আমরা এখন যেরকম জীবন যাপন করছি তার জন্য টেকনোলজিকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কারণ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আমরা এত সহজ ভাবে বসবাস করতে পারতাম না। আর ইন্টারনেট আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। আমরা ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের জন্য একটি দিন পার করা অসম্ভব।
আমরা বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেটকে শুধু বিনদোনের জন্য ব্যবহার করি। অনেকে তো ইন্টারনেট বলতে শুধু সোশ্যাল ওয়েবসাইটগুলোকেই বুঝেন। আসলে কিন্তু তা নয়। ইন্টারনেট অনেক বড় একটি ব্যাপার। এবং এটি অনেক বড় একটি নেটওয়ার্ক। যার মাধ্যমে আমরা পুরো পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি মুহূর্তের মধ্যেই।
কিন্তু ইন্টারনেট শুধুই বিনদোনের জন্য নয়। ইন্টারনেট দিয়ে আমারা অনেক কাজ করতে পারি। ইন্টারনেটে কাজ করে অর্থও উপার্জন করতে পারি। আপনি হয়ত অনেক জায়গায় দেখে থাকবেন “৩-৫ মিনিট কাজ করেই টাকা উপার্জন করুন”। আসলে ইন্টারনেটে টাকা বা অর্থ উপার্জনের অনেক উপায় থাকলেও অর্থ উপার্জন অনেক কঠিন।
কোন কোন ক্ষেত্রে তা আশাকরি থেকেও কঠিন। কারণ আপনি যেখানে চাকরি করেন সেখানে আপনি শুধু আপনার দেশের বা আপনার আশেপাশের লোকদের সাথে প্রতিযোগিতা করেন। কিন্তু ইন্টারনেট যেহেতু সারা পৃথিবীকে এক করে দিয়েছে।
তাই ইন্টারনেটে কাজ করতে হলে আপনাকে সারা পৃথিবীর মানুষ এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তবেই আপনি কাজ করতে পারবেন। আবার ইন্টারনেটে বেশিরভাগ সময় অন্য দেশের মানুষ এর সাথে কাজ করতে হয়। তাই অন্য দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আপনাকে খুব ভাল ইংরেজি জানতে হবে।
তা না হলে আপনি কার সাথে যোগাযোগই করতে পারবেন না। আজকাল অনলাইন অনেকেই কাজ শিখিয়ে থাকেন। হয়ত আপনি তাদের থেকে কিছু শিখতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি নিজের থেকে নিজেকে অভিজ্ঞ করে না তোলেন তাহলে ইন্টারনেটে টিকে থাকা কঠিন।
তাই বলে কি ইন্টারনেট থেকে অর্থ উপার্জন সম্ভব না? অবশ্যই সম্ভব। তবে আপনাকে যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। তাই আপনাকে আগে দেখতে হবে আপনি আসলে কি করতে চান। কারণ অনলাইনে কাজ করতে চাইলে প্রথম প্রথম আপনার ভাল লাগবে। কিন্তু পরে কিছুদিন পর দেখবেন কাজ করতে আর ভাল লাগছে না।
কারণ অনলাইন এর কাজগুলো বেশিরভাগ সময় বাসায় কম্পিউটার এর সামনে বসে করতে হয়। তাই আপনাকে আগে নিজের পছন্দ বুঝতে হবে। আপনি অনলাইন এ কাজ করতে পারবেন কিনা তা আপনাকে বুঝতে হবে। এবং আপনি যদি ঠিক করেন কাজ করবেন, তারপরে আপনাকে একটি নিশ ঠিক করতে হবে। অর্থাৎ আপনি কি নিয়ে কাজ করতে চান তা বার করতে হবে।
এবার আপনি যেই নিশটি পছন্দ করলেন তা শেখা শুরু করে দিন। এই বিষয়ে যেখানে যা পান তা পরা শুরু করুন। কাজ শিখতে শুরু করুন। এই সম্পর্কে যারা অভিজ্ঞ তাদের সাথে কথা বলা শুরু করুন। এভাবে আপনি কাজ শিখতে শুরু করবেন। তারপরে নিজেকে ঐ কাজে অভিজ্ঞ করে তুলুন।
যদি পারেন তাহলে এই বিসয়ের উপর কোর্স করতে পারেন। তারপরে অনলাইন এ কাজ খোঁজা শুরু করেন। আপনার ক্লায়েন্ট কোন ধরনের কাজ ছায় সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিন। যদি সেগুলো না পারেন তাহলে তা শিখে নিন। তারপরে কাজ পাবার জন্য চেষ্টা করুন। অনলাইন এ কাজ করার প্রথম শর্ত হল ধৈর্য হারানো চলবে না।
আপনি কোন বিষয়ে কাজ করতে চান তাতে সাহায্য করার জন্য আপনি আপনাকে অনলাইনে কাজ করার জন্য ২০টি পদ্ধতি সম্পর্কে বলব।
আপনি যদি লেখা-লেখি করেন বা করতে ভালবাসেন তাহলে আপনি ইবুক লিখতে পারেন। ইবুক হল সাধারণ বই এর ডিজিটাল ভার্সন। সাধারণত বই ছেপে বিক্রি করা হয়। আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই বই বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও আপনি টিউটোরিয়াল বানিয়ে ইবুক হিসেবে প্রকাশ করতে পারেন।
এবং অনলাইনের বিভিন্ন সার্ভিস ব্যবহার করে সেই ইবুক বিক্রি করতে পারেন। আপনি আমাজন এর কিন্ডেল(Kindle) এর মাধ্যমে আপনার লেখা ইবুক বিক্রি করতে পারেন। তবে ইবুক লিখলেই হবে না। আপনাকে এর পিছনে অনেক সময় দিতে হবে। এই ইবুকের মার্কেটিং করতে হবে।
আপনি যদি মানুষকে গল্প শুনাতে ভালবাসেন। তাহলে আপনি এই গল্প বলে তা রেকর্ড করতে পারেন। এবং তা Audible নামের একটি ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন। অডিওবুক এর ব্যাপারটি কিছুটা নতুন হলেও মোটামুটি জনপ্রিয়। তাই আপনি এই কাজটি করতে পারেন।
আপনার যদি অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর উপরে অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনি অ্যাপ বানিয়ে তা থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর ব্যাপারটি সহজ মনে হলেও ব্যাপারটি কঠিন। কারণ শুধু অ্যাপ বানালেই হবে না। অ্যাপকে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে। অ্যাপের উপরে অনেক কাজ করতে হবে।
তবে ঠিকভাবে অ্যাপ তৈরি করতে পারলে সফলতা আসবেই। তবে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর জন্য আপনাকে প্রোগ্রামিং পারতে হবে। কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনের উপর আপনার ভাল ধারণা থাকতে হবে। এবং অবশ্যই শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। তবেই আপনি এক জন অ্যাপ ডেভেলপার হতে পারবেন।
কারণ সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেম প্রতিদিনই আপডেট হচ্ছে। সেই অনুযায়ী আপনাকেও আপডেট থাকতে হবে। এবং আপনার তৈরি অ্যাপকেও আপডেট করতে হবে। তাই আপনার যদি মনে হয় আপনি দীর্ঘ সময় এই নিয়ে কাজ করতে পারেন তবে আজি প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করে দিন।
আপনি নাম দেখে হয়ত বুঝতে পারছেন না। কিন্তু এটি হল অ্যামাজন এর একটি মাইক্রো-জব এর ওয়েবসাইট। এখানে আপনি ছোট ছোট কাজ করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এখানের কাজগুলো খুব ছোট। যেমন কোন লিঙ্ক থেকে ঘুরে আসা। বা মাইক্রোফোন দিয়ে কিছু শব্দ রেকর্ড করা।
এরকম ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে আপনি ০.১ থেকে ০.১০ ডলার পর্যন্ত পেতে পারেন। এই ওয়েবসাইটে অনেক কাজ আছে। তবে আপনি যদি অনেক বেশি টাকার কথা চিন্তা করেন তাহলে এখানে কাজ না করাই ভাল। কারণ এখানে কাজ করে আপনি খুব বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না।
ওয়েবসাইটটিতে কাজ শুরু করতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনার যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনে খুব ভাল দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি ফাইবারে কাজ করতে পারেন। এছাড়াও আপনি এই ওয়েবসাইটে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সহ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজ পেতে পারেন। আপনি যে কাজগুলো পারেন তা সেখানে দিয়ে দিতে পারেন।
এবং প্রতি কাজের বিনিময়ে আপনি ক্লায়েন্ট এর থেকে টাকা পাবেন। ফাইবার ওয়েবসাইটটি অনেক আগের এবং বিশ্বাসী একটি ওয়েবসাইট। আপনি চাইলে আজকে থেকেই সেখানে কাজ শুরু করতে পারেন। তবে আপনাকে কাজ জানতে হবে। তা নাহলে কেউ আপনাকে হায়ার করবে না। তাই আগে কাজ শিখুন।
ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আপওয়র্ক এর নাম মোটামুটি সবাই জানেন। ফ্রিলান্সিং এর জন্য আপওয়র্ক সবচেয়ে ভাল ওয়েবসাইট। আপনার কোন বিষয়ে ভাল দক্ষতা থাকতে আপনি খুব সহজেই এখানে কাজ পাবেন। কিন্তু আপনি যদি কাজই না জানেন তবে আপনি কাজ পাবেন না। আপনি যে বিষয় গুলতে অভিজ্ঞ তা আপনি আপনার আপওয়র্ক প্রোফাইলে দিয়ে রাখতে পারেন।
এবং ক্লায়েন্ট সেগুলো দেখে আপনাকে হায়ার করতে পারে। আবার আপনি কাজ খুঁজে খুঁজে কাজের জন্য ক্লায়েন্টকে ম্যাসেজ দিতে পারেন। তবে আপনি যেখানেই কাজ শুরু করুন আপনাকে প্রথমে অনেক কষ্ট করতে হবে। তবেই আপনি সফলতা পাবেন।
আপওয়র্ক এ যেতে এখানে ক্লিক করুন।
ইন্টারনেটের আয় করার অন্যতম পদ্ধতি হল ব্লগ তৈরি করা। এবং ব্লগ এর মাধ্যমে আয় করা। ব্লগ এর মাধ্যমে অনেক অর্থ উপার্জন সম্ভব। তবে আপনাকে অনেক কাজ করতে হবে ব্লগ নিয়ে। ব্লগ তৈরি করা ব্যাপার না। কিন্তু ব্লগ এ নিয়মিত ভিজিটর নিয়ে আসা অনেক কঠিন। তাই আপনাকে নিজের ভিজিটর তৈরি করে নিতে হবে। যারা সবসময় আপনার ব্লগ এ ঢুকবে লেখা পরার জন্য। আপনার যদি মনে হয় আপনি ব্লগ তৈরি করে সফলতা পেতে পারেন তাহলে আজকেই শুরু করে দিন।
অনেকেই বলে থাকেন যে ইমেইল মার্কেটিং কাজে করে না। তাদের জন্য বলছি আপনার যদি নিজের ইমেইল লিস্ট থাকে। অর্থাৎ আপনি যেই বিষয় নিয়ে কাজ করেন সেই বিষয়ে আগ্রহ আছে এমন মানুষের ইমেইল লিস্ট যদি আপনি তৈরি করতে পারেন তাহলে ইমেইল মার্কেটিং করে আপনি সফলতা পেতে পারেন।
এর জন্য আপনার প্রথমে একটি ব্লগ তৈরি করতে হবে। এবং ব্লগ এর নিচে ভিজিটরদের সাবসক্রাইব করতে বলতে হবে। যদি কেউ ইমেইল দিয়ে সাবসক্রাইব করে তাহলে সে আপনার লেখা পরতে চায়। এরকম ভাবে ইমেইল লিস্ট বানালে ইমেইল মার্কেটিং এ আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আপনার যদি একটি অনলাইন শপ থাকে এবং সেই অনলাইন সপ এর নিয়মিত ভিজিটর থাকে তাহলে আপনি অনলাইন শপের মাধ্যমে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে বায়ার এর বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। ভাল সার্ভিস দিতে হবে। তবে আপনার যদি নিজের অনলাইন শপ বা ওয়েবসাইট না থাকে তবে আপনি ফেসবুক পেজ ব্যবহার করেও বেচাকেনা করতে পারেন।
আপনার যদি ছবি তোলার শখ থাকে। এবং আপনি যদি ভাল ছবি তুলতে পারেন তাহলে আপনি চাইলেই আপনার তোলা ছবি বিক্রি করে উপার্জন করতে পারেন। ভাল এবং সুন্দর ছবি অনেক দামে বিক্রি হয়। এছাড়াও আপনি ছবি তৈরি করে তা বিক্রি করতে পারেন। যেমন ইনফোগ্রাফিক। ইনফোগ্রাফিক হল বিভিন্ন তথ্য সমৃদ্ধ ছবি। এই কাজে আপনি Shutterstock এর মত ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন। এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে অনেকেই ছবি বা ইনফোগ্রাফিক বিক্রি করে।
এই টিউনটির আগামী পর্বে আমি আরও ১০টি পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। এবং এই টিউনটি পরার জন্য সবাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।