আইপড ক্ল্যাসিক: কি আছে ভিতরে? (আভ্যন্তরীণ কার্যপ্রণালী)

গান শুনতে কে না ভালবাসে? আর গান শোনার জন্য মানুষ কত কিছুই না ব্যবহার করে। এর মধ্যে ব্যপক জনপ্রিয় গান শোনার যন্ত্র হলো প্রয়াত চঞ্চল প্রযুক্তিবিদ স্টিভ জবস্ চিন্তার একটি ফসল। তিনি ভাবতেন নতুন নতুন সব মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি পণ্যের মডেল- আর তা বাস্তবায়ন করতেন চিন্তার মতোই দ্রুত। আমি আইপডের কথা বলছি। কে চায় না তার কাছে এই যন্ত্র থাকুক? সারা বিশ্বে সাড়া জাগানো এই যন্ত্রটি আমরা ব্যবহার করছি নিশ্চিন্তে কিন্তু এর কারিগরি বিষয় সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? কাজে লাগুক আর নাই লাগুক আসুন জেনে নেই Technical Description of Ipod Classic সম্পর্কে।

A. এলসিডি (লিক্যুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে) :

সম্পূর্ণ পর্দার আইপড টাচের পূর্ববর্তী সকল মডেলের আইপডের মধ্যে আইপড ক্ল্যাসিকে রঙ্গিন স্ক্রীন ব্যবহার করা হয়েছে। ১.৫ ইঞ্চির এই ডিসপ্লেতে নিজস্ব ফটো গ্যালারী, আইপডের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এপ্লিকেশন ব্যবস্থাপনা যায় এবং সেই সঙ্গে রয়েছে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন সংরক্ষণ সুবিধা।

B. ফ্ল্যাশ ড্রাইভ:

অন্যান্য আইপডের মধ্যে মিউজিক ষ্টোর করার পদ্ধতিটি অনেকটা একটি ছোট কম্পিউটারের মতো- যা আকারে শুধু ক্ষুদ্র। হার্ডড্রাইভের পরিবর্তে আইপড ক্ল্যাসিকে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্যাশ মেমোরী চিপ। এই এসএসডি (Solid State Drive) মেমোরী অতি দ্রুত তথ্য সঞ্চালনক্ষম যা হয় নিরবিচ্ছিন্ন এবং একই সাথে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। চিত্রে প্রদর্শিত ২ গি.বা মডেলের আইপডে দুইটি ১ গি.বা চিপ মাদারবোর্ডে বসানো হয়েছে। বেশীরভাগ ক্ল্যাসিকের এই ফ্ল্যাশ মেমোরী চিপ সরবরাহকারী হলো প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং যারা সর্বোচ্চ মেমোরী চিপ উৎপাদনকারী। মজার বিষয় হলো এরকম একটি বিতর্ক আছে যে স্যামসাংয়ের উৎপাদিত শতকরা ৪০ ভাগ মেমোরী চিপ ব্যবহার করে এ্যাপল।

C. ব্যাটারী:

অন্যান্য আইপডের মতো আইপড ক্ল্যাসিকে লিথিয়াম-আয়ন-পলিমার ব্যাটারী ব্যবহার করা হয়েছে। পলিমার ব্যবহারের কারণে ব্যাটারী বাঁকানো যায় আর এটি হয় নরম কিন্তু যথাস্থানে ফিট হতে পারদর্শী। এতে ব্যবহার করা হয়েছে দ্রুত চার্জ হবার পদ্ধতি। যার কারণে একটি ৮০% চার্জ সম্বলিত আইপড ক্ল্যাসিক টানা ১৪ ঘন্টা চালানো যায় মাত্র দেড় ঘন্টা চার্জে। শুধু তাই নয় যখন ২০% চার্জ থাকে তখন সংকেত প্রদানের পর আরো ১ ঘন্টা চলার সুযোগ দেয়- খেয়ার করলে দেখবেন ব্যাটারী লো সিগন্যাল দেখানোর পর নিজে নিজেই এটি কিছু চার্জ ফেরত পায় এতে আইপড আরো কিছু সময় চালানো সম্ভব হয়। আইপড ন্যানোতে প্রয়োজনে ব্যাটারী পরিবর্তনের সুযোগও রয়েছে।

D. পলিকার্বনেট চামড়া:

অন্যান্য আইপডের মতো আইপড ক্ল্যাসিকের ত্বক বা চামড়া তৈরীতে ব্যবহার করা হয়েছে পলিকার্বনেট। জানলে অবাক হবেন যে পলিকার্বনেট বুলেটপ্রুফ গ্লাসের মতোই শক্তিশালী। আইপড ক্ল্যাসিকের উপর দিয়ে একটি গাড়ি নানাভাবে চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতেও এটি ভাঙ্গেনি। এর ত্বকে শুধু একটিই সমস্যা আছে আর তা হলো দ্রুত দাগ/স্ক্র্যাচ পড়ে যায়।

E. ক্যাশ মেমোরী:

হার্ডড্রাইভ ভিত্তিক আইপডগুলোর গান চালানোর প্রক্রিয়া হলো প্রথমে হার্ডড্রাইভ থেকে গান ক্যাশ মেমোরীতে জমা হয় তারপর সেখান থেকে গান প্লে হয়, প্লে শেষ পর্যায়ে এলে আবার জমা হয়। এই প্রক্রিয়া অনবরত চলতে থাকে। তাই এতে গান চলাকালীন সময়ে বিরতির সুযোগ থাকে না। কিন্তু আইপড ক্ল্যাসিকে যেহেতু এস.এস.ডি ধরণের মেমোরী চিপ ব্যবহার করা হয়েছে তাই এতে স্যামসাং এর ৪ মেগাবাইট Dynamic Random Access Memory খুব একটা ব্যবহার হয় না অপারেটিং সিস্টেমের জন্য হোক বা গান প্লে করার জন্যই হোক। তাই এটি বড় ধরণের গানের লিস্ট রাখতে বা বড় ধরণের ছবি দেখাতে পারদর্শী। এই কারণে আইপড ক্ল্যাসিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং এর ব্যাটারী লাইফ লম্বা হয়।

F. পোর্টাল প্লেয়ার চিপ:

আপনি হাজারো শুনছেন আপনার আইপড দিয়ে কিন্তু একবার কি ভেবেছেন কিভাবে তা হচ্ছে? আপনার গানগুলো থাকে বাইনারি ১ এবং ০ গুলোর সমন্বয়ে। বড় বা ছোট সব ধরণের আইপডেই শক্ত তার বিন্যাস থাকে এগুলো শব্দ আকারে রূপান্তর করতে। মেমোরীর বাইনারী ডিজিটে থাকা তথ্য প্রসেসরের মাধ্যমে রূপান্তর হয় এনালগ শব্দে এবং এয়ারফোনে পৌছানোর আগেই তা তৈরী হয় উচ্চতর শব্দের জন্য। আর আপনি শুনতে পান সুমধুর সঙ্গীত। সমস্ত প্রক্রিয়াটি আপনার বড় আকৃতির কম্পিউটারটি মতোই।

G. ক্লিক হুইল কন্ট্রোলার চিপ:

প্রথম থেকেই আইপডের সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট হলো এর হুইল কন্ট্রোলার বা চাকার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ। ২০০১ সালের প্রথম আইপডেই ছিল হুইল কন্ট্রোলার সেটি আঙ্গুল দিয়ে ঘুরিয়ে চালাতে হতো। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এটি রূপ নেয় স্পর্শকাতর হুইলে। আপনি এতে কতটুকু জোর দিয়ে চাপ দিচ্ছেন বা কত গতিতে আঙ্গুল ঘুরাচ্ছেন তার সবটারই ফলাফর পাচ্ছেন। প্রথম টাচ সেনসেটিভ হুইল নির্মাণ করে Synaptics। ডিসপ্লেতে এবং চালানোর এই প্রক্রিয়া খুব সুক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। তাইতো আপনি সাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারছেন আপনার প্রিয় আইপড ক্ল্যাসিক।

তথ্যপ্রযুক্তির খুটিনাটি- সহজ বা জটিল বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করছি আমার সাইট / ব্লগে। টেকনিক্যাল সহযোগিতার জন্য ঘুরে আসতে পারেন- এক্সপার্ট কম্পিউটার্স

-ধন্যবাদ সবাইকে

Level 0

আমি Sam Thesyst। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 78 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

জটিল তবে বর্তমানে কাজের না। কারন আমার তো ঐ Device-ই নেই।

Level 0

ভালো হয়াছে।

তথ্য বহুল পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ………

vai pic dilen ipod classic er ar post e likhlen nano…kajta thik hoilo na 😛

Level 0

vai. dam to koilen na?