গত সপ্তাহে ফরেক্স মার্কেটে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মূল্য পতন।আপনি যদি একটু লক্ষ্য করেন দেখবেন, অভারল ডলারের অবস্থা কিন্তু এতটা খারাপ ছিল না অন্য মেজর কারেন্সির বিপরীতে, যতটা খারাপ হয়েছিলো ইয়েনের বিপরীতে। ইউরো, সুইস ফ্র্যাঙ্ক, পাউন্ড মোটামুটি সব কারেন্সির বিপরীতেই মোটামুটি অবস্থানেই ছিল। পাউন্ডের বিপরীতেতো বেশ শক্তিশালি অবস্থানেই দেখা গেছে ডলারকে এমনকি কমোডিটি কারেন্সিগুলির বিপরীতেও। আসলে গত সপ্তাহে ইনভেস্টরদের অনেক বড় বড় ইনভেস্ট ছিল সেফ হেভেন খ্যাত জাপানি ইয়েনে।এটা একটা বড় কারণ জাপানি ইয়েনের শক্তিশালী হয়ে উঠা ডলারের বিপরীতে। জাপানি প্রধান্মন্ত্রি সিঞ্জে আবেও ছিল পসিটিভ এবং জাপানের অর্থমন্ত্রী ও এই রেট নিয়ে নেগেটিভ কোন টিউমেন্ট করেনি শুধু বলেছিল ১০০.০০ পর্যন্ত রেট আসলেও তাদের কোন সমস্যা হবে না কিন্তু তিনি ইন্টারভেনের ও আভাস দিয়েছিলেন। এই জন্যই মার্কেট ১০৭ থেকে ১০৮.৫০ তে চলে গিয়েছিল তার বক্তব্বের পরপরি।
আগামী সপ্তাহে চীনের trade balance এবং first-quarter GDP রিপোর্ট রিলিস করা হবে। আমার মনে হয় মার্কেটে এই রিপোর্ট দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে কমোডিটি কারেন্সি গুলির বিপরীতে। চীনের রপ্তানি হয়তো কিছুটা বাড়লেও GDP যে খুব মন্থর সেটা স্পষ্ট সাম্প্রতিক তাদের রিলিস হওয়া ডাটা দেখেলেই বুঝা যায়। চীনের রিপোর্ট ডলারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বৃহস্পতিবার ইয়েলেনও তার কথায় বলে ছিল চীনের সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে চীনের আগামী সপ্তাহের রিপোর্ট ফরেক্স মার্কেটে একটা বড় ধরনের সারপ্রাইস দিতে পারে ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য। যেহুতু তাদের গত সপ্তাহের industrial production এবং retail sales টা বেশ ভালোই ছিল। যে কারনে aud,nzd এবং cad ডলারের বিপরীতে কিছু সময়ের জন্য হালে পানিও পেয়েছিলো। কিন্তু যদি রিপোর্ট খারাপ আসে তবে aud এবং cad ডলারের বিপরীতে হিউজ ক্র্যাস করতে পারে বলে মনে হয়।
.
আমার মত যারা usd/jpy ট্রেড করেন তাদের জন্য আগামী সপ্তাহটা ভালো একটা মুভমেন্ট আশা করতে পারেন। সপ্তাহের শুরুতেই ডলারের ফেড এনাউন্সমেন্ট আছে। এটা কতটুকু ইমপ্যাক্ট করতে পারে? আমার মনে হয় ডলার খুব একটা সুবিধা নিতে পারবে না ইয়েনের বিপরীতে। কারণ ফেড এর পলিসি অনেকটা এখন ডিফেন্সিভ হয়ে গেছে। তাই তার ইমপ্যাক্টটাও সেই রকমি হবে বলে মনে হয়। আগামী সপ্তাহে ডলারের উল্লেখযোগ্য নিউজগুলির মধ্যে Retail sales, consumer prices, Beige Book report, Empire State survey এবং University of Michigan Consumer Sentiment index রিপোর্টগুলি অন্যতম। যদিও এই বছর তারা রেট বাড়াতে চেয়েছিলও দুই বার কিন্তু আপাতত এপ্রিলে যে রেট বাড়াবে না এটা এক প্রকার নিশ্চিত, গত সপ্তাহের ইয়েলেনের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। যদিও তিনি সরাসরি কিছু বলে নাই কিন্তু কাছাকাছি সময়ে যে রেট বাড়াবে না এই ব্যাপারে তিনি পরোক্ষ ভাবেই ইংগিত দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম পক্ষে আরও দুটি মাস retail sales এবং wage growth কেমন হয় সেটা নজরে রাখবে। তাই জুন মাস হতে পারে রেট বাড়ানোর মাস। আগামী সপ্তাহটা ডলারের অনেক গুলি নিউজ রিলিস হবে, কিন্তু ডলার কতটুকু পারবে অন্য সব মেজর কারেন্সিগুলির বিপরীতে গেইন করতে সেটাই এখন দেখার বিষয়। যেহুতু অনেকগুলি নিউজ আছে, কিছু হলেও হতে পারে। দেখা যাক কি ঘটে ডলারের কপালে। তবে সুবিধা করতে পারবে না বলেই আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি।
আগামী সপ্তাহে Bank of England এবং Bank of Canada’s monetary policy meetings আছে। আমরাতো গত সপ্তাহের ঘটনা সব দেখলাম।ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের অসহায় আত্মসমর্পণ। রেট প্রায় ১.৪০০০ এর কাছাকাছি। গত সপ্তাহে বেশীরভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্যই ছিল বেশী নেগেটিভ এবং কম পজিটিভ টাইপের। এবং শুক্রবার দুপুরের পাউন্ডের industrial production ড্রপের রিপোর্ট রিলিস হইলো। এমনকি গত মাসেই Bank of England থেকে সাবধান করে দিয়েছিলো brexit এর ব্যাপারে। আরও যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন তাদের monetary-policy statement থেকেও বেশ ভালো ভাবেই বুঝা যাচ্ছে তাদের অর্থনৈতিক দৈন দশার অবস্থা। খরচ বেড়ে গেছে সেই তুলনায় কমে গেছে বেতন second-round CPI খারাপ আসাতে। খরচ বারার পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতিও বেড়েগেছে অনেকাংশে। আপাতত ২৩শে জুনের আগে পাউন্ডের কোন আশা আমি দেখি না যদি না ডলারের কোন খুব বেশী খারাপ সংবাদ না আসে।
গত সপ্তাহে Bank of Canada এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো তারা তাদের কারেন্সির বর্তমান রেট নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। এবং আমরা দেখলাম তাদের ব্যাংক রেটও অপরিবর্তিত রাখতে। Bank of Canada তাদের সর্বশেষ Monetary Policy তে বলেছিল মূলত তেলের দামের সাথেই তাদের কারেন্সিকে এভারেজ করলে CAD এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। আমরাও জানি CAD মূলত চলেও তেলের দামের সাথে সাথে। কিন্তু তেলের দাম কি আসলেই স্বাভাবিক অবস্থায়া আছে? আমি মনে করি মোটেই না। তেলের দাম জুনের আগেই হয়তো কিছুটা আপ হবে। সেই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে ডলারের বিপরীতে CAD কিছুটা শক্তিশালী হতে পারে। যাইহোক, ইকনোমিক ডাটাগুলি লক্ষ্য করলে দেখা যায় ভালো মন্দে মিশিয়েই ক্যানাডার গত রিপোর্ট গুলি এসেছিলো।IVEY PMI রিপোর্ট অনুযায়ী manufacturing-activity কিছুটা ড্রপ করলেও employment রিপোর্টটা বেশ ভালোই ছিল। মার্চ মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৪০ হাজার নতুন জব ক্রিয়েট হয়েছিলো। সবগুলি প্রায় ফুল-টাইম জব। গত ৫ মাসে এটাই প্রায় সর্বচ্চো। বর্তমান unemployment rate ৭.১%। যেটাকে অর্থনীতিবিদরা ক্যানাডার জন্য শুভ লক্ষন বলেই মনে করতেছে।participation rate টাও মুটামুটি ভালো অবস্থাতেই আছে। সবদিকে বিবেচনা করলে ক্যানাডিয়ান ডলার, অ্যামেরিকান ডলারের বিপরীতে আগামী সপ্তাহে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারে বলে আমি মনে করি।
আগামী সপ্তাহে ইউরোজোনের তেমন বড় কোন নিউজ নেই। গত সপ্তাহে ECB প্রেসিডেন্ট Draghi মুলতো ডিপ্লোম্যাটিক কতা বলাতে মার্কেট তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কিছু দেখা যায় নাই। Draghi অবশ্য তার বক্তব্বে বলেছিল তারা আরও সময় চায় কারণ কিছু দিন আগেই মাত্র রেট কাট হয়েছে এবং মার্কেট আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চায় এর ইমপ্যাক্ট দেখে তারপর ইউরোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে। ইউরোর ট্রেড ব্যালেন্স রিপোর্টটা ভালো আসাতে তাদের এক্সপোর্ট ও বেড়ে গেছে এটা একটা ভালো দিক ইউরোর জন্য। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এখনো বিশ্বাস করি ইউরো এখনো বাই মোডেই আছে। এবং এটা ১.১৪৮০/৫০ পর্যন্ত যেতে পারে। আগামী সপ্তাহে ইউরোর উল্লেখযোগ্য নিউজগুলির মধ্যে আছে industrial production, consumer prices এবং trade data। তবে আগামী সপ্তাহে যেহুতু ডলারের অনেকগুলি নিউজ আছে তাহলে ইউরোকে ফেলে দিলেও দিতে পারে। কারণ ইউরোর ডিফেন্ড করার মত তেমন নিউজ আগামী সপ্তাহে নেই। তারপরও ডলার কি অবস্থায় আছে সেটাও আমাদের জানা। দেখাযাক কি হয়।
আগামী সপ্তাহের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট চীনের ডাটা রিলিস। এর উপরেই আসলে Australian এবং New Zealand ডলারের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার labor-market numbers রিপোর্ট রিলিস হবে। Aud এর জন্য এই মাসটাতে আসলে রিপোর্ট কেমন আসবে সেটা হিসাব কিছুটা মুশকিলই। একদিকে তাদের নতুন ক্রিয়েট হয়েছে, অন্যদিকে manufacturing PMI ডাটা ড্রপ করেছে। আমার দৃষ্টিতে AUD/USD এখনো টপ রেটেই আছে এখান থেকে কারেকশন করে কিছুদুর পরতে পারে অথবা এখান থেকেই পুলব্যাক ও করতে পারে। তবে আগামী সপ্তাহে Australian এবং New Zealand ডলারের মুভমেন্টটা মূলত চীনের ডাটার উপরেই নির্ভর করবে বলে আমি মনে করি।
নিজ দায়িত্তে ট্রেড করুন, ফরেক্স শিখুন, জানুন, বুঝুন এবং ধৈর্য ধরে মার্কেট দেখে ট্রেড করুন। টাকা আপনার লস হলে আপনারই হবে। একাউন্টে ব্যালেন্স থাকলে ফরেক্স মার্কেট আপনাকে সুযোগ দিবেই।
ফরেক্স মার্কেটের আপডেট নিউজ পেতে ভিজিট করুন-we-freelancer
আমি omor009। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 13 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।