এবার প্রিয়জনদের চমকে দিন তার ভেক্টর রেখাচিত্র এঁকে

আমাদের সবারই ইচ্ছা হয় প্রিয়জনদের ছবি আঁকি। কিন্তু অনেকেই আঁকতে পারিনা, ঠিক আমার মত। একবার চেষ্টা করে দেখুন হাতে না এঁকে ডিজিটালি আঁকতে পারেন কিনা। আর প্রিয়জনকে সেটা গিফট করে চমকে দিন।

এজন্য লাগবে ভেক্টর গ্রাফিক্স এডিটর যেমন এডোবি ইলাস্ট্রেটর। এবং অবশ্যই তার উপরে কিছু জ্ঞান। বিশেষ করে এই ধরনের একটা ড্রয়িং এর জন্য অন্ততপক্ষে সুন্দর করে পাথ বানানো, ব্লেন্ড করা, ইফেক্ট দেয়া ইত্যাদি জানতে হবে। এবং থাকতে হবে আলো-ছায়ার উপরে কিছু ধারণা। আমি ধরে নিচ্ছি যারা এই টিউটোরিয়ালটি ফলো করে ছবি আঁকতে যাচ্ছেন তারা একদম নভীস নন, কিছুটা এডভান্সড। নাহলে টিউটোরিয়ালটি বুঝতে সমস্যা হতে পারে।

তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করে দেয়া যাক।

প্রথমেই এডোবি ইলাস্ট্রেটর ওপেন করুন। আমি সিএস৩ ভার্সন ব্যাবহার করি। অন্য ভার্সন হলেও চলবে। File মেনু থেকে New সিলেক্ট করে নতুন একটি ডকুমেন্ট খুলুন। এখানে একটি ব্যাপার খেয়াল করতে হবে। আপনি যে ছবিটির ভেক্টর বানাবেন, সেটি কোন ওরিয়েন্টেশনে আছে ডকুমেন্টেও সেটা ব্যাবহার করুন। যদি ছবিটি ল্যান্ডস্কেপ হয়ে থাকে তাহলে ডকুমেন্টও তাই হওয়া উচিত।

এবার আপনার রেফারেন্স ছবিটি (যার ভেক্টর রেখাচিত্র আঁকা হবে) ওপেন করতে হবে। File থেকে Open কমান্ড ব্যবহার করে ছবিটি নিয়ে আসুন।

ছবিটি Layer প্যালেটের Layer 1 এ এসেছে। প্রফেশনালদের মত, লেয়ারটি লক করে দিন। আমরা এই লেয়ারে কাজ করবনা। লক করার আগে Move Tool (V) ব্যবহার করে ছবিটির পজিশন এবং সাইজ ঠিক করে নিন।

এবার নতুন একটি লেয়ার তৈরী করুন।

P বাটন চাপুন অথবা টুলবক্স থেকে পেন টুলটি সিলেক্ট করুন।

এবার নতুন লেয়ারে ছবির উপর পাথ তৈরী করা শুরু করুন। আশা করি পাথ তৈরী করা ভালভাবে জানেন। না জানা থাকলে নেট ঘেঁটে জেনে নিন কিভাবে প্রফেশনাল মানের পাথ তৈরী করতে হয়। ছবির যেকোন অংশের পাথ দিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে সাধারনভাবে শরীর বা জামার অংশ আগে করে ফেললে সুবিধা হয়। সবার শেষে করুন চুলের অংশ, কারন চুলটা থাকবে সবার উপরের লেয়ারে। প্রতিটি লেয়ারের নাম দিন যা দেখে আপনি নিমেষে বুঝতে পারবেন ঐ লেয়ারে কি আছে। একটি লেয়ারের ভেতরে অনেক পাথও হতে পারে, প্রয়োজনে সেগুলোরও নাম দিন।

আমি সাধারনত দেহ/জামা, তারপর হাত, তারপর চেহারা, তারপর চোখ-মুখ আঁকি; এবং সবার শেষে চুল। তবে কোন সমস্যা নেই, পরবর্তীতে আবার এগুলো বিন্যস্ত করা যাবে।

এই ছবিতে যেহেতু দেহ নেই, তাই আমি চুল এঁকে ফেলেছি।

দুই বা ততোধিক লেয়ার নিয়ে চবির সব পাথ এঁকে শেষ করুন। চোখ, নাক ও ঠোটের জন্য আলাদা আলাদা লেয়ার নেয়া ভালো। শুধুমাত্র শেডিং দেয়ার জন্য আরেকটি লেয়ার নিতে পারেন যেটা চুলেরও উপরে থাকতে পারে। এটা পুরোপুরি আপনার শিল্পীমনের উপরে। ধারনাটা হল সব যেন জট পাকিয়ে না যায়। আপনার নিজেকে শিল্পী ভাবতে হবে এইজন্য যে, ছবিটা ফুটে উঠবে শুধুমাত্র আপনার সৃজনশীল শেডিং এর জন্যই। সবধরনের শেডগুলো পাথ দিয়ে এঁকে নিন। নিচের ছবিটা দেখলে কিছুটা ধারণা পাবেন, শেড গুলো কিভাবে পাথ করতে হবে।

লক্ষ্য করুন, আরো আলো-ছায়া হয়তো বাকি থেকে যাচ্ছে। আপনি যত বেশি ধরতে পারবেন ততই ছবি সুন্দর হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তবে সেই অনুযায়ী কালার কম্বিনেশনও থাকতে হবে। যখন সবগুলো পাথ রঙ দেয়া শুরু করবেন তখন বুঝতে পারবেন। রং দেয়া শুরু করার জন্য I চাপুন অথবা টুলবক্স থেকে Eyedropper টুলটি সিলেক্ট করুন।

Eyedropper টুলটি সিলেক্ট থাকা অবস্থায় Ctrl চাপলে সেটি Select (V) টুলের কাজ করবে। Ctrl চেপে ধরে একটি একটি করে পাথ সিলেক্ট করুন এবং সেই Layer 1 এর ছবির মুল রঙের উপর Ctrl ছেড়ে দিয়ে (অর্থাৎ Eyedropper Tool দিয়ে)  ক্লিক করুন

যেমন ফেস পাথটি সিলেক্ট করে দৃশ্যমান ছবির ফেসের রঙে ক্লিক করুন। পুরো পাথটি ফেসের রঙে Fill হয়ে যাবে (০ পিক্সেল স্ট্রোক)। যদি রঙটি পছন্দ না হয় তাহলে স্লাইডার সরিয়ে অথবা Color Guide বা অন্য Color Pallet থেকে আরেকটু হালকা বা গাঢ় রঙ নিন। এখানে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশই লক্ষ্য। কাজেই যতক্ষন না আপনার মন খুঁত খুঁত করা বন্ধ হচ্ছে রঙ নির্বাচন করুন।
যেটার যে রঙ হবার কথা দিয়ে যান। দেখুন নিচের মত হয় কিনা।

একটু ভুতুড়ে দেখালেও ভয় পাবেননা। ঠিক হয়ে যাবে।

নেট থেকে জানুন কিভাবে জীবন্ত চোখ আঁকা যেতে পারে। চোখ আঁকা মানে শুধু আয়ত লোচনের ভেতরে একটা গোল মনি নয়। আমি কুইক রেফারেন্স হিসেবে বলতে পারি-

  • চোখের দুই কোনায় একটু গভীরতা থকবে, রঙটা একটু গাঢ় থাকবে
  • চোখের মনির বাইরের প্রান্তটা কিছুটা হালকা রঙের হয়, তারপর কালো (বেশীরভাগ মানুষের) তারপর আবার কেন্দ্রের দিকে একটু হালকা।
  • চোখের উপর আলোর প্রতিফলন হয়।
  • চোখের চারপাশে রঙটা অপেক্ষাকৃত গাঢ় হয়।
  • উপরের পাতার উপরে একটা ভাঁজ থাকে।
  • নিচে একটু ফোলা থাকতে পারে যেটা শেডিং/কালার ভেরিয়েশন দিয়ে ফুটানো যেতে পারে।

কাছ থেকে খেয়াল করুনঃ

এরকম ছোট ছোট টিপস ঠোঁটের, নাকের বা কানের জন্যও প্রজোয্য। বিভিন্ন ছবিতে খেয়াল করুন এবং সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করুন। এখানে পুরোটাই আপনার সৃজনশীলতা।

আপনার বানানো ছবিটা খেয়াল করুন। কোথাও কোন ফাঁক ফোকড় থাকলে A চেপে অথবা Direct Selection Tool সিলেক্ট করে পাথ গুলো পরিমার্জন করতে চেষ্টা করুন। Direct Selection Tool (A) সিলেক্ট থাকা অবস্থায় কোন পাথের একটা Anchor Point এ ডাবল ক্লিক করে ড্র্যাগ করলে সেই Anchor Point টা মুভ করা যায়। এভাবে দৃশ্যমান ফাঁক গুলো বন্ধ করুন (যদি থাকে)।

এছাড়াও টুলবক্সে Smooth Tool নামে একটি টুল পাবেন Pencil Tool এর সাব-গ্রুপে। কোন পাথের বক্রতা পছন্দ না হলে পাথের সেই অংশটুকু বরাবর Smooth Tool টি ড্র্যাগ করে ছেড়ে দিন, দেখুন অনেকটা ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে পুরো ছবিতে কারেকশন দিন।

কিছু কিছু অংশ যেমন ভ্রু, নাকের ফুটো, গালে আলোর ছাপ, বিভিন্ন শেডিং ইত্যাদিতে Feather Effect ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য Effect মেন্যু থেকে Stylize> Feather সিলেক্ট করুন এবং প্রয়োজনীয় পরিমান পিক্সেল এমাউন্ট ব্যাবহার করুন। উপরের চোখের ছবিটির ভ্রুতে দেখুন Feather Effect.

ঠোঁট এবং কিছু শেডিঙে Blend ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য দুই বা ততোধিক পাথ সিলেক্ট করুন এবং Ctrl + Alt + B চাপুন। দেখুন কি ফলাফল হয়। আশা করি বুঝতে পারবেন কি হল এবং কালার কম্বিনেশন ঠিক করে যথাস্থানে ব্যবহার করতে পারবেন। আমি ঠোঁটটা একটা রঙে করে তার উপর হালকা রঙের আরেকটা শেডিং দিই। তারপর দুটি পাথ Shift চেপে একসাথে সিলেক্ট করে ব্লেন্ড করে দিই। দেখুন কেমন হয়ঃ

আপনি মোটামুটি ছবির শেষের দিকে পৌঁছে গেছেন। ইচ্ছামত ফাইনাল কিছু শেডিং দিন যেটা হয়তো মূল ছবিতে নেই।

যেমন আমি উপরের ছবিতে দিলাম। এবার লাস্ট আউটপুট দেখুনঃ

কাজের মাঝখানে বারবার সেভ করুন। নাহলে যেকোন সময় লোডশেডিং বা অনাকাঙ্খিত কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সবার শেষে Save as থেকে PDF হিসেবে সেভ করতে পারেন যাতে সবাইকে দেখাতে বা শেয়ার করতে সুবিধা হয়। Save for web অপশন থেকে JPG, GIF বা PNG হিসেবেও সেভ করতে পারেন (সাইজ বড় করে নিন)। ভাল সংরক্ষনের জন্য নেটে অনলাইন ড্রাইভ বা ইমেইলে একটি কপি রেখে দিন।

আমার পরামর্শঃ

  • আপনার সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দিন। কোন জায়গা পছন্দ না হলে সেভাবে ফেলে রাখবেননা। ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে কাজ করুন।
  • হতাশ হবেন না। শেষ ফলাফল অনেক ভাল আসবে।
  • শেডিং এর দিকে নজর দিন।
  • আলো ছায়ার খেলা ফুটিয়ে তুলুন।
  • কখনো বক্ররেখা বানালে শৈল্পিক বক্ররেখা বানান। এতে ছবির আকাঙ্খা বাড়বে।
  • প্রয়োজনে কয়েকদিনে থেমে থেমে কাজ করুন, উদ্যম ধরে রাখুন।
  • বেশী বেশী কাজ করুন, ঠেকে ঠেকে শিখতে পারবেন অনেক।

আশা করি প্রিয়জনদের খুশী করে দেবেন এবার।
এরপরও কোন জিজ্ঞাসা থাকলে ইমেইল করতে পারেন tanimkg[at]gmail[dot]com এ। আমার জ্ঞানের ভেতরে থাকলে অবশ্যই উত্তর দিতে চেষ্টা করব। আমার জন্য প্রার্থনা করবেন। সবার জন্য শুভকামনা থাকল।

Level 0

আমি তৌহিদুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 23 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

চমৎকার… ধন্যবাদ…

আপনারে গুরু কি যে বলবো বুঝতেছি না।
এটা সবার জন্য খুব ই কাজের টিউন।
এক্কেরে অসাধারনসসসসসসসসসসসসসসস

সত্যিই অসাধারন । ধন্যবাদ ।

হায়রে এডোভি ইলেস্ট্রেটর ই জানি না।তবে আজকেই শিক্ষা ফালামু

চমৎকার

দিলেন তো ঘাড়ে নতুন ভূত চাপিয়ে। এখন যতক্ষণে না এটা শেষ করতে পারবো ততক্ষণে আর শান্তি নাই।
আচ্ছা……. ফটোশপ দিয়ে কি কাজটা করা যায়…????

    ফটোশপে functionality আছে তবে এতো সুবিধার না। কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাবে। আর ফাইনাল ইমেজটা হবে রাস্টার, পাথগুলোর ধার গুলো anti-aliasing হবেনা। সবচে বড় কথা হল আর্টওয়ার্কটা ভেক্টর হবেনা।

দারুন টিউন করেছেন। ধন্যবাদ।

অসংখ্য ধন্যবাদ

লোভনীয় কাজ 😀