ছোট ড্রোন গুলো নতুন কোন ব্যাপার নয়। মার্কেটে কয়েক বছর যাবত ধরে ছোট ড্রোন গুলো রয়েছে। ছোট ড্রোন গুলোও বড় সাইজের ড্রোন গুলোর মতো প্রায় যেকোনো কিছু করতে পারে, কিন্তু এখানে নতুন কোন ব্যাপার রয়েছে? হ্যাঁ, স্পার্ক ড্রোন একটি ছোট ড্রোন, যেটার সাইজ একটি বার্গারের সমান আর এতে আপনি বড় ড্রোন গুলোর চেয়েও বেশি কিছু করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে এমন কিছু অসাধারণ ফিচার যেগুলো জানতে অবশ্যই আপনাকে বাকি টিউনটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে! অবশ্যই আমি সূচনাতেই সবকিছু বলতে চলছি না! তো গভীরে ঝাঁপিয়ে পড়া যাক...
সত্যি কথা বলতে, এই ড্রোনে বড় যেকোনো ড্রোনের সকল ফিচার রয়েছে এবং এর নিজের কিছু অসাধারণ ফিচার রয়েছে, যেগুলো যেকোনো ড্রোনকে হার মানাতে বাধ্য। ছোট, কালারফুল আর স্মার্ট এই ড্রোনে রয়েছে অত্যন্ত পাওয়ারফুল ক্যামেরা যেটা আপনার যেকোনো সট গ্রহন করার জন্য বিশেষভাবে ডিভাইজ করা। ড্রোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক ফেস রিকগনেশন ফিচার, মানে ড্রোন চালুই হবে আপনার চেহারা চেনার পরে।
হাতে ড্রোনটিকে ধরে রাখতে হবে, তারপরে আস্তে করে হাত নিচের দিকে নামিয়ে হাত ছেড়ে দিতে গেলেই ড্রোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লঞ্চ হয়ে যাবে। উড়ার পর থেকে ড্রোনটি সম্পূর্ণ আপনার হাতের ইশারায় কাজ করতে শুরু করবে। আপনি হাতের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে আরামে ড্রোনটিকে পরিচালনা করতে পারবেন। হাতে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার মতো অঙ্গভঙ্গি করলে ড্রোনটি ছবি তুলে নেবে, আর হাত দিয়ে টাটা বাই বাই জানালে ড্রোনটি দূরে চলে যাবে। তাছাড়া অঙ্গভঙ্গি করে ড্রোনটিকে কাছে ডাকলে, আপনার হাতের কাছে চলে আসবে।
হাতের বিভিন্ন ভঙ্গিতে এতে কন্ট্রোল করার যে বিশেষ ফিচার, এটি নিঃসন্দেহে যেকোনো ড্রোনকে হার মানিয়ে দিতে সক্ষম। জাস্ট হাতের তালু দেখিয়ে আপনার হাতকে যেদিকে নিয়ে যাবেন, ড্রোনটি সেদিকেই চলে যাবে, কন্ট্রোল করা কতোটা সহজ চিন্তা করে দেখেছেন? অঙ্গভঙ্গি ছাড়াও আপনি রিমোট কন্ট্রোল, স্মার্টফোন, এবং কোম্পানির এক বিশেষ ফার্স্ট পারসন হেডসেট ব্যবহার করেও ড্রোনটিকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।
জিপিএস এর সাহায্যে সহজেই আপনি ড্রোনটির অবস্থান সম্পর্কে জেনে যাবেন। আমার সবচাইতে ভালো লেগেছে, এর ইন্টেলিজেন্স লেভেল, ধরুন ড্রোনটি উড়ছে সামনে এক দেওয়াল রয়েছে, কিংবা গাছের ডাল রয়েছে যেখানে আঘাত হানলে ড্রোনটির ক্ষতি হতে পারে; স্পার্ক ড্রোনের এই বিষয়টি নিজে নিজে বোঝার ক্ষমতা রয়েছে, সহজেই ড্রোনটি সেই জায়গাকে বাইপাস করে নিরাপদ জায়গা দিয়ে উড়ে যাবে।
তাছাড়া ড্রোনটির কামেরায় রয়েছে স্মুথ মুভিং ফিচার, যেটার মাধ্যমে কোন প্রকারের কাপাকাপি ছাড়ায় স্মুথ রেকর্ডিং এক্সপেরিএন্স প্রদান করতে সক্ষম। এতে রয়েছে এক বিশেষ ফিচার গিম্বেল স্টাবিলাইজেশন, যেটা অনেকটা আপনার স্মার্টফোন ক্যামেরার অপটিক্যাল ইমেজ স্টাবিলাইজেশন ফিচারের মতো।
আর স্মার্ট ফোন থেকেই যেকোনো সট গ্রহন করার জন্য ড্রোনটিকে হ্যান্ডেল করতে পারবেন। চিন্তা করার কারণ নেই, কারণ এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ফটোতে ডিএসএলআর ইফেক্ট দিয়ে দেবে (বুকেহ ইফেক্ট)। যদি আপনি আগে কখনো ড্রোন না উরিয়ে থাকেন, তো এই ড্রোনটি নিজে থেকেই আপনাকে ড্রোন উড়ানো শেখাবে।
স্পার্কের ওয়েবসাইট মতাবেক, এই ড্রোনটি একটানা ১৬ মিনিট উড়তে সক্ষম এবং ২ কিলোমিটার পর্যন্ত এইচডি ওয়াইফাই ভিডিও ট্র্যান্সমিট করতে পারে। ড্রোনটির ফ্লাইং স্পীড ৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা; মানে আপনি স্পোর্টস মুডেও অনেক ছবি তুলতে পারবেন। তার সাথে এতে যে শুধু বিল্ডইন অঙ্গভঙ্গি রয়েছে, তা কিন্তু নয়! আপনি চাইলে একে নিজের ইচ্ছা মতো অঙ্গভঙ্গিতে প্রসিক্ষন দিতে পারবেন, আর ড্রোনটি হুবহু সেইভাবেই কাজ করবে। ক্যামেরা কোয়ালিটি সম্পর্কে যদি, বলি তো সত্যিই অসাধারণ সেলফি নেওয়া সম্ভব, সাথে শহরের উপর থেকে যে ভিউ ক্যাপচার করে সেটা দেখার মতো।
তাছাড়া কোম্পানিটি ড্রোনটির জন্য ফার্মওয়্যার আপডেট প্রদান করে, যার মাধ্যমে তারা নতুন কোন ফিচার উন্নতি করলেই, আপনি সাথে সাথে সেটা আপনার ড্রোনটিতে পেয়ে যাবেন। নতুন ফার্মওয়্যার আপডেট অনুসারে আপনি সহজেই এ থেকে ১৮০ ডিগ্রি ফটো নিতে পারবেন। সাথে ক্যামেরা পিকচার কোয়ালিটি'তে আরো উন্নতি আনা হয়েছে। এর মানে এটা দাঁড়াচ্ছে, ড্রোনটিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফিচার উন্মুক্ত হতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে ফার্মওয়্যার আপডেট নিয়মিত প্রদান করা হবে।
ওহ, বলতে ভুলেই গেছি, ড্রোনটি ভিডিও করার সময় আপনাকে ট্র্যাক করতে পারে। মানে আপনি ধরুন আপনার সাইকেলে সাইকেলিং করছেন, ড্রোনটি আপনাকে ট্র্যাক করবে আর আপনার সাথে সাথে চলে যাবে। সাথে ড্রোনটি কন্ট্রোল করার জন্য কোম্পানি থেকে রয়েছে এক স্পেশাল স্মার্টফোন অ্যাপ, যেটা শুধু ড্রোন কন্ট্রোল নয়, ভিডিও এডিট করে ইনস্ট্যান্ট শেয়ার করার কাজেও আপনাকে সাহায্য করবে। এর আরেকটি বিশেষ ফিচার হচ্ছে "রিটার্ন টু হোম" মানে ড্রোনটি ঠিক যে পথে উড়েছিল ঠিক তার উল্টাপথে আবার আপনার কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে আসতে পারে।
যদিও ড্রোন আমাদের দেশে তেমন একটা পপুলার ব্যাপার নয়। কিন্তু টেক লাভারদের কথায় আলাদা, এমন অনেক পার্সনকে আমি পার্সোনালি জানি, যারা টেক গাজেট কেনার জন্য মাসের ৮০% ইনকাম উরিয়ে দেয়। দেখুন, ড্রোনটি আপনি কিনবেন কিনা সেটা নির্ভর করে আপনার টাইপের উপর।
যদি আপনি এর আগে কোন ড্রোন না কিনে থাকেন, বা স্পেশাল আর অসাধারণ একটি পোর্টেবল ছোট ড্রোন কেনার কথা ভাবছেন, যেটাতে সব ড্রোনের চেয়েও বেশি কিছু রয়েছে, তো হ্যাঁ, অবশ্যই আপনার স্পার্ক কেনা উচিৎ। তবে আরো ভালো ভিডিও ধারণ করার জন্য অনেক অপশন পেয়ে যাবেন আলাদা ড্রোনের। সাথে আপনার বাজেট যদি বেশি না থাকে তো আরো অনেক সস্তা ড্রোন রয়েছে, যেগুলোকে আপনার প্রথম ড্রোন হিসেবে ট্রায় করতে পারেন।
আপনি ড্রোনটি কিনবেন কিনা, সেটা বড় ব্যাপার নয়। স্পার্ক ড্রোনে সত্যিই কিছু অসাধারণ ফিচার রয়েছে যেগুলো আপনার জানা প্রয়োজনীয় ছিল। আর এই টিউনটির উদ্দেশ্যই ছিল ড্রোনটি কি কি অসাধারণ কাজ করতে পারে, সেগুলো আপনাকে জানানো। ড্রোনটির অঙ্গভঙ্গি বোঝার ক্ষমতা আর ফার্মওয়্যার আপডেট থেকে আনলক করা যাবে স্পেশাল ফিচার, এই দুইটি ক্ষমতা আমার মন কেড়েছে। আপনার কোন ফিচারটি সবচাইতে ভালো লেগেছে আমাদের নিচে টিউমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
Dji স্পার্ক নি:সন্দেহে বর্তমানে ছোট সাইজের সেরা ড্রোন। বাংলায় Dji স্পার্ক নিয়ে আপনার এই টিউনটি দারুন লাগল। এরকম আরও টিউন নিয়মিত লিখবেন আশা করি 🙂