ইন্টারনেটের রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। শুধু ওয়েবসাইট ভিজিটের জন্যই নয়, কেনাকাটা, ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে শুরু করে প্রায় সব কার্যক্রমই অনলাইনভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে। এতে মানুষের অনলাইন জীবনে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নানান ধরনের সুবিধা। এতে সাধারণ মানুষও নিজেদের জীবনযাত্রার একটা বড় অংশ গড়ে তুলছেন অনলাইনে। কিন্তু ইন্টারনেটও ঝুঁকিহীন নয়। এই বহুমুখী ব্যবহারে লুকায়িত আছে বহুমুখী অপরাধমূলক কার্যক্রম যেগুলোর মধ্যে ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা চুরি, কম্পিউটার হ্যাক, কম্পিউটার থেকে তথ্য চুরি ও পরিচয় জালিয়াতি অন্যতম।
ইংল্যান্ডের গেট সেফ অনলাইন ক্যাম্পেইনের গবেষণা বলছে, একজন অনলাইন প্রতারক বা জালিয়াতের কাছে ৮০ পাউন্ডের চেয়েও বেশি মূল্যবান আইডেন্টিটি ফ্রড বা পরিচয় জালিয়াতি। অর্থাৎ আপনার নাম ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। একই গবেষণা আরো বলেছে, ২০০৮ সালে ২৩% নেট সার্ফাররা ফিশিং আক্রমণের শিকার হয়েছেন। নেট জগতে নিরাপদ সার্ফিংয়ের জন্য বিবিসি সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতি কিছু পরামর্শ দিয়েছে। আসুন, দেখে নেয়া যাক কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর।
ইংল্যান্ড সরকারের ধারণা মতে, ২০০৬ সালে আইডি জালিয়াতির কারণে দেশটির প্রায় ১.৭ বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতি হয়েছে। দেশটির ফ্রড প্রেভেনশন সার্ভিস ২০০৭ সালে ৬৫,০০০ জন মানুষকে সাহায্য করেছে যারা নিজেদের আইডি খুইয়েছেন বা যাদের আইডি জালিয়াত হয়ে গেছে।
অনলাইনের জালিয়াতরা বা ফ্রডস্টাররা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে অনলাইন ব্যাংক একাউন্টে প্রবেশ করে থাকে। একাউন্টে প্রবেশে সফল হওয়ার পর তারা বিল রান করতে থাকে এবং জাল পাসপোর্ট বা জন্মসনদের মতো ভুয়া ডকুমেন্টস তৈরি করে জালিয়াতির পুরো ফায়দা লুটতে থাকে। আর এর পুরো দায়ভার চাপে আসল ব্যক্তির ওপর, যিনি এসবের কিছুই জানেন না। আর এসবের ফলস্বরূপ নির্দোষ ব্যক্তির ওপর যে চাপ আসে, তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যায়। ক্রেডিট রেফারেন্স এজেন্সি ইকুইফ্যাক্সের হিসাব মতে, আপনি যদি সত্যিই জালিয়াতির জন্য বা চুরি যাওয়া টাকার জন্য দায়ী না হন, তবুও বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটতে ৩০০ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে।
ই-মেইলটিকে অগ্রাহ্য করুন ও মুছে ফেলুন। আপনি যদি গোপনীয় তথ্য আপডেট করতে বলা কোনো ই-মেইল রিসিভ করেন যা আপাতদৃষ্টিতে আপনার ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডারের কাছ থেকে এসেছে বলে মনে হয়, তাহলে তা ফিশিং বা স্প্যাম মেইল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর যদি তা সত্যিই প্রতারণামূলক হয়ে থাকে, আর আপনি যদি তাতে সাড়া দেন, তাহলেই ফ্রডস্টাররা আপনার তথ্যাদি পেয়ে যাবে এবং জালিয়াত হতে থাকবে আপনার পরিচয় ও ব্যাংক একাউন্টের সবকিছু।
খেয়াল রাখবেন, ব্যাংক আপনার লগ-ইন ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড কখনোই ই-মেইলের মাধ্যমে জানতে চাইবে না। কারণ, ব্যাংকের কাছে এসব তথ্যাদি পরিষ্কারভাবেই আছে এবং আপনার কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে এসব তথ্য জানতে চাওয়ার কোনো প্রয়োজন তাদের নেই। যেহেতু ফ্রডস্টারদের কাছে সেসব তথ্য নেই, তাই তারা প্রতারণামূলক এসব মেইলের মাধ্যমে আপনার কাছ থেকেই আপনার তথ্য হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে।
এরপরও আপনার যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে ব্যাংকে বা ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডারের কাছে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিন।
অগ্রাহ্য করুন এবং মুছে ফেলুন। বহুসংখ্যক হাই-টেক সাইবার অপরাধীরা আজো ই-মেইলের মাধ্যমে প্রতারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রেরিত ই-মেইলগুলো সাধারণত সমকালীন প্রসঙ্গে বার্তা বহন করে থাকে যাতে তারা নিশ্চিত থাকে যে গ্রহণকারী ই-মেইলটি খুলবেনই। অ্যাটাচমেন্টে আসা ফাইলগুলো আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও তারা ঝুঁকিপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ফাইল আছে যেগুলো আপনার পারসোনাল কম্পিউটারের কোনো ক্ষতি না করে চুপচাপ থাকবে। কিন্তু যখনই আপনি আপনার ব্যাংকের অনলাইন একাউন্টে লগ-ইন করবেন, তখনই সেই ফাইলগুলো আপনার লগ-ইন তথ্য জমা করবে এবং প্রতিনিয়ত এসব তথ্য পাচার করতে থাকবে ফ্রডস্টারদের কাছে।
এরপরও যদি আপনার সন্দেহ থাকে, তাহলে ফাইলটি ডাউনলোড করার পর ভাইরাসের জন্য স্ক্যান করে নিন। অবশ্য স্ক্যান করলেই যে ফাইলটি সম্পূর্ণ নিরাপদ কি না তা বোঝা যাবে, এমনটা নয়। কারণ ফ্রডস্টারের প্রেরিত ফাইলটিতে এমন ভাইরাস সংযুক্ত থাকতে পারে, যা আপনার পিসিতে থাকা অ্যান্টিভাইরাস রিলিজ হওয়ার পরে তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস স্ক্যানও নিরাপদ নয়।
বেশিরভাগ সিকিউরিটি থ্রেটই মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি। সিকিউরিটি ফার্মগুলোর পরামর্শ অনুসারে, আপনি যদি মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তাহলে যখনই কোনো সিকিউরিটি ফিক্স অবমুক্ত হয়, সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারকে ও অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারকে আপডেট করুন। কেউ কেউ আবার ব্যবহারকারীদের নেট ব্রাউজিং, ই-মেইল ইত্যাদি কাজকর্মে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বিষয়টা ঠিক এমন নয়। বিষয়টা হচ্ছে যিনি এ জাতীয় সাইট ভিজিট করেন, ফ্রডস্টারদের আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা তার বেশি। কিন্তু মূলত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কেউই একেবারে নিরাপদ নন। এ জাতীয় ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করা ঝুঁকিপূর্ণ কেননা অধিকাংশ ওয়েবসাইটেই স্ক্যানাররা এক ধরনের কোড সংযুক্ত করে রাখেন ফলে যখনই কোনো ভিজিটর সাইটটি ভিজিট করেন, তখনই ম্যালিশিয়াস প্রোগ্রাম ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়ে যায়।
তবে ভিজিটররা এসব ঝুঁকি এড়াতে পারেন যদি ব্রাউজারের সর্বশেষ সংস্করণটি ব্যবহার করেন এবং এমন সফটওয়্যার ব্যবহার করেন যা ব্রাউজিংয়ের সময়ও প্রতিটি সাইটকে স্ক্যান করে থাকে।
পপ-আপ বিজ্ঞাপনটি অগ্রাহ্য করুন এবং তা বন্ধ করে দিন। কিছু সংখ্যক স্প্যামার নকল টুল ব্যবহার করে আপনাকে সতর্কবাণী দিচ্ছে যদিও আপনার কম্পিউটার সম্পূর্ণ নিরাপদ।
যেহেতু আইডি হ্যাক হয়ে যাওয়াটা খুব চিন্তার বিষয়, সেহেতু আপনি আপনার ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্যাদি নিরাপদ রাখতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
অসতর্কভাবে পাসওয়ার্ড বা অন্যান্য তথ্য মুছে ফেলা বা ডিসকার্ড করার দরুন আপনার তথ্য অন্য কেউ পেয়ে যেতে পারে। সুতরাং কোনো তথ্য মুছে ফেলার পর নিশ্চিত হয়ে নিন যে তা সম্পূর্ণভাবে মোছা হয়েছে।
অপরাধীরা অনেক সময় গৃহহীন মানুষদের দ্বারা ডাস্টবিনসহ বিভিন্ন ট্র্যাশ বিনে ব্যক্তিগত তথ্যাদির কাগজপত্র খুঁজে বের করে থাকে। আপনি যদি আপনার ব্যাংকের তথ্যাদি বা লগ-ইন ইনফরমেশন কোনো কাগজে লিখে তা ফেলে দিয়েও থাকেন, তবুও আপনি ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন।
আপনার গোপনীয় তথ্যাদি বা টাকা-পয়সা লেনদেনের বিবরণী সংক্রান্ত কাগজপত্র নিরাপদে রাখুন এবং প্রয়োজন না থাকলে ছিঁড়ে ফেলুন বা আগুনে পুড়িয়ে ফেলুন। নয়তো ডাস্টবিন ঘেঁটে অপরাধীরা ঠিকই পেয়ে যাবে আপনার গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতে, পাসওয়ার্ড এবং পিন (পারসোনাল আইডেনটিফিকেশন নাম্বার) কখনো কোনো কাগজে বা অন্য কোথাও লিখবেন না বা কখনোই কারো কাছে প্রকাশ করবেন না।
কিছু কিছু সিকিউরিটি ফার্ম ‘পাসওয়ার্ড সেফ’ নামক পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করার প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকে যা ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ডসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্যাদি নিরাপদে সংরক্ষণের সুবিধা দিয়ে থাকে।
পাসওয়ার্ড নিরাপদে রাখতে আপনি সবসময় স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যা সহজে অনুমান করা যায় না। স্ট্রং পাসওয়ার্ড হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট শব্দ ব্যতীত অক্ষর ও সংখ্যার এলোমেলো সংমিশ্রণ।
শত প্রচেষ্টার পরও হয়তো আপনিও ভিকটিম হয়ে যেতে পারেন। সাইবার অপরাধীর হাতে পড়ে হারাতে পারেন আপনার ব্যাংক একাউন্ট, সংরক্ষিত টাকা, ক্রেডিট কার্ড সবকিছু। এমনটা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডারকে জানান এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ করুন।
প্রথম প্রকাশ দৈনিক যায়যায়দিন।
আমি মো. আমিনুল ইসলাম সজীব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 83 টি টিউন ও 201 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 7 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
সময়োপজোগী টিউন …… ধান্ধাবাজদের সংখ্যা অনলাইনে বেড়েই চলেছে …….. তোমার এই টিউন টিউনারদের সতর্ক করবে …… ধন্যবাদ