একদা তিনি ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র ছিলেন। নিয়েছিলেন এর উপর ব্যাচেলর ডিগ্রিও। কিন্তু, বিজ্ঞানের এসব নিরস বিষয় ভালো লাগলনা বলেই কিনা, হটাত করে পড়াশোনা শুরু করলেন অর্থনীতির উপর। বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট থেকে পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করলেন। একে একে মেধার স্বাক্ষর রাখলেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সহ আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকেও। বিশ্ববিখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান মরগান স্ট্যানলি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। ছিলেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট এর খন্ডকালীন শিক্ষকও।
নাহ! এগুলোর কোনোটিই স্টিফেন জেনকে চেনার মত যথেষ্ট নয়। ফরেক্সে স্টিফেন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার বিখ্যাত "ডলার স্মাইল" থিওরির জন্য।
দৃশ্যপট ১#
বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। মন্দায় আক্রান্ত হচ্ছে একের পর এক উন্নত দেশ। স্বাভাবিকভাবেই, আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে বিনিয়োগ রাখবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তারা। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক ফরেক্স ট্রেডারই ফরেক্স ট্রেডিং এর পাশাপাশি স্টক ট্রেডিং করে থাকেন। যখনই কোনো দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তার সাথে বিপর্যস্ত হয় স্টক মার্কেটেও। তাই বিনিয়োগকারীরা চান দ্রুত তাদের বিনিয়োগ সে দেশ এবং সে দেশের মুদ্রা থেকে কোনো নিরাপদ মুদ্রায় সরিয়ে নিতে। আর এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ হচ্ছে ডলার। নানা কারনেই ডলারকে "সেফ হেভেন" অথবা নিরাপদ আশ্রয় মনে করা হয় যার মধ্যে বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি হওয়াও একটি।
অর্থনীতির সাধারণ সূত্র হচ্ছে, "চাহিদা যত বাড়ে, যোগান সীমাবদ্ধ থাকলে দামও তত বাড়েঃ। আর তাই, ডলারও শক্তিশালী হয়।
এক্ষেত্রে, লক্ষণীয় যে বিনিয়োগকারীরা যদি একবার আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অবস্থা বিবেচনায় না এনেই ডলারে ফিরে যায়। কারন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অবস্থা যাই থাকুক, তারপরও দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্থিতিশিল অর্থনীতির অধিকারী।
দৃশ্যপট ২#
দুর্বল হতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। ফরেক্স মার্কেটে প্রায়ই বিভিন্ন ইকোনমিক নিউজ প্রকাশিত হচ্ছে/ঘটছে। এক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সূচকগূলো দুর্বল হচ্ছে। জিডিপি কমে যাচ্ছে, সুদের হারও কমানো হচ্ছে। তার সাথে সাথে ডলারও দুর্বল হচ্ছে। হাসির যে ছবিটি উপরে দেখতে পাচ্ছেন, তার নিচের অংশ এটাই নির্দেশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যত দুর্বল হবে, ডলারও তত দুর্বল হবে।
আগের দৃশ্যপটের সাথে এবারের পার্থক্য হল, এক্ষেত্রে ট্রেডাররা আতঙ্কগ্রস্থ নন কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে হতাশ। কোনো দেশের অর্থনীতি দুর্বল হলে, সে দেশের কারেন্সি দুর্বল হয়, এই সূত্রানুসারেই পড়ছে ডলার।
দৃশ্যপট ৩#
আবার হাসছে ডলার। রাতের আধার পেরিয়ে আলোর মুখ দেখছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, আর সেই সাথে ডলারও পেয়েছে অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষমুখের সন্ধান। অর্থনীতি ভালো হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ডলারের চাহিদা তথা দাম বাড়তে শুরু করেছে। একে বলা হয় গ্রীনব্যাক।
যেহেতু, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে, তাই ধরে নেয়া যায় জিডিপিতে প্রবিদ্ধি হচ্ছে, বাড়বে সুদের হারও যা ডলারকে আরো শক্তিশালী করবে।
এটাই হচ্ছে স্টিফেন জেনের "স্মাইল থিওরি" এবং বেশ কয়েক বছর ধরেই এই থিওরি বেশ ভালোভাবেই কাজ করছে।। এই থিওরি বড় ধরনের আলোচনায় আসে ২০০৭ সালের বৈশ্বিক মন্দা শুরুর সময়। যারা অনেক দিন ধরে ফরেক্স ট্রেড করেন, তারা জানেন যে এই সময়ে ডলার কতটা শক্তিশালি হয়েছিল। দৃশ্যপট ১ এর সাথে এর তুলনা করতে পারেন।
২০০৭ থেকে ক্রমান্বয়ে ডলার শক্তিশালী হওয়ার পর হটাত করেই বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নয়নের আভাসে ও দুর্বল আমেরিকান অর্থনীতির কারনে ডলারের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়ে উঠেন ইউরো/পাউন্ড/অস্ট্রেলিয়ান ডলারের প্রতি। সে বছর ডলারের পারফরমেন্সই সবচেয়ে খারাপ ছিল। .
সামনের দিনগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবে অনেক উত্থান পতন ঘটবে। তো দেখা যাক, ডলার থিওরি আগামী দিনগুলোতে কেমন কাজ করে।
অসাধারণ মেধাসম্পন্ন এই লোকটি শুধু একটি থিওরি দিয়েই ক্ষ্রান্ত দেননি, এখনো ফরেক্সের সাথেই আছেন।। সম্প্রতি, একটি নতুন হেডজ ফান্ডও খুলেছেন তিনি।
আমরা তার নতুন হেডজ ফান্ডের সাফল্য আশা করতেই পারি!
মন খুলে হাসুন এবং "ডলার স্মাইল থিওরী" ব্যবহার করে ফরেক্স মার্কেটকে আরো ভালোভাবে বুঝুন।
লেখাটি প্রথম প্রকাশ হয়েছেঃ বিডিপিপস - ফরেক্স নিয়েই সবকিছু!
আমি স্বপ্নিল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 10 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
aisob economics er onko bujte 12 ta beje jai…