হায়রে ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান ! গেমের নেশায় মজে গেইম খেলার জন্য এখন আমরা পকেটের পয়সাও খরচ করি! অবশ্য একটু আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষ কি না করে বলেন? আমরা টাকা খরচ করে মুভি দেখি না? ঘুরতে যাই না? তাহলে আনন্দ করার জন্য গেইম কিনে খেললে সমস্যা কি বলুন? আজকের আমার এই টিউনটা এন্ড্রয়েড গেইম লাভারদের জন্য।
আপনারা যারা এন্ড্রয়েড ফোনে গেইম খেলতে ভালবাসেন, তারা জানেন যে অনেক ভাল ভাল গেইম আছে যেগুলো পেইড ভার্সন কেনা ছাড়া খেলা যায় না। নানান ওয়েবসাইটে এইসব পেইড গেমের # করা ভার্সন পাওয়া যায়, সেগুলো নামিয়ে খেলা যায় সত্যি, কিন্তু কেনা ভার্সন না হলে নানান সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে নেট কানেকশন অন থাকলে গেইম আইডি ব্যান করে দেয়, গেম আনলক হয় না, আরও কত সমস্যা। সবচেয়ে বড় কথা হল- যেসব অনলাইন মাল্টি প্লেয়ার গেইম আছে তা তো আপনি খেলতেই পারবেন না যদি আপনার গেইম টা কেনা হয়ে না থাকে! তাহলে কি করবেন বলেন? খেলবেন না, ঐ সব গেইম? মিস করবেন? তারপর আরও কথা আছে! অনেক ফ্রি গেইম আছে যার স্পেশাল ফিচারগুলো গেমের ইন-অ্যাপ পারচেস থেকে কিনে নিতে হয়। না কিনতে পারলে গেমের অনেক মজাই পাওয়া হল না আপনার। এই যেমন ধরেন- ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানের জেমস এর কথা। যদি কিছু জেমস কেনার অপশন থাকত, তাহলে কি বা না করা যেত বলেন?
ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান জেমস হচ্ছে অই বস্তু যা থাকলে আপনার জন্য খেলাটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়! আমি ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান এর পাগলা প্লেয়ার। সারাদিন খুব খেলি। যারা নিয়মিত ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান খেলেন, তারা জানেন যে গেইমে জেমস কতটা জরুরি! বার বার মনে হয়, ইস! যদি কিছু জেমস থাকত, তাহলে ট্রুপ বা ডিফেন্স জলদি আপডেট দিয়ে আগানো যেত। আরও ভাল হবে যদি একটা বিল্ডার বেশি থাকে! কিন্তু জেমস কিনব কি করে? বাজারে জত ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানের জেমস এর হ্যাক অ্যাপলিকেশন আছে, সবই ভুয়া। কোনটাই আজ পর্যন্ত কারো কাজে লাগেনি। তাছাড়া এখন গেমের পলিসি খুব কড়া। কেউ এ ধরণের হ্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার করতে গেলে একাউন্ট ব্লক হয়ে যেতে পারে। কথায় আছে- শখের তোলা ৮০ টাকা! তাই সামান্য কিছু টাকা খরচ করে জেমস কেনাটা খুব একটা কঠিন কিছু হবে না। আপনার যদি পেপাল এ ডলার থাকে, তাহলে ভাল। মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড দিয়েও পারবেন কিণতে। পেওনিয়ার থাকলে তো কথাই নেই! তবে এই গুলা জোগাড় করা বেশ ঝামেলার। আপনি হয়ত ইতিমধ্যে জানেন বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে গ্লোবাল পেমেন্ট সিস্টেম QCard. এটি এক ধরণের মাস্টারকার্ড যা বাংলাদেশে বসেই হাতে পাবেন আপনারা। সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বলব একটু পরে। আগে দেখি কীভাবে আপনি অনলাইনে গেমস ও ক্যাশ অফ ক্ল্যান জেমস কিনতে পারবেন সহজে।
আপনারা জানেন কি না জানি না, সফটওয়্যার পাইরেসির দিক দিয়ে বাংলাদেশ কিন্তু তালিকার বেশ উপরের দিকেই আছে। তবে এই জন্য বাংলাদেশকে কোন দোষ দেয়া যায় না! এ দেশে হাজার হাজার টাকা দিয়ে সফটওয়্যার কেনার সামর্থ্য খুব কম মানুষেরই আছে। আর সামর্থ্য থাকলেও বা কি আসে যায়? ৪০ টাকায় সিডি পাওয়া গেলে, ৪০০০ টাকা খরচ করে সফটওয়্যার কেনা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ মনে হয় না। বলতে বাঁধা নেই যে, এমন পরিস্থিতির ব্যতিক্রম আমিও নই। আমরা সফটওয়্যার আর গেমস এর যেসব সিডি কিনি দোকান থেকে, তার সবই পাইরেটেড। অর্থাৎ, আমি টাকা দিয়ে কিনছি ঠিকই, কিন্তু গেমের ডেভেলপার সেখান থেকে এক পয়সাও পাচ্ছেন না।
বর্তমান পৃথিবীতে স্মার্টফোনের বিপ্লব ঘটে গেছে। এখন মানুষের হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে হাই কোয়ালিটি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন। ফলে গেইম এবং সফটওয়্যার ডেভেলপাররা ক্রমশ ঝুঁকছেন এন্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মের জন্য নানান গেইম ও অ্যাপ তৈরির প্রতি। তবে এই ক্ষেত্রেও শুরু হয়েছে পাইরেসি। গেম ডেভেলপাররা যেসব হাই ভোল্টেজ গেম এর পেইড ভার্সন বাজারে ছাড়ছেন, টাকা দিয়ে ডাউনলোড করতে হয়, সেগুলো এখন বিভিন্ন সাইটে ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে! এমন কি গেমের ভেতরকার ইন-গেইম পারচেস সার্ভিসগুলিও এখন বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
আর দশজনের মতোই আমিও বিভিন্ন পেইড গেমস বা অ্যাপ্লিকেশনগুলোর #ড এপিকে ফাইল ডাউনলোড করে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সেদিন গুগল প্লে স্টোরে ঘোরাঘুরির সময় মনে হলো, এতো কম দামে এসব অ্যাপ্লিকেশন যখন কেনাই যায়, তখন কী দরকার ডেভেলপারদের কষ্ট করে তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশন বা গেমটি অবৈধভাবে ডাউনলোড করার? হ্যাঁ, ফটোশপ বা আফটার ইফেক্টস-এর মতো ৫০০-৬০০ ডলারের সফটওয়্যার কেনার সামর্থ্য নেই, কিন্তু প্লে স্টোরের ২৫ সেন্ট, ১ ডলার, ২ ডলার ইত্যাদি দামের অ্যাপ্লিকেশনগুলো কেনার সামর্থ্য তো আছে। এতে করে অ্যাপ্লিকেশন বা গেমগুলোর দাম পড়েছে মাত্র ১০০ টাকার মত। তো সেদিন মনে হলো, মাত্র ১০০ টাকাই যখন খরচ হচ্ছে, কিনেই দেখি কেমন লাগে।
আপনারা জানেন যে, গুগল প্লে থেকে কিছু কিনতে হলে গুগল ওয়ালেট নামে গুগলের একটি সেবা ব্যবহার করতে হয়। এই জন্য কয়েকটি স্টেপ পার করতে হয়।
১. আপনার পিসি বা মোবাইলে গিয়ে গুগল প্লে স্টোর ওয়ালেট সেট আপ করুনঃ
গুগল ওয়ালেটে আপনি আপনার ভিসা, মাস্টারকার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেসের লোগো-সম্বলিত ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড অ্যাড করে নিতে পারবেন। ফলে প্রতিবার কোনো কিছু কেনার সময় আপনাকে বারবার কার্ডের ইনফরমেশন দিতে হবে না। বাংলাদেশে অনেকেরই ভিসা বা মাস্টারকার্ডের কার্ড নেই, কিন্তু আমার কাছে আছে Qcard Asia, আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন বাংলাদেশে QCard এর অফিস হয়েছে নতুন। যেসব যায়গায় মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করা যায় সেখানে QCardও ব্যবহার করা যায়। এটি দিয়েই আমি যাবতীয় ডোমেইন ও অনলাইন পেমেন্টের কাজ করি। তাই ভাবলাম, এটা দিয়েই গুগল ওয়ালেট সেটআপ করি।
২. কম্পিউটার থেকে যেকোনো পেইড গেমের পেইজে গিয়ে বাই তে ক্লিক করুন
গুগল ওয়ালেট সেটআপ করা বেশ সহজ ছিল। ওয়ালেট সেটআপ করার পরপরই প্লে স্টোর থেকে একটা পেইড গেমের পেজে গেলাম। দাম দেখাচ্ছিল ১.৬৬ ডলার। দেরি না করে কিনে ফেললাম।
৩. মোবাইলে ইন্টারনেট চালু করে গেইমটি ডাউনলোড করুন
কম্পিউটার থেকে কেনার পর মোবাইলে ইন্টারনেট চালু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই গেমটি ডাউনলোড হয়ে গেল।
৪. গেইম চালু করে লাইসেন্স ভ্যালিড করুন
প্রথমবার অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করার পর লাইসেন্স ভ্যালিডেশন চাইলো। ইন্টারনেট চালু করা ছিল বিধায় নিজে নিজেই লাইসেন্স ভ্যালিডেট হয়ে গেল। এরপর গেমটি খেলার পালা!
আপনাদের যদি Q Card সম্পর্কে আরও আরও বিস্তারিত জানার ইচ্ছে থাকে, তাহলে জানুন তাদের ওয়েবসাইট থেকেঃ http://www.qcardasia.com
আপনার গুগল প্লে স্টোর ওয়ালেট সেট আপ করা থাকার ফলে আপনি ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানের শপ অপশনে গিয়ে জেমস এর যেকোনো প্যাকেজে ক্লিক করে "বাই" দিলেই সেটা কেনা হয়ে যাবে। আপনার জেমস এর সংখ্যার সাথে নতুন কেনা জেমস যোগ হবে এবং আপনার গুগল প্লে ওয়ালেট থেকে ডলার কেটে যাবে।
আরও বিস্তারিত বুঝার জন্য ইউটিউব থেকে এই ভিডিও দুইটি দেখুনঃ
https://www.youtube.com/watch?v=Howh-7LitTg
https://www.youtube.com/watch?v=dfIY5PAhf7g
আমরা যতই ডাউনলোড করে খেলি না কেন, কম্পিউটারে হোক, কিংবা মোবাইলে, গেম কিনে খেলার মধ্যে একটি বড় সুবিধা আছে। তাছাড়া ইতিমধ্যে পিসির নতুন গেইমগুলো এমন এক পলিসি শুরু করেছে, যার ফলে গেইম না কিনে খেলার উপায় কমে যাচ্ছে! আপনি গেইম কেনার পর খেল্বেন আর গেম বড় হতে থাকবে, অথবা এক একটা মিশন আলাদা করে কিনতে হবে। ফলে আপনার পক্ষে পুরো গেমের মজা ডাউন লোড করে খেলে পাওয়া সম্ভব হবে না।, আর মোবাইলের গেমগুলি তো এদিক থেকে আরও এগিয়ে, মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন সিস্টেম করায় নেট কানেক্টেড হলেই দেখা যাবে গেম কেনা নাকি ফেইক ডাউনলোড করা! অবশ্য কিছু টাকা বাঁচাতে গেলে কিছু ঝামেলা তো পোহাতে হয়ই।
তবুও যাদের সামর্থ্য বা সুবিধা আছে, বিশেষ করে যাদের পেওনিয়ার কার্ড, মাস্টারকার্ড বা কিউ কার্ড আছে, তাদের আমি অনুরোধ করবো কমদামী এই অ্যাপ্লিকেশন বা গেমগুলো সম্ভব হলে কিনে খেলতে। এগুলো আপনার সামর্থের বাইরে নয়। আপনি যেমন আয়ের জন্য কাজ করছেন, কেউ একজন তেমনি আয়ের জন্যই গেমগুলো তৈরি করেছেন। সম্ভব হলে তাদের সেই প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত না করাটাই বোধহয় ভালো।
আমি মীর আযহার আলি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 13 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নাম মীর আযহার আলি। পেশায় একজন ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট। পাশাপাশি অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও অন্যান্য বিষয়ে ব্লগে লেখালেখি করছেন। সাম্প্রতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি বিষয়ে তিনি আপডেট থাকতে পছন্দ করেন। তার বিভিন্ন লেখাগুলো পড়ার জন্য ঘুরে আসতে পারেনঃ http://www.forexing24.com/ ব্লগ থেকে।
গুগল প্লে তে একাউন্ট করা নিয়ে, বা গেম কিনা নিয়ে এর পরও কোন সমস্যা হলে কমেন্টে জানান। আমি সমাধানের চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।