টিভি, ফ্রিজ, পিসি, মোবাইল নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের পর ফটোগ্রাফির সখ সবারই আছে। চলুন দেখে নেই ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার আগে কি কি করবেন।
ডিজিটাল ক্যামেরা কে দুটো বিভাজনে টানা হয়-
১. এসএলআর/ডিএসএলআর (SLR/dSLR) ও ২. পয়েন্ট এন্ড শ্যুট বা কম্প্যাক্ট (Compact).
এগুলোর আবার নানা ভাগ আছে। প্রথমে নিজের বাজেট আর প্রয়োজন বিবেচনা করুন। dSLR বা সেমি dSLR কিনতে বড় অংকের পয়সা গুনতে হবে। সিরিয়াস ধরণের ফটোগ্রাফির ইচ্ছে না থাকলে ওদিকে যাবার প্রয়োজন নেই। লেন্সের যত্ন ভালভাবে না নিলে ফাংগাস পড়ে দামী জিনিষটা নষ্ট হবে। প্রথমদিকের ফটোগ্রাফার হলে আমি বলব কম্পাক্ট ক্যামেরা কিনে হাত পাকা করে নিন। তবে বাজেট নিয়ে যদি চিন্তা না থাকে তবে dSLR নিতে সমস্যা নেই। টিউনে মূলত কম্প্যাক্ট ক্যামেরা নিয়েই আলোচনা করা হবে।
পয়েন্ট এন্ড শ্যুট (Point & Shoot) ক্যামেরাগুলোকে কম্প্যাক্ট ক্যামেরা বলে, দেশে ডিজিটাল ক্যামেরা নামে বেশী পরিচিত। আকারে ছোট, পকেটে নিয়ে ঘোরা যায় আর অপারেশন খুব সহজ। যার ছবি তোলা হবে তার দিকে ক্যামেরা ধরে শাটারে চেপে ধরলেই চলে, ফোকাসিং, লাইট ব্যালেন্সের কোন ঝামেলা নেই।
রেজুল্যুশন (Resolution)
ক্রেতাদের টেন্ডেসী বেশী মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার দিকে। আসলে ক্যামেরা প্রস্তুতকারকেরা মেগা পিক্সেল দেখিয়ে মনোযোগ অন্যদিকে ডাইভার্ট করে। যেদিকে আমাদের প্রথম মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন তা হল ক্যামেরার ইমেজ সেন্সরের সাইজ। একটি dSLR ক্যামেরার ইমেজ সেন্সর হয় ৩৬x২৪mm অর্থাৎ ৮৬৮mm2 সার্ফেস এরিয়া থাকে। কম্প্যাক্ট ক্যামেরাগুলোতে সাধারণত ৫x৪mm = ২০ mm2 সার্ফেস এরিয়া পাওয়া যায় মাত্র। এসব কারণেই মেগাপিক্সেল দেখিয়ে ক্যামেরা বিক্রির প্রবণতা বেশী কম্প্যাক্টে। মনে রাখুন ১০-১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে ভালমতই A3 সাইজের ছবি প্রিন্ট দিতে পারবেন। মেগাপিক্সেল নিয়ে বেশী ভাববার কোন কারণ নেই। সেন্সর CCD ও CMOS দুধরণের হয়। CMOS গুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। CCD পুরনো টেকনোলজি, বেশী ব্যাটারী নেয়, কিছু ভাল ইমেজ দেয় অন্যদিকে CMOS নতুন টেকনোলজি, কম বিদ্যুৎ নেয়। বর্তমানে দুটো সেন্সরের গুনগতপ্রায় সমান হলেও অনেকে CCD কে উপরে রাখেন।
জুম (Zoom)
বেশী জুম দেখে ক্যামেরা কেনার প্রবণতা যারা একটু অভিজ্ঞ তাদের। জুম মূলত দু’ধরণের ১. ডিজিটাল জুম আর ২. অপটিক্যাল জুম। ক্যামেরা কেনার সময় অপটিক্যাল জুম কত তা দেখে কিনুন, ডিজিটার জুম আপনার কোন কাজেই আসবে না। জুম এর জন্য দরকারী হল ইমেজ স্টাব্লাইজার। ইমেজ স্টাব্লাইজার আবার দু ধরণের ১. ডিজিটাল ও ২. অপটিক্যাল। ক্যামেরা কেনার আগে দেখে নিন আপনার ক্যামেরা অপটিক্যাল ইমেজ স্টাব্লাইজিং সাপোর্ট করে কিনা। ডিজিটাল সাপোর্টেড হলে সে ক্যামেরা চয়েস না করাই শ্রেয়।
অ্যাপারচার (Aperture)
অনেকেই হয়ত নামটাই শোনেননি। অ্যাপারচার হল ক্যামেরার ছিদ্র যা দিয়ে আলো ক্যামেরায় ঢুকে লেন্সে পড়ে। অনেকে ফোকাল লেংথ বলে থাকেন। ক্যামরায় প্রকাশ করা হয় f/1.2-f/22 এভাবে। এটা নির্দেশ করে কত কাছের আর কত দূরের ছবি আপনি ভালভাবে তুলতে পারবেন। dSLR ক্যামেরায় এটা সাধারণত f/1.2-f/22 হয়, মানে দুটো মানের বিশাল পার্থক্য থাকে । কম্প্যাক্ট ক্যামেরাগুলো সাধারণত f/3.3-f/5.5 হয়, অর্থাৎ দুটোর মানের ব্যাবধান কম। দুটোর ব্যাবধান যতবেশী হবে ততবেশী সুবিধা পাবেন আপনি। ক্যামেরা কেনার আগে এটি দেখে নিন।
সেনসিটিভিটি (Sensitivity)
ক্যামেরায় ISO হিসাবে প্রকাশ করা হয়। অনেকেই হয়ত নামে শুনেছি, কি কাজে লাগে ভালমত জানিনা। ISO নিদের্শ করে ক্যামেরার সেন্সরে পড়া আলো-অন্ধকার ক্যামেরা কত ভালভাবে বুঝে সেটা। ISO 100 থেকে শুরু হয়ে 200,400,800 ইত্যাদি হয়। ISO যেন 100 এর নিচে যেমন ৮০ থেকে শুরু হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে কমআলোতেও ভাল পারফর্মেন্স পাবেন।
শাটার স্পিড (Shutter speed)
শাটার স্পিড মানে ক্যামেরার শাটার কত দ্রুত বন্ধ হবে অর্থাৎ, ছিদ্র কতক্ষণ খোলা বা বন্ধ থাকবে সেটা। শাটার যত দ্রুত বন্ধ হবে ক্যামেরার ছিদ্র তত কম সময় খোলা থাকবে; তত কম আলো ক্যামেরায় প্রবেশ করবে; ইমেজ হবে শার্প। অন্যদিকে শাটার আস্তে বন্ধ হলে বেশী সময় খোলা থাকবে; ছবি হবে ঘোলা। বিশেষত চলমান কিছুর ছবি তুলতে শাটার স্পিড প্রয়োজন হবে। শাটার স্পিড 1/4,000 এভাবে প্রকাশ করা হয়। ক্যামেরা কেনার আগে দেখে ক্যালকুলেটরে ভাগ করে দেখে নেবেন কোন ক্যামেরার এই মান কম।
ফেস রিকোগনিশন (facial recognition)
বর্তমানে প্রায় সব ক্যামেরাতেই থাকে। এটার ভালদিক অটোমেটিক ফোকাস হয়ে যায়, ফলে ছবি ঘোলা হয়না। কেনার আগে দেখে নেবেন এটি আছে কি না। থাকা ভাল।
অপশন/মুড (Modes)
কম্প্যাক্ট ক্যামেরাগুলোতে ৮০ শতাংশ কাজই অটোমেটিক। তবে কিছু ক্যামেরায় ইউজারদের পার্সোনালাইজ করার সুযোগ থাকে বিভিন্ন মুড ব্যবহার করে। মুড চেঞ্জের অপশনটি শাটারের পাশে চাকতি আকারে হলে কাজে সুবিধা হয়, দ্রুত মুড চেঞ্জ করা যায়। ডিজিটাল উপায়ে মেনু থেকে বাটন চেপে চেপে কাজ করতে অনেকেই সমস্যা বোধ করেন। তাই কেনার আগে আপনার প্রয়োজন অনুসারে মুড বাটন কোথায় তা দেখে নিন। অবশ্য এটা তেমন জরুরী কিছু নয়।
ভিডিও অপশন ( Movie/Video Mood)
বর্তমানে সব ক্যামেরাতেই ভিডিও রেকর্ডিং এর সুবিধা থাকে। 720 p বা 1080p দেখেই অনেকে কিনে ফেলেন, তবে ছবির রেজুলেশনের মতই P এর মূল্য তেমন নেই। 720 p মানে1280x720 রেজুল্যুশনের ভিডিও, 1080p মানে 1920x1080 রেজুল্যুশন। এখন ভিডিও কোয়ালিটিই যদি ভাল না হয় তবে 1280x720 রেজুল্যুশন দিয়ে কি করবেন? ভিডিও এর কোয়ালিটি নির্ভর করে এর ডেটা রেট আর কম্প্রেশন মেথডের উপর। হাই ডাটা রেট আর লো কম্প্রেশন হলে ভিডিও ভাল হবে। এছাড়াও সেন্সরসহ আরো অনেক কিছু নির্ভর করে ভিডিও’র মানের উপর। যতটা পারুন ভাল দেখে নিন, অবশ্য কম্প্যাক্ট ক্যামেরায় খুব ভাল ভিডিও পাবার আশা করবেন না। 1080 p লেখা থাকলেও এর মান কখনোই হ্যান্ডিক্যামের 1080 p হবেনা কারণ সেন্সর দুটো আলাদা।
ব্যাটারী লাইফ (Battery life)
অন্তত ২০০-৩০০ ছবি তুলতে পারে এমন ব্যাটারী লাইফের ক্যামেরা নেয়া প্রয়োজন। কিছু ক্যামেরায় ব্যাটারী আলাদা করে খুলে চার্জ দেয়া যায়, এতে সুবিধা হল বাড়তি একটি ব্যাটারী কিনে রাখতে পারবেন। একটি চার্জে রেখে অন্যটি চালাতে পারবেন।
ক্যামেরা চয়েস করবার পর সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হল http://www.flickr.com/cameras/ থেকে ওই মডেলের ক্যামেরা দিয়ে বাস্তবে তোলা ছবি দেখে নেয়া। ফ্লিকারে এই অপশনটা বেশ কাজের। যে মডেলের ক্যামেরা নেবেন তা দিয়ে তোলা ছবির কোয়ালিটি আগেভাগেই দেখে নিলে কনফিউশন থাকবেনা।
বাংলাদেশে কম্প্যাক্ট ক্যামেরা বেশকিছু ব্রান্ড পাওয়া যায়। ক্যানন (Canon), ফুজি (Fuji), ফুজি ফিল্ম (Fujifilm), কোডাক (Kodak), মাইক্রোটেক (Microteck), নিকন (Nikon), প্যানাসনিক, ওলিম্পাস (Olimpus), (Panasonic), স্যামসাং (Samsung), সনি (Sony), ইয়েশহিকা (Yashica) ইত্যাদি বাজারে মিলবে।
dSRL তৈরীর জন্য বিখ্যাত হচ্ছে ক্যানন (Canon), নিকন (Nikon) এগুলো। কমদামের কম্প্যাক্ট ক্যামেরার জন্য কোন ব্রান্ড নেবেন?
কমবাজেটের কম্প্যাক্ট ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে আপনার প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় এই তিনটে চয়েসে রাখা উচিত ক্যানন কে। এরপর কোন চয়েস রাখলে সনি,স্যামসাং এগুলো রাখবেন। জাপানী কোম্পানী সনি এর যে ক্যামেরাগুলো আমরা পাই সেগুলো চায়না প্লান্টের। বাংলাদেশের সনির ডিলার সনির্যাংস তাদের ক্যামেরাগুলো জাপানী দাবী করে এবং দাম বেশী রাখে, জাপানী এবং চায়না প্লানের গুণগতমানের পার্থক্য আছে কিনা তা বলতে পারছিনা। অন্যদিকে, কোরিয় টেক জায়ান্ট স্যামসাং ইদানীং বেশ ভাল ক্যামেরা বানাচ্ছে। তবে, ক্যাননের ক্যামেরার কোন তুলনা নাই, ক্যাননের উদাহরণ হইল ক্যানন নিজেই। অন্তত কম্প্যাক্ট ক্যামেরার ক্ষেত্রে।
কিছু বেসিক কিছু তথ্য জেনে রাখুন, ক্যামেরা সব কোম্পানী প্রকৃতঅর্থৈ তৈরী করেনা। যেমন ধরুন স্যামসাং, এরা লেন্স নেয় অন্যকোন কোম্পানীর কাছ থেকে, জোড়াতালি লাগিয়ে ক্যামেরা তৈরী করে। প্রকৃতঅর্থে লেন্স প্রস্তুতকারক যেকয়টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে ক্যানন অন্যতম। এছাড়াও নিকন, অলিম্পাস লেন্স তৈরী করে। ক্যানন সেই আদিম আমল থেকেই ক্যামেরা বানিয়ে আসছে তাই এর উপর বিশ্বাস ও আস্থা দুটোই রাখা চলে।
ক্যাননের সবচেয়ে কমমূল্যের ক্যামেরা Canon Powershot A2300 পাবেন ৮,৪০০ টাকায়। আরেকটু বাজেট বাড়িয়ে Canon A2400 Digital নিতে পারেন ৯,২০০ টাকায়। বাজেট বেশী হলে ক্যানন HS সিরিজের ক্যামেরাগুলো নিতে পারেন। Canon SX 260 HS Digital এর দাম পড়বে ২১,০০০ টাকা। সবচেয়ে কমদামের dSLR পাবেন ৩৮,০০০ টাকায় Camera EOS 1100D.
এছাড়াও কমদামের কম্প্যাক্ট ক্যামেরার মধ্যে স্যামসাং বা সনি নিতে পারেন, তবে প্যানাসনিক, নিকন, অলিম্পাস সহ বড় বড় ব্রান্ডের কমদামী কম্প্যাক্ট ক্যামেরা না নেয়াটাই বেটার। নিলে বাজেট বাড়িয়ে দামীগুলো নিন।
একটি কথা মনেরাখুন, ভালছবি নির্ভর করে ভাল ক্যামেরাম্যানের উপর, ক্যামেরার উপর না। dSLR হাতে থাকলেই ভাল ছবি উঠে না। কম্প্যাক্ট ক্যামেরা দিয়ে আনায়াসেই আপনি ভালমানের ফটোগ্রাফি করতে পারবেন। সবচেয়ে বেশী নজর রাখুন আলোর দিকে। ফ্লাস এর ব্যবহার যতটা কমকরা সম্ভব তত ভাল। ইন্টারনেট থেকে ফাটোগ্রাফির প্রাথমিক কলাকৌশলগুলো শিখে নিন, এতে ভাল ছবি তোলাটা রপ্ত করতে পারবেন। আর ক্যামেরাকে পানি. ধুলা ও ফাংগাস থেকে রক্ষা করুন ভালমানের কভার ও আদ্রর্তা মেইনটেইন করে।
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
-- নেট মাস্টার।
Developer: Zils Drug Database
আমি নেট মাস্টার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 64 টি টিউন ও 1834 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 9 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নেট মাস্টার ভাই আপনি কেমন আছেন ? ধন্যবাদ টউনের জন্য…শুধু আপনার টউনে কমেন্ট করার জন্য লগইন করলাম।