ফ্রিল্যান্সিং করার স্বপ্ন আমরা কমবেশি সবাই দেখি। কিন্তু সবাই কি আসলে সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারে? এটা কি আদৌ সম্ভব?
না, সবাই যদি এই সেক্টরে সফল হতে পারত তাহলে তো আর ফ্রিল্যান্সিং এর এতো কদর থাকত না৷ আর সবাই তখন ফ্রিল্যান্সিং করে লাখপতি হতে পারত। বিশেষ করে ২০২৪ সালে এসে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সফল হতে গেলে আপনাকে কিছু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে হবে। কেননা এই সেক্টরের এখন প্রতিযোগিতা অনেক অনেক বেশি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ভিডিও, টিউন কিংবা নিউজে হয়তো দেখে থাকবেন ফ্রিল্যান্সিং-কে একদম ডালভাত বলে অভিহিত করা হয়। আসলে বাস্তবতা কিন্তু একদম এতোটাও সহজ না। বাস্তবিক ভাবে আপনি যদি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চান তাহলে আপনার ভেতরে বেশ কয়েকটি কোয়ালিটি থাকতে হবে। আর এসকল কোয়ালিটি না থাকলে আপনি কখনোই ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন না।
তবে আমি আপনাকে নিরুৎসাহিত করছি না। শুধু কয়েকটি কোয়ালিটি বিল্ড আপ করার কথা বলছি। কোননা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে মাঝপথে থেমে যাওয়ার থেকে শুরু না করাই ভালো। কারণ মাঝপথে থেমে গেলে প্রাথমিক প্রচেস্টার পুরোটাই লস প্রজেক্ট হবে।
তাই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জেনে নিন ঠিক কোন কোন কারণে আপনি ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন না।
বেশিরভাগ মানুষ প্রথমেই চায় একটি পেইড কোর্স করে কাজ শিখতে। এক কোর্সে সব শিখে নিয়ে কাজ শুরু করবে। এটাই থাকে বেশিরভাগ বিগিনারদের পরিকল্পনা।
কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং কোর্স বা কাজ শুরু করার আগে আপনাকে নিজে থেকে এই বিষয়ে বিস্তর গবেষণা করতে হবে। ইউটিউবে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রচুর ফ্রি ভিডিও এবং কোর্স রয়েছে। আগে এসব টিউটোরিয়াল ও টিপস ভিডিও দেখে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেয়া জরুরি। এতে করে আপনি এই সেক্টর সম্পর্কে খুব স্পষ্ট একটি ধারণা পাবেন।
সকল বিষয়ে ভালভাবে বোঝার পরে আপনি সিন্ধান্ত নিতে পারবেন যে কোন ধরনের পেইড কোর্স আপনার জন্য উপযুক্ত। এটাও বুঝতে পারবেন যে আদৌ আপনার দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং হবে কি না। ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপনাকে প্রচুর রিসার্চ করতে হবে এবং ধাক্কা খেতে খেতে কাজ শিখতে হবে।
আর আপনি যদি মনে করেন আপনাকে কেউ হাতে ধরিয়ে কাজ শিখিয়ে দেবে। অথবা আপনার নিজে থেকে সার্চ করে কিছু জানার মতো ইচ্ছা না থাকে, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য না। এমনকি পেইড কোর্স করলেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর ১০০% শিখতে পারবেন না। আপনাকে নিজে থেকে রিসার্স করতেই হবে।
আপনি যদি মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করলেই হবে, তাহলে এই সেক্টরে না আসাই ভালো। কেননা আপনার টার্গেট-ই যদি ছেট হয় তাহলে আপনি এই সেক্টরে বেশিদিন টিকতে পারবেন না। কারণ ২০২৪ সালে যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আসছে তারা মোটামুটি একটা বড় পরিকল্পনা করেই আসছে। এই প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে আপনাকে টিকতে হলে আপনারও একটি বড় টার্গেট থাকতে হবে।
আপনার টার্গেট বড় হলে আপনার শেখার আগ্রহ-ও বেশি থাকবে। ফলে আপনি স্কিল ভালোভাবে বিল্ড আপ করতে পারবেন৷ আর আপনি যদি ছোট টার্গেট নিয়ে আসেন তাহলে হয়তো প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কাজ পাবেন। কিন্তু লং টাইম কাজ করতে পারবেন না। ফলে ফ্রিল্যান্সিং শেখার পুরো যাত্রা টাই আপনার বৃথা যাবে।
তাই যেখানে সবাই লাখ টাকা আয়ের পরিকল্পনা করে মার্কেটে ঢুকছে সেখানে আপনার ১০ হাজার টাকার টার্গেট নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করা বোকামি বৈ আর কিছু না৷
হ্যাঁ, আপনি ইংরেজি পারেন না এটা মানছি। ইংরেজি পারেন না বলে যে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন না তা কিন্তু না। কিন্তু আপনার যদি ইংরেজি শেখার মনমানসিকতা না থাকে তাহলে কিন্তু বিষয়টা ঘোলাটে হয়ে যাবে। ইংরেজি কঠিন মনে হলে আপনার ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে না আসাই ভালো।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজগুলো মূলত আসে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট থেকে। আর এখানে ক্লায়েন্ট অবশ্যই আপনার বাংলা ভাষা বুঝবে না। তাই ইংরেজি তে আপনাকে দক্ষতা তো অর্জন করতেই হবে। না পারলে শিখে নিতে হবে৷ কিন্তু এমনটা যদি হয় যে আপনার দ্বারা ইংরেজি শেখা হবেই না, তাহলে তো আপনার দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং-ও হবে না।
মনে রাখবেন ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা। এখানে আপনি রাজা আবার আপনি-ই প্রজা। এখানে আপনার সিদ্ধান্ত-ই শেষ সিদ্ধান্ত। ঠিক এই কারনেই বেশিরভাগ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী হয়। কিন্তু আসল সমস্যাটাও ঠিক এখানেই।
আপনি যদি যে কোনো পরিস্থিতিতে সকল দিক বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তাহলে এই সেক্টরে ভালো করতে পারবে না। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে থেকে কাজ করা পর্যন্ত সব কিছুর জন্যই আপনাকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরই নিতে হবে৷
প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কোন সেক্টরের ওপরে কাজ করবেন। কারণ ফ্রিল্যান্সিং এর অনেক গুলো সেক্টর আছে। যেমন: কনটেন্ট রাইটিং, ভিডিও এডিটিং, সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, এসাইনমেন্ট রাইটিং, কপি রাইটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি। তো আপনি কোন সেক্টরে কাজ করবেন সেটা আপনার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এখন আপনার যদি সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা না থাকে তাহলে তো আপনি কাজ শুরুই করতে পারবেন না৷ তারপর কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে আবার মার্কেট প্লেসে বিভিন্ন ধরনের কাজ পাবেন৷ তার মধ্যে থেকে কোনটা আপনার করা উচিত হবে, কোন কাজটি আপনার জন্য উপযুক্ত এটাও সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার নিজেকেই। তাই আপনার যদি সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো সক্ষমতা না থাকে তাহলে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করে বেশিদূর আগাতে পারবেন না।
আপনি যদি মনে করেন আপাতত ছয় মাস ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করবো তারপর আবার অন্য কোনো চাকরিতে জয়েন করবো, তাহলে আপনার ফ্রিল্যান্সিং শেখাই উচিত হবে না। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা পেশা যেখানে যতো দিন যাবে ততোই আপনি দক্ষ হয়ে উঠবেন। আর যতো বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন ততোই আপনার ইনকাম বাড়ব। কোননা ফ্রিল্যান্সিং এর আয় নির্ভর করবে আপনার কাজের ওপর।
এখন ছয় মাস কাজ করে আপনি মোটামুটি কিছু টাকা আয় করলেন। অথবা আয় করতেই পারলেন না। তখন আপনার অন্য সেক্টরে চলে যাওয়া হবে চরম বোকামি। কারণ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ভালো আয় করার জন্য প্রথম ৬ মাস থেকে ১ বছর আপনার কাজের ওপরে দক্ষ হতে হতেই চলে যাবে।
যদি এমনটা ভাবেন যে কিছুদিন কাজ করে এই সেক্টর থেকে বেরিয়ে আসবেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং এর পেছনে সময় নষ্ট না করাটাই উত্তম। তারপরিবর্তে আপনি এমন কোনো সেক্টরে ফোকাস করুন যেখানে আপনার আগ্রহ আছে এবং লং টাইম কাজ করতে চান।
ফ্রিল্যান্সিং এর ওপরে দক্ষ হতে চাইলে আপনাকে নেটওয়ার্ক তৈরি করার ক্ষমতা রাখতে হবে৷ ধরুন আপনি যাদের সাথে কোর্স করলেন তাদের সাথে আপনার একটা ভালো নেটওয়ার্ক রাখতে হবে। কেননা একটা কোর্স থেকে একসাথেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর ১০০% শিখতে পারবেন না। কাজ করতে গিয়ে আপনাকে নানান ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে। যাদের সাথে কোর্স করেছেন তাদের সাথে যদি আপনার নেটওয়ার্ক ভালো থাকে তাহলে কিন্তু আপনি সমস্যা পড়লে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সাহায্য বা টিপস পাবেন৷
তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যারা সফল এমন কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আপনার নেটওয়ার্ক তৈরি করা দরকার। এতে করে আপনি ফ্রি তে অনেক ধরনের টিপস পাবেন। কখনও কখনও কাজ-ও পেয়ে যেতে পারেন। কারণ একসাথে অনেক কাজ থাকলে একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার অন্য একজন ফ্রিল্যান্সার কে দিয়ে তাদের কাজ করিয়ে নেয়।
আর বাকি রইলো ক্লায়েন্টের কথা। ক্লায়েন্টের সাথে যদি আপনার একটি ভালো নেটওয়ার্ক না থাকে তাহলে আপনাকে কাজ দেবে কে? তাই ক্লায়েন্টের সাথে অবশ্যই একটি স্ট্রং নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। যাতে একই ক্লায়েন্টের সাথে লং টাইম কাজ করার সুযোগ পান
তাহলে বুঝতেই পারছেন নেটওয়ার্ক তৈরি করার ক্ষমতা একজন ফ্রিল্যান্সার এর সবথেকে বড় গুন। আপনার যদি মনে হয় আপনি ভালোভাবে নেটওয়ার্ক বিল্ড আপ করতে পারবেন না তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য নয়।
আমি আবারও বলছি আজকের টিউনের মাধ্যমে আমি কাউকে ডিমোটিভেট করতে চাই না। শুধু কিছু বিষয় ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে করে আপনি এই কোয়ালিটি গুলো অর্জন করে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন৷ আপনি যদি সত্যিই এই সকল গুনাবলি অর্জন করে কাজ শুরু করতে পারেন, তাহলে খুব ভালো একটা এমাউন্ট এই সেক্টরে থেকে আয় করতে পারবেন৷ আর মাঝপথে কাজ ছেড়ে দিতে হলে তো পুরো প্রচেষ্টাই বৃথা যাবে।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।