বর্তমান যুগ টেকনোলজির যুগ, তবে অনান্য বিষয়ের মতো এই যুগের পিসি নিয়ে বিভিন্ন মিথ বা খাঁটি বাংলায় যাকে কুসংস্কার বলে। এইসব মিথ বা কুসংস্কারগুলো পিসি আধুনিক যুগে প্রবেশের শুরু থেকেই চলে আসছে এবং আজও অনেকেই এইসকল কুসংস্কার বিশ্বাস করেন! আর আজকের টিউনে আমি এইসকল কিছু বিচিত্রময় কুসংস্কার বা মিথগুলো নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু আলোচনা করবো! অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে ছিল কিছু ব্যতিক্রম বিষয় নিয়ে টেকটিউনসে লিখি। তো আজ সময় পেয়ে গেলাম আর বসে পড়লাম লিখতে! তবে একটি কথা বলাই লাগে, তা হলো এই সকল মিথগুলো কিছু কিছু আসলেই বিশ্বাসযোগ্য এবং বাস্তব জীবনে উপযোগী! সেটাও আমি আজকের টিউনে বলবো। তো চলুন শীতের এই শুরু দিকের আবহওয়ায় আজ অন্যরকম কিছু দেখে নেই! সরাসরি টিউনে চলে যাচ্ছি।
আজকের মিথ বা কুসংস্কার টিউনটি শুরু করছি একটি কমন মিথ দিয়ে। একটি পিসিতে যত বেশি র্যাম থাকবে, পিসিটি তত বেশি ফাস্ট হবে! কথাটা একেবারেই মিথ্যে নয়, পিসিতে বেশি র্যাম দিলে পিসির কার্যক্ষমতা বেশি হয় এটা সত্য কিন্তু তাই বলে গিগাবাইটের উপর গিগাবাইট র্যাম লাগালেই পিসি দ্রুততর হয় না। যেমন আপনি যদি গেমার হন কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করে থাকেন তাহলে আপনার পিসিতে ৮ থেকে ১৬ জিবি র্যাম হলেই যথেষ্ট। বর্তমান যুগে সাধারণ কাজ করতে হলেও পিসিতে ২ গিগাবাইট র্যাম এর প্রয়োজন হয়। আবার ১৬ গিগাবাইটের উপর র্যাম লাগেও না। কিন্তু অনেকেই আছেন ১৬ জিবি র্যাম থাকা স্বত্বেও আরো উন্নত পারফরমেন্সের আশায় তারা তাদের পিসিতে আরো ১৬ জিবি মোট ৩২ জিবি র্যাম লাগিয়ে থাকেন। আরে বাবা! এই ৩২ জিবি র্যামের অনেকাংশই ব্যবহৃত হয়ে থাকে না, মানে এটি বর্তমান যুগের জন্য অপচয় ছাড়া কিছুই না। হয়তো অদূর ভবিষৎতে এমন গেম বা গ্রাফিক্সের কাজ আসবে তখন ৩২ জিবি র্যামের দরকার হতে পারে।
আবার অন্যদিকে পিসির অনান্য পার্টস যেমন বিশেষ করে প্রসেসর এর ক্ষমতার উপরে র্যাম নির্বাচন করা উচিৎ। যেমন আপনার পিসিতে ডুয়েল কোর প্রসেসর লাগানো রয়েছে। এবার এটাতে ৬৪জিবি র্যাম লাগালেও আপনি কোর আই ৩ এর মতো পারফরমেন্স পাবেন না। তাই আপনাকে র্যামের বদলে প্রসেসরকে আপগ্রেড করা উচিৎ!
হাহাহা, সাধারণ ভাবে এটা সত্যই মনে হতে পারে। কারণ কোর আই ৩ পিসির থেকে অবশ্যই এবং অবশ্যই কোর আই ৭ পিসি ফাস্ট তবে এখানের শুভংস্করের ফাঁকি রয়েছে। পিসি কিংবা স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বেশি কোরের ডিভাইস দ্রুততর হয়, এটা সঠিক নয়। কারণ মূল কথা হলো কোনো পিসির কোরের সংখ্যা যতই হোক, প্রতিটি কোর আলাদা এক্সকুশন ইউনিট হিসেবে আলাদা ভাবে কাজ করে থাকে, আর বেশি কোরের পিসি আপনাকে একই সাথে একাধিক প্রোগ্রাম দ্রুততার সাথে চালানো সুযোগ করে দেয়। তাই আপনি একটি প্রোগ্রাম চালানোর সময় একটি কোরের থেকে যতটা স্পিড পাবে একাধিক কোরযুক্ত পিসিতেও একই ধরনের স্পিড পাবেন! এছাড়াও কোনো প্রসেসর গিগাহার্জের স্পিড এবং ক্যাশ মেমোরির উপরেও তার স্পিড নির্ভর করে থাকে। তাই বেশি ক্যাশ মেমোরি আর গিগাহার্জ যুক্ত কম কোরের পিসিও কম ক্যাশ আর গিগাহার্জের বেশি কোরের পিসি থেকেও পারফরমেন্সে ফাস্ট হবে! এই কোরের মারপ্যাচ সাধারণ মানুষের মাথায় স্বাভাবিক ভাবেই ঢুকবে না, এটাই স্বাভাবিক!
এটা আরেকটি ভুল ধারনা! তবে এটা সত্য যে, বর্তমান যুগের সিপিইউ গুলো ৬৪বিটের হয়ে থাকে এবং বর্তমান যুগের অপারেটিং সিস্টেম গুলো ৬৪বিট আকারে বাজারে আসছে। কিন্তু অন্যদিকে বাজারের অধিকাংশ নিত্য-প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো এখনো ৩২বিট আকারেই রয়ে গিয়েছে। তবে এখানে ৬৪বিট সিস্টেমে ৩২বিট সফটওয়্যারগুলো চালানোর অপশন রয়েছে কিন্তু অন্যদিকে আপনি কোনোভাবেই ৩২বিট সিস্টেমে ৬৪বিট সফটওয়্যারগুলো চালাতে পারবেন না। ৩২বিট থেকে ৬৪বিট সিস্টেমে অবশ্যই কিছু ইউনিক সুবিধা আমাদেরকে দিয়েছে কিন্তু তাই বলে এটা ভাবা বোকামি যে ৬৪বিট সফটওয়্যারগুলো ৩২বিটের থেকে ভালো কিংবা দ্রুতগতির!
বাজারে নতুন পিসি বা ল্যাপটপ কিনতে গিয়েছেন? আপনার জন্য কিংবা আপনার বাবার জন্য? এক্ষেত্রে সাধারণ ভাবেই আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে সর্বোচ্চ দ্রুতগতির পিসি বা ল্যাপটপ কিনতে চাইবেন! আসলে আমাদের ভূলটাও এখানেই হয়। ধরুণ আপনি আপনার বাবার জন্য পিসি কিনবেন। তিনি পিসিতে নেট ব্রাউজ করবেন, পুরোনো দিনের মুভি, ডকুমেন্টারি দেখবেন আর টিভি কার্ড লাগিয়ে মাঝে মাঝে টিভি আর রেডিও শুনবেন আর মাইক্রোসফট অফিসে মাঝে মাঝে কাজ করবেন। এখন এই সমস্ত ব্যক্তিগত কাজের জন্য তার পাওয়ারফুল পিসির দরকার নেই! তবুও আমরা অনেক সময়ই এইসব কাজের জন্য হাজার হাজার টাকা বেশি খরচ করে পাওয়ারফুল পিসি কিনে থাকি। আবার ল্যাপটপের দিকে দেখতে বুঝতে পারবেন যে, বেশি পাওয়ারফুল ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ কম হয়ে থাকে। কারণ বেশি পারফরমেন্সওয়ালা ল্যাপটপ বেশি পাওয়ার খেয়ে থাকে তাই সেখানে ব্যাটারি ব্যাকআপ কম হয়ে থাকে।
তাই আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পিসি বা ল্যাপটপ কেনা উচিত! তবে বেশির ভাগ সময় এর উল্টোটা হয়ে থাকে!
রেডিমেট পিসি না কিনে নিজেই নিজেই বিভিন্ন পার্টস কিনে সেটা একত্র করে পিসি নির্মাণ করলে টাকা সাশ্রয় হয়, এটা কিছু বছর আগেও কার্যকরি ছিল। আমি নিজেই এই পরামর্শটা সবাইকে দিতাম। তবে বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে এটা আর চলে না। কারণ পিসি প্রযুক্তি যত উন্নতির দিকে যাচ্ছে, পিসি ট্রাবলশ্যুাট করাটাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আপনি দোকান থেকে রেডিমেট পিসি কিনলে সেখানে সার্ভিস চার্জ যুক্ত হয় এটা ঠিক কিন্তু এর সাথে আপনি সম্পূর্ণ পিসির উপর গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি পাচ্ছেন, যাতে ভবিষৎতে কোনো সমস্যা হলে আপনি ফ্রিতে সার্ভিসিং করিয়ে নিতে পারবেন। অন্যদিকে নিজে নিজে পার্টসপাটি যেমন মাদারবোর্ড, র্যাম, প্রসেসর, পাওয়ার সাপ্লাই কিনে পিসি বানালে এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ফ্রি সার্ভিসিংয়ের সুযোগ আপনি পাচ্ছেন না! আশা করি এই ব্যাপারটি আপনাদেরকে বুঝাতে আমি সক্ষম হয়েছি। তবে আপনি যদি নরমাল ব্যক্তিগত কাজের জন্য মিডিয়াম পারফরমেন্সের পিসি কেনার কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যেই নিজে নিজেই পিসি বিল্ড করলে আপনার বেশ টাকা সাশ্রয় হবে। তবে হাই পারফরমেন্সের পিসি কিনতে গেলে ব্রান্ডেড পিসি কেনাই সর্বউত্তম।
এটাও একটা স্বাভাবিক ব্যাপার! পিসির দাম যত বেশি, পিসিটি তত উচ্চগতির হবে! এটি অধিকাংশ সময় সত্যই কিন্তু ১০০% সঠিক নয়। কারণটা বুঝাচ্ছি। অনেক সময় পিসির পারফরমেন্সের চাইতে বাহ্যিক আবরণের দাম বেশি হয়ে থাকে। যেমন আপনার পিসির মনিটর ১৪ ইঞ্চি হোক কিংবা বিশাল ৪৫ ইঞ্চির হোম থিয়েটার হোক, মনিটরের সাইজ আপনার পিসির পারফরমেন্স বৃদ্ধির উপর কোনো প্রভাব ফেলে না বরং বড় সাইজের মনিটরে উচ্চ রেজুলেশন ব্যবহার করতে হয় বিধায় পিসিকে আরো লোডময় করে দেয়। আবার আপনার পিসির স্পিকার নরমাল হোক কিংবা ৫:১ হোম থিয়েটার হোক এটাও আপনার পিসির পারফরমেন্স বৃদ্ধি করে না। আপনি আপনার পিসিতে ৩০০ টাকার মাউস, কিবোর্ড ব্যবহার করে যেরকম পিসির পারফরমেন্স পাবেন ১০ হাজার টাকার মাউস কিবোর্ড ব্যবহার করলেও একই পারফরমেন্স পাবেন। আমার মূল কথা হলো, পিসির পারফরমেন্স বৃদ্ধির জন্য যেসকল পার্টস ব্যবহার করা হয় সেগুলো উন্নত মানে কিনলেই তবেই আপনি পিসি থেকে বেশি পারফরমেন্স পাবেন।
এই ছিলো পিসি নিয়ে বর্তমান যুগ পর্যন্ত চলে আশাকরি আজকের টিউনটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আগামীদিনে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!