সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে ওভার ক্লকিং এর প্রয়োজনীয়তা, সুবিধা কিংবা অসুবিধা নিয়ে আমার আজকের টিউন।
যখন আপনি কোন হার্ডওয়্যার বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কিনবেন তখন থেকেই তার মালিক আপনি, কোম্পানি উক্ত ডিভাইসের সেফটির জন্য কোন কোন সতর্কতা দিয়েছে সেটা কোন ব্যাপার না। আপনার সুবিধা মতো আপনি ডিভাইসকে কাস্টমাইজ করতে পারেন। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বা খেলনা একদিনের বেশি টিকতো না। যা পেতাম তাই খুলে ফেলতাম। শুধু মাত্র টেবিল ঘড়ি ছাড়া বাকি জিনিসগুলো খুলে ফেলার পরেও কয়েকদিন করে ব্যবহার করতে পারতাম। যাহোক, আজকের আলোচনা আমার খেলনা বিষয়ে না বরং স্মার্টফোন বা কম্পিউটার বিষয়ে। টিউনের শিরোনাম দেখেই হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন আজ কী বলতে যাচ্ছি। কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনগুলো হলো একগাদা সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের একটা পারফেক্ট কম্বিনেশন। সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার একটা আরেকটার উপর নির্ভরশীল। সফটওয়্যারগুলো তৈরী করা হয় হার্ডওয়্যারগুলোকে চালানোর জন্য। তবে ম্যাক্সিমাম হার্ডওয়্যার ক্যাপাবিলিটির চাইতে কম পারফরমেন্স দেয়। কারণ হার্ডওয়্যারগুলো চালানোর জন্য যে সফটওয়্যারগুলো সেটাপ করা থাকে সেগুলোর অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে ডিভাইসটি যাতে দীর্ঘদিন ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। আপনি যদি একজন দক্ষ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে হার্ডওয়্যারগুলোকে আরেকটু কর্মক্ষম করে ডিভাইসকে দ্রুত গতির করতে পারেন। এটাকেই মূলত সহজভাবে ওভার ক্লকিং বলা হয়। ওভার ক্লকিং এর ফলে ডিভাইসের পারফরমেন্স অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়।
ওভার ক্লকিং বলতে কী বোঝায় এই বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করেছি একটু আগেই। এখন এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায় আসবো। ওভার ক্লকিং হলো সিস্টেম সেটিংসকে পরিবর্তন করার এমন পদ্ধতি যাতে পুরো সিস্টেম এবং এর প্রত্যেকটি উপকরণ ম্যানুফেকচারারদের তৈরি করা অবস্থার চাইতে দ্রুতগতিতে রান করে। সাধারণত ডিভাইসের পারফরমেন্স বৃদ্ধি করার জন্য আমরা দুইটা কম্পোনেন্ট এর ওভার ক্লকিং করে থাকি। এদের একটা হলো সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) এবং অন্যটা হলো র্যানডম এক্সেস মেমোরি (RAM / ফিজিক্যাল মেমোরি)। মুচকি হেসে হয়তো ভাবছেন এ দুটোর ওভার ক্লকিং করলে বাকি থাকলো কী? যাহোক, চলুন এ দুটোর ওভার ক্লকিং সম্পর্কে জেনে নেই, সাথে সুবিধা অসুবিধা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা তো থাকবেই।
প্রত্যেকটি সিপিইউ কোরগুলোতে এমন কিছু আছে যেটাকে আমরা বলি “Front Side Bus Speed”। এটাই হলো এক্সটার্নাল ফ্রিকোয়েন্সির ভিত্তি যা মাদারবোর্ডের সবগুলো যন্ত্রাংশকে রান করে। প্রত্যেকটি সিপিইউ এর ভেতরে একটি করে মাল্টিপ্লায়ার আছে যা ইন্টারনাল ফ্রিকোয়েন্সিকে বহুগুণে বিবর্ধিত করে দেয় যাতে এটা বাকি সিস্টেমের সাথে নির্ভুলভাবে সময় সমন্বয় করতে পারে। এখন মাল্টিপ্লায়ার ফ্রিকোয়েন্সিকে যতো বেশি বিবর্ধিত করবে Front Side Bus Speed ততো বেশি হবে এবং ডিভাইস পারফোরমেন্স ততো ভালো হবে। সাধারনত আমরা ওভার ক্লকিং করে মাল্টিপ্লায়ার বাড়িয়ে দিয়ে Front Side Bus Speed বেশি করি। এর ফলে সিপিইউ বেশি ফ্রিকোয়েন্সির জন্য ইলেকট্রিসিটি গ্রহণ বাড়িয়ে দেয়। এবং সিপিইউকে স্ট্যাবল ভাবে রান করার জন্য কিছুটা ভোল্টেজও বেড়ে যায়।
ফিজিক্যাল মেমোরি (র্যাম) ওভার ক্লকিং করতে হলে মূলত ভোল্টেজ বাড়িয়ে দিতে হবে যাতে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেশি ফ্রিকোয়েন্সি লেভেল অর্জন করতে পারে। তবে র্যাম ওভার ক্লকিং করার সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে যদি বেশি পরিমাণে ওভার ক্লকিং করে ফেলেন তাহলে র্যাম আনস্ট্যাবল হয়ে যাবে এবং সিস্টেম কাজ করা বন্ধ করে দিবে। তবে সিপিইউ আর র্যাম এর যেকোনো ধরনের কন্ট্রোল বা চেইঞ্জ বায়োস থেকে করা যায়। বর্তমান সময়ে এক্সট্রিম লেভেলের হার্ডওয়্যারগুলোকে সফটওয়্যার কর্তৃক মডিফাই করার সিস্টেম দেওয়া আছে।
ব্যবহারকারীরা র্যাম এর পাশাপাশি গ্রাফিক্স কার্ডকেও ওভার ক্লক করতে পারবে। এতে করে তাদের গেইমিং এক্সপেরিয়েন্সে একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। গ্রাফিক্স কার্ডগুলোতে দুইটা অংশ থাকে। একটা কোর ফ্রিকোয়েন্সি আরেকটা মেমোরি ফ্রিকোয়েন্সি। হাই কোয়ালিটি গ্রাফিক্স কার্ডে সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফেয়ারলি ওভার ক্লকিং করা যায়।
কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোনে ওভার ক্লকিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে ওভার ক্লকিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা বিষয়ে আপনার সম্যক ধারণা রাখতে হবে। না হলে কেন ওভার ক্লকিং করলেন এই প্রশ্নের উত্তর নিজের মনের কাছেই নিজে দিতে পারবেন না। যাহোক, ওভার ক্লকিং এর প্রধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো এর পারফরমেন্স এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। ওভার ক্লকিং এর ফলে আপনার সিস্টেম আগের চাইতে অনেক দ্রুতগতির এবং স্মুথ হবে। এর ফলে যেকোনো হ্যাভি সফটওয়্যার খুব সহজে এবং সুন্দরভাবে রান করতে পারবেন। সর্বোপরি সিস্টেমের ক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে ওভার ক্লকিং করতেই হবে।
কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয় এ কথা আমরা সবাই জানি। সেই সাথে সাইড ইফেক্ট বলে যে একটা জিনিস আছে সেটা আমাদের হয়তো নতুন করে বোঝাতে হবে না। ইলিশ আর বেগুন খেতে ভালো লাগলেও খাওয়া শেষে যে এলার্জিক সমস্যা হবে এটা চিরন্তন। যাহোক, এবার ওভার ক্লকিং এর সমস্যাগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। ওভার ক্লকিং করলে প্রত্যেকটি কম্পোনেন্ট অনেক বেশি হিট তৈরি করবে। সুতরাং ডিভাইসের কুলিং সিস্টেমের উপর একটু এক্সট্রা নজর দিতে হবে। তাছাড়া আপনাকে যেহেতু সেটিংস সমূহ পরিবর্তন করতে হবে সেহেতু সিস্টেম যাতে স্ট্যাবল থাকে সেই দিকে নজর দিতে হবে। তাছাড়া ওভার ক্লকিং হলো ম্যানুফ্যাকচারার যে সেটিংস তাদের যন্ত্রাংশের জন্য বরাদ্দ করেছে সেটাকে অতিক্রম করা। তাই এক্ষেত্রে আপনার পণ্যের ওয়ারেন্টি যে বাতিল হবে এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে হবে। তাছাড়া ওভার ক্লকিং এর ফলে যন্ত্রাংশ চিরতরে বিকল হয়ে যেতে পারে।
মোবাইল ফোনে যারা ওভার ক্লকিং করতে চান তাদের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে, ওভার ক্লকিং এর ফলে ফোন এর চার্জ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া ফোনে যেহেতু এক্সটারনাল কুলিং সিস্টেম নাই তাই এক্ষেত্রে ডিভাইস অতিরিক্ত গরম হয়ে সারা জীবনের জন্য অকেজো হয়ে যেতে পারে।
আপনি ওভার ক্লকিং করবেন কিনা এটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজনের উপর নির্ভরশীল। আপনি আসলে কোন ধরনের কাজ করেন সেটার উপর নির্ভর করবে আপনার ওভার ক্লকিং এর প্রয়োজনীয়তা। না হলে মিছেমিছি ওভার ক্লকিং করার কোন মানে হয় না। কারণ আমরা অধিকাংশ সময় আমাদের জন্য সিস্টেম কর্তৃক বরাদ্দকৃত সুবিধাগুলোই ব্যবহার করতে পারি না। তার উপরে ওভার ক্লকিং করলে বাড়তি সুবিধা দিয়ে করবো কী? আপনি যদি একজন গেইমার হয়ে থাকেন কিংবা গ্রাফিক্স রিলেটেড কাজ করেন এবং অবশ্যই সিস্টেম কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধায় সন্তুষ্ট না থাকেন তাহলেই আপনি ওভার ক্লকিং করতে পারেন।
টিউনের প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি। তবে এখনও একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শেয়ার করার বাকি। সেটা হলো ওভার ক্লকিং কীভাবে করতে হয়। যদিও যারা ওভার ক্লকিং এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন তারা কম্পিউটারে বায়োস সেটিংস থেকে ওভার ক্লকিং করতে পারবেন। আর যারা ফোনে করতে চান তাদেরকে কষ্ট করে আমার নেক্সট টিউন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ আজকের টিউন এমনিতেই অনেক বড় হয়ে গেছে। আপনারা কে কে ওভার ক্লকিং এর প্রতি আগ্রহী তারা টিউমেন্ট করে নিজেদের আগ্রহের কথা জানাতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের সত্যিকারের আগ্রহের উপর ভিত্তি করেই আমার পরবর্তী টিউন আসবে। তা না হলে উলু বনে মুক্তা ছড়ানোর মতো ভুল হয়তো আমি নাও করতে পারি।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
➡ ইমেইলে আমার সকল টিউনের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ টেকটিউনস » সানিম মাহবীর ফাহাদ 🙄
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
Onak din pora.onak kajer tune.many many thanks….