অ্যান্ড্রয়েড সেরা নাকি আইফোন সেরা? এটা দুনিয়ার বির্তকগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয়। আর সেই বির্তকে লবণের ছিটা দিতে আমি আজ চলে এলাম টেকটিউনসে এই বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা করতে। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ৭ (Nougat) এবং আইওএস ১০ বাজার মাতাচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েডে নতুন মাল্টি-টাস্কি ফিচার থাকছে এবং ওদিকে আইওএসে পাওয়ারফুল ডেভেলপারস APIs দেওয়া হয়েছে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে অ্যান্ড্রয়েডের ভক্ত হলেও আজকের টিউনে আমি আইওএস নিয়েও কিছু বলবো। যাই হোক, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে অ্যান্ড্রয়েড আর আইওএস হচ্ছে লিডিং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমস। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস তাদের নিজস্ব কিছু ফিচারের জন্য একে অপরের থেকে আলাদা। তবে এপলের আইওএস এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড দুটির জন্যই দুনিয়াতে ফ্যান ফলোয়ার অনেক রয়েছে। অনেকেই দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করেন, হাজার হাজার টাকা খরচ করেন তাদের প্রিয় ওপারেটিং সিস্টেমের নতুন সংস্করণের মজা সবার আগে উপভোগ করার জন্য।
আজ আমি লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ৭ এবং আইওএস ১০ এর ফিচারগুলোকে একে অপরের সাথে তুলনা করে আপনাদের সামনে হাজির করবো। আর এদের মধ্যে কে সেরা আপনার জন্য সেটা আপনার হাতেই ছেড়ে দিব। কারণ আমাদের সবাই চাহিদা এক নয়। যাই হোক টিউনে চলে যাচ্ছি।
অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওসের লেটেস্ট সংস্করণে তাদের আগের সংস্করণের থেকে নতুন কিছু ফিচার যুক্ত হয়েছে। শুরু করছি আইওএস ১০ দিয়ে:
আইওএস ১০ আপডেটে কিছু অল্প ইমপ্রুভমেন্ট সহ সিস্টেম এপপগুলো (যেমন সাফারি, নিউজ, মিউজিক ইত্যাদি) তে আপডেট করা হয়েছে। Lift to wake এখন আপনার এপল ডিভাইসের সেন্সরস কে কাজে লাগিয়ে কাজ করবে। এতে আপনি যখন ডিভাইসটি হাতে নিবেন তখন অটোমেটিক স্ক্রিণের ডিসপ্লে অন হবে। দারুন ফিচার!
কিন্তু অন্যদিকের অ্যান্ড্রয়েডের নির্দিষ্ট কিছু হাই-এন্ড ডিভাইসগুলোতে এই ফিচারটি আগেই দেওয়া রয়েছে! অন্যদিকে আইওএস ১০ এর মূল আর্কষণ হলো এর API আপডেট। এখন থেকে Siri এর সাহায্যে আপনার এপল ডিভাইসের সকল অ্যাপসের ভয়েস ইনপুটকে Siri ইনপুটে রুপান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে। আগে Siri ছিলো একটি ভয়েস সার্চ টুলস মাত্র, কিন্তু আইওএস ১০ থেকে Siri আপনার ডিভাইসের পারসোনাল এসিসটেন্স হিসেবে কাজ করবে!
অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েড এর লেটেস্ট সংস্করন Android Nougat বা সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড ৭.১ হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েডের বেস্ট রিলিজ এখন পর্যন্ত। শুরুর দিকে গুগল পিক্সেল ফোনে এক্সুসিভভাবে অ্যান্ড্রয়েড ৭.১ দেওয়া থাকলেও এখন অন্যন্য অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেও অ্যান্ড্রয়েড ৭ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আইওএস এর Siri এর আপডেটের মতো অ্যান্ড্রয়েড ৭ এ রয়েছে গুগল এসিসটেন্স। যা আপনার মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করার অভিজ্ঞতাই বদলে দিবে।
অ্যান্ড্রয়েড ৭ য়ের একটি ফিচার হলো মাল্টি টাস্কিং! এখন একই সাথে দুটি এপপসে স্পিল্ট-স্ক্রিণের মাধ্যমে কাজ করা যাবে। এছাড়াও রিসেন্ট বাটনে ডাবল প্রেস করলে আপনার মোস্ট ইউজড দুটি অ্যাপসের মধ্যে চলে যাওয়া যাবে। তাছাড়া নোটিফিকেশন শেড, কুইক সেটিংস এবং মেইন সেটিংসগুলোকে আরো সহজবোধ্য করে দেওয়া হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৭ Nougat এ।
অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হচ্ছে এর ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট সিস্টেম। গুগলের তত্বাবধানে নিয়ন্ত্রিত অ্যান্ড্রয়েড এর মূল সোর্স কোড প্রজেক্টে AOSP বা অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্ট বলা হয়ে থাকে। AOSP এর নামের মতো এটি হচ্ছে একটি ফ্রি এবং ওপেন অপারেটিং সিস্টেম যা যে কেউ ব্যবহার এবং মডিফাই করতে পারবে। অনেক সময় গুগল ডেভেলপারস নিজেও এইসব ওপেন সোর্স থেকে আইডিয়া নিয়ে নিজেদের কাস্টম ওএস বানিয়ে থাকেন।
গুগল ব্যতিত অন্য ছোটখাট ডেভেলপার মিলে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওএস কে মডিফাইড যে কাস্টম রম বানিয়ে থাকেন এদের কে থার্ড পার্টি রম বলা হয়। রম হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ওএস এর মূল কোড। এই কোডকে কোনো অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ইন্সটল করাকে মোবাইল ফ্ল্যাশিং বলা হয়।
এই মুক্ত কাস্টমাইজেশন এ জন্য অ্যান্ড্রয়েড এর অনেকগুলো ইউনিক ফিচার সমৃদ্ধ ডিভাইস বাজারে আসতে সক্ষম হয়েছে। ধারণা করা হয় বাজারে ৫০০০ এর মতো ভিন্ন ভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস রয়েছে। এদের প্রত্যেকটিতে আলাদা ফিচার এবং আলাদা মডিফিকেশন করা হয়েছে। যার সবই সম্ভব হয়েছে এই অ্যান্ড্রয়েডের ওপেন সোর্স প্রজেক্টের কল্যাণে!
এপল ইউজারদের কাছে আইশিপ হচ্ছে একটি কমন মিথ! হাস্যকরও বটে! এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি তার আইওএস ডিভাইসকে এপলের কথা মতো অন্ধভাবে ফলো করে থাকে তার উপর আইশিপ এর প্রভাব থাকে বলে মনে করা হয়। যেখানে অ্যান্ড্রয়েডে হাজারো কাস্টমাইজেশনের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে আইওএস ইউজারদের সামনে গুটিকয়েক অপশন ছাড়া তেমন কিছুই নেই।
বর্তমানে আইফোনের ৫টি মডেল আর ওদিকে আইপ্যাডের ৩টি মডেল আপনি বাজারে কিনতে পারবেন! কোথায় হাজারো অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস আর কোথায় ৮টি এপল ডিভাইস! তবে এপল ইউজাররা মনে হয় হাজারো কাস্টমাইজেশনের থেকে নতুন আইওএস ডিভাইসের বিল্ট ইন ফিচার দিয়েই তাদের কাজ চালিয়ে নিতে পছন্দ করেন! লোল! এপল নতুন সংস্করণ যা যা ফিচার দিচ্ছে তার ইউজাররা অন্ধের মতোই তা গ্রহন করে নিচ্ছে। যেখানে ইউজার কাস্টমাইজেশনের তেমন কোনো স্বাধীনতা নেই। এই অবস্থাকেই আই’শিপ সিচুয়েশন বলা হয়!
একটি উদাহারণ দেওয়া যাক:
মোবাইল ডিভাইসের পারফরমেন্সের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে এর প্রসেসর। প্রসেসর যত গতিশীল এবং ভালো হবে আপনার ডিভাইস তত চমৎকার কাজ করবে। অ্যান্ড্রয়েডে আপনি ইন্টেল, স্ন্যাপড্রাগন, ইক্সিনস, মিডিয়াটেক, কিরিন সহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রসেসরযুক্ত ডিভাইসগুলোর থেকে আপনার চাহিদা এবং বাজেটমত ডিভাইস পছন্দ করে নিতে পারছেন! অন্যদিকে এপল ডিভাইসে শুধু এপল প্রসেসর থাকে! পছন্দ করার অপশন কই?
বেসিক সফটওয়্যার এক্সপেরিয়েন্সের দিক থেকে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস প্রায় একই রকম রয়েছে। দুটিতেই ইউজারদের লক স্ক্রিণে সোয়াইপ বা অথেনটিকেশন করে সিস্টেমে প্রবেশ করতে হয়। সিস্টেমে প্রবেশ করে আপনি কিছু কমন এপপসযুক্ত হোমস্ক্রিণ পাবেন। দুটি ওএস এর রয়েছে বিশাল অ্যাপস স্টোর, যেখান থেকে আপনি দরকারি অ্যাপসগুলো আপনার ডিভাইসে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে পারবেন।
সত্যিকার অর্থে আপনি এই দুটি ওএস যে এক সাথে মাত্র একটিই অ্যাপস চালাতে পারবেন। মাল্টি টাস্ক এর সুযোগ শুধুমাত্র লেটেস্ট এবং হাই এন্ড কোয়ালিটির অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস ডিভাইসে দেওয়া রয়েছে। তবে সেখানেও অধিকাংশ সময় একটি অ্যাপস ডিসপ্লেতে থাকবে এবং অন্য অ্যাপসটি ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং হতে থাকবে। ডেডিকেটেড লিস্ট থেকে আপনি আপনার রিসেন্ট ইউস করা অ্যাপস লিস্ট পাবেন যেখান থেকে দ্রুত ব্যবহারের জন্য দরকারি অ্যাপসগুলো সাজানো থাকবে। দরকার ফুরিয়ে গেলে স্ক্রিণ থেকে অ্যাপসটি সোয়াইপ করে বাদ দিয়ে সেটিকে বন্ধ করে দিতে পারবেন।
টপ স্ক্রিণ থেকে সোয়াইপ ডাউন করলে অ্যান্ড্রয়েডে নোটিফিকেশন শেড দেখতে পাবেন। এটি এক ধরনের ড্রপ ডাউন মেনু যেখানে বিভিন্ন নোটিফিকেশন এবং সার্ভিস স্টেটাস দেওয়া থাকে। অন্য দিকে আইওএস তাদের কুইক সেটিং প্যানেলকে তাদের ডিভাইসের নিচের দিকে সেট করে রেখেছে।
রাস্তায় যেমন সকল গাড়ির চারটি চাকা, একটি স্টেয়ারিং হুইল থাকে তেমনি সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এর বেসিক দিক দিয়ে তেমন কোনো পাথর্ক্য নেই।
হোম স্ক্রিণ হচ্ছে আপনার ডিভাইসের মূল কার্যস্থল। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস দুটিরই হোম স্ক্রিণ রয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েডে আপনি আলাদা এপপ ড্রয়ার পাচ্ছেন। অন্যদিকে আইওএসয়ে এই এপপ ড্রয়ার ফিচারটি নেই, সেখানে সকল অ্যাপসকে হোমস্ক্রিণে ঠাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে কিছু কথা রয়েছে, LG G5 অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে কোনো এপপ ড্রয়ার নেই। সেগুলো আলাদা কথা।
অ্যান্ড্রয়েডে আরেকটি চমৎকার ফিচার হচ্ছে, এখানে আপনি থার্ড পার্টি লাঞ্চার ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের হোমস্ক্রিণের মজা নিতে পারবেন। অন্য দিকে আইওএসে লাঞ্চার ব্যবহারের সুযোগ নেই। বরং আইওএস লাঞ্চার ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েডে আইওএস এর মজাও আপনি নিতে পারবেন! লাঞ্চার হলো এক ধরনের ফুল ডেস্কটপ ম্যানেজিং এপপ যেটা আপনার সম্পূর্ণ ডিভাইসকে নতুন রূপে রুপান্তরিত করে। লাঞ্চারে নিজস্ব আলাদা আইকনস, ফোল্ডার, নিজস্ব ফিচারসমৃদ্ধ এপপস, বিভিন্ন লেয়ারস থাকে যেটা ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার ডিভাইসে বৈচিত্রতা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।
নতুন আইওএস ১০ য়ের হোমস্ক্রিণে একটি সাইডওয়ে সোয়াইপ অপশন রয়েছে যেখানে Siri এর নিউজ এবং সার্চ পেজ ফিচারগুলো পাবেন। অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য গুগলের নিজস্ব পিক্সেল লাঞ্চার রয়েছে। যেটি ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের হোম স্ক্রিণকে গুগল পিক্সেল ফোনের হোম স্ক্রিণের মতো করে ফেলা যাবে। আর অতিরিক্ত ফিচার হিসেবে সাইডওয়ে সোয়াইপে গুগল নাও এবং গুগল এসিসটেন্স রয়েছে।
সবশেষে বলা যায়, হোমস্ক্রিণ কাস্টমাইজেশনের দিক থেকে আইওএস থেকে অ্যান্ড্রয়েড সেরা।
প্রতিবার মোবাইল চালু করার পর এক্সট্রা ইনফরমেশন পাবার জন্য কিংবা মোবাইলে সিকুরেটি প্রদানের জন্য লকস্ক্রিণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান যুগের হাই এন্ড ডিভাইসগুলোতে বায়োমেট্রিক লকস্ক্রিণ সিস্টেম (যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ফিচার) দেওয়া থাকে। এছাড়াও পিনকোড, পাসওর্য়াড কিংবা অ্যান্ড্রয়েডে প্যাটান সিস্টেমও রয়েছে সিকুরেটির জন্য।
হোমস্ক্রিণের মতোই অ্যান্ড্রয়েডে থার্ড পার্টি লকস্ক্রিণ ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি লকস্ক্রিণে বৈচিত্রতা আনতে পারবেন। কিন্তু অন্য দিকে আইওএস ডিভাইসগুলোতে লকস্ক্রিণ কাস্টমাইজেশনের সুযোগ নেই।
এপল এবং গুগলের ওএসগুলোর দুটিতে ড্রপ ডাউন নোটিফিকেশন টুল রয়েছে যার কাজ হলে আপনার চেকিংয়ের জন্য বিভিন্ন নোটিফিকেশনকে তুলে ধরা। এছাড়ও দুটিতে কল কিংবা মেসেজ আসলে পপআপ নোটিফিকেশনের ফিচার দেওয়া রয়েছে। গুগলের নোটিফিকেশন শেডে প্রত্যেকটি নোটিফিকেশনকে বাটনযুক্ত একশনে রূপান্তর করে দেওয়া হয়েছে।
নোটিফিকেশন বারে থেকেই আপনি মেসেজের রিপ্লে দিতে পারবেন, মিউজিক পরিবর্তন করতে পারবেন, ইমেইলের রিপ্লে দিতে পারবেন মূল এপ্লিকেশনটি ওপেন না করেই! এছাড়া নোটিফিকেশন শেডের পাশেই কুইক সেটিংস দেওয়া রয়েছে। যেখানে অ্যান্ড্রয়েড আপনাকে ডিসপ্লে ব্রাইটনেস, ভলিউম, ওয়াই ফাই, ব্লু-টুথ, ফ্ল্যাশ লাইট চালু-বন্ধ করা সহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকবে।
অন্যদিকে আইওএসয়ের হোম স্ক্রিণে সোয়াইপ ডাউন করলে শুধুমাত্র নোটিফিকেশন দেখাবে। আর নিচ থেকে সোয়াইপ আপ করলে কুইক সেটিংস পপআপ করবে। আইওএস কুইক সেটিংসয়ে ডেডিকেটেড মিউসিক প্লেব্যাক অপশন দেওয়া রয়েছে। তবে আইওএসে এটাও কাস্টমাইজেশনের সুবিধা দেওয়া হয়নি।
বর্তমান যুগের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মূল পাওয়ার হচ্ছে তাদের এপপস এবং সার্ভিসগুলোর সেবা। এই এপপস এবং সার্ভিসগুলোকে নিরাপদ ভাবে ইউজারদের কাছে পৌছে দেবার জন্যই প্রত্যেকটি অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব এপপস ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যার্টফর্ম রয়েছে। এক্ষেত্রে গুগল প্লে-স্টোর এবং এপল এপ স্টোর রয়েছে তাদের ইউজারদের জন্য। দুটি প্লার্টফর্মেরই কাজ একই হলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
আইওএস এর আইফোন এবং আইপ্যাডকে ফুল ফাংশন দেবার জন্য পিসির প্রয়োজন হয়। পিসি ছাড়াও আপনি আইফোন, আইপ্যাড, আইপড চালাতে পারবেন কিন্তু পিসিতে আইটিউনস সেটআপ করে আপনার ডিভাইসে কানেক্ট করা ছাড়া আপনি আপনার এপল ডিভাইসে মিউজিক, ফটো, মুভি ইত্যাদি কপি করতে পারবেন না। এছাড়াও আইটিউনস ছাড়া আপনার এপল ডিভাইস আপনি ব্যাকআপ বা রিকোভারী কিংবা ফ্ল্যাশ মারতেও পারবেন না।
দ্যা এপল এপপ স্টোরে অফিসিয়ালি ১.৫ মিলিয়ন অ্যাপস রয়েছে যাদের মধ্যে ৩০ ভাগ এপপ ফ্রিতে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। বাকি ৭০ ভাগ অ্যাপস আপনি ব্যবহার করতে চাইলে কমপক্ষে ১ ডলার খরচ করতে হবে! আইটিউনস ছাড়া আপনি এপল ডিভাইসের পূর্ণাঙ্গ মজা উপভোগ করতে পারবেন না। আর আইটিউনস ব্যবহার করার জন্য আপনার একটি কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে।
অন্যদিকে গুগল প্লে-স্টোরে অফিসিয়ালি ১.৬ মিলিয়ন অ্যাপস রয়েছে। আর আনঅফিসিয়ালি কত অ্যাপস রয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। আর এপল ডিভাইসের মতো, অ্যান্ড্রয়েডে আপনাকে পিসি সহযোগীতার দরকার হয় না। সকল অ্যাপসের ইন্সটলেশন, ব্যাকআপ এবং রিকোভারীর সকল কাজ মোবাইল ডিভাইসেই করা সম্ভব হয়ে থাকে।
এছাড়াও আরেকটি ফিচার হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েডে সাইড লোড অ্যাপস ব্যবহার করা যায়। যে কেউ অ্যান্ড্রয়েডে তাদের নিজস্ব এপপস বানাতে পারবে এবং তা ইন্সটল করতে পারবে। অ্যান্ড্রয়েডের এই সহজলভ্য সাইড লোড অ্যাপস ফিচারের কারণে অনেক তরুণ ডেভেলপারস এপপ নির্মাণ করে তাদের ক্যারিয়ার গড়ে নিচ্ছেন।
কিন্তু আইওএস ডিভাইসে জেইলব্রেকিং ছাড়া আপনার নিজস্ব এপপস ইন্সটল করার জন্য আপনাকে একটি পেইড ডেভেলপার একাউন্ট দরকার হবে এবং এপপ স্টোরের মাধ্যমে আপনাকে আপনার নিজস্ব এপপসটি ডিভাইসে ইন্সটল করতে পারবেন।
এছাড়াও অ্যান্ড্রয়েড বিভিন্ন ওপেন অ্যাপস প্ল্যার্টফর্ম সার্পোট করে। যেমন আমাজন অ্যাপসস্টোর ইন্সটলের মাধ্যমে আপনি অ্যান্ড্রয়েডে প্লে-স্টোরের পাশাপাশি আরেকটি অ্যাপস প্ল্যার্টফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু আইওএস য়ে এই ফিচার টি নেই।
পারফরমেন্স হচ্ছে আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েডের পার্থক্যের মূল বিষয়। আইওএস তাদের ডিভাইসের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে কঠোর ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে গুগল শুধুমাত্র তাদের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে আর হার্ডওয়্যারের বিষয়টি অন্য কোম্পানির উপর ছেড়ে দেয়।
আপনি যদি শুধু ওয়েব ব্রাউজিং, সোশাল নেটওর্য়াক চেকিং, ছবি তুলা, গান শুনা, মুভি দেখার আর ফোন করার জন্য মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে থাকেন তাহলে পারফরমেন্স ক্ষেত্রটি আপনার জন্য পীড়াদায়ক হবে না। এক্ষেত্রে ৬ হাজার টাকার অ্যান্ড্রয়েড আর ৪০ হাজার টাকার আইফোন আপনার কাছে একই ধরনের মনে হবাটাই স্বাভাবিক।
পারফরমেন্সের জন্য হার্ডওয়্যারের ভূমিকা বেশি থাকে সফটওয়্যারের চেয়ে। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোতে আপনি আপনার বাজেট এবং চাহিদা অনুসারে হার্ডওয়্যার বাছাই করে নিতে পারবেন। ৬৪ বিট অক্টা কোর প্রসেসর থেকে ৩২ বিট ডুয়াল কোর প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট র্যাম থেকে ৫১২ মেগাবাইটে র্যাম, ৪ গিগাবাইট রম থেকে ৩২, ৬৪ এমনকি আজকাল ১২৮ গিগাবাইটের রমযুক্ত অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বাজারে দেখা যাচ্ছে। এছাড়ও অনান্য হার্ডওয়্যার ফিচার যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, বিভিন্ন মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেন্সর ইত্যাদি আপনি বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে পেয়ে থাকবেন।
কিন্তু একই হার্ডওয়্যারযুক্ত অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের পারফরমেন্সও একই হবে এই ধারণাটি একদমই ভুল! কাগজে কলমে একই হার্ডওয়্যারযুক্ত বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড সেটেও আপনি পারফরমেন্সের পার্থক্য দেখতে পাবেন। প্রায় ৭/৮ বছর ধরে আইফোন তার ডুয়াল কোর প্রসেসর এবং ৫, ৮, ১২ মেগাপিক্সল ক্যামেরা দিয়ে পারফরমেন্সের শীর্ষ স্থান রেখেছিল যেখানে অ্যান্ড্রয়েড এর থেকেও বেশি হার্ডওয়্যার ক্যাপাসিটিযুক্ত ডিভাইস দিয়েও তেমন বাজার মাতাতে পারে নি। কিন্তু এখন বর্তমান যুগে এপল আর অ্যান্ড্রয়েড পারফরমেন্সে ক্ষেত্রে হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে রয়েছে।
অ্যান্ড্রয়েড না আইওএস সেরা? সেটা চিরন্তন বির্তক হয়ে থাকলেও ব্যক্তিবিশেষে এটার রেজাল্ট আপনার পছন্দের উপরই নির্ভর করে। আপনার দৈনিক মোবাইলের ব্যবহারের উপর এই সেরা বা ফালতুর জিনিসটি নির্ভর করে। তাছাড়াও আপনার ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশান ইত্যাদিও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে থাকে।
আপনি যদি আপনার মোবাইল ডিভাইসকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চান, বিভিন্ন খুটিনাটি ফাংশনগুলোকে নিজের মতো কাস্টমাইজেশন করে নিতে চান তাহলে অ্যান্ড্রয়েড আপনার জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে আপনি যদি মোবাইলের খুটিনাটি না ঘেঁটে কোম্পানির উপর নিজের ভরসা রেখে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে চান তাহলে আইওএস আপনার জন্য।
আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলা যায়, আইওএস ডিভাইসগুলোর ফিচার অনুসারে আপনাকে চলতে হবে! অন্যদিকে আপনার চাহিদামত ফিচার অনুসারে অ্যান্ড্রয়েড আপনাকে ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে। আইওএসের সীমাবদ্ধতা থেকে কাজ করতে পারলে আপনার জন্য আইওএস বেস্ট। কিন্তু বাজেটের মধ্যে পছন্দসই মোবাইল পেতে হলে আপনাকে অ্যান্ড্রয়েডের দিকে আসতেই হবে।
আজ এ পর্যন্তই। আগামীকাল অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো টেকটিউনসে। আর টিউন সম্পর্কে যেকোনো মতামত জানাতে টিউমেন্ট করতে ভুলবেন না যেন। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ছবিসুত্র: Android Authority ডট কম এবং Tab Times ডট কম।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
Kono kisui secure na… Specially manush… Kintu cholte gele bisshas na koreo upay nai… Android the best… But if someone talk about security then there is no other choice than ios. (Amra mango people, android er security e enough amader)