। যতই পরিস্কার পরিছন্ন করা হোক সেটি নোংরা কাজের জন্যই ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং আমাদের উচিৎ বাথরুম / টয়লেটে যত কম সম্ভব সময়ের জন্য থাকা। তবে এখানেও কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। কোনো ঐতিহাসিক স্থানে বেড়াতে গেলে সেখানের বাথরুমেও একটি ছবি আপনার কালেক্টশনে থাকলে সেটা মন্দ হয় না। যেমন বাগেরহাটে ষাঁট গম্ভুজ মসজিদে বেড়াতে গিয়ে সেখানে বাথরুমের সেলফি তুলে নিয়ে আসছিলাম আমি! হাহাহা!
duck face! সেলফি চালু হবার পর এই হাঁসমুখ বা duck face কথাটি বেশ শুনতে পাই আমরা। সেলফি তোলার সময় নিজের মুখের ভঙ্গিকে হাঁসের মতো করে বাঁকিয়ে তোলাই এই স্টাইলের মূল উদ্দেশ্য! আপনি মজা করার উদ্দেশ্যে এই ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন, কিন্তু সবক্ষেত্রে মজা বা Fun বিষয়টি খাটে না। নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন ভঙ্গিতে সেলফি তোলা এবং সেটা শেয়ার করা উচিৎ নয়। যেমন কারো মৃত্যুবার্ষিকির অনুষ্ঠানে গিয়ে এই হাঁসমুখ ভঙ্গিতে সেলফি তুললে সেটা কেমন হতে পারে টিউমেন্টে আপনারা বলুন!
আগেও বলেছি নিজের নিরাপত্তা আগে, তারপর সেলফি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তোলার মানে হয় না। এক মুর্হুত্বের অসাবধানতা এইসব ক্ষেত্রে আপনার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই বিপদজনক স্থানে বিপদজনক ভাবে সেলফি তোলা থেকে নিজে বিরত থাকুন এবং অন্যকে বিরত রাখতে সাহায্য করুন!
এবার আসি কিভাবে সঠিক এবং পারফেক্ট সেলফি তুলবেন! তবে এই টিউনে আমি আপনাদেরকে সেলফি তোলা শেখাতে আসিনি। আমার বিশ্বাস সবাই তার নিজস্ব জায়গা থেকে নিজেই ভালো বুঝবেন কিভাবেন সেলফি তুলতে হয়। আমি এখানে শুধু আমার নিজস্ব মতামত পয়েন্ট আকারে টিউন হিসেবে তুলে ধরলাম! তো চলুন দেখে নেই কিভাবে পারফেক্ট সেলফি তুলবেন:
সেলফি তোলার সময় আপনি ক্রিয়েটিভ হবার চেষ্টা করতে পারেন। ফ্যাশান মার্কেটে বর্তমানে যে স্টাইল চলছে সেটা সবাই ফলো করে। কিন্তু আপনি এই তথাকথিত ট্রেন্ডিং থেকে বেরিয়ে এসে নিজেই নিজেই ইউনিক ক্রিয়েটিভিটি খুঁজে বের করুন এবং সেটা সেলফিতে প্রয়োগ করে দেখুন। যেমন আমি আমার কোনো সেলফিতেই দাতঁ দেখিয়ে হাসি না! হাহাহাহ লোল!
সবসময় সেলফিগুলোতে আপনার ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। আপনি গুরুগম্ভীর টাইপের হয়ে থাকলে অবশ্যই দাত কেলানো হাসিযুক্ত সেলফিতে আপনাকে মানাবে না। ঠিক তেমনি আপনি মজাদার বা হাস্যজ্জল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলে সেলফিতে দুঃখভারা টাইপে কিছু আনলে সেটাও আপনার সাথে মানাবে না। আশা করি এই পয়েন্টটি আপনাদেরকে বুঝাতে পেরেছি। তবে সবসময় নিজের ব্যক্তিত্বের বাঁধনে থাকলে চলে না, মাঝে মাঝে উন্মুক্ত চিন্তাধারী হলেও মন্দ হয় না!
আমরা সেলফি তুলি সাধারণত নিজেকে দেখানোর জন্য। কিন্তু প্রতিটি সেলফিতে কিছু কিছু বিষয় থাকে সেগুলোকে আমরা সেলফির মাধ্যমে অন্যদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কারণ ছবিও কথা বলে! তাই সেলফিগুলোতে সে বিষয়টিকে বোঝাতে চাচ্ছেন সেটির ডিটেইলসের উপর ফোকাস করা উচিৎ। তাই সেলফি তোলার আগে যে বিষয় বা বিষয়বস্তুকে সেলফিতে তুলে আনার চেষ্টা করবেন সেটার উপর কিছুক্ষণ ভেবে নিন। তারপর ক্যামেরার বাটন চাপুন।
সেলফিগুলোকে ডিটেইলস যোগ করার সাহায্যে আপনি ছবিগুলোকে আনুসাঙ্গিক জিনিসগুলো যোগ করতে পারেন। যেমন আপনার সদ্য কেনা নেকলেস কিংবা অ্যাপল ওয়াচ অথবা ডেলিশিয়াস কোনো খাবারকেও আপনি সেলফিতে আনতে পারেন এবং ছবির কাহিনীকে আরো বিস্তারিত এবং সুন্দরভাবে ফুঁটিয়ে তুলতে পারেন। তবে মাত্রাতিরিক্ত জিনিস যোগ করা উচিৎ নয়।
সেলফি নিজে নিজে তোলার চেয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে তোলাকে গ্রুপ সেলফি বলে। আপনি চাইলে এই গ্রুপ সেলফিতেও বিভিন্ন প্রকার বৈচিত্র আনতে পারেন। এক্ষেত্রে নিজের এবং বন্ধুদের ক্রিয়েটিভিকে কাজে লাগান। এভাবে গ্রুপ সেলফিতে আপনি বৈচিত্র আনতে পারেন।
কোন পোজটিতে আপনাকে সেলফিতে ভালো মানাবে আগে সেটা নির্ধারণ করুন। তারপর সেলফিতি তুলে নিন। সেলফি ভালো হবেই হবে! ভুল পোজের জন্য অনেক সময় সেলফি খারাপ হয় এবং হাস্যকরও হয়ে যায়!
আজকালকার যুগের ম্যাক্সিমাম স্মার্টফোনের দুটি ক্যামেরা থেকে থাকে। একটি ফ্রন্ট ক্যামেরা বা সেলফি ক্যামেরা আরেকটি পিছনের ক্যামেরা। সাধারণত সেলফি ক্যামেরা হলেও কমদামী ফোন থেকে শুরু করে দামী স্মার্টগুলোতেও সামনের ক্যামেরার থেকে পেছনের ক্যামেরাটি ভালো মানের ছবি তুলে থাকে। তাই কস্ট হলেও পেছনের ক্যামেরা দিয়ে সেলফি তুলতে চেষ্টা করুন, ছবি ভালো আসবে।
সেলফি তুলার পর সেটায় বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার ইফেক্ট দিয়ে পরীক্ষা করে সর্বউত্তম ইফেক্টটি নির্বাচন করুন। তারপর সেটা আপলোড করে দিন। এটি উত্তম সেলফির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আশা করবো সেলফি নিয়ে আমার এই কিছু ব্যক্তিগত মতামত আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। বিশেষ করে নিজের জীবন ঝুঁকিতে রেখে সেলফি তোলা কখনোই উচিৎ নয় কারণ হতে পারে পরবর্তি দিনে আপনার লাশের ছবি তুলতে আসবে সবাই!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!