-------------------------- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ --------------------------
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সবাইকে আমার সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের টিউন।
মানুষ মাত্রই সুন্দরের পুজারী। সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের এই আকর্ষন সেই আদিম যুগ থেকে চলে আসছে। সৃষ্টির শুরুতে মানুষের আকর্ষন যেমন ছিলো সুন্দর নারী কিংবা সুন্দর বাহনের। ঠিক তেমনি যুগের ক্রমবিকাশের সাথে সেই সৌন্দর্য পিপাসারও হয়েছে আমূল পরিবর্তন। মানুষ একে একে আবিষ্কার করতে থাকলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং তারই ধারাবাহিকতায় কৃত্রিমতায় ভরা সৌন্দর্য। আধুনিক যুগে আমরা নিজেদের জন্য সুন্দর সুখের যে সমস্ত জিনিস পছন্দ করি তার মাঝে সুন্দর পোশাক, সুন্দর গাড়ি, সুন্দর বাড়ি ইত্যাদি প্রধান। রোমান্টিক মনের অনেকের মাঝেই হয়তো এখন বেজে উঠেছে কাজী নজরুল ইসলামের সেই অমর বাণী, “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, প্রিয় সে কি মোর অপরাধ?”। যাহোক, আজ আমরা সৌন্দর্যের সংজ্ঞা দিতে নয় বরং সৌন্দর্যের উদাহরণ নিয়ে আলোচনার করবো। আজকের টিউনের মুল বিষয় হলো আধুনিক যুগের এমন কিছু স্থাপত্য যা বৈচিত্র এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের সমন্বয়ে অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করছে। যেগুলো দেখে আমাদের সৌন্দর্য পিপাসু মন বিমোহিত হওয়ার পাশাপাশি এর স্থাপত্যশৈলী দেখে আমাদের চোখও বিস্ফারিত হবে। আমি দুইটি পর্বে টিউনটি শেষ করার পরিকল্পনা করেছি। প্রথম পর্বে আপনার অপূর্ণ মনকে দ্বিতীয় পর্বে পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করবো। যাহোক, কথায় কথায় অনেক কথা বলে ফেলেছি, এবার চলুন দেখে নেই এবং জেনে নেই অসাধারন এই স্থাপত্যগুলো সম্পর্কে।
১৯৯৩ সালে এই অসাধারন স্থাপত্যটি ব্যবহারের জন্য উন্মোক্ত করে দেওয়া হয়। এটা মুলত একটা প্ল্যানেটরিয়াম যার মানে হলো এখানে থেকে জ্যোর্তিবিজ্ঞান এবং মহাকাশ গবেষণার কাজ করা হয় (মানমন্দির টাইপ)। বায়রে থেকে সাধারন মনে হলেও এই স্থাপত্যটি ডিজাইন করা হয় জ্যোর্তিবিজ্ঞান এবং মহাকাশ গবেষণার কাজের উপযোগি করে এবং সর্বপরি এর বলয় সহ শনি গ্রহের আকৃতি অনুসারে। সত্যিকারের এই অদ্বিতীয় এবং অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যের নিদর্শন বিশ্বের অন্য কোথাও চোখে পড়ে না।
এই অসাধারন এবং দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যটি চিলিতে অবস্থিত। আগ্নেয়গিরীর মতো করে তৈরী করা এই স্থাপত্যটি হলো একটি হোটেল যেখানে মাত্র ৯টি রুম আছে। মজার ব্যাপার হলো এখানে যে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সেটা দেখলে মনে হবে যেন আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বের হয়ে আসছে। শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, সমগ্র বিশ্বের সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের কাছে এটা একটি অনন্য নিদর্শন। যা দেখলে শুধু চোখ জুড়ায় না, মনও ভরে উঠে।
সিঙ্গাপুর প্যাভিলিয়ান অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং নির্মান শৈলীর এক অনন্য উদাহরণ যা স্থপতিদের কাছে প্রেরণাদায়ক। সম্পূর্ণ একটা মিউজিক বক্সের মতো তৈরী এই অসাধারন স্থাপত্যটি তৈরী করা হয় সিঙ্গাপুর বাসীকে অন্যান্য জাতি থেকে আলাদা এবং অনন্য হিসাবে প্রকাশ করার জন্য। তবে এটা শুধুমাত্র এর মনমুগ্ধকর ডিজাইনের কারনে নয়, এটা বিখ্যাত হয়েছে এর ছাদে থাকা চমৎকার বাগানের জন্যও।
টয়লেটের মতো দেখতে এই বাড়িটি দক্ষিণ কোরিয়ার Suwon শহরে অবস্থিত। এই অসাধারন স্থাপত্যটির নির্মাতা Sim Jae-Duck একজন ব্যক্তি যিনি মূলত বিশ্ব টয়লেট সংস্থার একজন সদস্য। তিনি তার প্যাশন থেকে এই অসাধারন জিনিসটা নির্মান করেন। তবে এটা শুধুমাত্র দেখতে সুন্দর এই কারনে না, এটা তার বৈচিত্রময় এবং অনন্য ডিজাইনের কারনে সৌন্দর্য পিপাসুদের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
অসাধারন ইলেকট্রিক বাড়িটি দেখলে মনে হয় এটা যেন কোন গল্পের বই থেকে উঠে এসেছে। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরী এই স্থাপত্যটি ১৯৯২ সালে তৈরী করা হয়। এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঠের টাওয়ার হিসাবে দাবি করেছেন এর স্থপতি। যদিও অসাধারন এই স্থাপত্যটি খুব বেশিদিন পৃথিবীতে স্বমহিমায় দাড়িয়ে থাকতে পারবে না তবুও এটাকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর স্থাপত্য হিসাবে স্থান দিতে সৌন্দর্য প্রেমিরা কার্পন্য করেনি।
এই স্থাপত্যটি চীনের Huainan শহরে অবস্থিত যা ২০০৭ সালে নির্মাণ করা হয়। চীনের Hefey University of Technology এর শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রনে Fangkai Decoration Project Company নামক একটি প্রতিষ্ঠান এই অসাধারন স্থাপত্যের নির্মান কাজ সম্পন্ন করে। এই স্থাপত্যটিকে চীনে অন্ধকারের পর আলোর দিশা হিসাবে দেখা হয়। তৈরীর পর থেকে এই মনমুগ্ধকর স্থাপত্যটি শত শত সৌন্দর্য পিপাসুদের পিপাসা মিটিয়ে আসছে।
শামুক আকৃতির এই অদ্বিতীয় এবং অসাধারন বাড়িটি নির্মাণ করা হয় ২০০৬ সালে। ম্যাক্সিকান আর্কিটেক্ট Javier Senosiain এই সুন্দর বাড়িটি নির্মাণ করেন। এই অসাধারন বাড়িটির বিশেষত্ব হলো এটা ঠিক শামুকের মতো করে ভেতরে এবং বাহিরে ডিজাইন করা হয়েছে। এটা মুলত আধুনিক নির্মাণশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হয়ে আসছে। তবে এর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক শোভা এবং ভেতরের বাগানটাও কিন্তু বিখ্যাত হওয়ার পেছনে কম কৃতিত্বের দাবিদার না।
এই বিল্ডিং কে লন্ডনের সবচেয়ে পরিবেশ বান্ধব বিল্ডিং হিসাবে দাবী করা হয়। এই বিল্ডিংটি বিখ্যাত তার নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস এবং অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সুবিধার কারনে। এর প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে যারা কাজ করে তারা তাদের প্রত্যেকেই নিজেদের চাহিদা অনুসারে আলো এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে। ইশ!! আমি যদি এখানে থাকতে পারতাম!!!
এই মনকাড়া বিল্ডিংটিও একটি পরিবেশ বান্ধব বিল্ডিং হিসাবে আত্বপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। ধারনা করা হয়েছে ২০১৬ সালে এর নির্মান কাজ শেষ হলেই এটা পরিবেশ বান্ধব বিল্ডিং তৈরীর ধারনাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এবং এটা বিশ্ববাসীর কাছে পরিবেশ বান্ধব কর্মকান্ডের জন্য ইন্ডিয়ার ভাবমুর্তি কিছুটা উজ্জ্বল করবে। এই অসাধারন স্থাপত্যটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার কিংবা বায়ুচলাচল নিয়ন্ত্রনই করবে না, এটা বৃষ্টির পানিকেও পুনব্যবহার উপযোগি করবে।
এই অবিশ্বাস্য গঠন বৈচিত্র শুধুমাত্র একটা বিল্ডিংয়ে সীমাবদ্ধ না। এটা প্রায় ৬৪,১২০,৩২০ বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত একটি প্রজেক্ট যা সায়েন্স ফিকশনে দেখা ম্যাগা সিটির মতো। এই সমস্ত এরিয়া জুড়ে রয়েছে নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক শক্তি, এবং কার্বন নিরপেক্ষ পরিবেশ এবং ধোয়ামুক্ত গাড়ি। এই অসাধারন ম্যাগাসিটি তৈরী করেছেন Masdar, যারা Abu Dhabi Future Energy Company নামে পরিচিত। ধারনা করা হয় এই ম্যাগাসিটি নিজেই নিজেকে টিকিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে।
আশা করি টিউনটি আপনাদের ভালো লেগেছে। টিউনের পরবর্তি অংশ দেখতে নিচের ডাউনলোড লিংকে ক্লিক করুন। আশা করি দুটো পর্বই আপনাদের চিত্ত হরণ করতে সমর্থ্য হবে।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের সাহায্যার্থে আমি আছি........
ফেসবুক | টুইটার | গুগল-প্লাস
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
সত্যি বিশ্বের অসাধারন সব স্থাপত্যশৈলী সম্পর্কে জেনে অনেক ভালো লাগছে।অনেক সুন্দর ভাবে টিউনটিকে উপস্থাপন+ শেয়ার করার জন্য ১০,০০০ টি ধন্যবাদ।