আমরা বিশ্বাস করি বা নাই করি; আমাদের ভেতর অনেকেই রয়েছেন যারা নিয়মিত হেডফোন বা ইয়ারফোন কিনি।অনেকে কেনার পর ভাবি ভুল হল না তো!ঠিক জিনিস কিনলাম তো? এইসব। যাই হোক, আপনি কিন্তু ইয়ারফোন বা এই হেডফোন এর জন্য ওয়ান টাইম ইনভেসমেন্ট করতে পারেন একবারই ভালো জিনিস কিনবেন দ্বিতীয়বার আর নাও কেনা লাগতে পারে। তাই আপনি এই সহজলভ্য গ্যাজেটসটির কিছু শ্রেনীগত বৈশিষ্ঠ্য ও স্পেসিফিকেশন জেনে খুব সহজেই একটি ভালো হেডফোন ক্রয় করতে পারবেন।
আজকের আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়েই আলোচনা করব। আশা করি আপনাদের খুব কাজে লাগবে।
আমাদের আগে জেনে নেয়া ভাল, ইন-এয়ার হেডফোন দুধরনের। যথা: একটি যা কানের ভিতরে ঢুকে দেয়া হয় বা এয়ার বাডস। অন্যটি কানের ক্যাভিটি এর ভেতর থাকে। এই দুইটিরই আলাদা আলাদা বৈশিস্ঠ্য আছে। যে হেডফোন কানের বাহিরের অংশের ওপর থাকে বা আমরা বলতে পারি, ক্যাভিটি-এয়ারফোন/হেডফোন; এটি যদি কানের থেকে একটু বড় হয় বা কানে যদি বেশী চাপ পড়ে তবে আপনার সমস্যা হতে পারে।
অন্যদিকে, এয়ারবাডস খুবই কমপ্যাক্ট। খুব সহজেই কানের ভেতর ফিট করা যায়। বাহিরের নয়েজ কম আসে। তবে অনেকের কাছে কানের ভেতর এরকম কিছু ঢুকিয়ে দেয়া হয়ত খারাপ লাগতে পারে।
তবে, আমার কাছে সাধারন ইউজের জন্য এয়ারবাডস হেডফোন গুলো সবচাইতে বেস্ট। আপনার কাছে কোনটা ভাল, নিচে টিউমেন্টে জানান। তবে আপনি যদি কাজে প্রায়শই হেডফোন ব্যবহার করেন; তবে অবশ্যই ক্যাভিটি-এয়ার হেডফোন ব্যবহার করবেন।
কারন এটা আপনাকে খুবই ভালো সাউন্ড দেবে। এবং এই হেডফোন আপনার কানের মাপমত হলে আপনার কোনো সমস্যা হবেনা।এইসব হেডফোনে যদি বাইরের সাউন্ড আসে; তবে ভলিউম বাড়িয়ে দেবেন,এতে বাইরের নয়েজ কমে যাবে। অথবা কানে একটু ফিটিং করে পরবেন, তাহলে সমস্যা হবে না আশা করি।
এটিও দুই ধরনের। একটি আগের মত কানে প্রেস করা হয় এবং আরেকটি কানকে ঢেকে রাখে বা চেপে রাখে।প্রথমটি লাইট খুবই লাইট ওয়েট বা বলতে গেলে হালকা। তবে অন্যটি বড় এবং ভারী হয়ে থাকে।
প্রথমটি যদি আপনি আপনার কানে ভালোভাবে লাগান; তবে আপনার কোনো সমস্যা হবে না আাশা করি। এবং হালকা হওয়ার কারনে এটি খুবই সহজেই বহন করা যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে ছেলেরা স্টাইল এর জন্য দ্বিতীয়টা বেশী ব্যবহার করে। এই দ্বিতীয় টাইপের হেডফোনটি আপনার কানের ৯৫% অংশ ঢেকে রাখে তাই শীতের সময় এডভান্টেজ পাবেন বলে আশা করি। তবে এই দুরকম এর অন-এয়ার হেডফোনই কাজের জন্য আদর্শ।এগুলো বাইরের সাউন্ড ব্লক করে দেয়। ভালো মানের গুলো কিনলে এগুলি আপনার কানের জন্য ক্ষতিকর হবেনা।
উপরের আলোচিত সব হেডফোন এরই প্রায় তারহীন সংস্করন রয়েছে; তবে তার জন্য আপনাকে এক্সট্রা টাকা খরচা করতে হবে। আপনি যদি পোর্টেবল ডিভাইস এর সাথে ব্যবহার করতে চান তবে তারআলা গুলোই ভালো। তবে আপনি যদি সকাল বেলা বেয়াম করার সময়; হাটাহাটি করার সময় বা সর্বপরি আউটসাইডে ব্যবহার করতে চান; তবে এটি কিনতে পারেন। তবে, এটি অনেকসময় তারওয়ালা হেডফোন এর মানের সাউন্ড প্রোডিউস করতে পারে না।
ম্যাগনেট থেকে শুরু করে ওয়্যারলেস টেকনোলজি পর্যন্ত; হেডফোনের কিছু স্পেসিফিকেশন রয়েছে।আমাদের এটি জেনে রাখা দরকার।
এয়ারফোনের ক্ষেত্রে Acoustic বলতে এয়ারফোনের ডিজাইনকে উল্লেখ করে। একটি বদ্ধ Acoustic সিস্টেম বাইরের শব্দকে ভিতরে আসা প্রতিরোধ করতে সক্ষম যেমন: Sony MDR-ZX110AP। তবে কিছু খোলা Acoustic সিস্টেম রয়েছে যার ফলে বাইরের শব্দও শোনা যায় যেমন: Philips SHP9500।তবে অনেক সময় বদ্ধ বা Closed Acoustic সিস্টেমও শতভাগ নয়েজপ্রুপ হয়না। কেবল মাত্র ভালো ফিট Acoustic হেডফোন সফলভাবে নয়েজ ১০০% বন্ধ করতে সক্ষম।
ফ্রিকুয়েন্সী রেসপন্স বলতে বুজাচ্ছে যে,এয়ারফোনটি কত ফ্রিকুয়েন্সী রেঞ্জ কভার করতে পারে। যত ভালো ফ্রিকুয়েন্সী রেঞ্জ কভার করতে পারবে,তত ভালো সাউন্ড। যেমন : Audio-Technica SPORT2BK যেটি 15-24,000 Hz ফ্রিকুয়েন্সী রেঞ্জসম্পন্ন তার থেকে Sony MD-RXB50AP এর ফ্রিকুয়েন্সী রেঞ্জ বেশী;তাই এর সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো।
এখানে Impedance বলতে বোঝানো হয়, ইলেকট্রিক সার্কিট এর রেজিস্টেন্স এর তড়িত সিগনাল। বেশি Impedance এর মানে কম ইলেকট্রিক সিগনাল এবং কম সাউন্ড কোয়ালিটি। তাই ভালো ভালো হেডফোনে এই Impedance এর মাত্রা কম করে থাকে।যেমন : Philips SHP2600/27।
অনেক সময় আমরা এই ম্যাগনেটের ওপর নজর দেই না। হেডফোন প্রধানত দুই রকমের ম্যাগনেট দিয়ে তৈরিযথা : Neodymium এবং Ferrite। Sony MDR-ZX300AP/B এ Neodynium এবং Sony MDR-V150 এ Ferrite মডেলে এ বিদ্যামান।মর্ডান সবকিছুতে Neodymium ব্যবহার করা হয় এবং Ferrite এর চাইতে শক্তিসালীও বটে।এই ম্যাগনেট প্রোডাকশন কস্ট বাড়াতে পারে; তবে বেশি চিন্তা না করলেও হবে
হেডফোন এই সেন্সিটিভিটি dB/mW এককে পরিমাপ করা হয়।এর মানে ১ মিলিওয়াট ইলেকট্রিক্যাল সিংনালে কতটুকু সাউন্ড হেডফোনটি তৈরি করতে পারে। এই সেন্সিটিভিটি এর মান ৮০-১১০ dB এর ভেতর হলে ভালো।
Diapharagm এটি হল হেডফোন এর ভেতরকার মেমব্রেন যা কাপে এবং শব্দ উৎপাদন করে।ডোম,কোন,হর্ন বিভিন্ন আকৃতির Diapharagm তৈরি হয়ে থাকে। এই Diapharagm এ যত ভালো ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয় সাউন্ড কোয়ালিটি তত ভালো হয়। তাই Diapharagm এর ব্যাপারটি অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
হেডফোন এর ম্যাগনেট এর সাথে যে কয়েল ব্যবহার করা হয়, তাকে ভয়েস কয়েল বলা হয়। এই কয়েল বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল এর তৈরি। যেমম: কপার,অ্যালুমিনিয়াম, কপার-ক্ল্যাড অ্যালুমিনিয়াম। অ্যালুমিনিয়াম কপার এর সাউন্ড খুবই সেন্সিটিভ হয়; তবে কপার কয়েল এর মত অত টেকসই হয়না। তাই বর্তমানে ভালো হেডফোনে কপার-ক্ল্যাড অ্যালুমিমিয়াম কয়েল বা CCAW ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে মূলত বর্তমানে যে ওয়্যারলেস টেকনোলজি এর হেডফোন বানিজ্যিকভাবে সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে; সেটি হল ব্লুটুথ হেডফোন। ব্লুটুথ হেডফোন যেকোন ব্লটুথ মিডিয়া ডিভাইস এর সাথে সহজেই কানেক্ট করা যায়। ১০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত রেঞ্জ পাওয়া যায়। এই ব্লুটুথ সবচাইতে সুরক্ষিত একটি ওয়্যারলেস টেকনোলজি।
আরেকটি যে টেকনোলজি এর হেডফোন পাওয়া যায় তা হল NFC। তবে বাংলাদেশে একদম কম। যেকোন NFC ওয়ালা ফোন যেমন : আইফোন ৬/৭, গ্যালাক্সি এস ৭/৮ এর সাথে খুব সহজেই একটি ট্যাপ এর মাধ্যমে কানেক্ট করা যায়।
এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি সুবিধা।এর মাধ্যমে বাইরের অবান্তর শব্দ কানে ঢুকতে পারে না। ভালো ভালো প্রায় সব হেডফোনেই এই সুবিধা মেলে।
যোগাযোগ বা কমিউনিকেটিং এর জন্য তারওয়ালা এয়ারবাডস, স্পোর্টস বা এরকম আউটসাইড ব্যবহারের জন্য ওয়্যারলেস এয়ারবাডস,তারওয়ালা হেডফোন কম্পিউটারে অনেকক্ষন ব্যবহারের জন্য, ওয়্যারলেস হেডফোন ব্যবহার করবেন অনেকক্ষন ল্যাপটপে কাজ করার জন্য। আর হেডফোন কেনার আগে উপরের স্পেসিফিকেশন গুলো মাথায় রাখবেন।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।
আমার উপকারে আসল আপনার দেওয়া পোস্টটি, ধন্যবাদ আপনাকে।