ফ্রিল্যান্সিং, ফ্রিল্যান্সার বর্তমানে কমন দুটি শব্দ। তরুন প্রজন্মের নতুন ক্রেজ এই ফ্রিল্যান্সিং। আমাদের মতো বেকার সমস্যায় আক্রান্ত দেশের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এ যুবকদের আগ্রহ আশীর্বাদ স্বরূপ। তবে নামেই ফ্রিল্যান্সার নয়, আমরা চাই সফল ফ্রিল্যান্সার।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য মূলত চাই অদম্য ইচ্ছাশক্তি, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, আর কঠোর পরিশ্রম।
ফ্রিল্যান্সিং আসলে কি! সে সম্পর্ক আমাদের সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন।
সহজ কথায় ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে কোনো ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে অন্যের কাজ করে টাকা আয় করার প্রক্রিয়া। এটি সম্পূর্ণ ভাবে স্বাধীন বা মুক্ত পেশা। যারা এধরনের মুক্তপেশার কাজ করে থাকেন তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বলা হয়।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য বিভিন্ন সাইট বা সংস্থা আছে। সেই সাইট বা সংস্থা -এ সবসময়ই দেশ অথবা দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন ক্লায়েন্ট কাজ করার জন্য বিবৃতি পেশ করেন। ফ্রিল্যান্সাররা তাদের দক্ষতা অনুযায়ী গ্রহণ করেন এবং সম্পন্ন করে টাকা আয় করেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়?
উত্তর গুলো যদিও উপরে বলেছি। এখন বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করছি।
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় ডিগ্রীর কোন মূল্য নেই, চাই দক্ষতা। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় শুরু করতে দক্ষতার বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে কোন বিষয়ে দক্ষতা থাকলে আপনাকে অভিনন্দন।
কিন্তু যদি সেরকম কোন দক্ষতা এখনো আপনার মধ্যে না থাকে তাহলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনার প্যাশন থাকলে বিভিন্ন ট্রেইনিং সেন্টার কিংবা অনলাইন কোর্স করেও দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।
কম্পিউটার দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করবেন কিন্তু এই বিষয়ে না জানলে ত হয় না। তাই কম্পিউটার এর সিস্টেম বা যে সফটওয়্যার দিয়ে কাজ করবেন সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।
চর্চা করার মাধ্যমে নিজেই বেছে নিতে হবে কোন কাজ আপনার দ্বারা সম্ভব।
ফ্রিল্যান্সিং -এ বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট হলো বাইরের দেশের। তারা বাংলা না বুঝার এই কথা। তাই তাদের থেকে কাজ নেয়ার জন্য ইংরেজি শেখা টা বাধ্যতামূলক। ইংরেজি শেখার জন্য ইউটিউব বা বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন অথবা ইংরেজি বই পড়তে পারেন। মনে রাখবেন ইংরেজিতে বলতে পারা, লিখতে পারা ফ্রিল্যান্সিং জগতে বাধ্যতামূলক।
একজন মানুষকে চেনা যায় তার চেহারা দেখে ঠিক তেমনভাবে একজন এর প্রোফাইল দেখে ক্লায়েন্ট রা অর্ডার দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন বিষয় প্রোফাইল এ উল্লেখ করা জরুরি। যেমন আপনি কোন কাজে অধিক দক্ষ, আগে কাজ করে থাকলে তার কিছু প্রমাণও উল্লেখ করবেন, আপনার নাম, যোগাযোগ নম্বর, যেই কাজটি করবেন সেই কাজ এর নমুনা।
অনেকেই নিজ প্রোফাইল এর তথ্য অন্য কারোর প্রোফাইল থেকে কপি করে বসিয়ে দেন এমনটা মোটেও ঠিক নয়। ফ্রিল্যান্সার জগতে প্রবেশ করতে হলে কাওকে অনুকরণ নয়, বরং নিজের আলাদা ব্র্যান্ড তৈরি করুন।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হলে প্রথমে নিজের মধ্যে অফুরন্ত ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং -এ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কাজ এর চাহিদা রয়েছে। প্রথমে যেকোনো এক কাজ ধৈর্য্য সহকারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। চর্চার বিকল্প নেই। বার বার চর্চা করতে হবে, সেই সাথে নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
কথায় আছে ''একবার না পারলে দেখো শতবার''। ধরুন কাজ শিখেছেন, সব ঠিকঠাক করেছেন কিন্তু কাজ পাচ্ছেন না তাই বলে কি হতাশ হবেন?
জ্বি না হতাশ হওয়া যাবে না। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে আজ না হয় কাল আপনি পারবেন ই। মনে রাখবেন কেউ রাতারাতি সফল হতে পারে নি। তাই নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবেন যে আপনি পারবেন। পারতে আপনাকে হবেই!
ফ্রিল্যান্সারদের সারারাতই এক্টিভ থাকতে হয়। কারন কখন কোন ক্লায়েন্ট ম্যাসেজ দেয় বলা যায় নাহ। যেই কাজই পান না কেন সেই কাজ এ খুত না রাখার চেষ্টা করবেন।
কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। অলসতা দূরে রেখে ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করুন। অন্যথায় কিছুই করতে পারবেন না।
সবাই নতুনত্বকে প্রাধান্য দেয়। সৃজনশীল কাজ সবাই পছন্দ করে। তাই সবসময় নিজে যা পারেন করবেন। কখনো কপি - পেস্ট করবেন না। এতে আপনারই ক্ষতি। রেটিং খারাপ আসতে পারে।
নিজের সবটুকু দিয়ে সৃজনশীল কাজ করবেন। দেখবেন সফলতা আসবেই আসবে।
মার্কেটপ্লেস এ অনেক ধরনের কাজ আছে। সেখান থেকে আপনি যেই কাজে দক্ষ সেই কাজ নির্বাচন করুন সতর্কতার সাথে। কারন অনেকেই আছে টেস্টিং করার জন্য বায়ার এর কাজ নেই কিন্তু করতে পারে নাহ। পরে যেই আইডি দিয়ে কাজ নেয়া হয় সেই আইডির রেটিং কমে বা খারাপ রিভিউ পরে যায় এবং পরবর্তীতে এর ফলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে এসব বিষয় সতর্ক হতে হবে।
সময় মোতাবেক কাজ শেষ করে জমা দিন। বাইরের দেশের বায়াররা সময়েকে গুরুত্ব দেয় বেশি। যারা সময় মোতাবেক কাজ সম্পূর্ণ করে জমা দেয় তাদের কাছে আবার কাজ এর অফার দিয়ে থাকে।
তাই বলে তাড়াহুড়ো করে কাজ করা যাবে নাহ। আপনার যত সময় লাগবে তাদের বলে দিবেন তারপর কাজ নিবেন। সময় নিয়ে কাজ করলে ভালভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
নিজের সম্পর্কে মানুষকে আরো বিস্তারিত জানানোর জন্য একটি ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। যদি কোনো ক্লায়েন্ট আপনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায় তখন আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটটি দেখিয়ে দিবেন।
এতে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে। আপনার ওয়েবসাইট সবসময় আপডেট করবেন। যাতে করে ক্লায়েন্টরা ওয়েবসাইট দেখে আপনাকে কাজ দেয়। অবশ্যই যে বিষয়ে আপনি পারদর্শী সে বিষয় নিয়েই ওয়েবসাইটটি তৈরী করবেন।
প্রতিদিন আপনার কাজ থাকবে অথবা প্রতিমাসে আপনি অনেক টাকা কামাবেন এটা আশা করা ঠিক হবেনা। এমনো সময় আসবে যখন প্রচুর আবেদন করার পরও কোন রিপ্লাই পাবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
সারা বিশ্ব থেকে যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী আসবে সেখানে অনেক সময়ই কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় নতুন কাজের জন্যে। তাই যারা এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন তাদেরই শুধু এ ধরনের কাজে আসা উচিত হবে।
একবার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আপনি কম কাজ করেও অধিক টাকা পাবেন। কারণ তখন আপনার চাহিদা বাড়বে, এবং স্বাভাবিকভাবেই আপনার কাজের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
সর্বোপরি একটা কথা বলতে চাই, সেটা হলো প্রশ্ন নিজের মধ্যেই তৈরি করুন আর নিজেই তার উত্তর বের করার চেষ্টা করুন। দেখবেন সফলতা আপনার কাছেই আসবে।
ফ্রিল্যান্সিং মানুষ যতটা সহজ মনে করে ঠিক অতটা সহজ নয়। এর জন্য চাই মনোবল, কিছু করার ইচ্ছা, নিজের প্রতি বিশ্বাস।
[আমার দুইটি ব্লগ আছে। জীবন ও প্রযুক্তি বিষয়ক pratborton.com এবং বিভিন্ন রহস্য, কী কেন কীভাবে নিয়ে প্রশ্নোত্তর মূলক ভিন্নধর্মী সাইট whyorwhen.com. ঘুরে আসার আমন্ত্রন রইলো]
আমি মোঃ আব্দুল্লাহ আল আসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অনিয়মিত ব্লগার