গত সপ্তাহে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরে বেসরকারি সূত্রমতে, এ পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর আগে মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ ও রংপুরে মানবদেহে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিপাহ ভাইরাস কি?
নিপাহ ভাইরাস একটি Emerging zoonotic ভাইরাস, যা পশু-পাখি থেকে মানুষে ছড়ায়। ভাইরাসটি মস্তিষ্ক বা শ্বসনতন্ত্রে প্রদাহ তৈরির মাধ্যমে মারাত্মক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। এটি Henipavirus জেনাসের অন্তর্গত একটি ভাইরাস।
নিপাহ ভাইরাসে এনসেফালাইটিস নামক মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ হয়। এ রোগটি হার্পিস ভাইরাস (herpes simplex), ফ্লাভিভাইরাস (Flaviviruses) সহ অন্যান্য ভাইরাস দ্বারাও হতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অনুসন্ধান ও পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন, নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ফলেই এ রোগ ছড়িয়েছে।
নিপাহ ভাইরাসের ইতিহাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় সর্বপ্রথম নিপাহ ভইরাস শনাক্ত করা হয়। বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে ২০০১ সালে। ভাইরাসটি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে শূকরের খামারে কাজ করা চাষীদের মাধ্যমে প্রথম ছড়িয়েছিল। আক্রান্ত শূকরের স্পর্শ, তাদের লালা ও সংক্রমিত মাংসের মাধ্যমে এর বিস্তার ঘটে। পরে রোগটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে।
নিপাহ ভাইরাসের ভয়াবহতা
নিপাহ ভাইরাসে এলাকাভেদে মৃত্যুর হার শতকরা ৪০ থেকে ৭৫ ভাগ বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সূূত্রে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশের জাতীয় রোগতত্ত্ব ও রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইইডিসিআর-এর তথ্যানুযায়ী দেশে এ রোগে মৃৃত্যুর হার শতকরা ৭৪.১৪ ভাগ, যাতে বলা যায় সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত এ ভাইরাস দ্বারা ১৬টি মহামারির কথা জানা যায়, যার বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়ায়।
বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস যেভাবে ছড়ায়
নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ সময়টাতে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাঁড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে এ রোগ।
রোগের লক্ষণগুলো
এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমত জ্বরে আক্রান্ত হয়। মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়, সে মানসিকভাবে অস্থিরতায় ভোগে। মন-মেজাজ সব সময় উত্তেজিত থাকে। মাঝে মাঝে খিচুনিও দেখা দেয়।
আবার এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়া ভাইরাসটি ৪ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে। এরপর এটি এনসেফালাইটিসের লক্ষণ দেখায়। লক্ষণগুলো অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের মতো। যেমন—জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব, আলো সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি।
এছাড়া অন্য উপসর্গগুলো হচ্ছে—
মাথা ঝিমঝিম করা, ঘুম ঘুম ভাব, জাগ্রত/সচেতন অবস্থার পরিবর্তনসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো
সাধারণত নিম্নলিখিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসটিকে শনাক্ত করা হয়।
ÑSerum neutralization
ÑEnzyme-Linked Immunosorbent Assay (ELISA)
Ñ Polymerase Chain Reaction (PCR) assay
ÑImmunofluorescence Assay (IFA)
ÑVirus isolation by cell culture.
নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
সরাসরি নিপাহ ভাইরাস নিরাময়ে কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি। রোগের লক্ষণ বিবেচনা করে চিকিত্সকরা সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকেন। তবে প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়—
১. বাদুড় থেকে প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে : পাখি দ্বারা আধা বা আংশিক ফল খাওয়া ও খেজুরের কাঁচা রস পান না করার জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
২. মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো প্রতিরোধে : আক্রান্ত মানুষের সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। রোগীদের ব্যবস্থাপনায় ডাক্তারদের/স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৩. ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন হাতের মাধ্যমে ভাইরাসটি না ছড়ায়।
৪. নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশেষজ্ঞরা ওই এলাকার মানুষকে আপাতত খেজুর গুড় ও রস, আখের রস, পেঁপে, পেয়ারা, বরইসহ স্থানীয় ফল বা অর্ধেক খাওয়া ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ফরমুল খেলেও ভালভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
৫. লক্ষনগুলো প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
আমি তানভীর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 161 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
allah sobaike rohom koruk……..amin….
Thank’s share korar jonne…