সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি কম্পিউটার অত্যধিক গরম হয়ে যাওয়ার কারন, এর জন্য দায়ী যন্ত্রাংশ এবং কম্পিউটারের উপর অত্যধিক তাপের প্রভাব সম্পর্কিত আমার আজকের টিউন।
➡ কম্পিউটার গরম হয়ে যাওয়া বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে চরম উদ্বেগের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের কাছে কম্পিউটার গরম হলে নিজের শরীরে জ্বর আসার মতো অনুভুতি সৃষ্টি হয়। কম্পিউটারকে আমরা অনেক বেশি ভালোবাসি বলেই হয়তো এরকম হয়। এখন প্রশ্ন হলো কম্পিউটার গরম হলে আমরা যতোটা উদ্বিগ্ন হই আসলেই কি কম্পিউটার গরম হওয়া ততোটা উদ্বেগের কারন? আজ আমরা জানবো কম্পিউটার কেন অত্যধিক গরম হয়, কম্পিউটারের কোন ধরনের প্রোগ্রাম এই তাপমাত্রা সৃষ্টির জন্য দায়ী, কোন যন্ত্রাংশগুলো তাপমাত্রা উৎপন্ন করে, কম্পিউটারের উচ্চ তাপমাত্রার ফলাফল এবং উচ্চ তাপমাত্রা সর্বোপরি কম্পিউটারের পারফরমেন্স এর উপর কতোটুকু প্রভাব ফেলে। সম্পূর্ণ টিউন শেষে আপনি কম্পিউটার কুলিং সিস্টেম এবং উচ্চ তাপমাত্রায় করণীয় বিষয়েও কিছুটা ধারনা পাবেন। তাছাড়া সম্পূর্ণ টিউনের উপর ছোট্ট একটি কুইজ তো থাকছেই।
সাধারনত অনেকগুলো বৈদ্যুতিক সার্কিটের মধ্যে তড়িৎ চুম্বকীয় প্রবাহের কারনে এবং এর অভ্যন্তরিন রোধের কারনে তাপ নির্গত হয়। তারমানে কম্পিউটারের পাওয়ার সিস্টেম তার তাপমাত্রা সৃষ্টির জন্য দায়ী। কম্পিউটারের LED (আলোক নিঃসরণকারী ডায়োড) থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেক যন্ত্রাংশ কমবেশি তাপ উৎপন্ন করে। কিন্তু সবগুলো যন্ত্রাংশের উৎপন্ন তাপ সামগ্রিম সিস্টেমের উপর একই রকম প্রভাব ফেলে না। আসলে যে যন্ত্র যতো জটিল কাজ করে সেই যন্ত্র ততো বেশি তাপ উৎপন্ন করে। এখন যদি প্রশ্ন করি, কম্পিউটারের কোন যন্ত্রাংশ সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন করে? প্রশ্নের উত্তরে হাত তুলে অনুমতি না নিয়েই ঝটপট বলে দিতে পারবেন কম্পিউটারের কোর - সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ) এবং গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন করে। কারন এই যন্ত্রাংশগুলোই মূলত কম্পিউটারে সব ধরনের জটিল কাজ নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
কম্পিউটারের যাবতীয় এলগরিদম ঠিকভাবে চালনার জন্য সিপিইউ অনবরত কাজ করে থাকে। এরফলে সিপিইউ থেকে প্রচুর তাপ নির্গত হয়। ইমেজ প্রসেসিং, গেইম কিংবা ৩-ডাইমেনশনাল ভিউ এর জন্য গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট যখন কাজ করে তখনো প্রচুর তাপ নির্গত হয়। যদিও কম্পিউটারের অধিকাংশ তাপ সিপিইউ এবং জিপিইউ থেকে উৎপন্ন হয় তথাপি কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ, সিডি/ডিভিডি রোম থেকেও তাপ নির্গত হয় বিশেষ করে যখন কোন বড় ফাইল কপি করা হয়। তবে আপনার কক্ষ তাপমাত্রাকেও এক্ষেত্রে অবজ্ঞা করার কিছু নেই। কক্ষ তাপমাত্রা যদি ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর চাইতে বেশি হয় তাহলে কম্পিউটার থেকে অস্বাভাবিক তাপ নির্গত হয়। কারন কক্ষ তাপমাত্রার সাথে সবকিছুর তাপমাত্রা সমান থাকে।
কম্পিউটার যদি অত্যধিক গরম হয়ে যায় তখন কম্পিউটারের নিজস্ব কুলিং সিস্টেমের কারনে সিপিইউ, মেমোরি ব্যাংক এবং মাদারবোর্ড সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশগুলো তাপমাত্রা কমানোর জন্য ধীর গতিতে কাজ করে। কম্পিউটারের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য অনেক সময় সিস্টেম নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে নতুন ফ্যান লাগানোর আগে পর্যন্ত কম্পিউটার চালানোর উপযুক্ত থাকে না। তাছাড়া অত্যাধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সিপিইউ ওভার ক্লকিং হয়। যার মানে হলো সিপিইউ তার ম্যানুফ্যাকচারার কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতার চাইতেও অধিক দ্রুতগতিতে কাজ করতে চায়। এক্ষেত্রে সিপিইউ স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে।
আমরা মনে করি কম্পিউটারের বয়স বেশি হলে ধীরগতির হয়ে যায়। আসল কথা হলো সময়ের সাথে কম্পিউটারের কাজের ক্যালকুলেশনে ছোটখাটো ত্রুটি দেখা দেওয়া শুরু করে। ফলে সিপিইউ যখন এগুলো সংশোধন করতে যায় তখন এর উপর অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি হয় এবং কম্পিউটার গরম হয়ে যায়। আর সিপিইউ গরম হলে এর নিজস্ব কুলিং সিস্টেম যন্ত্রাংশগুলোকে ধীরগতির করে উচ্চ তাপ কমাতে চেষ্টা করে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহারে কম্পিউটারের ভেতরে যদি অনেক বেশি ময়লা জমা হয় তাহলেও ওভার হিটিং এর কারনে কম্পিউটার ধীরগতির হয়ে যায়।
যেহেতু হার্ড ড্রাইভ কম্পিউটারের সিপিইউ কিংবা জিপিইউ এর মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না সেহেতু হার্ড ড্রাইভ খুব বেশি পরিমাণে তাপ উৎপন্ন করে না। কিন্তু সমস্যা হলো হার্ড ড্রাইভ তাপ উৎপন্ন না করলেও এটি তাপমাত্রার প্রতি অনেক বেশি সংবেদনশীল। সামান্য তাপমাত্রার পরিবর্তনও হার্ড ডিস্ক এর উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি যদি হার্ডডিস্ককে কক্ষ তাপমাত্রার চাইতে মাত্র ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রায় ব্যবহার করেন তাহলে এটা তার জন্য নির্ধারিত জীবনকালের দুই বছর আগেই বিকল হয়ে যাবে। প্রশ্ন হতে পারে কেন এমনটা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আপনাকে পদার্থবিদ্যার সামান্য সাহায্য নিতে হবে। তবে পদার্থবিদ্যার এই জ্ঞানটুকু আপনার প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময়েই হয়েছে আশা করছি।
আমরা জানি তাপে বস্তু প্রসারিত হয় এবং ঠান্ডায় বস্তু সংকোচিত হয়। সেই কারনেই বিদ্যুতিক তারগুলোকে ঢিলা এবং রেললাইনের মাঝে ফাঁক রাখা হয়। যাহোক, আমরা জানি হার্ডডিস্কের মধ্যে মেটাল ডিস্ক রয়েছে যেগুলোতে ডাটা সঞ্চিত থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডিস্ক প্যালেটগুলো সামান্য প্রসারিত হয় ফলে সেখান থেকে ডাটা রিড করতে ঝামেলা হয়। ৩ বছরের বেশি পুরাতন হার্ড ড্রাইভগুলোতে এই সমস্যাগুলো খুব বেশি পরিমাণে হয়। কারন তখন তাপমাত্রা অল্পতেই অনেক বেড়ে যায়। বেশি তাপে কম্পিউটার চালাতে হার্ডডিস্ক স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান।
কম্পিউটারের তাপমাত্রা সব সময় স্বাভাবিক রাখার জন্য এর নিজস্ব কুলিং সিস্টেম রয়েছে। যে সমস্ত যন্ত্রাংশ অনেক বেশি তাপ উৎপন্ন করে (যেমন সিপিইউ কিংবা জিপিইউ) এদের প্রত্যেকের সাথে কুলিং ফ্যান সংযুক্ত আছে। এই ফ্যানগুলো মূলত অনেকটা ভেন্টিলেশনের কাজ করে। কম্পিউটারের তাপ উৎপাদি যন্ত্রাংশগুলো থেকে উৎপন্ন তাপমাত্রা ফ্যানগুলো বায়রে রিলিজ করে দেয়। তাছাড়া কম্পিউটারের কেসগুলোও এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন এগুলো খুব দ্রুত তাপ রিলিজ করতে পারে। যদি আপনার কম্পিউটার বায়রের কোন ধুলা ময়লা দ্বারা আক্রান্ত না হয় তাহলে কম্পিউটারের নিজস্ব কুলিং সিস্টেম কম্পিউটারের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বজায় রাখতে সক্ষম।
যে সব কম্পিউটারে অনেক জটিল কাজ করা হয় সেখানে ফ্যানের পরিমান একটু বেশিই থাকে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় গেইমিং কম্পিউটার। তাছাড়া কম্পিউটারের কুলিং ফ্যানগুলো কিন্তু সব সময় একই স্পিডে ঘোরে না। যখন কাজের চাপ বেশি হয় তখন ফ্যানের গতিও বেশি হয় সিস্টেমকে ঠান্ডা রাখার জন্য। তবে কম্পিউটারের ফাইল শেয়ারিং, ডাটা কপি করতে কম্পিউটারকে তুলনামূলক একটু বেশি কাজ করতে হয়। সুতরাং এই কাজগুলো পিসি ঠান্ডা রেখে করবেন আশা করি।
প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি আপনি টিউনটি থেকে পেয়ে থাকেন তাহলে ঝটপট লিখে ফেলুন টিউনের টিউমেন্ট সেকশনে। উত্তরদাতাদের মধ্যে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে তার নাম প্রকাশ করা হবে আমার আগামী টিউনে। আমার গত টিউনটি ছিলো আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাটারীর ইতিকথা, কার্যপ্রণালী এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ! নিয়ে। এই টিউনের শেষে সংযুক্ত করা হয়েছিলো ৫টি প্রশ্ন। আর সেই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিয়ে বিজয়ী হয়েছেন টিউনার কাফি হাসান। কাফি ভাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন। উত্তর দেওয়ার সময় মনে রাখবেন, বেশি লিখে ভুল করার চাইতে সঠিক বিষয় কম লেখাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
➡ ইমেইলে আমার সকল টিউনের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ টেকটিউনস » সানিম মাহবীর ফাহাদ 🙄
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
সানিম মাহবীর ফাহাদ: ভাই অনেক কিছু জানতে পারলাম , আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।