অনলাইনে উপার্জনের যত মাধ্যম রয়েছে, তার মধ্যে ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ ক্ষেত্র। মূলত বিশ্বের ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রায় সবাই ক্রমেই ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সবাই চাচ্ছে, তার একটি ভার্চুয়াল ঠিকানা হোক। ফলে এ সম্পর্কিত কাজের জন্য ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে যত ধরনের কাজ রয়েছে, তার মধ্যে ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজই সর্বাধিক। ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছে আজকাল অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। আর ওয়েব ডেভেলপারদের মধ্যে রয়েছে অনেক ধরন। প্রতিটি ওয়েব ডেভেলপারেরই নির্দিষ্ট কিছু কারিগরি ও সৃজনশীল দক্ষতা থাকা দরকার। যদি ওয়েব গ্রাফিক্স, কমপিউটার প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইন কিংবা কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা উপভোগ করে থাকেন, তাহলে একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তাভাবনা করতে পারেন। অনেক ওয়েব ডেভেলপারই পেশাগত জীবনে ইতিবাচক কিছু যোগ করার জন্য ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্টিফিকেশন করে থাকেন। কিন্তু এসব সার্টিফিকেশন করার আগে আপনাকে জানতে হবে, কোন সার্টিফিকেশন কী কাজে লাগে এবং কোনটি আপনার জন্য দরকার। এ লেখায় একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার বিভিন্ন ধরন এবং ওয়েব সার্টিফিকেশনের খুঁটিনাটি কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
উপার্জনের ক্ষেত্র: একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার/ডেভেলপারের কাজের ক্ষেত্র অনলাইনে এতটাই বিস্তৃত যে, তারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিশাল বাজেটের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে, ব্লগিং করে উপার্জন করতে পারে, বিভিন্ন অনলাইন শপিং মার্কেটে নিজের তৈরি করা ডিজাইন জমা দিয়ে উপার্জন করতে পারে। এ ধরনের বহুমুখী উপার্জনের রাস্তা খুলে যায় একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার/ডেভেলপারের জন্য।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ার : ইন্টারনেট ক্যারিয়ার বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ারের অনেক দিকের মধ্যে কনটেন্ট রাইটার, ওয়েব ডিজাইনার, ওয়েব গ্রাফিক্স আর্টিস্ট, ওয়েব প্রোগ্রামার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
উল্লিখিত এসব ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় সব বিষয় নিয়ে এখানে কিছু আলোচনা করা হলো :
কনটেন্ট রাইটার : ওয়েবসাইটগুলোর দরকার তথ্যসমৃদ্ধ টেক্সট। কনটেন্ট লেখকদের মূলত নিয়োগ দেয়া হয় বিভিন্ন ওয়েবসাইটের জন্য নিবন্ধ, মার্কেটিং টেক্সট বা অন্যান্য ধরনের তথ্য তৈরি করার জন্য। এই পদের জন্য সাধারণত প্রয়োজন হয় ইন্টারনেট টুলস, ওয়েবসাইট, ব্রাউজার, টেম্পলেট ইত্যাদি নিয়ে কাজ করার সামর্থ্য এবং এইচটিএমএল সম্পর্কিত কিছু জ্ঞান। একই সাথে দরকার সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) কৌশল সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান। ওয়েবে তাজা তথ্যের উপযোগিতার কারণে একজন কনটেন্ট লেখকের এটা জানা জরুরি, কীভাবে তাড়াতাড়ি কনটেন্ট তৈরি করা যায়। একই সাথে তাকে পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি এবং পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট টুল সম্পর্কে তার ধারণা থাকা দরকার। এ ধরনের কাজে ভালো বানান এবং ব্যাকরণের সাথে লেখালেখি করার যোগ্যতা থাকা জরুরি।
ওয়েব ডিজাইনার : ওয়েব ডিজাইনাররা সব সময়ই একটি ওয়েবসাইটের সৌন্দর্য নিয়ে সচেতন থাকেন। ওয়েব ডিজাইনারের চাকরির জন্য সাধারণত সৃজনশীল ও কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন লোকের প্রয়োজন হয়। তাদেরকে বুঝতে হয়, কী কী বিষয় একটি ওয়েবসাইটকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে এবং কী কী বিষয় একে ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তোলে। এইচটিএমএল এবং সিএসএসের গভীর জ্ঞান এবং এসইও কৌশল সম্পর্কিত ধারণা থাকা একজন ডিজাইনারের জন্য দরকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাভাস্ক্রিপ্ট এবং ফ্ল্যাশের অভিজ্ঞতা সাহায্যকারী হয়। ওয়েব ডিজাইনের প্রকারভেদ: ওয়েব ডিজাইনকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। স্ট্যাটিক ও ডায়নামিক। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে প্রয়োজন হয় Html, css, javascript, photoshop প্রভৃতি আর ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরিতে প্রয়োজন হয় Php/mysql প্রভৃতি। ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরিতে বর্তমানে Cms (Content Managment System) ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। Joomla I WordPress দুটি শক্তিশালী Cms, যার চাহিদা বর্তমানে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি। কারণ ওয়েবের ডায়নামিক ফিচারগুলো এতে বিল্ট-ইন থাকে, অনেকটা রেডিমেড। চাহিদার দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে Php/mysql, এর পরে রয়েছে Html, css, javascript, photoshop-এর অবস্থান। শুধু স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরি করা জানলেই অনলাইনে মাসে ৫০০ থেকে ১ হাজার ডলার উপার্জন করা সম্ভব। শর্ত হচ্ছে, আপনার সাইট তৈরির দক্ষতা যেন হয় প্রফেশনাল মানের।
ডায়নামিক ওয়েবসাইট, যেমন : Php/mysql, Joomla, WordPress ইত্যাদিতে দক্ষ হলে মাসে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার এমনকি ৫০ হাজার ডলার আয় করাও সম্ভব। অর্থাত্ যে পরিমাণ দক্ষ ও ফ্রিল্যান্সিংয়ে যে পরিমাণ অভিজ্ঞতা হবে, আয় সে অনুযায়ী বাড়তে থাকবে। ওয়েব গ্রাফিক্স আর্টিস্ট : ওয়েব গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করার সময় ব্যবহার হওয়া ছবিগুলো সাধারণত সরাসরি মুক্তহসেত্ম অংকন প্রক্রিয়ায় কিংবা বিভিন্ন ফটো এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাওয়া যায়। ওয়েব গ্রাফিক্স আর্টিস্টরা ইউজার ইন্টারফেসের উপাদান যেমন- আইকন, লোগো, বাটন ইত্যাদিও ডিজাইন করে থাকেন। যেসব ব্যক্তি এ পেশায় আসেন তাদেরকে সাধারণত শিল্পীসুলভ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং সুবিন্যস্ত মনোভাবসম্পন্ন হতে হয়। কিভাবে ইমেজগুলো ওয়েবসাইটে দ্রুত লোড হতে পারে এ বিষয়টি তাদেরকে বুঝতে হয়। চাকরির অংশ হিসেবে ওয়েব গ্রাফিক্স আর্টিস্টের টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ওয়েব ডিজাইন ও এসইও কৌশলের ধারণা থাকা ভালো।
ওয়েব প্রোগ্রামার : একজন ওয়েব প্রোগ্রামার একটি ওয়েবসাইটের ফাংশনালিটি নিয়ে কাজ করে থাকেন। যেখানে একজন ওয়েব ডিজাইনার একটি সাইটের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, সেখানে একজন ওয়েব প্রোগ্রামার পরস্পর প্রতিক্রিয়াশীল (ইন্টারঅ্যাকটিভ) বিষয়বস্ত্ত যেমন- রিপোর্ট তৈরি, হিসেবনিকেশ, ই-কমার্স ট্রানজ্যাকশন, নিরাপত্তা কর্ম ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যেসব ব্যক্তি এ পেশাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে চান তাদেরকে কমপিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন- জাভা, সি/সি++, পার্ল, পিএইচপি, ভিজ্যুয়াল বেসিক ইত্যাদি সম্পর্কে কারিগরি জ্ঞান রাখতে হয়। ওয়েব প্রোগ্রামারদের সব সময়ই যুক্তিগত (Logic) দক্ষতা থাকা উচিত। তাদেরকে বিশ্লেষণধর্মী হতে হয় এবং মৌখিক ও লিখিত উভয় দিক দিয়ে যোগাযোগের জন্য পারদর্শী হতে হয়।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্টিফিকেশন : ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ারে সফলতার অংশ হিসেবে আজকাল অনেকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্টিফিকেশন করে থাকেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের জন্য কোন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্টিফিকেশনটি সর্বোত্তম? এটা আসলে নির্ভর করে ওয়েব কনটেন্ট তৈরি বা ম্যানেজ করতে পছন্দ করেন কি না অথবা ডাটাবেজ এবং ওয়েব সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী কি না তার ওপর।
এখানে কিছু ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্টিফিকেশন এবং সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো :
ওয়েব কনটেন্ট ডেভেলপার সার্টিফিকেশন : ওয়েব কনটেন্ট ডেভেলপার সার্টিফিকেশন সাধারণত গ্রাফিক্স ডিজাইন, পেশাগত লেখালেখি, এসইও, ইন্টারনেট বাজারজাতকরণ বা মাল্টিমিডিয়া ডেভেলপমেন্টের ওপর বিশেষত্ব প্রদান করে থাকে। প্রোগ্রামটি এসব বিষয়ের কিছু একত্রিত করে বা কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিশেষত্ব দেয়। এক্ষেত্রে ওয়েব স্ক্রিপ্ট ল্যাঙ্গুয়েজ বা ডাটাবেজ প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতার দরকার হয় না।
ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার সার্টিফিকেশন : ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামিংয়ে বিশেষত্ব দেয়। এজন্য পিএইচপি, জাভা, ডট নেট, পার্ল বা অন্যান্য ওয়েব প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের জ্ঞান থাকা দরকার হয়। যেসব অ্যাপ্লিকেশন ডাটাবেজ বা ওয়েব সার্ভার নিয়ে কাজ করে সেসব অ্যাপ্লিকেশনে অর্থাৎ সার্ভার সাইড (ব্যাক এন্ড)-এ কাজ করতে এ সার্টিফিকেশন সাহায্য করবে। আবার অ্যাপ্লিকেশনের ক্লায়েন্ট সাইড (ফ্রন্ট এন্ড) যা এইচটিএমএল/এক্সএইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট এবং অন্যান্য ট্যাগ স্টাইল কোডিং ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের সৌন্দর্য বাড়ায়, সেসব জায়গায় কাজ করার জন্যও এই সার্টিফিকেশন সাহায্য করবে।
ওয়েব সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম পছন্দে যেসব বিষয় বিবেচ্য : কোন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্টিফিকেশন করবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য খরচ হচ্ছে প্রথম বিবেচ্য বিষয়। কোনো সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম বাছাইয়ের সময় চাকরির সাইটগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখুন কোন চাকরির জন্য কোন সার্টিফিকেশন দরকার এবং কোন চাকরির বেতন কত? এ বিষয়টি আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। যে প্রোগ্রামটি করতে চান, সেটি কি বিখ্যাত? সেই প্রোগ্রামটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং দেখুন কোন কোন প্রতিষ্ঠান এসব সার্টিফিকেশনের লোক নেয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, কোন সার্টিফিকেশনটি আপনার দরকার।
কেন ওয়েব সার্টিফিকেশন করবেন : বিশ্ব অর্থনীতির এ কঠিন সময়ে যদি কোথাও চাকরিতে ঢুকেন, তাহলে চাইবেন কিভাবে আপনার চাকরিটি টিকে থাকে। আপনার দক্ষতা যত বেশি হবে, আপনার প্রতিষ্ঠান আপনাকে তত বেশি ধরে রাখতে চাইবে। চাকরির পদমর্যাদার উন্নতির ক্ষেত্রেও ওয়েব সার্টিফিকেশন ভূমিকা রাখে।
কোত্থেকে ওয়েব সার্টিফিকেশন করবেন : বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সার্টিফিকেশন দেয়ার জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু এজেন্ট আছে। এসব এজেন্টই আপনাকে ওয়েব সার্টিফিকেশন পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে। দৈনিক বা মাসিক পত্রিকায় এবং ইন্টারনেটে এসব এজেন্টের বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখবেন অথবা সরাসরি ইন্টারনেটে সার্চ করেও এসব এজেন্টের খোঁজ খবর নিতে পারবেন।
কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে ফেসবুকে নক করতে পারেন। ধন্যবাদ
আমি মাহমুদুল হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 44 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Good post