ফ্রিল্যান্সিং নাকি ব্লগিং? কোনটি স্বাধীন পেশা? এই প্রশ্ন কি কখনও আপনার মাথায় এসেছে? কখনও কি বিচার বিশ্লেষণ করেছেন? আমার মাথায় হঠাত এই প্রশ্নটা ঘুরছে। অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে তাই লিখতে বসলাম। আসলে কোনটি স্বাধীন পেশা? ফ্রিল্যান্সিং নাকি ব্লগিং?
বিচার বিশ্লেষণের আগে জানতে হবে ফ্রিল্যান্সিং এবং ব্লগিং জিনিসটা কি? প্রথমেই জানি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে। তার আগেও আরেকটি ব্যাপার কিছুটা পরিষ্কার করে বলতে চাই। আমরা আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং শব্দ দুটোকে একই মনে করে থাকি। কিন্তু আশাকরিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেয়াকে আউটসোর্সিং বলা হয়। আর ঘরে বসেই বাহিরের কোন প্রতিষ্ঠানের কাজ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়। কোন এক জায়গায় পড়ে, এমন সংজ্ঞাই জানতে পেয়েছি। তবে ভুল বলে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা আউটসোর্সিং নিয়ে কথা বলছিনা। আমরা বলছি ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে। তাই আউটসোর্সিং কে আপাতত টপিকের বাহিরে রাখি। আমরা সাধারণত আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সারের মতো মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন কাজ আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করি এবং সেই কাজটা পেলে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সেটা করে দেই ক্লায়েন্টকে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং অনেক জনপ্রিয় একটি পেশায় পরিনত হয়েছে। যা স্মার্ট আয়ের পথও হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে কোন কাজ করার ধাপগুলো আরেকটু মনে করিয়ে দেই। প্রথমে অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলো যেমনঃ ফ্রিল্যান্সার, আপওয়ার্কে বিভিন্ন প্রজেক্ট টিউন করা হয়। ধরুন আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার এবং আপনার সম্পর্কিত একটি কাজে আবেদন করলেন আর সেটা পেয়েও গেলেন। সময় ১০দিন, পারিশ্রমিক ১০০ ডলার। এখন আপনাকে অবশ্যই এই ১০ দিনের মাঝে ওই কাজটি করে দিলেই ১০০ ডলার পাবেন। আপনি কাজটা ১০ দিনের মাঝে যেকোন সময়ই করতে পারেন তাও আবার ঘরে বসেই। আর এটাকেই বলা হয়ে থাকে "ফ্রিল্যান্সিং"।
এবার আসি ব্লগিং এর সংজ্ঞায়। কোন বিষয় নিয়ে অনলাইনে লেখালেখিকেই এক কথায় ব্লগিং বলা চলে। তবে ব্লগিং দুই ধরনের হতে পারে। শখের ব্লগিং এবং আয়ের জন্য ব্লগিং। আমরা এখানে যেহেতু পেশা নিয়ে কথা বলছি। তাহলে নিশ্চই আয়ের জন্য যে ব্লগিং করা হয় সেটাকেই সামনে আনব? ব্লগিংও এখন আয় উপার্জনের এক বিরাট পেশা। তবে বাংলাদেশে এই পেশা এতো জনপ্রিয় না হওয়ায় এটা আমাদের কাছে খুব একটা বোধগম্য নয়। ব্লগিং করে লাখপতি, কোটিপতি ব্লগারদের সম্পর্কে জানতে পারবেন একটু গুগলে সার্চ দিলেই। এ ক্ষেত্রে আমি ইন্ডিয়ান ব্লগার Harsh Agrawal এর নাম তুলব। যিনি ব্লগিং করে আয়ের অন্যতম একজন সফল ব্লগার। শখের বশে শুরু করেও শেষ পর্যন্ত তিনি একজন পেশাদার ব্লগার হয়ে উঠেছেন এবং ব্লগিং কেই পেশায় পরিণত করেছেন। হাজার হাজার ডলার মাসে আয় করেন অ্যাডসেন্স, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং আরও কিছু বিজ্ঞাপণ এজেন্সির মাধ্যমে। অন্যতম জনপ্রিয় টেক ব্লগ হলো ShoutMeLoud.Com। আর এই ব্লগই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়েছে। গ্রাজুয়েশন করেও আজ তিনি অন্য সাধারন ১০ জনের মতো চাকুরী করেন নি। ব্লগিং কেই বানিয়েছেন পেশা। আর তা থেকে যা আয় হয় তা সাধারন কোন পেশার সাথে তুলনা করা চলে না। বলতে হয় অনেক অনেক বেশিই আয় করেন তিনি ব্লগিং করে। আমি আবার অন্য কাহিনীতে চলে যাচ্ছি! অযথা দীর্ঘাইয়িত করছি লেখাটা। আমি আসলে বলতে চাচ্ছি ব্লগিং এর সংজ্ঞাটা। আপনি কোন এক বিষয়ে ব্লগ লেখেন, অনেক অনেক ভিজিটর পান আর সেখানে অ্যাডসেন্স বা অন্য কোন অ্যাড এজেন্সি কিংবা অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে আয় করতে পারেন হাজার হাজার ডলার।
আশা করছি, ফ্রিল্যান্সিং এবং ব্লগিং সম্পর্কে ধারনা পরিষ্কার। তবে একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাচ্ছি, আমি ফ্রিল্যান্সিং এবং ব্লগিং কে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাড় করাচ্ছিনা। মাইন্ড ইট। আমি আমার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু পেশাগত স্বাধীনতার ভিত্তিতে কিছুটা আলোচনা করছি। আমার ব্যক্তিগত মতে, আয় সমান বা কিছুটা তারতম্য হলেও ব্লগিং এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে ব্লগিং কেই আমি স্বাধীন পেশা হিসেবে দেখি। ফ্রিল্যান্সিং করেও আপনি হাজার হাজার ডলার আয় করতে পারেন। আবার ব্লগিং করেও সমান আয় করতে পারবেন। কিন্তু পেশাগত স্বাধীনতার কথা চিন্তা করলে কোনটি অগ্রাধিকার পাবে? আপনার মতে কি? আপনি আপওয়ার্ক বা ফ্রিল্যান্সার ডট কম মার্কেটপ্লেসগুলোতে যে কাজগুলো পান সেগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারবেন, ফ্রিল্যান্সিংটাও অনেকাংশে চাকুরীর মতোই। এখানে আয়ের কথা তুলছিনা। আমি বারবার বলছি পেশাগত স্বাধীনতার কথা। আপনি যখন একটা প্রজেক্ট নেন তখন ওই প্রজেক্ট চলাকালীন সময়ে ক্লায়েন্ট হলো আপনার বস। আর তাঁর সময়মতো তাঁর সাথে চ্যাটিং করা, কথা শুনা এবং আরও অনেক কিছু করতে হয় চাকুরীর মতোই। ধরুন আপনি সন্ধ্যায় বেড়াতে যাবেন পরিবারসহ। কিন্তু আপনার হাতে এখন ৫০০ ডলারের একটা প্রজেক্ট রয়েছে। সন্ধ্যায় আপনার সাথে ক্লায়েন্টের চ্যাটিং করতে হবে স্কাইপে। কাজ কর্মের অগ্রগতি দেখাতে হবে। আপনি কি শান্তিমতো এই অবস্থায় যেতে পারবেন বেড়াতে? অন্যদিকে ব্লগিং এর কথায় আসি। আপনার ব্লগটি প্রতিষ্ঠিত, হাজার হাজার দৈনিক ভিজিটরস আসে। সপ্তাহে সর্বনিম্ন দু থেকে চারটা আর্টিকেল লিখলেও চলে। বেশী লিখলে তো কথাই নেই। ব্লগে ভিজিটর আসছে যাচ্ছে, পড়ছে, অ্যাডে ক্লিক করছে, অ্যাকাউন্টে ডলার জমা হচ্ছে। সবই হচ্ছে অটোমেটিক। আপনি দিব্যি ঘুরছেন, ফিরছেন, খাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন। পেশাগত টানে যখন সময় পাচ্ছেন তখন আর্টিকেল লেখা, ব্লগের আনুশাঙ্গিক কাজকর্ম, এসইও ইত্যাদি কাজ করছেন। আসলেই যে ব্লগিং করে অ্যাডসেন্স বা অন্য উপায়ে হাজার হাজার ডলার মাসে আয় সম্ভব সেটা আপনি দয়া করে গুগল সার্চ করে সফলদের জীবনী পড়ে নিবেন। আর এসব বিবেচনায় কেন জানি আমার মতে ফ্রিল্যান্সিং বনাম ব্লগিং বিবেচনায় পেশাগত স্বাধীনতার দিক থেকে ব্লগিং টাই এগিয়ে। দুটোই স্বাধীন পেশা। কিন্তু ব্লগিং কে ফ্রিল্যান্সিং অপেক্ষা বেশী স্বাধীন পেশা মনে হয় আমার। ফ্রিল্যান্সিং -এও কিন্তু ব্লগিং ক্যাটাগরি আছে। কিন্ত সেখানেও কিন্তু চাকুরীর মতো। আবার ওই ব্লগিং টাকেই যখন নিজে নিজে করবেন, নিজের ব্লগের জন্য লিখবেন। তখন আপনিই বস। আপনাকে কি ব্লগিং পেশায় কারো কাছে জবাবদিহী করতে হয়? মনে হয় না। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং -এ কিছুটা হলেও করতে হয় ক্লায়েন্টের কাছে। তবে আমার এই বিচার বিশ্লেষণে অবশ্য কিছুটা শর্ত প্রযোজ্য বা কিছু অনুমিত শর্ত আছে। যেমনঃ ব্লগিং ক্ষেত্রে আমি যে উদাহরনটা দিলাম, সেরকম অবস্থাটা প্রতিষ্ঠিত ব্লগারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এজন্য প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পিছনে অনেক শ্রম দিতে হয়। তবে যাই বলেন সেখানেও স্বাধীনতা রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিংই বলুন আর ব্লগিং এর কথাই বলুন, দুটোর আয়ের কথা বিবেচনা করলে দুটোর আয় কিন্তু প্রায়ই সমান। তবে সমান আয়ের জন্য অবশ্যই যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। সেটা প্রযোজ্য ব্লগিং এবং ফ্রিল্যান্সিং উভয় ক্ষেত্রেই। হাজার হাজার ডলার ব্লগিং থেকে আয় কিন্তু শুধুমাত্র ইংরেজী মানসম্মত ব্লগ থেকেই সম্ভব। বাংলা ব্লগিং জগত সীমিত তাই এটার আয়ের জগতটাও সীমিত।
ব্লগিং এবং ফ্রিল্যান্সিং দুটোই সমান পেশা। মাথায় আসল তাই পেশাগত স্বাধীনতার দিকটা একটু আলোচনা করলাম আর কি! তবে মতামতগুলো সম্পূর্ণ নিজের। তাই কেউ অন্যভাবে নিবেন না। আপনার মতামতও অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ
সৌজন্যেঃ রুপায়ন
আমি ব্লগার মারুফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 196 টি টিউন ও 1301 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মারুফ। প্রযুক্তিকে ভালোবাসি। তাই গড়তে চাই প্রযুক্তির বাংলাদেশ। পড়াশুনা করছি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে। আমার ওয়েবসাইটঃ https://virtualvubon.com এবং https://www.rupayon.com
ভালো লাগলো আপনার আর্টিকেলটি-
Go ahead-