আজকে কালার পর্ব ৩ লিখতে বসলাম। অনেকেই তাড়াতাড়ি পর্ব ৩ লিখতে বলেছেন। আসলে সময় স্বল্পতার কারণে লেখার সময় বের করা হয়ে উঠে না। একটা কাজ ফেলে রেখে আমাকে এটা লিখতে হয়। তবে একটা জিনিস আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে যে, কালার এর ব্যবহার এর আমার এই লেখাগুলোর প্রতি আপনাদের অনেক আগ্রহ আছে এবং আমি মনে করি যে, অাপনারা উপকৃত হচ্ছেন এর মাধ্যমে।
আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো, কয়েকটা ব্লগেই আমি আমার টিউন দেখলাম। অনেকেই আমার ক্রেডিট টা দেন নাই। আমি কপি করতে নিষেধ করি নাই, কপি করার পদ্ধতিও বলে দিয়েছি। আপনি যদি আমার ক্রেডিট না দেন আমার কোন সমস্যা নাই। তবে একটা কথা হচ্ছে, আপনাদের কাছে থেকে যদি এই ধরনের আচরণ পাই তাহলে হয়তো পরবর্তী লেখাগুলো আর পাবেন না। আপনাদের কয়েকজনের কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। একেকটা আর্টিকেল হয়তো আপনারা ৫ মিনিটেই পড়ে শেষ করতে পারেন, কিন্তু এই একেক টা আর্টিকেলের সাথে আমার অনেক পরিশ্রম, মেধা এবং কাজের অভিজ্ঞতা জড়িত আছে। বাংলাতে এমন আর অর্টিকেল আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ আমি অনেক খুজেছি। ইংরেজীতে আছে কিন্তু সেটা অনেক বিস্তারিত এবং এভাবে সংক্ষেপে সাজানো নয়। সুতরাং এমন কোন কাজ করবেন না যাতে অনেকের ক্ষতি হয়। (কথা গুলো অনেক কষ্টের সাথে বললাম)
আল-হামদু লিল্লাহ!!! গত দুইটা পর্বে আপনার কালারের শ্রেনী বিভাগ এবং কিভাবে হাজার হাজার কালার আপনি তৈরী করবেন সেটা শিখেছেন। আজকে আমরা আরো কয়েকটা শ্রেনী বিন্যাস দেখবো ইনশা-আল্লাহ।আজকে আমি আলোচনা করবো যে বিষয়টা নিয়ে সেটা হচ্ছে
= Which Color is use for which type of Design?
এটা নিয়ে কথা বলার পূর্বে আমি আপনাদের কে কালারের তাপমাত্রার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। হ্যা ভুল শুনেননি। কালারের তাপমাত্রা বা Color Temperature। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কালার কি আবার থার্মোমিটার দিয়ে মেপে কাজ করতে হবে নাকি? 😛 না ভাই, থার্মোমিটার নয়, প্রত্যেকটা কালার নির্দিষ্ট একটা Temperature বহন করে। আজকে আমরা সেটার সাথে পরিচয় হবো।
তাপমাত্রার ভিত্তিতে কালার কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ-
1. Cool Color
2. Hot or Warm Color
= What is Cool Color?
সংক্ষেপে যদি আমরা এই প্রকার কালারের সাথে পরিচয় হতে চাই তাহলে নিচের ছবি খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করুনঃ-
এই ইমেজ দুটি আমি গুগল এ Ice Land Nature দিয়ে সার্চ দেওয়ার পরে বেরিয়ে এসেছে। আর আপনারা সবাই জানেন Iceland, Greenland, Anterktika Etc বরফ বা ঠান্ডার রাজ্য। যেখানে বছরের পুরো সময় জুড়েই বরফ আচ্ছাদিত থাকে এবং মারাত্নক ঠান্ডা পরিবেশ বিরাজ করে।
লক্ষ্য করুন এই ইমেজে এক ধরনের কালার আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আশা করি সবাই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন যে, কি কালার এখানে বিরাজ করছে!
হ্যা! এখানে হালকা নীলাভ কালার আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এবং কিছু Cyan কালার ও দেখতে পাচ্ছেন। অর্থাৎ ঠান্ডার রাজ্যের কালার হচ্ছে? আপনারাই বলুন।
আমি আপনাদেরকে আরেকটু পরিষ্কার করি। এখনোই আপনি গুগলে Ice Color দিয়ে সার্চ করুন দেখুন গুগল আপনাকে কি দেখাচ্ছে?
কি পেলেন? জানি, আপনারা আরো কয়েকটি কালার দেখতে পেয়েছেন গুগলে। শুধু নীল ই নয় তার সাথে সাথে গুগল আপনাদেরকে আরো কয়েকটা কালার দেখিয়েছে Ice বা ঠান্ডার কালার হিসেবে।
যারা সেন্ট মার্টিন গিয়েছেন তারা হয়তো দেখে থাকবেন যে, যখন জাহাজ সেন্ট মার্টিন এর কাছাকাছি চলে যায় তখন সাগরের পানিটা সম্পূর্ণ সবুজ লাগে। সাগরের পানি তো সব সময়ই ঠান্ডা এবং সেটা সবুজ কালার ধারণ করে আর যতদুর চোখ যায় সাগরের গভীর পর্যন্ত দেখা যায়। অর্থাৎ সবুজ কালার টা ও Cool Color এর অংশ।
এবার একটু Mind Refresh করুন কল্পনার রাজ্যে, চিন্তা করে দেখুন যখন কোথাও গেলে আপনি চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ প্রকৃতি দেখতে পান েএবং তার সাথে হালকা একটা ঠান্ডা বাতাস থাকে তখন আপনার হৃদয়ে শান্ত এবং কোমল একটা অনুভব সৃষ্টি হয়। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন যে, চারপাশে কোন গাছগাছালি নাই, সবুজ দেখতে পাচ্ছেন না, চারপাশে শুধু বালু অথবা মাটি অর্থাৎ ধু ধু সমভূমি তার সাথে আছে প্রচন্ড রকমের সূর্যের কিরণ। এমন অবস্থা নিশ্চয়ই আপনার হৃদয়ে শান্ত অনুভব আসবে না? যদিও সেখানে বাতাস থাকুক না কেন, তেমন পরিস্থিতিতে আপনাকে কখনোই শান্ত মনে হবে না।
আশা করি মোটামুটি আপনারা বুঝে গেছেন যে, Cool কালার টা কি? এবার নিচের কালার প্যালেট টা লক্ষ করুনঃ-
হ্যা! এই কালার গুলি ই হচ্ছে Cool Color বা ঠান্ডা কালার।
= What is Hot or Warm Color?
এতক্ষনে অনেকেই হয়তো বুঝে গেছেন যে, Warm Color টা কি হতে পারে? নিচের ইমেজ লক্ষ্য করুনঃ-
উপরের ইমেজ দুটি মরুভূমির। গুগলে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। আপনারা জানেন যে, মরুভূমিতে প্রচন্ড গরম থাকে এবং সেখানে গাছগাছালি নাই। যার কারণে সেখানকার পরিবেশটা ঠিক এমনই হয়। লক্ষ্য করুন যে, ১ম ইমেজে গরেমের কারণে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে আছে এবং দ্বিতীয় ইমেজ ও প্রায় কাছাকাছি। এবং আরো লক্ষ্য করুন যে, এখানে আপনার দুটি বা তিনটি কালার দেখতে পাচ্ছেন। কি দেখতে পাচ্ছেন তো?
আরেকটু ক্লিয়ার হওয়ার জন্য নিচের ইমেজ টি লক্ষ্য করুনঃ-
উপরের ইমেজ টি একটি অগ্নেয়গিরির ইমেজ। যেখান থেকে লাভা নির্গত হয় এবং প্রচন্ড রকমের তাপমাত্রা বিরাজ করে সেখানে। এটা রাতের ছবি। লক্ষ্য করুন এখানে দুইটি কালার আপনার খুব স্পষ্টই বুঝতে পারছেন।
আপনারা অকেনেই হয়তো কামারের দোকানের কাজ দেখেছেন নিশ্চয়ই। লক্ষ করবেন যে, কামার যখন কোন লোহা বা ধাতব পদার্থকে আগুনে ঝলসায় তখনে সেটার কালার রক্তিম হয়ে যায়। সেটা নিশ্চয়ই তখন ঠান্ডা থাকে না। নিচের কালার প্যালেট লক্ষ্য করুনঃ-
হ্যা উপরের এই কালার গুলোই হচ্ছে warm color বা উষ্ম রং।
এখন আসুন আমার কালার সার্কেল বা Color Pallet এ এই কালার গুলো দেখে নেই। নিচের েইমেজ লক্ষ্য করুনঃ-
উপরের কালারের প্যালেটে যে সকল কালার আছে তার মধ্যদিয়ে যে রেখা গিয়েছে তার এক পাশের কালার হচ্ছে Cool Color এবং অন্য পাশের কালার হচ্ছে Warm Color।
= How to Use Warm and Cool Color ?
এবার আসুন এই কালার গুলোর ব্যবহার নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক। বিস্তারিত পরবর্তী আর্টিকেলে পাবেন। শুধু একটু ধারণা দিয়ে রাখি।
মনে করুন, আপনার একজন ক্লাইন্ট আছে। সে তার Ice Creme ফ্যাক্টরির কোন Business Card, Flyer, Brochure অথবা কোন ব্যানার বা ধরুন কোন প্যাকেজিং ডিজাইন করার জন্য আপনাকে বললো। আপনি যথা সম্ভব ভাবে কাজটা গ্রহণ করলেন। কিন্তু যখনই আপনি ডিজাইন করতে যাবেন তখনই বাঁধলো বিপত্তি যে, আপনি এখন কোন ধরনের কালার সেখানে ব্যবহার করবেন। (জানি আপনারা সবাই এখন এর উত্তর বুঝে গেছেন 😀 এটাই আমার সাফল্য আজকের আর্টিকেলে :D)
হ্যা আপনি সেখানে অন্য কালার ও ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেটার রেটিং পয়েন্ট কম হবে। সেখানে আপনাকে অবশ্যেই Cool Color ব্যবহার করতে হবে।
আর যদি ক্লাইন্ট আপনাকে এমন কোন কালার ব্যবহার করতে বলে যে, Warm Color এর মধ্যে পড়ে তাহলে আপনাকে ক্লাইন্ট কে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা খুলে বলতে হবে। আমি যতটুকু জানি যে, অনেক সময় ক্লাইন্ট এমন ধরনের কালার ই ব্যবহার করতে বলে, কিন্তু যখন ক্লাইন্ট কে বুঝাই যে, ব্যাপারটা তো এমন এমন। তুমি যেটা চাচ্ছো সেটা আমি করে দিতে পারি কিন্তু। মানুষ সেটাকে পছন্ট করবে না বা তুমি এর মাধ্যমে ভাল রেজাল্ট পাবে না।
মনে করুন, গ্রীষ্মের ভরদুপুরে আপনি চাচ্ছেন ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম খাবেন। এখন মনে করুন আপনি এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছেন যে, সেখান থেকে দুরের দোকান বা বাজারের দোকন গুলো দেখা যায়। কিন্তু বাজার ঘুরে ঘুরে দোকান খুজে ঠান্ডা কিছু ক্রয় করার মত প্রশান্তি আপনার মধ্যে নাই। তখন আপনি কিভাবে একটা দোকনকেই টার্গেট করে এগিয়ে যাবেন এবং সেখানেই আপনি আপনার কাংক্ষিত ঠান্ডা সামগ্রী পাবেন?
উত্তরটা আমি আর লিখতে চাচ্ছি না। আপনারা বের করুন। সম্ভব হলে টিউমেন্টে বলুন। নয়তো আমি পরবতী আর্টিকেলে লিখবো 😀
নাহ থাক বলেই দেই, লক্ষ্য করবেন কনফেকশনারী বা ঠান্ডা জাতীয় দ্রব্যাদী যেখানে পাওয়া যায় সে সকল দোকানের উপরে বা সামনের ব্যানার টা থাকে নীল বা সবুজ কালারের। মূলত এটা দেখেই ধারনা করা যায় যে সেখানে ঠান্ডা কিছু পাওয়া যাবে। তবে বর্তমানের বেশীরভাগ Ice Creme এর ফ্লেভার টা থাকে চকলেট, ভ্যানিলা ইত্যাদী। যার কারনে বেশীর ভাগ ব্যানারেই চকলেট বা ভ্যানিলা কালার ইউজ হয়। (সেক্ষেত্রে আমি দায়ী নহে :p)
এবার আসি Warm Color এ। এক্ষেত্রে মোটামুটি একই কথা। আপনি যদি কোন ফায়ার বক্স এর কোম্পানীর কাজ করেন। তখন অাপনাকে তাদের প্যাকেজিং বা ইত্যাদী ডিজাইনের জন্য Warm Color ব্যবাহার করতে হবে।
এছাড়াও ডিজাইনে কালার কিভাবে কোথায়, কোন ডিজাইনে কোন কালার ইত্যাদী আরো বিস্তারিত পরবর্তী একেকটা আর্টিকেল গুলোতে ধীরে ধীরে পাবেন ইনশা আল্লাহ। যদি আপনাদের আগ্রহ দেখি এবং সাড়া পাই। কালার থিওরি টা এতো ব্যাপক যে, এটার উপরে PHD করাও সম্ভব। তাই আমার স্বল্প জ্ঞানে কিছুটা সংক্ষিপ্ত করার চেষ্ট করছি।
গত পর্বের কিছু প্রশ্নের উত্তর
গত পর্বে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন যে, কালারের মধ্যে সাদা কালার কিভাবে যোগ করবেন। হ্যা ভাই সেই উত্তর গুলো ৪ নাম্বার আর্টিকেলেই পাবেন। আমার সাথে থাকুন। ইনশা আল্লাহ কালার সম্বন্ধে সব ধরনের সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো। যদিও আমার এ বিষয়ে তেমন জ্ঞান নাই। যতটুকুই আছে তা শেয়ার করে দিচ্ছি।
কয়েকজন প্রশ্ন করেছেন যে, আপনি যে কালার বানালেন সেটার নাম কি, বা উৎপন্ন কালারের নাম বের করবেন কিভাবে? হ্যা যেকোন কালার এর হেক্সা কোডটুকু আপনার ফটোশপ থেকে কপি করে এই সাইটে পেস্ট করুন দেখেবেন সেখানে ওই কালারের নাম দেখাবে...
আর একটা কালার সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানার জন্য আপনার এই ওয়েবসাইটে কালারের হেক্সা কোড দিয়ে সার্চ করতে পারেন। তাহলে তারা কালারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে আপনাকে দেখাবে।
ধন্যবাদ, আজকে এই পর্যন্তই। অনেকেই আর্টিকেল বড় করতে বলেছেন। কিন্তু আজ আমার সাধ্যমত বড় করলাম। এর চেয়ে আমার পক্ষে একবারে আর সম্ভব না ভাই। ক্ষমা করবেন। এই ছোট আর্টিকেল হয়তো ৫ মিনিটেই পড়ে ফেলবেন কিন্তু এটা লিখতে আমার কতটুকু মেধা, শ্রম এবং সময় লেগেছে সেটা শুধু আমিই জানি।
চলবে
আপনাদের ব্যাপক সাড়া পেলে পরবর্তী পর্ব লিখবো। কারণ যদি আপনাদের কোন উপকারে না আসে এই আর্টিকেল তাহলে আমার এতো কষ্ট করে লিখা অর্থহীন।
আর কেউ আর্টিকেলটি অনুগ্রহ করে আমার অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করবেন না। ফেইসবুকে শেয়ার করেন সমস্যা নাই কিন্তু কেউ কপি করলে আর্টিকেলের নিচে আমার নাম সহ ফেইসবুক আইডির লিংক অবশ্যই দিবেন এবং কোথায় কপি করছেন সেটা আমাকে ফেইসবুকে ম্যাসেজ করে জানাবেন প্লিজ।
আর এই লেখা সম্পূর্ণই আমি আমার মত করে লিখেছি। তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি তাহমিদ হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 36 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।