ডেডিকেশন ছাড়া শুধু স্বপ্ন দেখা যায়, কিন্তু সফল হওয়া যায়না

ডেডিকেশন ছাড়া শুধু স্বপ্ন দেখা যায়, কিন্তু সফল হওয়া যায়না। ডেডিকেশনের সংজ্ঞা অনেকের জানা না থাকার কারণেই সফল হওয়ার স্বপ্ন অনেকের স্বপ্নই থেকে যায়। এ টিউনে ডেডিকেশনের সংজ্ঞাটা জানাবো।

dedication

ডেডিকেটেড স্টুডেন্ট

স্টুডেন্ট থাকা অবস্থাতে কোন স্টুডেন্ট দেখবেন, যে তার পড়ালেখার জন্য পছন্দের টিভি পোগ্রাম মিস দিচ্ছে, কিংবা খুব আনন্দ হবে জেনেও বন্ধুর বার্থ ডে পার্টিতে অংশগ্রহন করছেনা। শরীরটা খুব খারাপ, কিন্তু তারপরও রাত ৩টা পযন্ত জেগে পড়ালেখা করছে, আবার সকালেও উঠেছে ঘরের সবার আগে। পরীক্ষার টেনশনে অসুস্থ শরীরে মাত্র ৩ঘন্টা ঘুমিয়েছে। সেই স্টুডেন্ট লাইফে অন্যদের চাইতে ভাল ফলাফল করেছে। এ স্টুডেন্টের কাছেই ডেডিকেশনের সংজ্ঞা খুজে পাবেন।

ডেডিকেটেড চাকুরীজিবি

চাকুরির লাইফে যে ছেলেটি অফিস সময়ের পরও অফিসে সময় দিচ্ছে। বেতন হিসেব করে অফিসকে তার নির্ধারিত সময় বুঝিয়ে দিবে, এটি তার লক্ষ্য নয়, তার লক্ষ্য অফিসকে তার অকল্পনীয় টার্গেট পূরনে তার ভুমিকাকে অবিস্মরনীয় করে রাখা। আর সেই টার্গেট পূরনে তার নিজের অনেক ক্ষতি করেই, নিজের অনেক না পাওয়ার দুঃখকে ভুলে কিছু অর্জন করে দিতে কষ্ট করেছে। কারন সে জানে অফিস মনে না রাখুক, কিছু আছে যায়না। সেই টার্গেট পূরণ করতে গিয়ে তার যে চেষ্টা ছিলো, সেটাই তাকে দক্ষ করে তুলবে। আর এরাই একসময়ে চাকুরির লাইফে সব চাইতে চাহিদা সম্পন্ন হয় এবং বড় টিউনগুলো এরাই দখল করে। তার কাছে গিয়ে ডেডিকেশনের সংজ্ঞাটি খুজে পাবেন।

ডেডিকেটেড ফ্রিল্যান্সার

ফ্রিল্যান্সিং করার লক্ষ্যে নেমে দিন রাত কম্পিউটারে বসে বসে সময় দিচ্ছে যে ছেলেটি, তার দিকে একটু তাকান এবার। টাকা দিয়ে ট্রেনিং নিয়েছে। কিন্তু ট্রেইনার যেটুকু শিখেয়েছে, সেটুকুর উপরেই ভরসা না রেখে বাসাতে এসে সে সম্পর্কিত আরো অনেক রিসোর্স ঘেটে পড়াশোনা করতেই প্রতিদিন ২-৩ঘন্টা সময় ব্যয় করছে। বন্ধুরা সবাই বাইরে আড্ডা দিচ্ছে। অন্য সময় এ ছেলেটিও যায়। কিন্তু এখন যে তার ফ্রিল্যান্সিং হওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে। তাই এসব আড্ডার মজাকে নষ্ট করে সেই সময়টিতে নিজে কাজ প্রাকটিস করছে কম্পিউটারে। আড্ডার জন্য অন্যদিনের বরাদ্দ ৩ঘন্টা সময় গত ৩মাস ধরে এ ছেলেটি কাজের প্রাকটিসের জন্য ব্যায় করছে। এ ছেলেটি সব সময় ১২টার আগে ঘুমালেও এখন আর রাত ৪টার আগে ঘুমাতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেনা। সকালটাতেও ৮টার আগেই উঠতেই হচ্ছে। কারন ভার্সিটির ক্লাসতো আর বাদ দেওয়া যাবেনা। গত ৩মাসে কত রাত যে তার ল্যাপটপে মাথা রেখেই ঘুমাতে হয়েছে, তার হিসেব কে রেখেছে। অসুস্থ হয়ে একসময় বিছানাতে অনেক পড়ে থাকতে হয়েছে। শরীরের অবস্থা দেখে বাবা-মা কষ্ট করতে মানা করেছে। কিন্তু তার লক্ষ্য যে, অনেক বড় হতে হবে। সে তার পরিশ্রম কোনভাবেই কমায়নি। আজ সেই ছেলেটি অনেক সফল ফ্রিল্যান্সার। সেই ফ্রিল্যান্সারের কাছে যান, তার কাছেই ডেডিকেশনের সংজ্ঞাটি খুজে পাবেন।

আমি কি ডেডিকেটেড?

dedication1

পরিশেষে আমার ব্যাপারে বলি, তাহলে আপনারাই বিবেচনা করে নিবেন, কতটুকু আমি ডেডিকেটেড।

স্টুডেন্ট লাইফে খুব বেশি ডেডিকেটেড ছিলামনা। ফ্রিল্যান্সিং শিখার সময় কিরকম পরিশ্রম করেছি, সেটার ব্যপারে একটি ঘটনা বলি। আমি কোথাও কখনও ট্রেনিং নেইনি। এমনকি কোন ব্যক্তি হতেও সহযোগীতা কিংবা পরামর্শ নেইনি। অমানুষিক পরিশ্রমের কারনে একটা সময় এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছি যে, আমার কাছে মনে হয়েছে, সারা জীবনের জন্য আমি পঙ্গু হয়ে গেছি। একটানা ৩মাস ঘরের বিছানাতে শুয়ে থাকতে হয়েছে। এমনকি ঘরের ভিতরেও নড়াচড়া করতে ৩জনের কাধে ভর করে চলাচল করতে হয়েছে। সেই কষ্টকর পরিশ্রমের ফলাফল হচ্ছে আজকের অবস্থান।

চাকুরি লাইফের কথাও বলি, আমি যখন যে প্রতিষ্ঠানেই ছিলাম, সেই প্রত্যেক অফিসেই রাতেও ঘুমিয়েছি। অফিসের কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং কাজকেও গ্রহন করেছি। দায়িত্ব হিসেবে নয়, চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি। সবসময় ১৮ঘন্টা সাপোর্ট দিয়েছি। তাতে অনেক কিছু হারিয়েছি। অনেক ইনকাম করার সময়টি আর হয়নি। এমনকি, আমার বাচ্চা হওয়ার পর মাত্র ৪দিন পর বাচ্চাকে বাসাতে রেখে একটানা ১৭দিন অফিসে কাটিয়েছি। অফিসে ৪টা প্লাস্টিকের চেয়ার বিছিয়ে, সেখানে শুয়ে ঘুমিয়েছি। এখনও সেই রকম পরিশ্রম করে যাচ্ছি। টাকার জন্য নয়। এরকম পরিশ্রম না করলে অফিস বেতনের চাইতে বেশি ইনকাম পকেটে থাকবে। যে পরিমান এবং যেরকম কঠিন অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন হচ্ছে, যার জন্য বাজারে অন্যদের চাইতে আমার যোগ্যতাকেই যে কোন প্রতিষ্ঠান কিনে নিতে চায়।

৪০বছর পযন্ত এরকম ডেডিকেশন নিয়েই কাজ করে যেতে চাই। তাতে বিশ্বাস করি, এখন যেটুকু আমার ক্যারিয়ারের ব্যাপারে নিশ্চয়তা আছে, ৪০বছর পর অর্থনীতির নিশ্চয়তা আরো বেশি থাকবে এবং বাজারে আমার চাহিদা আরো বাড়বেই। আর সেজন্যই আরাম দায়ক কাজ নয়, চ্যালেঞ্জের কাজগুলোর দায়িত্ব আমি নিয়ে থাকি।

আপনার ক্যারিয়ার কিরকম হবে, সেটি নির্ভর করে, আপনি কতটুকু ডেডিকেটেড হবেন, সেটির উত্তরের উপর। সুতরাং আজকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন।

Level 0

আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 102 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

সত্যি এভাবে কখনো ভেবে দেখেনি। তবে এভাবে ভেবে যদি ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করে তবে সফল হবার চান্স বেশী থাকবে।