ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) এ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী যে কোম্পানিটি সেটি হল গুগল (Google)। গুগল শুরু হয়েছিল একটি প্রকল্প হিসেবে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি প্রোগ্রাম এর; দুই জন শিক্ষার্থী ল্যারি পেইজ ও সারজে ব্রিন এর হাত ধরে। প্রথমদিকে তাদের লক্ষ্য ছিলো একটি দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করা যেটি কিনা কেউ কোন কিছু অনুসন্ধান করলে; সেই বিষয়ে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফলগুলো উপস্হাপন করবে। এখনও গুগল এর মূল উদ্দেশ্য সেটাই; তবে বর্তমানে কোম্পানিটি প্রদান করছে আরো বিভিন্ন সার্ভিস যেগুলো হল: ইমেইল সার্ভিস থেকে শুরু করে ক্লাউড স্টোরেজ; প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম (এন্ড্রয়েড) ইত্যাদি।
আজকে,গুগল এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। ২০০৭ সালে গুগল মাইক্রোসফট কে অতিক্রম করে; ওয়েব এ মোস্ট ভিজিটেড সাইট হিসেবে। বর্তমান ইন্টারনেটে গুগল এর প্রভাব অনস্বীকার্য।ব্যবহারিকভাবে প্রত্যেক ওয়েবমাস্টারগণ চান তাদের ওয়েবসাইট যেনো গুগল সার্চ রেজাল্ট পেজে প্রথমে থাকুক। কেননা প্রতিটি ওয়েবসাইটে একটি বড় ট্রাফিক উৎস এই গুগল থেকে।গুগল আরও অনেক ইন্টারনেট কোম্পানিকে কিনে নিয়েছে যেমন : ব্লগিং সার্ভিস ব্লগার; ভিডিও শেয়ারিং সার্ভিস বা সাইট ইউটিউব। এমনকি কিছু সময়ের জন্য গুগল এর সার্চ ইঞ্জিন প্রযুক্তি; বিপক্ষ কোম্পানির সার্চ ইঞ্জিনগুলোকেও শক্তি জোগিয়েছে। ইয়াহু! ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ বছর গুগল এর সার্চ ইঞ্জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে; নিজেদেরটা না বানানো পর্যন্ত।
গুগল এর প্রভাব শুধু ওয়েব জগতে সীমাবদ্ধ নয়। ২০০৭ সালে গুগল কর্তারা এফসিসি র ৭০০ মেগাহার্টজ এর ওয়্যারলেস তরঙ্গ; কেনার নিলামে গুগল এর অংশগ্রহন করা কথাটি প্রকাশ করে। আগে সেই তরঙ্গগুলো ছিলো অ্যানালগ টেলিভিশন সম্প্রচারকারীদের অধীনে। গুগল এর প্রতিনিধিরা জানায় বেতার বা ওয়্যারলেস ইন্ডাস্ট্রীতে;নিজেদের একটা প্রতিযোগিতামূলক অবস্হান সৃষ্টি করা লক্ষে গুগল এইপদক্ষেপ নিয়েছিল। গুগল এই বেতার তরঙ্গকে ঘীরে একটি উন্মুক্ত নতুন ধরনেরপ্রযুক্তির কথা মাথায় রেখেছিল; যা এই ইন্ডাস্ট্রীতে নতুন একটি দরজা খুলে দিত; এটাই ছিল গুগল এর ওয়্যারলেস ইন্ডাস্ট্রীতে তাদের লক্ষ্য। তবে নিলামে গুগল তাদের সেরাটা দেখাতে পারল না। ৪.৬ বিলিয়ন ডলারে বেতার তরঙ্গ গুলো কিনে নিল ভেরিজন(Verizon) নামক কোম্পানিটি। তবে গুগল এর লক্ষ্য কিন্তু এখানে সফল হয়েছিল; কেননা নিলামে জেতা ভেরিজন কোম্পানিটি পরবর্তীতে গুগল এর দেখানো উন্মুক্ত প্রযুক্তিটি অনুসরন করেছিল।
এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়ে জানতে পারবেন গুগল এর মেরুদন্ড; গুগল সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে। আরও জানতে পারবেন ইউটিউব এবং জিমেইল সম্পর্কে; এবং এরই ফলে আপনি জানতে চলেছেন গুগল কোম্পানিটিকে আরও কাছ থেকে!
গুগলকে আমরা প্রথমে চিনি একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে; তারপর না হয় চিনি একটি কোম্পানি হিসেবে। একে বলা হয় গুগল এর মেরুদন্ড; গুগল সার্চ ইঞ্জিন এর জন্যই আজ গুগল এত কিছু! গুগল সার্চ ইঞ্জিন পৃথিবীর ভেতর অন্যতম গুরুত্ববহ একটি সেবা। গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যাতিত ওয়েব ব্রাউজিং এর সময় কার্যকরী ভাবে; কোন তথ্য অনুসন্ধান করা একেবারে অসম্ভব।গুগল তাদের একটা স্পেশাল অলগরিদম (গানিতিক কার্যবিধি) ব্যবহার করে;যা ব্যবহারকারীদের সামনে অনুসন্ধান ফলাফল গুলো তুলে ধরে। যখন গুগল সাধারনভাবে এই অলগরিদম সম্পর্কে কথা বলে; তারা নির্দিষ্ঠভাবে অলগরিদমটির গোপনীয়তা রক্ষা করে। গুগল তাদের এই সার্চ ইঞ্জিন এর অলগরিদম রহস্য গোপন রাখার ফলে; অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন এর তুলনায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে শক্ত অবস্হান ধরে রাখতে পারছে। এটা গুগলকে আরো সাহায্য করে হ্যাকিং ও বাহির থেকে সিস্টেম এর অপব্যবহার রোধ করতে; কেননা ভেতরের অলগরিদম এর ঘটনা সবারই অজানা।
অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন এর মতন গুগলও স্বয়ংকৃয় প্রোগ্রাম ব্যবহার করে; যা পরিচিত স্পাইডারস (spiders) ও ক্রয়লারস (crawlers) নামে।গুগল এর কাছে অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন এর তুলনায় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি; ওয়েবসাইট ইনডেক্স ও কীওয়ার্ড ইনডেক্স করা রয়েছে। সেকারনে একজন সাধারন ব্যববহারকারী অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন এর তুলনায়; গুগলেই সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক ফলাফল লাভ করে। গুগল পেজর্যাংক(PageRank) নামে একটি নিজস্ব অলগরিদম ব্যবহার করে; যা বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে অটোমেটিং ক্রয়ল করে তাকে বিভিন্ন মানদন্ডে আলাদা করে।
গুগল এর সবচেয়ে জনপ্রিয় যে সেবাটি আছে তাদের সার্চ ইঞ্জিন এর পরে; সেটি হল জিমেইল বা গুগল মেইল। এখানে একজন গুগল ব্যবহারকারী একাধিক ইমেইল একাউন্ট খুলতে পারে;এবং প্রতিটিতে ১৫ জিবি করে জায়গা ফ্রী পায়; তথ্য বা ফাইল আদান প্রদান করার জন্য।২০০৭ সালে জিমেইল পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম ইমেইল সেবা হিসেবে চিহ্নিত হয় ৮৭ মিলিয়ন ইউজার নিয়ে; প্রথমে ছিল ২৬৭ মিলিয়ন ইউজারসহ ইয়াহু মেইল সার্ভিস। তবে বর্তমানে ইমেইল সেবার ক্ষেত্রে মানুষ জিমেইল এর দিকে বেশি ঝুকছে; এবং এর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গুগল এর একটি মজার ব্যাপার হল একটি জিমেইল একাউন্ট খোলা মানেই; একটি গুগল একাউন্ট খোলা। এই জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করে গুগল এর অন্যান্য আরও সেবা যেমন; গুগল ডকস,গুগল ড্রাইভ,ব্লগার,ইউটিউব, গুগল ম্যাপস ইত্যাদি সকল সেবা ব্যবহারর করা যায়।
দিনে দিনে গুগলের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে; তারা তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য যুক্ত করেছে নানা ফিচার; এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সার্ভিসেস। এদের মধ্যে কিছু সার্ভিস বা ফিচার তারা বানিয়েছে গুগল সার্চকে আরও শক্তিসালী এবং প্রাসঙ্গিক করে তোলার জন্য; তেমনই কিছু সার্ভিসেস তারা তৈরি করেছে বিপক্ষ কোম্পানির বিপরীতে প্রতিযোগিতায় নামার জন্য।অনেক সময় তারা এই প্রতিযোগিতায় সফলও হতে পেরেছে; যেমন : মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রয়েড, জিমেইল এগুলো। আবার অনেকগুলোতে তারা সফল হতে পারেনি; যেমন : গুগল প্লাস, গুগল হ্যাঙ্গআউট ইত্যাদি।
ইউটিউব হল পৃথিবীর ভেতর ৩য় বৃহত্তম মোস্ট ভিজিটেড ওয়েবসাইট। প্রতিমাসে ৭ বিলিয়ন ঘন্টার মতন ভিডিও ইউটিউবে ভিউ হয়।বর্তমানে ইন্টারনেটে ইউটিউব হল গুগল পর ২য় সবচাইতে বড় সার্চ ইঞ্জিন। সুতরাং ইউটিউব কী? এবং এটা কতটা বড় তা হয়ত আমরা বুঝে গেছি। এখন কথা হল ইউটিউব এর সৃষ্টি নিয়ে, কে বা কারা কিভাবে এটি তৈরি করল। ইউটিউব তৈরি ইতিহাস অত্যান্ত সাধারন এবং ইউটিউব এর সাফল্য খুবই দ্রুত হয়। আজ থেকে ২৫ বছর আগে অনলাইনে ভিডিও স্ট্রিমিং একটা সাইন্স ফিকশন গল্পের কাহিনীর মতন মনে হত; তবে ইউটিউব সর্বপ্রথম সেটা বাস্তব করেছে।
ইলোন মাস্ক যিনি ছিলেন টেসলা মটরস এর প্রতিষ্ঠাতা; এবং সবচেয়ে বড় টাকা আদান প্রদান সাইট; পেপাল এর একজন কোড ফাউন্ডার, ধারনাটি শুরু তার থেকে। পরবর্তীতে তা বাস্তব করতে পেপাল এর তিন জন কর্মকর্তা হেলি,স্টিভ চেইন এবং জাভেদ করিম মিলে তৈরি করেন একটি ডেট এর ভিডিও শেয়ারিং সাইট নাম হল Tune In - hook up। এখানে মানুষ তাদের বন্ধু বা বান্ধবীদের সাথে কাটানো সময় বা ডেট এর ভিডিও শেয়ার করত। পরবর্তী এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় YouTube। এই ইউটিউব এর যাত্রা শুরু হয় ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ার ছোট্ট একটি দোকান ঘরে। April মাসে জাভেদ করিন যিনি ইউটিউব এর কো-ফাউন্ডার; তার চিড়িয়াখানায় ঘোরার একটা ভিডিও সর্বপ্রথম ইউটিউব এ আপলোড করেন।
ইউটিউব এর দিন পাল্টে যায় সেপ্টেম্বর, ২০০৫ সালে; একজন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল খেলোয়ার এর ফুটবল কসরত এর ভিডিও আপলোড এর মাধ্যমে।সেই ভিডিও ২ বিলিয়ন বিউ পায়। সাথে সাথে Nike Football এর মত বড় বড় কোম্পানির দৃষ্টি আকর্ষন করে। আর এই সুযোগেই ১.৬৭ বিলিয়ন টাকা দিয়ে ইউটিউব এর মালিকানা কিনে নেয়; টেক জায়ান্ট গুগল। তারপর ইউটিউব কে আর ফিরে তাকাতে হয়নি; গুগল এর সাথে ইন্টারনেট দুনিয়ায় অর্জন করে নিয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে যখন ইউটিউব পার্টনারশিপ সিস্টেম; অর্থাত ভিডিওতে বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে টাকা আয় চালু করে তখন; সাধারন পর্যায়ে ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়; সেই থেকে ভিডিও দেয়ার মাধ্যমে অনেকে টাকা আয় করতে শুরু করে; সেই থেকে ইউটিউব আজ মানুষের কাছে সেরা একটি মাধ্যম।
কারো লেখা নকল করা বা কপি করা একধরনের চুরি; আর চুরি করা হারাম। আজকের আর্টিকেলটি ভাল লাগলে অবশ্যই টিউমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।
Vay Onek Sundor.