নিজের কম্পিউটার নিজেই কিনি-শিখি [পর্ব-০৩] :: মাদারবোর্ড সম্পর্কে কিছু খুটিনাটি তথ্য – প্রসেসর

নিজের কম্পিউটার নিজেই কিনি-শিখি

السلام عليكم আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় টেকটিউনস সাইটের সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই এক প্রকার কুশলেই আছেন। ধারাবাহিক পর্ব হিসাবে আজকের টিউটোরিয়ালে আলোচনা হবে প্রসেসর সম্পর্কে। প্রসেসর কি, কিভাবে কাজ করে, কোন ধরনের প্রসেসর ভাল, কি ধরনের প্রসেসর ক্রয় করবেন তার যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। তথাপি নতুন কম্পিউটার কেনার সময় একটা কমন প্রশ্ন থাকে, কোন প্রসেসর নেওয়া ভালো? প্রসেসরের নানা বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা, রকমফের দেখে পুরোই হ্যাং ওভার অবস্থা! এই অজনা বিষয়ের সমাধানের জন্য এই টিউন! তাহলে আর কথার কলেবর বৃদ্ধি না করে মূল আলোচনাতে যাচ্ছি।আলোচনার প্রথম অংশ হিসাবে জানার চেষ্টা করব প্রসেসর কি? তথাপি মাডারবোর্ড সম্পর্কিত ২ টি পর্বে টিউন করেছিলাম সেইগুলো দেখতে পারেন নিচের লিংক অনুসরন করে

প্রসেসর কি?

সহজ ভাবে বলা যায়, কম্পিউটার যে যন্ত্রটি দিয়ে তথ্য ও উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পাদন করে, তাকেই প্রসেসর বলে। আগের দিনের কম্পিউটারের প্রসেসর গুলো ছিল অনেক বড়। কিন্তু ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র প্রসেসরের যাত্রা শুরু হয়।বর্তমানে প্রসেসর বলতে আমরা মাইক্রোপ্রসেসরকেই বুঝে থাকি। ল্যাপটপ, সার্ভার কিংবা যে-কোনো সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারের স্নায়ু কেন্দ্র একটিমাত্র সমন্বিত চিপ- মাইক্রোপ্রসেসর যা কম্পিউটারের সিপিইউ নামে পরিরিচত। প্রকৃতঅর্থে, মাইক্রোপ্রসেসর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং প্রোগ্রামেবল এমন একটি গাণিতিক ইঞ্জিন যা ইন্সট্রাকশনের মাধ্যমে কম্পিউটারের যাবতীয় অপারেশন নিয়ন্ত্রণ এবং সম্পাদন করে। এই সমন্বিত চিপটি একটি ছোট, পাতলা সিলিকন যার সামান্য কয়েক বর্গমিলিমিটারে কয়েক-কোটি ট্রানজিস্টার থাকে। বিস্তারিত জানতে হলে উইকিপিডিয়াতে দেখতে পাবেন এখানে

প্রসেসরের আশ্চর্যজনিত কিছু বৈশিষ্ট্য ও বিষয় সমূহ

যদি কেউ প্রশ্ন করেন কম্পিউটারের প্রান বা হার্ট কি? আপনি কি বলবেন? উত্তরে যাই বলুন না কেন, কম্পিউটারের যে আসলেই হার্ট আছে সেটা সত্যি। আর সেই হার্ট হচ্ছে প্রসেসর। প্রতি সেকেন্ডে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে দেয়া আপনার কমান্ড প্রসেস করাই প্রসেসর এর কাজ। তো আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি যেই প্রসেসর নিতে চাচ্ছেন সেটি আসলেই আপনার কথামত কাজ করার মত ক্ষমতাশালী কিনা? অফিস এর কাজ অথবা হেভি গেমিং কিংবা রেন্ডারিং এর জন্য আপনার প্রসেসর আসলেই উপযোগী কিনা কিংবা কিভাবে খুজে নিবেন আপনার জন্য উপযোগী প্রসেসর সেটা জানাতেই এই টিউন। তথাপি মাডারবোর্ডের মত প্রসেসরের কাঠামোগত বেশ বৈশ্ষ্ট্যি রয়েছে যেগুলো জানতে নিজেই তাজ্জব হবেন-

Socket


সকেট হচ্ছে একটি Physical Component যেটা একটা মাদারবোর্ড এর সাথে প্রসেসর এর Physical ও ইলেকট্রিক্যাল কানেকশন এ সহায়তা করে।

Core

সহজ ভাবে বলতে গেলে কোর হচ্ছে এক একটি আলাদা সিপিউ। বর্তমানে কয়েকটি আলাদা সিপিউ নিয়ে মাল্টি কোর এর প্রসেসর তৈরি করা হয়। যেমন ধরুন পেন্টিয়াম ৪ হচ্ছে সিঙ্গেল কোর অর্থাৎ একটি আলাদা সিপিউ। কোর ২ ডুও হচ্ছে ২ কোরের সিপিউ যেখানে ২ টি আলাদা সিপিউ কে একত্র করে মাল্টি কোর সিপিউ তে পরিনত করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সর্বচ্চ ৮ কোরের প্রসেসর পাওয়া যায়।

GHz/Gigahartz

GHz হচ্ছে একটি একক যা প্রসেসর এর কাজের গতি নির্দেশ করে। একটি প্রসেসর প্রতি সেকেন্ডে কত দ্রুত কাজ করতে পারে তা এই গিগাহার্টজ এককে প্রকাশ করা হয়। ১গিগাহার্টজ=১ বিলিয়ন সাইকেল পার সেকেন্ড। গিগাহার্টজ যত বেশি হবে, প্রসেসর তত শক্তিশালী হবে।

Cash Memory


এটি প্রসেসর এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ক্যাশ মেমরি হচ্ছে এক ধরনের মেমরি যা প্রসেসর এর সাথে যুক্ত থাকে। যখন প্রসেসরকে কোন কাজের কমান্ড দেয়া হয়, প্রসেসর তখন সেটা ক্যাশ মেমরিতে সংরক্ষণ করে রাখে। কাজের কমান্ড এর তুলনায় ক্যাশ মেমরির পরিমান কম হলে প্রসেসর তা র‍্যাম ও খুব বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে হার্ডডিস্ক এ সংরক্ষণ করে। ফলে প্রসেসর ধীরগতির হয়ে যায় ও পিসি স্লো হয়ে আসে। তাই এই ক্যাশ মেমরি যত বেশি থাকবে ততই ভাল। তবে এই ক্যাশ মেমরি আবার ৩ প্রকার।

  • L1 -ধারণক্ষমতা বা আকার খুব ছোট, কিন্তু সবথেকে দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে।
  • L2- ধারণক্ষমতা বা আকার মাঝারি এবং কাজের গতিও মাঝারি।
  • L3- ধারণক্ষমতা বা আকার অনেক বেশি কিন্তু কাজের গতি তুলনামুলক ধীর।

এর মাঝে L2 হচ্ছে সবথেকে ব্যালেন্স এক টাইপের ক্যাশ মেমরি। ইন্টেল সাধারণত L2 আবার L2/3 ২টা একসাথে ব্যবহার করে। AMD বেশীরভাগ ক্ষেত্রে L1/2/3 ৩টাই একসাথে ব্যবহার করে বেটার অপটিমাইজেশন এর জন্য।

FSB/Front Side Bus

এফএসবি দ্বারা সিপিউ ও মাদারবোর্ডের চিপসেট ও কম্পোনেন্ট এর যোগাযোগের গতির হার কে বুঝানো হয়। এফএসবি যত বেশি হবে, সিপিউ তত তাড়াতাড়ি মাদারবোর্ড ও অন্যান্য যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। তাছারা FSB বেশি হলে আপনি অনেক বেসি বাস স্পীড এর র‍্যাম ব্যবহার করতে পারবেন (যদি আপনার মাদারবোর্ড একই মাপের FSB সাপোর্ট করে)।

Turbo Boost

এটি মুলত হচ্ছে একটা প্রসেসর এর Highest Speed এ কাজ করার ক্ষমতা। প্রসেসর এর ভোল্টেজ ও থার্মাল দ্বারা টার্বো বুস্ট কে লিমিটেড করে রাখা হয়।

প্রসেসরের কোর, থ্রেড এবং হাইপারথ্রেড কি?

হাইপার থ্রেডিং হচ্ছে ইন্টেল এর একটি যুগান্তকারী আবিস্কার যা সিঙ্গেল কোর কে দুই কোরের সমান কাজ করার ক্ষমতা দান করে। এএমডির প্রসেসর এ এর নাম হাইপার ট্রান্সপোর্ট। এই প্রযুক্তির কারনে একসাথে অনেকগুলো কাজ করলেও সিস্টেম এর গতি ধীর হয় না।  হাইপার থ্রেডিং/ট্রান্সপোর্ট সমর্থনকারী প্রসেসর এর ক্ষমতা সাধারন থেকে ভাল হয়। থ্রেড/হাইপারথ্রেড মূলত ইন্টেল এর একটি টেকনোলজি যা একটি সিঙ্গেল কোরকে ২ কোরের সমান কাজ করার সাময়িক ক্ষমতা প্রদান করে। অর্থাৎ একটি ফিজিকাল কোরের সাথে একটি ভার্চুয়াল কোর। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এই থ্রেড/হাইপারথ্রেড কাজের সেটা হচ্ছে আসল বিষয়। শুধু কোর দিয়ে বিবেচনা করলে ইন্টেল এর আছে কম কিন্তু খুব শক্তিশালী কোর। আর সেই তুলনায় AMD এর কোর সংখ্যা বেশি কিন্তু প্রতি কোরে ভোল্টেজ কম, অর্থাৎ কিছুটা দুর্বল।

  • নোটঃ

কম্পিউটার প্রসেসর কোর কি, কিভাবে কাজ করে, কোর সমূহের কাজ ও প্রকারভেদ এবং ক্লক স্পীড কিভাবে কাজ করে এই সম্পর্কে A-Z টিউটোরিয়াল সাজানো আছে। টিউটোরিয়ালটি করেছেন টিটির জনপ্রিয় শীর্ষ টিউনার সানিম মাহবীর ফাহাদ ভাই। সময় থাকলে প্রকাশনাটি দেখলে বুঝতে পারবেন এখানে

সর্বশেষ

টিউনের কলেবর বৃদ্ধি জনিত কারনে আজ এই পর্যন্তই থামতে হচ্ছে। আশা করি, এই টিউনটি দেখলে আপনাদের অনেকেরই প্রযুক্তিগতভাবে প্রসেসর সম্পর্কে এর গঠনগত ও ব্যবহারগত কৌশল সম্পর্কে বেশ সুস্পষ্ট ধারনা তৈরিতে সাহায্য করবে। প্রসেসর সম্পর্কিত টিউনের বাকি অংশ আগামী কাল পাবলিশ করব বলে আশা রাখি। প্রসেসর সম্পর্কিত ২য় পর্বে থাকবে কোন ব্রান্ড বেছে নিবেন, সুবিধা-অসুবিধাবলী, কোথা হতে ক্রয় করবেন, কোন ধরনের প্রসেসর আপনার জন্য উপযুক্ত এবং অনুমোদিত বাংলাদেশী প্রসেসর আমদানী কারকদের তালিকা। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। দীর্ঘ সময় নিয়ে টিউন দেখার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকুন। -আল্লাহ্ হাফেয-

তথ্য সূত্র: সি নিউজ, পিসি ম্যাগাজিন ও প্রসেসর ওয়েব সাইট)

Level 2

আমি এএমডি আব্দুল্লাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 157 টি টিউন ও 1046 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

সম্মানীয় ভিজিটর বন্ধুগন! সবাইকে আন্তরিক সালাম ও ভালবাসা। আশা করি ভাল আছেন। পর সংবাদ যে, আমরা একটি ব্লগ সাইট তৈরি করেছি। সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম শিক্ষা ও প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি, শিক্ষা, কম্পিউটার বিষয়ক যেমনঃ অনলাইন ইনকাম, ফ্রিল্যান্স, টিউটোরিয়াল, মুভি, গেমস, সফটওয়্যার, ভ্রমন, ইতিহাস, ভূগোল, কার্টুন, ধর্ম, টেক সংবাদ, এবং সংবাদপত্র ফিউচার...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ধন্যবাদ

Level 0

Thanks a lot..

আপনি bdtutorialgift.com সাইটে গিয়ে অতিথি লেখক মেনুতে ক্লিক করবেন। সেখানের ফর্ম সাবমিট করবেন।অতপর আপনার মেইলে লিংক প্রেরন করা হবে সেটিিএকটিভ করলেই হবে।-ধন্যবাদ