ফ্রিলান্সিং ও আউটসোর্সিং পর্ব – ৩

বর্তমানে ফ্রিলান্সিং করা অর্থ উপার্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সবাই টাকা উপার্জন করতে চাই। যেহেতু ফ্রিলান্সিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করার অনেকগুলো মাধ্যম আছে, সেজন্য তরুণ ও ছাত্র সমাজের অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ফ্রিলান্সিং এর ব্যাপারে। সমস্যা হচ্ছে অনেকে না বুঝেই ইচ্ছা মত বিভিন্ন ফ্রিলান্স মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলছেন, অনেকেই মনে করছেন ফ্রিলান্সিং করলেই টাকা আর টাকা! এর সুবিদা/অসুবিদা নিয়ে ভাবছেন না। আজকের পর্বে ফ্রিলান্সিং এর সুবিদা/অসুবিদা এবং যেকোনো মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় কি কি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, তাই নিয়ে আলোচনা করবো।

ফ্রিলান্সিং এর সুবিদা

  • ফ্রিলান্সিং এর অন্যতম সুবিদা হচ্ছে আপনি আপনার পছন্দের কাজ করে আয় করতে পারেন। আকাআকি বা লেখালেখি বা প্রোগ্রামিং যা ভালোলাগে তাই আপনি কাজ করে আয় করতে পারেন।
  • চাকরী করলে আপনাকে অবশ্যই ১০-৫ টা অফিস করতে হতো। বসের ঝাড়ি খাওয়া, চাপে থাকা, সকালে সময়মত ঘুম থেকে উঠা ইত্যাদি ঝামেলা ফ্রিলান্সিং এ নেই। এখানে আপনি আপনার বস। ইচ্ছা হলে কাজ করবেন। ইচ্ছা নাহলে কাজ করবেন না! কারো কিছু বলার নেই।
  • যেহেতু এখানে আপনি আপনি স্বাধীন। আপনি চাইলে কয়েকটি কাজ একি সাথে করতে পারেন। আপনি যত কাজের চাপ নিতে পারবেন, তত টাকা আয় করতে পারবেন। এখানে চাকরীর মত নির্ধারিত বেতন নেই। আয় নির্ভর করে আপনি কত ভালো কাজ জানেন আর কত কাজের চাপ নিতে পারেন।
  • কাজ যেহেতু বাইরের কোম্পানি বা গ্রাহকের সাথে, এজন্য বহিঃ বিশ্ব সম্পর্কে আপনার ভালো ধারনা তৈরি হয়। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। যা আপনার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে।
  • কাজ করার সময় আপনাকে গ্রাহকদের সাথে চ্যাট বা ভিডিও কলে কথা বলতে হয়। যেহেতু ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। তাই চ্যাট বা ভিডিও কলে যেভাবে কলে বলুন না কেনো। আপনাকে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। যেহেতু ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা না, সেজন্য আমাদের ইংরেজি ভাষাও শিখা হয়ে গেলো। পাশাপাশি ভিডিও কলে কথা বলার সময় তাকিয়ে কথা বলতে হয়। তখন ভবিষ্যতে চাকরীর ইন্টার্ভিউ বা অনেকের সামনে কথা বলতে আপনার সুবিদা হবে।
  • ফ্রিলান্সিং যেহেতু আপনি বাসায় বসে করতে পারেন। তখন আপনি আপনার পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারবেন। পারিবাহিক বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে। ছুটির দিন বলে যেহেতু আলাদা কিছু নেই। আপনি চাইলেই হাতে কাজের চাপ কম থাকলে পরিবার নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন। কয়েকদিনের দিনের জন্য দুরে কোথাও যেতে পারেন। ফ্রিলান্সারদের একটি ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হলো!

ফ্রিলান্সিং এর অসুবিদা

  • অনেক প্রতিযোগিতার মার্কেট। অনেকেই আছে কাজ করার জন্য। প্রথম দিকে কাজ পাওয়া একটু কষ্টকর।
    সমাধান: তবে আপনার স্কিল, পরিশ্রম আর চেষ্টা থাকলে কাজ অবশ্যই পাবেন।
  • অনেক লম্বা সময় ধরে কম্পিউটার এর সামনে বসে কাজ করতে হয় বলে শরীর ও চোখের জন্য ক্ষতিকর।
    সমাধান: চেষ্টা করবেন একটানা না বসে ২০ মিনিটস পর পর ৫ মিনিটস হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারেন। তাহলে সমস্যা হবে। পাশাপাশি বসে কাজ করার জন্য আরামধায়ক চেয়ার ব্যবহার করবেন।
  • যেকোনো সময় আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যান হয়ে যেতে পারে বা নিয়মিত কাজ নাও পেতে পারেন।
    সমাধান: আপনার স্কিল থাকলে আর কাজের পোর্টফলিও থাকলে আপনি অন্য মার্কেটপ্লেস বা রিমোট জব করতে পারেন

মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল কিভাবে সাযাবেন?

মার্কেটপ্লেসে শুদু অ্যাকাউন্ট খুললেই হবে না। অনেক কিছু সুন্দর করে তৈরি করতে হবে। আপনার প্রোফাইলকে যেকোনো দোকানের সাথে তুলনা করতে পারেন। একটি দোকানের সাজসজ্জা, পণ্যের মান যত ভালো হয়, গ্রাহক অই দোকান থেকে কেনাকেটা করতে আগ্রহ পান। তেমনি আপনার প্রোফাইলের প্রতি অংশ অনেক যত্নসহকারে সাযাবেন। এখানে আমি সব মার্কেটপ্লেস প্রোফাইলের কিছু কমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

ইউজার নেম: এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তেমন গুরুত্ব দেই না। ইচ্ছামত একটা নাম দিয়ে দেই। ইউজার নেম কিন্তু পড়ে বদলানো যায় না। চেষ্টা করবেন সব সামাজিক মাধ্যমে একই ইউজার নেম ব্যবহার করার জন্য। ফলে, যে কেউ ইউজার নেম দেখে আপনাকে চিনতে পারবে।

প্রোফাইল পিকচার: ইউজার নেম এর মত এটি গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি সমস্যা না থাকলে চেষ্টা করবেন নিজের ছবি দেওয়ার জন্য। প্রফেশনাল ছবি ব্যবহার করবেন। প্রফেশনাল বলতে যে, সাজগুজ করে বা খুব দামী পোশাক পড়ে ছবি দিতে হবে তা বোঝায় না। আপনি সাধারণ পোশাক পরলেও সমস্যা নাই। খেয়াল রাখবেন ছবিতে যাতে আপনার মুখ খুব ভালোভাবে বোঝা যায়। আর সকল সামাজিক মাধ্যমে একই ছবি ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। ক্লায়েন্ট আপনার নাম মনে রাখতে না পারলেও ছবি দেখে আপনাকে চেনার সুযোগ অনেক বেশি।

ইমেইল আপনি একই কমন ইমেইল ব্যবহার করতে পারেন। এই একই ইমেইল দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা উত্তোলনের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলা ইত্যাদি করলে ভালো। তাহলে আপনাকে ভেরিফাইড করতে সুবিদা হবে।

বর্ণনা: যেকোনো মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় নিজের সম্পর্কে কিছু লিখে দিতে হয়। চেষ্টা করবেন সংক্ষিপ্ত ভাবে আপনাকে উপস্থাপন করতে। যাতে পরলে পড়লে আপনার সম্পর্কে সহজেই একটা ধারনা পাওয়া যায়।

স্কিল যোগ করা: অবশ্যই আপনি আপনার স্কিল যোগ করে দিবেন। একেক মার্কেটপ্লেসে একেক ভাবে স্কিল যোগ করার উপায় থাকে। আপনি যে স্কিল্ খুব ভালো শুধু সেগুলো যোগ করবেন। যা জানেন না তা যোগ করতে যাবেন না। স্কিল দেখে ক্লায়েন্ট আপনার কাছে কাজ দিতে ভরসা পাবে।

পোর্টফলিও: শুদু স্কিল যোগ করলেই হবে না। আপনার যে অই স্কিল আছে, প্রমাণ হিসেবে কাজের স্যাম্পল রাখতে হবে। কারন শুধু স্কিল দেখে কেউ আপনার উপর ভরসা করার সাহস পাবে না। পোর্টফলিও কি, কিভাবে করতে হয়, কি কি রাখতে হয় এই জন্য পোর্টফলিও নিয়ে আমার লেখা কিছু ব্লগ আছে। আমি নিচে লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি।

কাজের জন্য আবেদন করা: স্কিল বা পোর্টফলিও থাকলেই তো হবে না। আপনাকে কাজের জন্য আবেদন করতে হবে। এটাই সবচেয়ে কঠিন বিষয়। একেক মার্কেটপ্লেসে একেভাবে কাজ পাওয়া যায়। কোথাও আপনাকে বায়ার রিকুয়েস্ট পাঠাতে হয় আবার কোথাও বিড করতে হয়। যেভাবেই করুন না কেনও কিছু জিনিস মাথায় রাখবেন কাজে আবেদন করার আগে। ভালোভাবে কাজের চাহিদা পড়বেন। আপনি পারবেন কিনা ভালোভাবে পড়ুন। তারপর আপনি কিভাবে কাজটা করবেন বা আপনার কিছু মতামত যোগ করতে পারেন যাতে কাজের মান আরও ভালো হয়। অর্ধেক পারি অর্ধেক পারি না। এইরকম কাজে ভুলেও আবেদন করবেন না। শতভাগ নিশ্চিত হয়েই কাজে আবেদন করুন। ভালোভাবে কাজ করতে না পারলে আপনার প্রোফাইলের জন্য ক্ষতিকর আবার ভবিষ্যতে কাজ পেতে সমস্যা হতে পারে।


শুধু ফ্রিলান্সিং না। যেকোনো কাজে সফল হওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে সততা। আপনি যতটুকু পারেন তাই ক্লায়েন্টকে বলবেন। অর্ধেক কাজ করে বা হুট করে ক্লায়েন্টকে বিপদে ফেলে কাজ বাদ দিবেন না। মনে রাখবেন একজন খেলোয়াড় যেমন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে তেমনি একজন ফ্রিলান্সার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রা আয় করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাই আপনার ভুলের জন্য দেশের সম্মানহানি যাতে না হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

Level 0

আমি Abdullah Nahian। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস