বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আসসালামুয়ালাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন । প্রায় ১ বছর ১ মাস পরে আবার ও লিখতে বসলাম টেকটিউন্স এ। এই সময়ের মধ্যে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা, সাইটকে সাজান হয়েছে অনেক সুন্দর ভাবে, নতুন নতুন ফিচার যুক্ত হয়েছে, তাছাড়া টেকটিউন্স পেয়েছে অনেক নতুন টিউনার যারা ভালো ভালো টিউন করছে। আশা করি সামনে আরও অনেক ভালো কিছু আসছে টেকটিউন্স এ। হাতে সময় খুব কম থাকে তাই চাইলে ও আসলে টিউন করতে পারি না।
যাই হোক এবার আসি আমার আজকের টিউনের বিষয় নিয়ে কথোপকথন। আজ আমি আপানাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে একটি পাণ্ডার। আপনারা সবাই হয়তো পাণ্ডা চিনে থাকতে পারেন। আসলে এটা যেমন তেমন পাণ্ডা নয়। যারা একটু বাকা বাঁকা এসইও করেন তাদের জন্য রীতিমত ভুমিকম্প। হ্যাঁ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি। এই হল সেই এসইও মাস্টারদের সুপরিচিত নাম “গুগল পাণ্ডা” । আজ আমরা এর জীবন কাহিনী, কেন এলো সার্চ ইঞ্জিনে, কি কি ক্ষমতা তার, এর আপডেট ভার্সন গুলোর ব্যবহার এসব নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি সবারই ভালো লাগবে।
প্রশ্ন জাগতেই পারে গুগল আবার কবে থেকে পাণ্ডা পোষা শুরু করলো। আসলে এই “গুগল পাণ্ডা” কোন উন্নত জাতের চাইনিজ পাণ্ডা নয়, এটা একটি গুগল এর অ্যালগোরিদম এর পরিবর্তনের নাম। যেটা আমরা সার্চ রেজাল্ট ফিল্টারিং ও বলে পারি। গুগল তাদের সার্চ রেজাল্টকে আরও সহজ ও স্প্যামিং এর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নতুন একটি আপডেট ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে প্রকাশ করে, যেটি “গুগল পাণ্ডা” নামে এখন সবার কাছেই বেশ পরিচিত। বিশেষ করে যারা এসইও নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য এক প্রকার বাড়তি চাপ। এটা এমন একটি অ্যালগোরিদম যেটি অনেক শক্তিশালী, এটি একটি ওয়েব সাইটের সকল প্রধান বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দেয়, যেমন কন্টেন্ট, বাউন্স রেট,ভিজিটর ডাটা, ডোমেইন এর বয়স, কোয়ালিটি ব্যাক লিংক, সাইট স্পীড সহ সব কিছু। এটা কিছুটা মানুষের মত কাজ করে থাকে। নিজে নিজে অনেক ক্ষেত্রে নতুন পদক্ষেপ নেয়, এবং প্রয়োজন মাফিক তা বাদ ও দিয়ে দেয় ।এসকল তথ্যের মধ্যে যদি কোন একটি বিষয় তার কাছে মনে হয় যে এটি রেংকিং পাওয়ার যোগ্য না তাহলে তাকে একদম নিচে ফেলে দিবে। মোট কথা এটা বললে ভুল হবে না যে, গুগল পাণ্ডা= No(Spamming+copy/past+low quality content+low quality backlink)।
আমারা জানি গুগল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন। যারা ইন্টারনেট ব্যাবহার করেন তাদের জন্য তো এটা এমন একটি স্থান যেখানে শুধু মাত্র স্পর্শ করার ছাড়া সবকিছুই পাওয়া সম্ভব।
আর গুগল ও সবসময় চায় যে ব্যাবহারকারীদের সবসময় তাদের যা প্রয়োজন তাই দিতে। কিন্তু সেই কাজটি অনেক সময় ব্যাহত হয় কিছু স্প্যামারদের কারনে যারা নিজ থেকে কোন কিছু না দিয়ে অনের জিনিস চুরি করে, গুগলের চোখ ফাঁকি দিয়ে সবার আগে অবস্থান করে। এতে করে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত সব ওয়েব সাইট চলে আসে প্রথমের দিকে। তাই এই সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য নিয়ে আশা হয় “গুগল পাণ্ডাকে”। যে এই ধরনের ওয়েব সাইট গুলকে গুগল সার্চ রেজাল্ট থেকে কিক মেরে উপর থেকে একদম নিচে নিয়ে আসবে। ( এই কথা বলার সাথে সাথে “কুংফু পাণ্ডা” ছবির কথা মনে পরে গেলো পি) । গুগল তাদের এই পাণ্ডা আপডেট কে এমন ভাবে তৈরি করেছে যে, যেকোনো ধরনের অযচিত ওয়েব সাইট গুলকে কখনোই সার্চ রেজাল্টের প্রথমে আসতে দিবে না। এর ফলে আপনি পাবেন আরও উন্নত মানের সার্চ রেজাল্ট। যেখানে থাকবে না কোন স্প্যামিং, কপি/পেস্ট পোস্ট। যা পাবেন সবই বাঘা বাঘা সাইট।
গুগল পাণ্ডা ২০১১ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম ভার্সন “পাণ্ডা ১.০” প্রকাশ করে। তারা এই এক বছরে ৩.৬ ভার্সন পর্যন্ত বের করেছে। আসুন দেখে নেই কেমন ছিল তাদের কর্মকাণ্ড
এটি সর্ব প্রথম ভার্সন পাণ্ডার। বের হয় ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০১১। এর মূল লক্ষ্য ছিল “কন্টেন্ট ফর্ম” সাইটের উপর, যে সকল সাইট গুলোতে মেম্বারা রেজিঃ করে স্প্যামিং ও অথবা খারাপ কোয়ালিটির কন্টেন্ট প্রভাইড করত তাদেরকে সোজা ধাক্কা মেরে নিচে নামিয়ে দেয়া। এর মধ্যে উন্নতম উদাহরণ হল hugpage.com
১১ এপ্রিল, ২০১১ সালে এটা রিলিজ হয়। এটাই ছিল গুগলের ১ম অফিশিয়াল রিলিজ। যদিও বা এটা তেমন সাফল্য অরজন করতে পারিনি। এটি ছিল মূলত আমেরিকান সার্চ গুলোকে ফিল্টার করা। তাছাড়া সারা বিশ্বের সকল ইংরেজি ভাষার ওয়েব সাইট গুলোকে যারা কী ওয়ার্ড স্টিফিং করার বা অন্য সকল ব্যাক হ্যাট এসইও করে ১ম পেজে থাকত তাদেরকে অপসারন করা।
গুগল পাণ্ডা ২.১ বের হয় ১০ই মে ২০১১ আর ২.২ বের হয় জুন ১৬ ২০১১ তে। স্বল্প সময়ে ২টি ভার্সন বের করার কারনে বেশ কিছু বাগ থাকে । আর এই সময়ে গুগল যেসকল সাইট গুলো স্ক্রাপিং এর মাধ্যমে রিলিভেন্ট কন্টেন্ট ছাড়াই রেংকিং পায় তাদেরকে বাদ দেয়ার জন্য কাজ করে।
জুলাই ২৬, ২০১১ তে এটি বের হয় এবং এতে বেশ কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে লো কন্টেন্ট সাইট ও উন্নতমানের কন্টেন্ট এর সাইটের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়া। যেসকল সাইট গুলো লো কন্টেন্ট নিয়েও ১ম এ ছিল আর তাদের কারনে যারা ভালো কন্টেন্ট লিখেও তাদের পিছনে থাকতো তাদেরকে আবার র্যাংকিং এ ফিরিয়ে আনা ছিল এই আপডেটের প্রধান লক্ষ্য ।
এটার মূল লক্ষ্য ছিল অন্য ভাষার সাইট গুলোকে ফিল্টারিং করে সাইট অনুযায়ী সঠিক র্যাংকিং করা। এটি রিলিজ হয় আগস্ট ২০১১ তে।
এই ভার্সন এর কাজ ছিল যেসকল বড় বড় সাইট গুলো সার্চ এ থাকার সামর্থ্য থাকার পরেও তারা অন্যদের জন্য পিছিয়ে ছিল তাদেরকে আবার রেংকিং এ ফেরানো। এর মধ্যে ছিল Foxnews.com ও Android.com সাইট। এটি বের হয় সেপ্টেম্বার ৩০ শে, ২০১১/
২.৫ এর ২মাস পরেই গুগল তাদের ৩ প্যাক ভার্সন বের করে। এটিতে অন্যরকম সব পরিবর্তন আনা হয়। যেমন সাইট এক্সেস ভ্যালিডিটি, ইউজাদের ব্যাবহার, অন পেজ এ বেশ পরিবর্তন আনা হয়। এটি সার্চের ১% সাইট কে প্রভাবিত করে।
ইমেজ সার্চ এর আল্গরিদামে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। তাছাড়া এই সিরিজে গুগল ব্যাক লিংকিং এর উপর জোর দেয়। স্প্যামিং ব্যাক লিংকিং ধিরে ধিরে পরতে থাকে। এর মধ্যে ফোরাম এর প্রোফাইল লিংকিং উল্লেখযোগ্য। এই ভার্সন রিলিজ হয় ১৪ জানুয়ারি, ২০১২।
এই আপডেটে গুগল তাদের গুগল+ কে সার্চ রেজাল্টের (SERP’s) জন্য কাজ করায়। এতে করে গুগল+ ব্যবহারকারীরা একটি বাড়তি সুবিধা পান গুগল + থেকে। তাছাড়া বেশ বড় করে তারা কাজ করেন স্প্যামিং ব্যাক লিংক নিয়ে, এই আপডেটে বেশ কিছু জনপ্রিয় সাইট তাদের র্যাংকিং হারান গুগলে, এটি হিট করে যথাক্রমে ২৯শে ফেব্রুয়ারি ও ২৩ শে মার্চ ২০১২।
বলা চলে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী আপডেট যেটি কিনা ৩.৫% ওয়েব সাইটকে হিট করে। এই আপডেটের মূল কথা ছিল যে সকল সাইটে বেশি SEO করা হবে তাদেরকে নিচে নামিয়ে দেয়া হবে। ম্যাট কাট তার কথা রেখেছেন। হাজার হাজার ওয়েব সাইট তার পরে দিন থেকেই ভিজিটর শূন্য হয়ে যায়। যারা অধিক মাত্রায় ব্যাক লিংকিং , টুলস এর মাধ্যমে, কন্টেন্ট স্ট্যাফিং সহ অধিক মাত্রায় এসইও এর সাথে যুক্ত ছিলেন তারাই ছিল মূল টার্গেট। এতে করে যেমন নতুন সাইট এর র্যাংক হারান শুরু হয় ঠিক তেমনি যেসকল সাইট গুলো বেশ কয়েক বছর ধরে ভালো অবস্থানে ছিল তারাও নিচের দিকে নামতে থাকে। এই আপডেট হিট করে ১৯ শে এপ্রিল ২০১২।
মোট কথা গুগল পাণ্ডার মূল উদ্দেশ্য হল সার্চ ইঞ্জিনকে যতটুকু সম্ভব স্বচ্ছ রাখা। যদি ও এটি এখন ও ৩.৫-৫% ওয়েব সাইটের উপর কাজ করছে তবে এটি সামনের আপডেটে এই সংখ্যা আরও বাড়াবে। তাই এটা ভাবার কোন অবকাশ নেই যে আমার ওয়েব সাইট তো এখন ও ঠিক ই আছে। বলা যায় না কখন আপনি ১ নম্বর থেকে সজা ১০০ নম্বর এ চলে যাবে। এমন ও হতে পারে যে আপনি সার্চের ডাটাবেস এই নাই । একদম সরাসরি স্যান্ড বক্সে
আশা করি কিছুটা হলেও আমি “গুগল পাণ্ডা সম্পর্কে আপনাদেরকে ধারণা দিতে পেরেছে। আর আগামী পর্বে আমি বলব কিভাবে এই গুগল পাণ্ডার হাত থেকে বাঁচবেন, কোন কোন ম্যাথরড এখন ও ভালো কাজ করে ইত্যাদি।
তো ভালো থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ।
আমি সজীব রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 69 টি টিউন ও 819 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।