লোগো (ইংরেজি: Logo) এক ধরণের গ্রাফিক চিহ্ন বা প্রতীক যা সাধারণতঃ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং এবং সাহায্য-সহযোগিতার লক্ষ্যে পরিচিতির জন্য জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়।
প্রতিনিয়ত আমরা অনেক লোগো দেখে থাকি। শুধুমাত্র লোগো দেখেই আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা সংস্থা সম্পর্কে আঁচ করতে পারি। যেমনঃ গুগল, ফেসবুক কিংবা উইকিপিডিয়ার লোগো দেখে আমরা বলতে পারি যে হ্যাঁ এটা গুগল বা এটা উইকিপিডিয়া।
প্রতিটা লোগোর মাঝে এমন বিশেষ কিছু ভাব ফুটিয়ে তোলা হয় যার মাধ্যমে ঐ লোগোটি একটি ইউনিক বিষয়ে পরিণত হয়।
সচরাচর আমরা যেসব লোগো দেখে থাকি তার মধ্যে অনেক কথা বা ভাব লুকায়িত অবস্থায় থাকে যা আমরা খুব সহজে উপলব্ধি করতে পারিনা। আজকে আমরা আমাদের অতি পরিচিত সেরকমই কিছু লোগোর ভেতরের কথা জানবো। দেখবো লোগোর মধ্যে কি কি লুকায়িত বাণী আছে।
1. Wikipedia
Wikipedia হলো মুক্ত বিশ্বকোষ। এলেক্সা র্যাংকে ৭ম স্তাহ্নে থাকা এই মুক্তবিশ্বকোষ ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে। একটি গ্লোব এবং তার উপরে বিভিন্ন ভাষার হরফ দিয়ে উইকিপিডিয়া বা মুক্ত বিশ্বকোষের লোগো তৈরি করা হয়েছে। গ্লোবটির কিছু অংশ অসম্পুর্ণ। কিন্তু কেন? প্রশ্ন জাগে না? গ্লোবটির এই অসম্পূর্ণ অংশ দিয়ে উইকিপিডিয়া নিজকেই তুলে ধরেছে। যা সবসময় বিবর্ধিত এবং বিস্তৃত হচ্ছে!
2. Amazon
আমেরিকান ই-কমার্স কোম্পানি আমাজন.কম স্থাপিত হয় ১৯৯৪ সালে। amazon.com এর লোগোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো a থেকে z পর্যন্ত একটি অ্যারো বা তীর চিহ্ন দেখা যাচ্ছে, এর অর্থ হলো amazon.com এ আপনার যা কিছু দরকার অর্থাৎ A টু Z সবকিছুই পাওয়া যায়।
3. LG
১৯৪৭ সালে যাত্রা শুরু করা বিশ্বখ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলো LG। এর লোগোতে আমরা একটি স্মাইল ফেস দেখতে পাই। যেখানে L দ্বারা নাক এবং G দ্বারা গোটা মুখমন্ডলের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে। LG দ্বারা Life's Good বোঝানো হয়।
4.Worpress
ওয়ার্ডপ্রেসে হলো ফ্রি এবং মুক্ত ব্লগিং টুল। যা PHP এবং MySQL প্রোগ্রামিং ভাষার সমন্বয়ে গঠিত। WordPress এর লোগোটি একটি ক্ল্যাসিক কর্পোরেট লোগো। একটু সুক্ষ্ণভাবে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন WordPress এর W থেকে N আলাদা হয়ে গেছে এবং একটি ত্রিভূজের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আপনি কি বুঝতে পারছেন যে ত্রিভূজ এবং N একটি বৃত্তের কম্পাসের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে এসেছে যেটা উত্তর দক্ষিণ কে বোঝায়!
5.Picasa
পিকাসা হলো গুগলের ফটো ভিউয়ার এবং শেয়ারিং মাধ্যম। ১৩ বছর আগে ২০০২ সালে পিকাসা যাত্রা শুরু করে। পিকাসার লোগোর রঙিন গোলাকার অংশ দিয়ে ক্যমেরার শাটার বোঝানো হয়। Picasa শব্দের Pi হলো Pixel এর সংক্ষিপ্ত রুপ। আর ‘casa’ একটি স্প্যানিশ শব্দ যার শাব্দিক অর্থ বাড়ি। অর্থাৎ Picasa দিয়ে ছবির বাড়ি বা ছবির সংগ্রহশালা বোঝানো হয়েছে।
6.Google
গুগল যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারনেট ভিত্তিক সার্ভিস প্রোভাইডার। ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে গুগল। কখনো লক্ষ্য করেছেন গুগলের লোগোটি চারটি রঙের বর্ণ দ্বারা সাজানো? এখানে প্রথম চারটি বর্ণ একটি নির্দিষ্ট ধারার প্রাথমিক রঙ ( লাল, নীল এবং হলুদ) দিয়ে সাজানো, তার পরের রঙটি যৌগিক রঙ অর্থাৎ সবুজ রঙের (নীল+হলুদ) বর্ণ । রঙের এই অবিন্যস্ততা প্রমাণ করে যে গুগল সেইসব কোম্পানি নয় যেগুলো বাঁধাধরা নিয়মানুসারী। ব্যাপারটা বুঝেছেন !!!
7.Toyota
Toyota জাপানভিত্তিক মটর কর্পোরেশন। অনেক পুরোনো ,১৯৩৭ সালে স্থাপিত টয়োটার লোগোতে তিনটি উপবৃত্ত রয়েছে যা দিয়ে তিনটি হার্টকে বোঝানো হয়! যার প্রথমটি দিয়ে কাস্টোমারের সন্তুষ্টি, দ্বিতীয়টি দিয়ে প্রোডাক্টের গুণগত মান এবং তৃতীয়টি দিয়ে প্রযুক্তির উন্নতিতে টয়োটার অবস্থান বোঝানো হয়! এছাড়া উপরের চিত্রটিতে লক্ষ্য করলে আরো একটি ব্যাখ্যা পেয়ে যাবেন আশা করি।
8. Apple
১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত Apple হলো আমেরিকান ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। Apple এর লোগোর মধ্যে লুকোনো বাণীটা হচ্ছেঃ এটা হলো সেই নিষিদ্ধ ফল যা আদম (আঃ) এবং মা হাওয়ার গল্পের সাথে জড়িত। যাকিনা জ্ঞান বৃক্ষের ফল!!!
9.Unilever
Unilever ইংল্যান্ড-নেদারল্যান্ড ভিত্তিক বহুজাতিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ১৯২৯ সাল থেকে আজ অবধি সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত ব্যবহার্য পণ্য সরবরাহ করে চলেছে। ইউনিলিভারের লোগোতে হরেক রকম সিম্বল লক্ষ্য করা যায়। উপরের লোগোটিতে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন পাখি,পোশাক, হার্টসহ নানারকম অজানা সিম্বল! এর মাধ্যমে বোঝানো হয় ইউনিলিভার এমন একটি কোম্পানি যারা বিভিন্ন রকম পণ্য উৎপাদন করে । অনেক সময় আমরা সেসকল পণ্যের নামই মনে রাখতে পারিনা!
10. Vaio
Sony কর্পোরেশনের একটি ব্র্যান্ড হলো Vaio । যা মূলত কম্পিউটার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। Vaio দ্বারা “Visual Audio Intelligent Organizer” বোঝানো হয়। এর লোগোটিতে আধুনিক মুদ্রণবিদ্যার স্পষ্টতর ছাপ লক্ষ করা যায়। তবে এর মধ্যেই আছে লুকোনো কিছু কথা! প্রথম দুটি বর্ণ "V" এবং "A" দিয়ে এনালগ সিগন্যাল এবং পরের দুটি বর্ণ “1″ এবং “0″ দিয়ে বাইনারি ওয়ার্ড অর্থাৎ ডিজিটাল বিশ্ব বোঝানো হয়েছে। বড়ই অদ্ভুত !
আরো অনেক লোগো আছে যাদের মধ্যে লুকোনো আছে অনেক কথা, অনেক ইতিহাসও। কোনোটি সম্পর্কে আপনার জানার কিছু থাকলে সেটা গুগল সার্চ করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন।
টিউনটি ইন্টারনেট অবলম্বনে লেখা হয়েছে।
তথ্য দিয়ে টিউনটি লিখতে সাহায্য করেছেন আমার এক বন্ধু, ধন্যবাদ তাকে। 🙂
আর হ্যাঁ টিউন কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ফেসবুকে আমিঃ Mir Rasel
টুইটারে আমিঃ Mir Rasel
ইউটিউবে আমিঃ Mir Rasel
আমি মীর রাসেল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Not a man , just an Existence
@ মীর রাসেল, ভাই অসাধারন লাগলো।