সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই এক প্রকার কুশলেই আছেন। হার্ডওয়্যার বিষয়ক ৫ম পর্ব হিসাবে আজ আলোচনাতে থাকছে র্যাম বিষয়ক প্রকাশনা। এখানে আলোচ্য হিসাবে জানতে পারবেন র্যামের সংজ্ঞা, কিভাবে কাজ করে, র্যামের প্রকারভেদ, কি ধরনের ও কোন ব্যান্ডের র্যাম ক্রয় করবেন ইত্যাদি তথ্যাদি।
কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো র্যাম(RAM)। বলা চলে এটিই চালায় আপনার প্রিয় যন্ত্রটিকে। গতি কতটুকু হবে সেটা নির্ভর করে এটির ওপর। RAM (Random Access Memory) আমাদের মোটামুটি পরিচিত একটা শব্দ। গেম খেলতে যে পরিমাণ RAM লাগে সেটা পিসিতে না থাকলে বাঁশ খেতে হয়। RAM হল আসলে একটা টেম্পোরারি অদৃশ্য টাইপের স্টোরেজ। অদৃশ্য স্টোরেজ মানে হলো আপনার পিসিতে কোনো কাজ করার সময় যে হিসাব নিকাশ করে তার জন্য দরকারি সব ডাটা ওই র্যাম এ জমা হয়, আর শাট ডাউন করলে সেই RAM এ জমা হওয়া জিনিস সব মুছে যায়।
RAM আসলে আপনার স্কুলের ব্যাগের মত, স্কুলে যা যা দরকার তা আপনি ব্যাগে ভরে নিয়ে যেতেন, যা দরকার না তা আপনার পড়ার টেবিলে রেখে যেতেন। এখানে টেবিল হল আপনার ফোনের মেমোরি কার্ড, পুরো টেবিল মোটেও আপনি পিঠে করে স্কুলে নিয়ে যেতে পারবেন না(যদি না আপনি ট্রাক বা ভ্যান চালান) কারণ অনেক সময় লাগবে। এই সময়টা বাঁচায় ব্যাগ, কারন এটা বহন করা খুব সোজা এবং দ্রুততর।
RAM এর ক্ষেত্রেও একই, এটা এপ্লিকেশন চালানোর জন্য দরকারী ফাইলগুলো নিজের কাছে রাখে যাতে Processor তা খুব সহজে এক্সেস করতে পারে এবং RAM এর Read-Write speed মেমোরি কার্ডের চেয়ে অনেকগুণ বেশি! (সেজন্যই RAM ইউজ করে, নাইলে আমরা মেমোরি কার্ডকে ঠিকই RAM হিসেবে ইউজ করতে চাইতাম) তাই RAM বেশি মানে আপনার ডিভাইসের কাজ করার গতিও ফাস্ট হবে, অনেকেরই ধারনা এটা। শিক্ষক যেমন ব্লাকবোর্ড ছাড়া কোন কিছু লিখতে পারে না, কম্পিউটারও তেমনি র্যাম ছাড়া কোন কিছু লিখতে ও পড়তে পারে না। কম্পিউটার যখন অন হয় তখন কম্পিউটার কাজ করার মতো তথ্য র্যামে এনে তবেই ওপেন হয়। আবার কোন পোগ্রাম রান করলে সেই প্রোগ্রামটা RAM এ এনেই প্রোগ্রামটা ওপেন হয়। যদি কখনো কোন প্রোগ্রাম র্যাম এ লোড করার মতো জায়গা না পায় তবে সেটা ওপেনই হবে না। কাজেই যত বেশী রযাম লাগান ততোই ভাল চলবে আপনার পিসি। এটা একটা অস্থায়ী স্মৃতি ভান্ডার। বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হয়ে গেলে এই স্মৃতি ভান্ডারের সকল তথ্য মুছে যায়।
র্যাম এর বাস স্পীড বেশী হলে কম্পিউটারের গতি বেশী হয়। কাজেই বাস স্পীড দেখে র্যাম সিলেক্ট করুন। বিভিন্ন প্রকার র্যাম আছে। যেমন- DDR-1, DDR-2, DDR-3 (এই গুলো অনেকটা পূরাতন হয়ে গেছে) (DDR-6, DDR-7, DDR-8 নামে কোন RAM পৃথিবীর কোথাও আছে কিনা জানা নাই।) অবশ্য বাজারে প্রচলিত সমর্থিত মাডারবোর্ড গুলো DDR-4, DDR-5 সাপোর্ট করছে। মাডারবোর্ড ক্রয়ের সময় এর প্যাকেটের উপর ম্যানুয়াল উল্লেখ থাকে কি ধরনের র্যাম সাপোর্ট করবে ও কত জিবি পর্যন্ত একসেস করা যাবে। তবে অধিকাংশ মাডারবোর্ড গুলো ৮ জিবি পর্যন্ত র্যাম সাপোর্ট করছে।
শুধু জিবি হিসাব করলেই হবে না। সাথে আপনার র্যামের বাসস্পীড ভাল হতে। বাস স্পীড হচ্ছে র্যাম এর কাজ করার গতি। যে র্যাম এর বাস স্পীড যত বেশি সেই র্যাম তত দ্রুত কাজ করতে পারে। যদি ২ জিবি র্যাম লাগান আর বাস স্পীড যদি কম হয় তাহলে পার্ফরমেন্স ভালো পাবেন না। আবার আপনি আপনার মাদারবোর্ডে যতটুকু Bus Speed এর RAM সাপোর্ট করে, আপনি ততটুকু Bus Speed এর RAM কিনুন। কারন আপনি যদি তার থেকে বেশি Bus Speed এর RAM কিনেন তাহলে তা সম্পূর্ণ কাজ করবে না। একটা উদাহারন দিয়ে সহজ করে দেই। আপনার মাদারবোর্ড যদি DDR3-1066 Bus Speed এর RAM সাপোর্ট করে, কিন্তু আপনি যদি DDR3-1333 Bus Speed এর RAM কিনেন তাহলে তা কাজ করবে DDR3-1066 Bus Speed এ। ফলাফল কি হল। টাকা খরচ হল কিন্তু সেই অনুপাতে Performance পেলেন না। বর্তমানে র্যামের বাস স্পীড গুলো হচ্ছে 1600 MHZ হইতে 3200 MHZ পর্যন্ত।
এটা নির্ভর করে ব্যবহাকারীর কাজের উপর। আপনি যদি মুভি দেখা, অফিসিয়াল কাজ, ছোট খাট গেম খেলতে অভ্যস্ত থাকেন তাহলে ২ জিবির র্যাম যথেষ্ট। অপরদিকে অ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং সহ অন্যান্যা কাজ করতে চান তাহলে ৪ জিবি নেওয়াটাই যথেষ্ট হবে। আরেকটি কথা, যারা ৪ জিবি কিংবা তার বেশী র্যাম ব্যবহার করবেন তাদের একত্রে ১ টি র্যাম ক্রয় না করে খন্ড খন্ড ২ টি র্যাম ক্রয় করা ভাল হবে (২+২=৪ জিবি)। অবশ্য এতে একটু খরচ পড়লেও লাভ আপনারই হবে। যেমনঃ একত্রে ১ টি ৪ জিবির র্যাম ক্রয় করলেন কিন্তু কোন কারনে সেটি নষ্ট হয়ে গেল। এখানে যদি খন্ডভাবে ২ টি র্যাম ক্রয় করতেন তাহলে একটি নষ্ট হলে ২ জিবির অবশিষ্ট একটি র্যাম কাজে লাগাতে পারতেন। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
বাজারে প্রায় ২০ টির বেশী ব্যান্ডের র্যাম রয়েছে। তবে সবগুলো সমান নই। অপরদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা আসল ব্যান্ডের নাম ব্যবহার করে নকল র্যাম বিক্রয় করে থাকে। তাই র্যাম ক্রয় করার পূর্বে ভাল ব্যান্ড, প্যাকেট ইনটেক ও অনুমোদিত পরিবেশক কিনা তা বিবেচ্য বিষয়। বাজারে যে সকল র্যাম পাওয়া যায় তাদের মধ্য অন্যতম Transcend, Twinmos, Kingstone, Adata, Korsair, Apacer, Dynet, Hynix ইত্যাদি। তবে এদের মধ্য প্রথম ৩ টি কেই এগিয়ে রাখব।
ব্যান্ড অনুযায়ী ওয়ারেন্টি ১ বছরের প্রদান করা হয়। তবে অনেকেই বলে থাকেন লাইফ টাইম ওয়ারেন্টি। এটা কথার মার প্যাঁচ। তার মানেটা হল যতদিন কোম্পানী তাদের উক্ত প্রডাক্ট তৈরি করবে ও বাজারে বিদ্যমান থাকবে শর্ত প্রযোজ্য স্বাপেক্ষে সেখানে উক্ত কথাটি বলা হয়ে থাকে। তবে একটি মজার বিষয় হল প্রসেসরের মত র্যাম সহজে নষ্ট হয়না। ফেইল্যুর হলে হয়ত হাজারে ১০ টা হবে।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে। আশা করি টিউটোরিয়ালটি অনুসরনের মাধ্যমে আপনি অন্য সকল যন্ত্রাংশের মতই র্যাম ক্রয়ে সহায়ক হবে। তারপরেও সমস্যা থাকলে টিউমেন্ট করতে পারেন। আগামী পর্বে অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সবাই ভাল থাকুন।–আল্লাহ্ হাফেয
আমি এএমডি আব্দুল্লাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 157 টি টিউন ও 1046 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
সম্মানীয় ভিজিটর বন্ধুগন! সবাইকে আন্তরিক সালাম ও ভালবাসা। আশা করি ভাল আছেন। পর সংবাদ যে, আমরা একটি ব্লগ সাইট তৈরি করেছি। সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম শিক্ষা ও প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি, শিক্ষা, কম্পিউটার বিষয়ক যেমনঃ অনলাইন ইনকাম, ফ্রিল্যান্স, টিউটোরিয়াল, মুভি, গেমস, সফটওয়্যার, ভ্রমন, ইতিহাস, ভূগোল, কার্টুন, ধর্ম, টেক সংবাদ, এবং সংবাদপত্র ফিউচার...
thanks bro