GPS কী ও কিভাবে কাজ করে

GPS-system
একসময় মানচিত্র, কম্পাস, স্কেল ইত্যাদি দিয়ে মেপে ও অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান (Position) নির্ণয় করা হত। বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে এখন খুব সহজে ও নিখুঁতভাবে পৃথিবীর কোন স্থানের অবস্থান সম্পর্কে জানতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার হয় তার নাম Global Positioning System বা সংক্ষেপে GPS। গাড়ি, জাহাজ, প্লেন, ল্যাপটপ এমনকি নতুন মডেলের মোবাইল ফোনেও এখন GPS রিসিভার থাকে। বিজ্ঞানের জটিল বিশ্লেষনে না গিয়ে এখানে সংক্ষেপে ও সহজভাবে GPS-এর বেসিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

ইতিহাস
US Military নিজস্ব প্রয়োজনে GPS প্রযুক্তির প্রাথমিক কাজ শুরু করে ১৯৭৭ সালে। এরপর ধাপে ধাপে এর উন্নয়ন ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ১৯৯৫ সালে ২৪টি স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট নেটওয়ার্ককে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ব্যবহারযোগ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম হিসেবে ঘোষণা করে। সেইসাথে সিস্টেমটি বিশ্বের বেসরকারী লোকদের ব্যবহারের জন্যও উম্মুক্ত করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে অবস্থিত স্যাটেলাইট ট্রেকিং ষ্টেশন থেকে US Military স্যাটেলাইটগুলোর নিয়ন্ত্রন ও মনিটরিং করে।

বেসিক কনসেপ্ট
GPS প্রযুক্তির বেসিক কনসেপ্ট সর্বসাধারণের বুঝার সুবিধার্থে একটি উদাহরণ তুলে ধরলাম:
মনে করুন আপনি বাংলাদেশের কোন জায়গায় হারিয়ে গেলেন। আপনি জানেন না জায়গাটির নাম কী,  আপনি জানেন না আপনার আশেপাশে কোন শহর বা লোকালয় আছে কিনা! আপনি ঠিক করতে পারছেন না কোনদিকে যাবেন! এসময় A নামে একটা লোকের দেখা পেলেন তারও একই অবস্থা, পথ হারিয়ে ফেলেছে। তবে তার কাছে বাংলাদেশের একটা মানচিত্র আছে কিন্তু তা কোন কাজে আসছে না। কারণ আপনারা কোন জায়গায় আছেন তা জানলেই তো মানচিত্র দেখে আশেপাশের শহর কোনটি, কোনদিকে যেতে হবে, কতদূর যেতে হবে ইত্যাদি জানা যাবে।
gps-example

এসময় X, Y,  Z নামে তিনজন লোকের দেখা পেলেন। X বললেন আপনারা ঢাকা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে আছেন, কিন্তু ঢাকার কোনদিকে (উ:, দ:, পূ: প: ) আছেন তা বলেনি। A তার মানচিত্রে ঢাকাকে কেন্দ্রবিব্দু ধরে ১১০ কিলোমিটারকে ব্যাসার্ধ (মানচিত্রের স্কেলে) ধরে একটি বৃত্ত আকঁল। (উপরের ছবির সবুজ বৃত্ত দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ যেসব জায়গার উপর দিয়ে সবুজ লাইনটি গেছে সেসব জায়গার কোন একটিতে আপনারা আছেন। ।
Y বললেন আপনারা রংপুর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে আছেন, কিন্তু কোনদিকে আছেন তা বলেনি। A তার মানচিত্রে রংপুরকে কেন্দ্রবিব্দু ধরে ১৫০ কিলোমিটারকে ব্যাসার্ধ  ধরে একটি বৃত্ত আকঁল। (ছবির নীল বৃত্ত দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ যেসব জায়গার উপর দিয়ে নীল লাইনটি গেছে সেসব জায়গার কোন একটিতে আপনারা আছেন। একই সাথে X ও Y-এর তথ্যকে সঠিক হিসেবে নিলে আপনাদের অবস্থান গোপালপুর অথবা ময়মনসিংহে। কারণ সবুজ ও নীল বৃত্ত দুটি পরষ্পরকে এ দুটি জায়গায় ছেদ করেছে। গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাবে শুধুমাত্র এ দুটি জায়গা থেকেই ঢাকার দুরত্ব ১১০ ও রংপুরের দুরত্ব ১৫০ কিলোমিটার।
Z বললেন আপনারা সিলেট থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে আছেন। A তার মানচিত্রে সিলেটকে কেন্দ্রবিব্দু ধরে ১৪০ কিলোমিটারকে ব্যাসার্ধ  ধরে একটি বৃত্ত আকঁল। (ছবির লাল বৃত্ত দ্রষ্টব্য)। উল্লিখিত নিয়মে আমরা দেখতে পাচ্ছি সবুজ, নীল এবং লাল বৃত্তটি পরষ্পরকে শুধু একটি বিন্দুতে ছেদ করেছে, সেটি হল ময়মনসিংহ! অর্থাৎ তিনটি বৃত্তের Intersection point ময়মনসিংহ থেকে X, Y এবং Z  তিনজনের দেয়া তথ্যই সঠিক। এভাবেই আপনারা জানলেন আপনাদের অবস্থান ময়মনসিংহে।
এখন আমরা বলতে পারি: X, Y এবং Z নামের তিনটি স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত বিশেষ তথ্য A নামের GPS রিসিভার গ্রহণ করে গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাবের মাধ্যমে ডিজিটাল মানচিত্রে আপনার বর্তমান অবস্থানটি (Position) উল্লেখ করার যে পদ্ধতি/সার্ভিস তার পূর্ণনাম Global Positioning System ও ডাকনাম GPS।

স্যাটেলাইট
GPS সিস্টেমের মূল অংশ হচ্ছে ২৭টি স্যাটেলাইট (24 active, 3 Reserve) ও GPS রিসিভার। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০০ কিলোমিটার উপরে ৬টি অরবিটে ২৪টি স্যাটেলাইট পৃথিবীর চারিদিকে ২৪ ঘন্টায় দুইবার করে ঘুরছে।
constellationGPS
পৃথিবী ও স্যাটেলাইটের ঘুর্ণায়ন অবস্থায় একটি GPS রিসিভার কিভাবে নিকটস্থ স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ করে তার দৃশ্য

অরবিটগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে যে কোন সময় কমপক্ষে চারটি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান হয়। স্যাটেলাইটগুলো প্রতিনিয়ত দুধরনের সংকেত (signal) প্রেরণ করছে ; L1 ও L2। L1 হচ্ছে বেসামরিক লোকের জন্য, যার ফ্রিকোয়েন্সী 1575.42 MHz (UHF band)। এই সংকেতের জন্য প্রয়োজন Line of sight। অর্থাৎ যোগাযোগের সময় স্যাটেলাইট ও রিসিভারের মাঝখানে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারবে না। L1 সংকেতে যেসব তথ্য থাকে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে: "I'm satellite X", My position is Y এবং "This information was sent at time Z". তাছাড়া থাকে almanac data ও ephemeris data। সংকেতগুলো আসে আলোর গতিতে (৩০০,০০০ কিলোমিটার/সেকেন্ড)। প্রতিটি  সংকেতে sending time লেখা থাকে।

GPS রিসিভার
GPSreceiver
GPS রিসিভার সংকেতটির reciving time থেকে sending time বিয়োগ করে runtime বের করে। runtime দিয়ে ৩০০০০০ কে গুণ করলে রিসিভার থেকে স্যাটেলাইটটির দুরত্ব বের হয়। এভাবে চারটি স্যাটেলাইটের দূরত্ব বের করে রিসিভার প্রতিটি স্যাটেলাইটের পজিশনকে কেন্দ্রবিন্দু করে প্রতিটির দূরত্বকে ব্যাসার্ধ ধরে চারটি ত্রিমাত্রিক বৃত্ত (sphere) অঙ্কন করে। তারপর বৃত্তগুলোর Intersection point দিয়ে 3-D Trilateration ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে পজিশন নির্ণয় করে। ত্রিমাত্রিক পদ্ধতিতে গোলক (sphere) সৃষ্টি করে Trilateration ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে সঠিক ফলাফলের জন্য কমপক্ষে চারটি স্যাটেলাইটের তথ্য প্রয়োজন হয়। অনেকসময় ৪র্থ স্যাটেলাইটের পরিবর্তে পৃথিবীর পরিধিকে ৪র্থ বৃত্ত হিসেবে ধরেও হিসাব করা হয়।
3Dintersection

GPS সিস্টেমে সময় মাপের ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১ লক্ষ ভাগের ১ সেকেন্ড = ৩ কিলোমিটার। এত ক্ষুদ্র সময় মাপতে পারে ব্যয়বহুল Atomic clock (accuracy ন্যানোসেকেন্ড) যা স্যাটেলাইটের আছে কিন্তু রিসিভারের নাই। রিসিভার স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত pseudo-random code কে synchronize করে নিজের ঘড়িকে আপ-টু-ডেট করে নেয়, অর্থাৎ স্যাটেলাইট ও রিসিভার উভয়ের ঘড়ির কারেন্ট টাইম একই হয়ে যায়। সাধারণ মানের GPS রিসিভার ±10m সঠিক পজিশন দেখাতে পারে। Global Positioning System এর higher accuracy-র ±1m জন্য ব্যবহার হয় Differential GPS। এই সিস্টেমে মহাশূন্যের স্যাটেলাইট ছাড়াও ল্যান্ড স্যাটেলাইট থেকেও তথ্য নেওয়া হয়। অনেক জিপিএস সফটওয়্যারে (জিপিএস ম্যাপ) রাস্তাঘাট ছাড়াও পেট্রোল পাম্প, পুলিশ স্টেশন, হোটেল/রেস্টুরেন্ট, পর্যটন স্থান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ইত্যাদির তথ্য দেয়া থাকে। কারেন্ট পজিশনের আশেপাশে উল্লিখিত কোন কিছু থাকলে জিপিএস ডিভাইসের ডিসপ্লেতে তা প্রদর্শন করে।
গাড়ি, জাহাজ, প্লেন ছাড়াও বড় বড় শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে, যুদ্ধে শত্রুসেনার ট্রেকিং রাখতে, বোমা-মিসাইলের নিশানাকে সঠিক করতে, কোন বিশেষ স্থানের উপর নজর রাখতে GPS সিস্টেম ব্যবহার হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের GPS-র বিকল্প হিসেবে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন তৈরি করছে  global navigation satellite system (GNSS)। যাকে বলা হয় Galileo। এটি ২০১৩ সাল থেকে চালু করা হবে। GLONASS নামে রাশিয়ার নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম আছে যা মহাশূন্য গবেষনা ও সামরিক কাজে ব্যবহার হয়। চীনও Beidou-2 নামে তাদের নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম তৈরির প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।

-------------------------------------------
লেখাটি সামহোয়ারইনব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল, টেকটিউনারদের সুবিধার্থে এখানে প্রকাশ করলাম।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া, HowStuffWorks,
Introduction to GPS: The Global Positioning System, Second Edition by Ahmed El-Rabbany

Level 0

আমি জোবাইর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 67 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

সব িকছুই েতা ভাল লােগ খারাপ লােগ যখন েটকিটউেন িকছু িখলেত বিস তখিন বাংলা ফন্ট উল্টাপাল্টা হোয়া শুরু কের। মেন হয় েযন আিম েপ্ল গ্রুেপর ছাত্র। েকউ সাহােয্য করেল খুিশ হব। িক ভােব িটউন প্রকাশ করব এ ব্যাপােরো সাহােয্য দরকার।

সজল রানা।
সরকারী এডোয়াডর্ কেলজ পাবনা।

এক্কেবারে জাক্কাস।

Level 0

ভালো ……… অনেক ধন্যবাদ.

Thanku

মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

আমি কিভাবে মোবাইল এর GPS ইউস করবো?

    ১। মোবাইলে GPS ফাংশন (রিসিভার) থাকতে হবে।
    ২। সেই মোবাইলে GPS প্রোগ্রাম (TomTom) থাকতে হবে।
    ৩। যে এলাকায় ব্যবহার করবেন সে এলাকার GPS ম্যাপ থাকতে হবে।
    GPS ফাংশনের মোবাইল এখনও বাজারে খুব একটা আসে নাই, বাংলাদেশের ঢাকা শহর ছাড়া অন্যান্য এলাকার GPS ম্যাপ আছে কিনা আমার জানা নেই।

ধন্যবাদ