ফ্রিলান্সিং- মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুনদের স্বপ্নভঙ্গের নতুন ভাইরাস দায়ী কে?

টিউন বিভাগ ফ্রিল্যান্সিং
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

পুরো লেখাটি না পড়ে, আপনি কখনোই লেখার উদ্দেশ্যটি বুঝতে পারবেন না। তাই উল্টাপাল্টা টিউমেন্ট করার আগে আপনি লেখাটি ভালোভাবে পড়ে নিবেন প্লিজ।

আমরা তো সংবাদপত্রে শুধু সফলদের বিজ্ঞাপণ দেখি। তাদেরকে অনুপ্রানিত করি। তাদের বাহবা দেই। কিন্তু আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, এই ফ্রিলান্সিং কত ছেলেকে অসহায় করে ফেলেছে? আমি একদম বাস্তববাদী চিন্তাভাবনা করি। তাই একটি বাস্তব বিষয় নিয়ে লিখবো আজ। নিজের দেখা কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবো।

ফ্রিলান্সিং একটি সন্মানজনক পেশা। অনেক মেধার প্রতিফলন ঘটিয়ে ফ্রিলান্সিং করতে হয়। একটি স্কিল এর সাথে আর একটি স্কিল এমনভাবে জড়িত যে, যারা ফ্রিলান্সিং করে একমাত্র তারাই জানে যে, কত মেধা খাটিয়ে টাকা উপার্জন করতে হয়। যারা ফ্রিলান্সার তারা তো অবশ্যই খুব ভালো করে জানেন যে, যে কেউ এসেই ফ্রিলান্সিং করতে পারবে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করতে হলে অবশ্যই দরকার আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা। তারপরেও আপনি দেখবেন যে, আজকাল বাস এর পেছনে পর্যন্ত দেখা যায় যে, কোন যোগ্যতা ছাড়াই আয় করুন। , ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা ইত্যাদি ইত্যাদি হাবিজাবি চাইপের লেখা। তার ফলে কি হচ্ছে, ১০-১৫ হাজার টাকা দিয়ে ট্রেনিং করিয়ে শেষে বিদায়! এমন কি কোন রেকর্ড আছে যে, অন্তত ৫০ ভাগ ও সফল হয়েছে?

আমি তো দেশের শ্রেষ্ঠ ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে ট্রেনিং করেছি। একদম সৎভাবে বলতে গেলে, আমি সহ সফলতার হার মাত্র ১০ ভাগ। অর্থাৎ, ৩০ জন ষ্টুডেন্ট খেকে মাত্র ২ জন সফলভাবে কাজ করতে পারছে। বাকী সব ঝড়ে পড়েছে। আমি তাদের কথাই বলছি যারা ঝড়ে পড়েছে। তাদের কি হবে? তারা তো অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলো মাসে ৩০-৫০ হাজার টাকা আয় করতে। অনেকে ধার করে এনেও কোচিং করেছে আমার দেখা মতে। তাদের ধারনা ছিলো যে, ৩ মাস ট্রেনিং করে পরে সুখী লাইফ যাপন করবে।

বাবা মাকে সুখী করবে। কিন্তু তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে নূন্যতম ধারনাও ছিলো না। অথচ যখন তারা আসলেই পারবে কি না এটি জানতে কোন ট্রেনিং সেন্টারের কনসাল্টেন্সির কাছে যোগাযোগ করছে, তারা বলেছে যে, কোর্স করার পর ১০০% আয় করা যাবে।

তাহলে দোষটা কার? তিন মাস কোর্স করার পর যখন তার স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়, তখন এর জন্য কে দায়ী? আসলে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সে ই দায়ী। এভাবে কত মানুষ ধোকা খাচ্ছে আর কতো মানুষ অসহায় জীবন যাপন করছে তার ইয়ত্তা নেই। আসলে ফ্রিলান্সিং কোন ছেলেখেলা নয়। সফল ফ্রিলান্সারদের জীবন নিয়ে ভেবে দেখবেন তারা কিভাবে সফল হয়েছে। তারা অনেক যোগ্যতার অধিকারী বলেই তারা আজ সফল।

আর যে কেউ চাইলেই কোনদিন সফল হতে পারে না। তার মধ্যে গুন থাকা লাগে। লাগে সীমাহীন ধৈর্য। সহজভাষায় বলতে গেলে যেমন, ক্লাসের সবাই ই প্রথম হয় না তেমন ই সবাই ফ্রিলান্সার হতে পারে না। প্রথম শ্রেনির মেধা ও ধৈর্যসম্পন্ন মানুষগুলোই সফল ফ্রিলান্সার হয়।

তাদের স্বপ্ন দেখাটা কি ভুল হয়েছে তাহলে? আসলে তা নয়। যারা তাদের এ মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছেন তারা ভুল করেছেন। তারা মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করেছেন। বিনিময়ে আর একটি স্বপ্নময় মানুষকে করছে স্বপ্নভঙ্গ। তাদের কথা তো বাদ ই দিলাম। চিটার বাটপারদের দেশে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতাম যদি সরকার কোন ভালো কাজ করতো। কিন্তু খুব কষ্ঠ লাগে যে, সরকার এই কাজটি আরো ব্যাপকভাবে করছে। একেবারে অনুষ্ঠান করে তরুনদের স্বপ্নভঙ্গ বলা চলে।

কোটি কোটি টাকার বাজেট হচ্ছে দেশে ফ্রিলান্সার বানানোর জন্য। কিন্তু কেউ কি সরকারী ট্রেনিং করে ফ্রিলান্সার হতে পেরেছে? উত্তর হবে না। যদি কেউ পেরেও থাকে তাহলে শতকরা ১-২% হতে পারে। তাহলে কেনো ৫ দিনের ট্রেনিং করিয়ে লক্ষ লক্ষ তরুনদের স্বাবলম্বী করার অপচেষ্ঠা চালিয়ে সরকারী টাকাগুলো অপচয় করা হচ্ছে?

আসলে কিছুই হয় নি। হয়েছে তরুনদের স্বপ্নভঙ্গ। কারন তারা কোথাও বলেনি একমাত্র এক্সট্রা অর্ডিনারিরা ই ফ্রিলার্ন্সি খাতে সফলতা পায়। সবাই কখনোই সফলতা পায় না। আমার সাথে অভিজ্ঞ ফ্রিলান্সাররা একমত হবেন যে, ৮০% যোগ্যতা নিয়েও অনলাইনে আয় স্থায়ীভাবে ধরে রাখা যায় না। স্থায়ীভাবে অনলাইনে আয় ধরে রাখতে হলে দরকার ১০০% দক্ষতা। আর তা না হলে অযথা সময় নষ্ঠ।

আমাদের মানসিকতার ও দোষ আছে।

আমি যখন আর আর ফাউন্ডেশনে ছিলাম তখন একদিন দেখেছিলাম যে, একজন লোক শুধুমাত্র মডেম কিনে চলে এসেছে রাসেল ভাইয়ের কাছে অনলাইনে আয় করার জন্য। সে মাত্র ১ দিন হয় ই-মেইল খুলেছে অথচ, আগামী তিন মাসের মধ্যে ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট করে ফ্রিলার্ন্সি করতে চায়। বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে থাকতে চায়। তার হিসাব মতে, রাসেল ভাই যদি অনেক যোগ্যতা সম্পন্য হয় মাসে ৫ লাখ টাকা আয় করে তবে আমার কম যোগ্যতা থাকলেও তো আমি মাসে অন্তত ১৫, ০০০ টাকা আয় করতে পারবো। একদিক দিয়ে বিবেচনা করলে ঠিকই আছে। কিন্তু আবার অন্যদিক দিয়ে পুরুটাই বাঁশ।

সত্যি কথাটা হলো আপনি কম দক্ষতা থাকলে ০০.০০০ টাকাও আয় করতে পারবেন না। আপনাকে পারফেক্ট হতেই হবে। আমি ক্লিয়ার করে বলে দেই যে, অনলাইনে আয় করা যায় শুনেই না লাফিয়ে আগে নিজের অবস্থানটা বুঝুন। আপনি অনলাইনে কাজ করার জন্য উপযুক্ত কি না। কারন অনেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও রয়েছে যে, ভালোমতো ইন্টারনেট চালাতে জানে না। অথবা তার কম্পিউটার এর প্রতি কোন আকর্ষন ই নাই।

তবে তাকে দিয়ে কি করে ফ্রিলার্ন্সি করানো সম্ভব? যেখানে একজন ফ্রিলান্সার কে গড়ে ৮ ঘন্টা কম্পিউটার এ বসে থাকতে হয়!
আবার সম্প্রতি এমনও দেখছি যে, অন্যজনের সফলতা দেখে অনেকে ফ্রিলান্সিং কে এতোই সহজ মনে করে যে, তারা ভাবে আমার গ্রামের পোলা যেহেতু টাকা আয় করে সেহেতু আমিও পারবো। কারন তার থেকে আমি ছাত্র হিসাবে অনেক ভালো! আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, প্রথাগত শিক্ষা ও অনলাইন ফ্রিলান্সিং সম্পূর্ন আলাদা জিনিস। তা ভালোমতো বুঝতে হবে। এখানে আগ্রহ ও ধৈর্য হচ্ছে সাফল্যের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

আর কোন নতুন ব্যক্তি যদি তিন মাস শেখার পরে কোনভাবে অনুধাবন করে যে, তাকে দিয়ে ফ্রিলান্সিং করা সম্ভব নয় তবে তার মাঝে যে মানসিক শূন্যতা দেখা দেয়, তা সাড়াজীবন নিয়ে বয়ে বেড়াতে হয়। অনেককে দেখেছি নিরবে বড় স্বপ্ন দেখে পরে চোখের পানি ফেলতে। আবার অনেককে দেখেছি সফল হয়ে সুখের হাসি হাসতে। নিজেকে আগে প্রশ্ন করুন আপনি ফ্রিলান্সিং এর জন্য উপযুক্ত কিনা। নাকি খালি হুজুগে পড়ে ফ্রিলান্সিং করে ঘরে বসে বড়লোক হতে এসেছেন?

মাঝপথে কি হচ্ছে? সরকারদলীয় কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিগন মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আর কিছু তরুন এর স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।

পোষ্টটি লেখার উদ্দেশ্য একটাই, সকল নতুনদের মাঝে একটা ম্যাসেজ পৌছিয়ে দেওয়া যে, সবার দ্বার ফ্রিলান্সিং করা সম্ভব নয়। আগে ভাবুন। তারপর স্বপ্ন দেখুন। অন্তত পরে হতাশ হতে হবে না। তবে কোন ট্রেনিং সেন্টার বা কাউকে আঘাত করা আমার মোটেও উদ্দেশ্য নয়। কেউ বিষয়টি জটিল করে দেখবেন না।

আমি শুধু ব্যর্থ ফ্রিলান্সারদের স্বপ্ন ও তাদের ব্যর্থতার পর স্বপ্নভঙ্গের চিত্রটি তুলে ধরতে চেয়েছি। আপনাদের আশাহত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। বরং এই লেখাটি আপনাকে সঠিক বিষয়টি ভাবতে সাহায্য করবে।
Writer: শামীম হাসান শাকিল ভাই।

আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে জড়িত ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত আছি। আশাকরি।
https://forums.com.bd (Forums Bangladesh) এ হবে অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য সব থেকে বড় এবং উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার।
Community ফোরামে আপনি আপনার প্রশ্ন করার পাশাপাশি অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করে অবদান রাখতে পারেন।
তাই এখনি আপনি সাইটে ভিজিট করে একটি একাউন্ট খুলে প্রশ্ন করুন এবং অন্যের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাহায্য করুন।
ওয়েব সাইট লিঙ্ক > https://forums.com.bd
প্রয়োজনে এই পোষ্টটি শেয়ার করে অন্যকে জানিয়ে দিন।

Level 2

আমি চয়ন মোল্লা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 28 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 16 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস