মোবাইল থেকে গেম খেলে আয় করার মূল পদ্ধতি হচ্ছে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড এর মাধ্যমে আয়। এক্ষেত্রে আপনাকে আসলে গেম খেলার সময় তা রেকর্ড করে ইউটিউবের গেমিং সেকশনে আপলোড করতে হবে। যা সাধারণ ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে আয় করার মতো একই। শুধু পার্থক্য হচ্ছে আপনাকে ইউটিউব এর ভিন্ন সেকশনে ভিডিওগুলো আপলোড করতে হবে এবং আপনি একটি আলদা নিশ পাচ্ছেন ভিডিও এর জন্য। তাহলে শুরু করা যাক।
মোবাইল থেকে গেম খেলে আয় করতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে একটি ভালো মোবাইল গেম বাছাই করতে হবে। আর বাছাইকৃত গেমের উপরেই কাজ করতে নামতে হবে। তাই এরকম একটি গেম পছন্দ করুন যে গেম বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় এবং পাশাপাশি প্রচুর লেভেল বা ধাপ রয়েছে। আর ধাপগুলো যেন বড় হয় কেননা যত বড় হবে ততো বেশী আপনি অ্যাক্টিভ হতে পারবেন এবং ভিউয়ার ধরে রাখতে পারবেন। আর অবশ্যই এমন গেমই বাছাই করবেন যা আপনি ভালোভাবে খেলতে পারবেন এবং আপনি নিজেও উপভোগ করবেন।
গেম প্লে রেকর্ড এর বিষয়টি একটু বেশী খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে একটু ভুল হয়তবা আপনাকে পিছিয়ে দিবে। গেম প্লে রেকর্ড করার জন্য বিভিন্ন অ্যাপস রয়েছে। এমনকি Android মোবাইলের ক্ষেত্রে Google Play Games অ্যাপসটি যেটা সকল Android মোবাইলেই দেয়া থাকে সেটা ব্যবহার করেও রেকর্ড করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অ্যাপস এ প্রবেশ করে গেমের নামের নিচে থাকা রেকর্ড অপশনটি ব্যবহার করতে পারবেন। সেখানে ক্লিক করতেই গেমটি ওপেন হবে এবং গেম রেকর্ডের অপশন চলে আসবে।
এছাড়াও সকল অ্যাপস মার্কেটেই ভালো স্ক্রিন রেকর্ডার রয়েছে। Android এর ক্ষেত্রে আমার পছন্দ AZ Screen Recorder. যদিও আমি এর প্রিমিয়াম ভার্সনটিই ব্যবহার করি তবে ফ্রী ভার্সনেও কাজ করা সম্ভব। আর সকল অ্যাপসের ব্যবহার প্রায় একই। তাই শুরুতে আপনি Google Play Games দিয়েই শুরু করতে পারেন।
যদি আপনি লাইভ গেম খেলতে চান অর্থাৎ আপনি যখন খেলবেন তখনই তা ইউটিউবে লাইভ দেখাতে চান তবে সেটাও করতে পারবেন। এজন্যও অনেক অ্যাপস রয়েছে তবে সবচেয়ে কার্যকরী অ্যাপসটি হচ্ছে YouTube Gaming. তবে অ্যাপসটি এখনো বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত নয়। যদি আপনি কোনভাবে পেয়ে যান তাহলে অ্যাপসটি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া অন্য লাইভ স্ট্রিম অ্যাপ এর জন্য আপনি প্লে-স্টোরে Live Stream অ্যাপস খুঁজে দেখতে পারেন।
গেম প্লে রেকর্ড এর জন্য কিছু সাধারণ বিষয় সবসময়েই নজরে রাখতে হবে। প্রথমেই মিউজিক। কেননা মিউজিক যদি কপিরাইটেড হয়ে থাকে তবে আপনি সেই মিউজিক থাকা গেম থেকে আয় করতে পারবেন না। মিউজিক বলতে এখানে গেম-এ থাকা গানের কথা বলা হচ্ছে। যেমন ধরুন Need for Speed™ No Limits গেমে রেস এর সময় গান বাজতে থাকবে। আর এই গান প্লে হওয়া অবস্থার ভিডিও আপলোড করা হলে তা কপিরাইট এ পরে যাবে। ফলে আপনি বিজ্ঞাপণ দেখাতে পারবেন না। কিন্তু যদি শুধু মিউজিক বন্ধ করে দিয়ে থাকেন কিন্তু গেম সাউন্ড অন থাকে তাহলে সমস্যা নেই। গেম সাউন্ড বলতে এই একই গেমের ক্ষেত্রে গাড়ী স্টার্ট নেয়া, রেস এর সাউন্ড বা গাড়ীর ব্রেকের সাউন্ড ইত্যাদি। তাই রেকর্ড শুরু করার পূর্বেই গেমের সেটিং থেকে মিউজিক বন্ধ করে দিতে হবে। এতে কোন সমস্যা হবে না।
আর যদি আপনি চান তাহলে আপনার নিজস্ব মিউজিক অর্থাৎ আপনার লাইসেন্স থাকা মিউজিক ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আমার ক্ষেত্রে আমি Royalty Free Music ব্যবহার করি যা আমার নামে লাইসেন্স করা রয়েছে এবং আমি যেকোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবো। অবশ্য আমারগুলো ক্রয়কৃত তবে আপনি ফ্রিতেও এরকম মিউজিক সংগ্রহ করতে পারবেন সেই সাথে ইউটিউবেও এরকম মিউজিকের কালেকশন রয়েছে।
আপনি ইউটিউব এর গেমিং সেকশনে ঘুরলে দেখতে পারবেন প্রায় সকল গেমারকেই তাদের গেমের ভিডিওতে ছোট করে দেখা যায়। আর সকল গেম রেকর্ডারেও তাই ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকে। আপনি যদিও তা অন অফ করতে পারবেন। তবে সম্ভব হলে অন রাখতে চেষ্টা করুন।
প্লেয়ার ভয়েস বা টিউমেন্টারি। অনেকটা টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখার সময় যেরকম টিউমেন্টারি শুনে থাকেন সেরকম টিউমেন্টারি যদি আপনার পক্ষে করা সম্ভব হয় তবে সেটাও করুন। এতে চ্যানেলের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে আপনি ভিউয়ারদের সাথে আরো একটু বেশী ঘনিষ্ঠ হতে পারবেন। এর ফলে তারা হয়তবা আপনার চ্যানেলে বারবার ফিরে আসতে চাইবে। তাছাড়া আপনি কি করছেন বা কিভাবে করছেন তা বলতে থাকলে তাদেরও কাজে আসবে। আর টিউমেন্টারি করার ক্ষেত্রে ইংরেজিতে বলতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
যেহেতু আপনার ভিডিও ভিন্ন ভিন্ন মানুষ দেখবে এবং ইউটিউবে ভিন্ন ভিন্ন কোয়ালিটিতে ভিডিও দেখা সম্ভব সেহেতু আপনি সবচেয়ে ভালো কোয়ালিটির ভিডিও আপলোড করতে পারেন। 720p বা তার বেশী হলে ভালো। এক্ষেত্রে সব ধরনের ভিউয়ারকেই আপনি আপনার চ্যানেলে ধরে রাখতে সক্ষম হবেন এবং তারাও তাদের চাহিদা মতো ভিডিও দেখতে পারবে।
যদি গেমিং ভিডিও থেকে ভালো আয় করতে চান এবং সফল হওয়ার ইচ্ছে থাকে তবে আপনাকে নিয়মিত কাজ করতে হবে। যত বেশী আপনি অ্যাক্টিভ থাকবেন ততো বেশী আপনার সফল হবার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি নিয়মিত ভিউয়ারদেরকে ধরে রাখতে পারবেন যা আপনার আয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
যদি আপনি রেকর্ড করে পরবর্তীতে আপলোড করার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে চেষ্টা করুন ভিডিও এডিট করে আরো উন্নত বা প্রফেশনাল কাজের ছোঁয়া দিতে। এতে আপনার চ্যানেল যেমন ফুটে উঠবে তেমনই ভিউয়ারও বারবার ফিরে আশাকরি। তবে এ ছাড়াও আরো অনেক ভালো ভালো এডিটর রয়েছে। আপনি আপনার সুবিধা মতো অ্যাপস বাছাই করতে পারেন। আর ভিডিও এডিট করার সময় অবশ্যই চেষ্টা করবেন অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলতে।
ভিডিও তৈরি হয়ে গেলে শুধু আপলোড করে দিলেই হবে না। আপলোড এর সময় সঠিক নিয়মেই আপলোড করতে হবে এবং যাতে ভিউয়ারদের কাছে পৌঁছে যায় সেজন্য সঠিক ব্যবস্থাও নিতে হবে। ইউটিউব এর ভিডিও এর ক্ষেত্রে আপনি যখন ক্যাটাগরি বাছাই করতে যাবেন সেখানে Gaming নামের ক্যাটাগরি পাবেন। সেটা সিলেক্ট করলে নিচে একটি বক্স আসবে যেখানে গেমের নাম দিতে হবে। এতে কেউ যদি সেই ক্যাটাগরির গেম প্লে ভিডিও খুঁজতে থাকে তখন তাকে আপনার ভিডিও দেখানো হবে। আর ভিডিও আপলোড করার সময় কাস্টম থাম্বনেইলও আপলোড করতে চেষ্টা করুন যাতে থাম্বনেইল দেখেও ভিডিও প্লে করতে ইচ্ছে করে। আর ইউটিউব এসইও করার ব্যাপারে আমাদের পরবর্তী টিউন দেখুন যেখানে এর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং তা ইউটিউবের সকল ধরনের ভিডিও এর ক্ষেত্রেই কার্যকরী।
যারা মোবাইল থেকে গেম খেলে আয় করতে চান তাদের জন্য আশা করি টিউনটি কাজে আসবে। টিউনটি মূলত মোবাইল ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্য করে লিখা তবে কম্পিউটার গেমের জন্যও একই নিয়মে কাজ করা যাবে। এখানে শুধু ভিডিও রেকর্ডার বা স্ক্রিন রেকর্ডার ছাড়া বাকি সবই একই কম্পিউটারের ক্ষেত্রে। আর আই-ফোন অথবা অন্য অপারেটিং সিস্টেমের মোবাইলের ক্ষেত্রে আপনি এই একই নিয়ম অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় অ্যাপস সংগ্রহ করতে পারবেন।
যেকোনো সমস্যা বা প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে এখানে টিউমেন্ট করে জানাতে পারবেন। চাইলে টেকটিউনসে ম্যাসেজও করতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করবো যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে সমাধান দেয়ার জন্য।
আমি রবিউল ইসলাম শাকিল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।