অনলাইন হতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে যে আয় করা হয়, সেটি গ্রহণ করার বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম রয়েছে। সকল ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাইটে হয়ত সবগুলোর মাধ্যমে ডলার গ্রহণ করা সম্ভব হয়না। মার্কেটপ্লেসগুলোর পেমেন্ট অপশনে গেলে জানা যায়, সেই সাইটগুলো কোন কোন পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে। আবার সব পেমেন্ট মাধ্যম সকল দেশে প্রচলিত না। আজকের পর্বে সকল অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যমগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
এর আগের পর্বগুলো যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য আগের পর্বগুলোর লিংক দিচ্ছি।
১ম পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা
২য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো
৩য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে করনীয়
৪র্থ পর্ব: চাকুরি নাকি ফ্রিল্যান্সিং
৫ম পর্ব: বিখ্যাত মার্কেটপ্লেসের পরিচিতি
৬ষ্ঠ পর্ব: মার্কেটপ্লেসের বাইরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পাওয়ার উপায়
পেপাল বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় এবং অনলাইনে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত একটি মাধ্যম। বিশ্বের প্রায় সকল মার্কেটপ্লেস, অনলাইন স্টোর কিংবা যেখানে অনলাইনে অর্থ লেনদেনের ব্যাপার আছে, সবজায়গাতেই পেপাল একটি গ্রহনযোগ্য একটি উপায়। বাংলাদেশসহ আরো অনেকগুলো স্বল্পন্নোনত দেশ এবং অনুন্নত দেশগুলোতে পেপালের সার্ভিস নাই। পেপাল দিয়ে অনলাইনে যেকোন কিছু কেনাকাটা করা যায়, যে কোন সার্ভিসের জন্য পেমেন্ট করা যায়। যেকোন জায়গার লেনদেনের বিনিময়ে পেপাল একটা নির্দিষ্ট পরিমান সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়। কোন দেশের মূদ্রা ব্যবহার হচ্ছে, কিভাবে অর্থের লেনদেন হচ্ছে প্রেরক ও প্রাপকের দেশ, পাঠানো অর্থের পরিমান ও প্রাপকের একাউন্টের ধরণের ওপরে ফী বা খরচ নির্ভর করে। ক্রেতা ও বিক্রেতা ভিন্ন মূদ্রা ব্যবহার করেও পেপ্যাল ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করলে পেপ্যাল আলাদা অর্থ গ্রহণ করতে পারে।
পেপালে রয়েছে দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট: ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং বিজনেস অ্যাকাউন্ট। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে মাসিক অনেক কম পরিমাণ অর্থ লেনদেন করা যায় কিন্তু ব্যবসায়িক কাজে বিশাল বড় কোন পরিমাণ অর্থ লেনদেনের জন্য অবশ্যই ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। পেপাল নিজে কোন ব্যাংক না, কিন্তু এটাকে ভার্চুয়াল ব্যাংক বলা যায়। পেপাল যেদেশ থেকে খোলা হয়েছে, সে দেশের যেকোন ব্যাংকের মাধ্যমে পেপালের ডলার উঠানো যায়।
পেপাল ওয়েবসাইটের লিংক: http://www.paypal.com
পেপ্যালের সার্ভিস বাংলাদেশে না থাকার কারনে এদেশের ফ্রিল্যান্সারদের অনলাইন হতে আয়ের অর্থ উত্তোলন করা অনেক বেশি কষ্টকর ছিল। পাইওনিয়ার সে সমস্যাটা দূর করে দিয়েছে অনেকটাই। বর্তমানে প্রায় সকল মার্কেটপ্লেসেই পেপালের বিকল্প হিসেবে পাইওনিয়ার ব্যবহার হচ্ছে।
পাইওনিয়ার হল বিশ্বব্যাপী একটি ফ্রী মাস্টারকার্ড প্রদান কারি প্রতিষ্ঠান। এর প্রিপেইড ডেবিট মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পেমেন্ট গ্রহন করতে পারবেন কিংবা পেমেন্ট করতে পারবেন।
পাইওনিয়ার এর মাধ্যমে আপনি যেসব সুবিধা পাবেনঃ
একটি বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য ফ্রী মাস্টারকার্ড পাবেন ও আমেরিকার একটি ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাবেন। পাইওনিয়ারের মাস্টার কার্ড দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মাস্টারকার্ড সাপোর্ট করে এরকম এটিএস বুথ থেকে ডলার উত্তোলন করা সম্ভব হয়। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও সম্ভব হয়। তবে প্রতিবার এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে ৩ ডলার খরচ করতে হয়। আরেকটি মজার সুবিধা হচ্ছে, অন্য কারও পাইওনিয়ার অ্যাকাউন্ট থাকলে সেখানের রেফারাল লিংক ব্যবহার করে অন্য আরেকজন যদি নতুন অ্যাকাউন্ট করেম তাহলে নতুন অ্যাকাউন্টধারী ১ম ১০০ডলার কার্ডে প্রবেশ করা মাত্র রেফারাল লিংকের অ্যাকাউন্টে এবং নতুন অ্যাকাউন্টধারীর অ্যাকাউন্টে ২৫ডলার করে জমা হয়। এ পদ্ধতিতেও অনলাইনে কিছু ইনকাম করা সম্ভব হয়।
পাইওনিয়ারের লিংক: payoneer.com
তবে পাইওনিয়ারের অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আমার রেফারাল লিংকটা ব্যবহার করার অনুরোধ রইল। এত সেবা করি আপনাদের, আমার এটুকু সেবা চাইতেই পারি।
রেফারাল লিংকের জন্য ক্লিক করুন। এ লিংকে গিয়ে নিজে অ্যাকাউন্ট খুলুন। তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টে ২৫ডলার বোনাস পাবেন। আমিও কিছু বোনাস পাব।
নেটলার মাস্টার কার্ড কে পাইওনিয়ারের ভালো বিকল্প হিসেবে ধরা যায়। পাইওনিয়ারের মত আপনি সব কিছুই এটা দিয়ে করতে পারবেন। এটার ভারচুয়াল মাস্টার কার্ডে এর সুবিধা হল এতে আপনার কোন মাসিক কিংবা বার্ষিক ফি নেই।
তবে ভেরিফাইড করতে ১০-২০ ডলার কার্ডে আপলোড করতে হয়।
প্রথমে http://www.neteller.com এ গিয়ে একটি ফ্রী অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন (অতিরিক্ত FX Fee পরিহার করার জন্য অ্যাকাউন্ট কারেন্সী USD কিংবা GBP সিলেক্ট করুন)। অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় যত্ন করে ইমেইল, পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি কোয়েশ্চন এবং উত্তর সমূহ, নেটেলার সিকিউর আই.ডি, এবং অন্যান্য তথ্য নিরাপদ স্থানে নোট করে রাখুন। অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে এবার Login করুন এবং Login করার পর স্ক্রীনের বাম পাশের 'Net+ Cards' সেকশনে ক্লীক করুন, একটি পেজ ওপেন হবে যেখান থেকে আপনি Net+ MasterCard এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ধাপে আপনি দুইটি অপশন পাবেন, একটি হলো 'Net+ Plastic' এবং অন্যটি 'Net+ Virtual'। 'Net+ Virtual' কার্ডটি ফ্রী, এবং 'Add a card' বাটনে ক্লীক করে সাথে সাথেই তৈরি করে নিতে পারবেন। কিন্তু প্লাস্টিক কার্ডটির জন্য আপনার অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ১৩ ডলার ব্যালান্স থাকতে হবে। আর সব ঠিক থাকলে তিন দিনের ভিতর আপনার আপ্লিকেশন এপ্রুভ হবে। এপ্রুভড মেসেজ আপনার মেইল এ পাবেন। নেটলার মাস্টার কার্ড আসতে যত দিন লাগবে তত দিন আপনি আপনার প্রয়জনীয় কাজ চালাতে পারবেন নেটলার ভারচুয়াল কার্ড এর মাধ্যমে। এটা কোনো প্লাস্টিক কার্ড না। যে সব ওয়েব সাইট এ মাস্টার কার্ড এর সুবিধা আছে সেসব সাইট এ আপনি এটা দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। ভারচুয়াল কার্ড এর নাম্বার পেতে আপনার সিকিউরড আইডি লাগবে।
স্ক্রিল হল লন্ডনভিত্তিক একটি কোম্পানি যা লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা দিয়ে থাকে। স্ক্রিল শতভাগ নিরাপদ একটি সিস্টেম তাই নিরাপত্তার কথা না ভাবলেও চলবে। স্ক্রিল এ ভিআইপি অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। স্ক্রিল ভিআইপি অ্যাকাউন্টে যত ইচ্ছা তত ট্রানজেকশন করা যায় এবং ট্রানজেকশন ফি খুব অল্প এবং আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র একটা স্ক্রিল অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন।
সাইন আপ করার সময় সঠিক নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে এবং সাইন আপ করার পর ইমেইল ভেরিফাই করতে হবে। ইমেইল ভেরিফাই করার পর কিছুদিনের মধ্যে স্ক্রিল থেকে গ্রাহকের ঠিকানা অনুযায়ী একটা চিঠি আসবে। এই চিঠিতে একটা পিনকোড থাকবে ঐ কোডটি অ্যাকাউন্টে দিলে স্ক্রিল অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হয়ে যাবে।
এরপর স্ক্রিল এ অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হয়ে গেলে " স্ক্রিল প্রিপেইড মাষ্টারকার্ড" এর জন্য আবেদন করা যাবে। " স্ক্রিল প্রিপেইড মাষ্টারকার্ড" এর জন্য প্রতি বছর ১২.৮৫ ডলার চার্জ কাটা হবে এবং প্রতিবার এটিএম বুথ দিয়ে টাকা উঠানোর জন্য ২.৩১ ডলার করে চার্জ কাটবে।
স্ক্রীলের ওয়েবসাইট লিংক: http://www.skrill.com
পাইজা আর্থিক লেনদেন (অনলাইন) সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা দিয়ে থাকে। আগে এলার্টপে নামে পরিচিত ছিল। খুব সহজেই অনলাইন থেকে আয় করা অর্থ পাইজা কার্ড দিয়ে উত্তোলন করা যায়।
পাইজা তে দুটি ক্যাটাগরির আছে ; প্রথমটি হচ্ছে পারসোনাল এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিজনেস। যেকোনো ক্যাটাগরিতে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। পারসোনাল একাউন্টে কোন খরচ নেই কিন্তু বিজনেস অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে যদিও একটু খরচ আছে এবং অ্যাকাউন্ট খোলার সময় সঠিক নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে।
সাইন আপ করার পর ইমেইল ভেরিফাই করতে হবে এবং অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য দুটি পরিচয়পত্রের প্রমাণ দিতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আপনার ঠিকানা প্রমানের জন্য একটি গ্যাস / বিদ্যুৎ / টেলিফোন বিল এর কপি। এই দুটি থেকে দুটি কপি স্কেন করে অ্যাকাউন্টে আপলোড করতে হবে তাতে অ্যাকাউন্ট সহজেই ভেরিফাই হয়ে যাবে। আর অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হয়ে গেলে কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে। পাইজা কার্ড দিয়ে ATM বুথ থেকে টাকা উঠানো যায়। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করা যায়।
পাইজার ওয়েবসাইট লিংক: http://www.payza.com
ওয়্যার ট্রান্সফার মানে হচ্ছে লোকাল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা লেনদেন। অনেক মার্কেটেপ্লেস এ সুযোগটা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে যে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকাটা গ্রহণ করবে, সেই ব্যাংকের নিজস্ব সুইফট কোডটা ব্যবহার করতে হয়। প্রতিটা ব্যাংকের নিজস্ব সুইফট কোড রয়েছে। এ কোড সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করলে কিংবা সেই ব্যাংকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া যায়। ওয়্যার ট্রান্সফারে সার্ভিস চার্জ একটু বেশি কাটে।
বহুল প্রচলিত পেমেন্ট মাধ্যমগুলো নিয়ে উপরে আলোচনা করলাম। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ছোট ছোট মাধ্যম রয়েছে, যা খুব বেশি ব্যবহৃত হয়না। সেজন্য সেগুলোকে আলোচনাতে আর নিয়ে আসলাম না।
আমার এ লেথাটি ১ম প্রকাশ হয়েছে দৈনিক যুগান্তরের বৃহস্পতিবারের ”চাকুরির খোজে” পাতাতে।
ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক যেকোন সহযোগিতার জন্য আমার পেজে এসে প্রশ্ন করতে পারেন।
পেজ লিংক: https://www.facebook.com/ekram07
আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 102 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/
thanks a lot…