বেশ কিছুদিন ধরে খুব বেশি মাতামাতি হচ্ছে ফ্রিলান্সিং ও আউটসোর্সিং নিয়ে। অনেকের ধারণা এটি একটি রাতারাতি বড়লোক হবার সহজ উপায়! অনলাইনে আয় করার এইসব বাহারি বিভিন্ন বিজ্ঞাপণে আকৃষ্ট হয়ে প্রতারিতও হচ্ছেন অনেকে। সবাই চায় দ্রুত কম কষ্ট করে টাকা রোজগার করতে! তাহলে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কি ভুয়া? অনেকে বলে যে লাখ লাখ টাকা রোজগার করা যায়? অনেকে নাকি বাড়ি – গাড়ি করে ফেলেছে? না, এগুলা সত্যি এবং অনেকেই করেছে। কিন্তু, যতটা সহজ ভাবা হয় আসলে বিষয়টা অত সহজ নয়।
আমি কয়েকটি পর্বে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আজ হল প্রথম পর্ব। আজকের পর্বে আমরা ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কি বা এর কাজ ইত্যাদি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
ফ্রিলান্সিং একটি ইংরেজি শব্দ। যার সহজ বাংলা হল “মুক্ত পেশা“। আমাদের অনেকের একটা ভুল ধারণা যে “ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করা যায়”। আসলে ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে টাকা উপার্জনের একটা মাধ্যম।
চলুন আমরা উদাহারনের মাধ্যমে বুজি। ধরুন, ‘আকবর সাহেব পেশায় একজন রিক্সা চালক। উনি সারাদিন যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে টাকা আয় করেন। লক্ষ্য করবেন যে, যারা রিক্সা চালান উনাদের কোন টাইম শিডিউল নেই। যখন ইচ্ছা রিক্সা চালান, যখন ইচ্ছা বিশ্রাম নেন, প্যাসেঞ্জারের সাথে ভাড়ায় বনিবনা না হলে সরাসরি বলেন ‘যামু না!’ এক কথায় উনি একেবারে স্বাধীন। উনার যদি মনে হয় আজকে শরীর খারাপ, আজকে রিক্সা নিয়ে বের হবো না। দুনিয়ার কারো সাধ্য আছে উনাকে জোর করার? তাহলে আমরা বলতে পারি ‘রিক্সা চালানোর পদ্ধতি হল ফ্রিল্যান্সিং’ এবং রিক্সা চালক হলেন ‘ফ্রিল্যান্সার ‘।
একিভাবে একজন রাজমিস্ত্রি, সিএনজি চালক, ঠেলাগাড়ির চালক একেকজন ‘ফ্রিল্যান্সার ‘ এবং তাদের কাজের মাধ্যম টা হচ্ছে ‘ফ্রিল্যান্সিং’।
আবার একজন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বা ভার্সিটি প্রফেসর কিন্তু ‘ফ্রিল্যান্সার ‘ না। কারন উনাদের একটা টাইম মেনে চলতে হয়। অফিস ৯ টায় হলে যেভাবেই হোক ৯ টার আগে অফিসে যাওয়া লাগবে। সময়মত না গেলে “উপরমহল” থেকে ঝাড়ি তো খেতেই হয়, বোনাস হিসেবে চাকরীও চলে যেতে পারে! আবার সকালে উঠে মনে হল আজ শরীর ম্যাজম্যাজ করছে বা বিকালের দিকে মনে হল একটু বিশ্রাম দরকার। যাই করেন আপনার ইচ্ছা মতো কিছু করতে পারেন না! আগে কাজ শেষ করবেন, তারপর বেঁচে থাকলে বাকিটা!
এবার আসি ‘আউটসোর্সিং‘ কি। ধরুন, আমাদের দেশে প্রতি বছর বর্ষাকালে ‘ডেঙ্গুর’ কারনে অনেকেই মারা যান এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকেন 🙁 আল্লাহ্ সবাইকে সুস্থ রাখুন। এই ডেঙ্গু বেশী দেখা দেয় বর্ষাকালে। এখন প্রতি সিটি কর্পোরেশন এর নিজস্ব লোকজন আছেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য। এখন দেখা গেলো যা মানুষ আছে তা পর্যাপ্ত নয়। এই কয়েকমাসে ২-৩ গুন মানুষ লাগবে পরিষ্কার কাজ ভালোভাবে করার জন্য।
এখন সিটি কর্পোরেশন এর হাতে ২ টা রাস্তা আছে। হয় অতিরিক্ত যাদের লাগবে তাদের একবারে নিয়োগ দেওয়া। তাতে যে ঝামেলা হবে দেখা যাবে তাদের দরকার ২-৩ মাসের জন্য কিন্তু বেতন দিতে হবে ১২ মাস! যা একটি লস প্রোজেক্ট। অন্য উপায় হল সিটি কর্পোরেশন যে অতিরিক্ত মানুষ জন লাগবে তাদের কে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে। যে তোমরা ৩ মাস থাকবে। কাজ শেষ হলে টাকা নিয়ে চলে যাবে। এতে সিটি কর্পোরেশন এর লাভ হল। এটাই হচ্ছে ‘আউটসোর্সিং’।
তেমনি আমার বাসা বানাবো। রংমিস্ত্রি, কাঠ মিস্ত্রি সবাইকে কাজের জন্য নিয়োগ দিলাম। কাজ শেষ। লেনদেন ও শেষ। আবার কোথায় যাবো। রিক্সা নিলাম, ভাড়া ঠিক করলাম। আমি আমার জায়গামত গিয়ে ভাড়া দিয়ে চলে গেলাম।
ফলাফলঃ ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।
আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। আগামি পর্বে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং করা যায় বা কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবো।
আমি Abdullah Nahian। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।