আপনি কখনোই অনলাইনে কোন উল্লেখযোগ্য কিছু আয় করতে পারবেন না! জানতে চান কেন?

তমাল আনোয়ার Tamal Anwar

হ্যা আপনি ঠিকই শুনেছেন, অনলাইনে আপনি হয়তো এদিক সেদিক করে হাতে গোনা কিছু ডলার আয় করতে পারবেন কিন্তু কখনোই আপনি এমন পর্যায়ে যেতে পারবেন না যেখানে আপনাকে বাইরে আর চাকরি খুজতে হবে না। জানতে চান কেন? পড়ুন তাহলে।

তার আগে বলে রাখি আমি এটা বলার কে?

আমার নাম তমাল আনোয়ার আর আমি ২০০৪ সালে ওয়েবসাইট বানানো শিখি, কিন্তু আমার ইন্টারনেট না থাকার কারনে অনলাইনে কিছু করতে পারিনি।

২০০৭ সালের শেষের দিকে আমি ৪ কেবি/সেঃ এর ব্রডবেন্ড কানেকশন নেই আর সেই রাত থেকেই অনলাইনে ওয়েবসাইট পাবলিশিং এর ব্যাপারে পড়াশোনা করতে থাকি। মাত্র কয়েকদিনের ভেতর আমি একটা ওয়েবসাইট তৈরী করে ফেলি।

আমি সর্ব প্রথম একটা কেনা বেচা সাইট বানিয়ে কাজ শুরু করি (বিক্রয় ডট কমের মত) –কেনা বেচা করে আমি সামান্য কিছু লাভ করি, প্রায় ১০,০০০-২০,০০০ টাকার মত কিন্তু এটা বলার মত কিছু না, তাই আমি ২০০৮ থেকে ব্লগিং শুরু করি।

আমার প্রথম ওয়েবসাইট

আমার প্রথম ওয়েবসাইট

ব্লগিং করে ছয় মাসের মধ্যে আমি সর্ব প্রথম অনলাইনে ডলার আয় করি আর টাকা হাতে পাই। আমার প্রথম আয় ছিল ১০ ডলার। পরবর্তী মাসে আমি ১০০ ডলার আয় করি। ২০০৯ এ আমি সর্ব প্রথম ১,০০০ ডলার আয় করি। আমার আয়ের উৎস ছিল এড বিক্রি, ব্যানার বিক্রি আর পেইড রিভিউ লেখা।

এর পর পরই আমি ফ্রিল্যান্সিং করি আর ২০১০ এ আমি ফ্রিল্যান্সিং করে সর্ব প্রথম ১০,০০০ ডলার আয় করি।

ওডেস্কে আমি ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছি ২৫ ডলার ঘন্টায়। আমি আমার অনলাইন বিজনেসে ১,০০০ ডলার প্রতি ওয়েবসাইট মূল্যে কাজ করেছি।

ওডেস্কে আমার কাজের একটা স্ক্রিনশট

আমি অনলাইনে ফোরেন ক্লায়েন্টদেরকে টিউশনি করিয়েছি। নতুন একটি ওয়েবসাইট বিক্রি করে ৩০০ ডলার আয় করি।

আমার খুব আগ্রহ ছিল আমি কি করছি তা মানুষকে শিখানো, তাই ২০০৮ সালের জুন মাসে আমি ব্লগকরি ডট কম নামের একটি ব্লগ চালু করি। এই ব্লগে আমি ব্লগিং আর অনলাইন আয়ের বিষয়ে লেখতে থাকি।

ব্লগকরি

আমি খুব খুশি কারন এই ব্লগের মাধ্যমে দেশি বিদেশি অনেক মানুষকে আমি অনলাইনে আয় করতে সাহায্য করেছি। অনেকে আমাকে ইমেইল করে যে আমার ব্লগ পড়ে তারা অনলাইনে কাজ শুরু করেছেন আর সফল হয়েছেন।

এখন যেহেতু আপনি আমার/আমার অনলাইনে আয়ের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে জেনেছেন, তাই আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আমি যা বলছি তা আমি আন্তাজে বলছি না।

অনলাইনে সফলতার অনেক উদাহরন আছে। আপনিও অনেক মানুষকে হয়তো খুব কাছে থেকে চেনেন যারা সফল। কিন্তু এর পেছনে অনেক বড় একটা সংখ্যা আছে যারা কিছুই করতে পারছে না।

যে কোন ফিল্ডেই ৯৭% লোক ব্যার্থ আর ৩% সফল। আমরা এখন সচরাচর যাদের সাফল্য দেখছি তারা শুধুই মাত্র সেই ৩%

তার মানে কি জানেন, আরো ৯৭% মানুষ আছে যারা অনলাইনে কিছুই করতে পারছে না।

বিসিএস পরীক্ষা

আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে একটা চাকরি পাওয়া অনেক কষ্টের। বিসিএস পরীক্ষায় ২ লক্ষ জন পরীক্ষা দেবার পর মাত্র ২ শতাংশ মানুষ চাকরি পাবার জন্য কোয়ালিফাইড হয়। তার পরও অনেক তদবির করে, অনেক ঘুষ দিয়ে, মামা চাচা আর পলিটিকাল দোহাই দিয়ে কেউ কেউ সেই কাঙ্খিত উচু দরের চাকরিটি পায়।

কিন্তু চাকরি পাবার পর একজন সরকারি চাকুরে যে বেতনটি পায় সেটা একজন নিম্নমানের গার্মেন্টস কর্মীর মজুরের সমান।

এরপরও আপনার মুরুব্বীরা পরামর্শ দেবে সরকারী চাকরি করার। আপনি যদি সরাসরি জিজ্ঞ্যাস করেন “মুরুব্বী, সরকারী চাকরিতে তো বেতন নেই।” তিনি বলবেন, তাতে কি হয়েছে অনেক টাকা আয়ের সুযোগ আছে।

এর মানে কি?

এর মানে আপনাকে পরোক্ষভাবে দূর্নীতি করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

যারা যারা সরকারী চাকরির জন্য ১০, ১৫, ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে পারে না, তাদের জন্য একদল থাকে চড়া সুদে ঘুষের টাকা লোন দেবার জন্য। চাকরিটা পেয়ে লোন পরিশোধের জন্য আপনাকে আবার ঘুষ নিতে হয়। ঘুষ দিলে যে কাজ হবে এর কোন গ্যারেন্টি নেই। ঘুষের নেই কোন রশিদ, নাই কোন রিফান্ড।

তাও সরকারী চাকরি মানুষ করতে চায় ভবিষ্যতের বেনেফিটের জন্য। আরে ভাই আমি জানি কি বেনেফিট সরকার করে দেয়। আমার বাবা একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। প্রতি মাসে তার বেতনের অর্ধেক অংশ কেটে নিয়েছে বিভিন্ন কর, শুল্ক, চাদা আর সেই প্রভিডেন্ট আর পেনশন ফান্ডের জন্য। সারা জীবন আমার বাবা ১৪-১৬-১৮ ঘন্টা করে ডিউটি করেছেন এক এক দিন। নেই কোন ছুটি, নেই কোন অবসর।

যখন বাবা রিটায়ার্ড করলেন, তখন অফিসে অফিসে ঘুরে ঘুষ দিতে হয়েছে সেই বেনেফিট-টা আনতে। এরপর এক কালিন কয়েক লক্ষ টাকা বেনেফিট আর প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা পেনশন। এই হল ৩০ বছর কাজ করে নিজের জীবন শেষ করার বেনেফিট।

বাংলাদেশি দোকান

ব্যবসার কথা বলতে গেলেই একটা দোকান দেবার কথা সবার মাথায় চলে আসে। একটা নিম্ন মানের দোকান দিতে গেলেই গোনতে হয় ১০-২০ লক্ষ টাকা। আমার এক বন্ধুর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে ছোট্ট একটা দোকান আছে। আমি জিজ্ঞ্যাস করেছিলাম, এরকম একটা দোকান সেখানে দিতে কত টাকা লাগবে?

তিনি আমাকে বলেছিলেন যে মানুষ ৫ বছরের ওয়েটিং লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন এক একটা দোকানের জন্য ৭ কোটি টাকা দেবার জন্য।

তাহলেই বুঝুন ট্রেডিশনাল লাইনে একটা দোকান শুরু করতেও কত টাকার প্রয়োজন হয়।

আমার মামা নতুন একটি দোকান দিয়েছেন মফশ্বল শহরে। তিনি কাচের জিনিসপত্র, শো-পিস বিক্রী করেন। আমি কয়েকদিন আগে শুনলাম ৩০ লক্ষ টাকার জিনিস কিনে দোকান সাজানোর পরও, দোকান এখনো ভরেনি। আবার কাস্টমার এসে এমন জিনিসের কথা বলে যেটা তাদের কাছে নেই।

অনলাইনে বিজনেস করে, বিজনেসের ব্যাপারে পড়াশোনা করে আর বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে বুঝলাম যে সব উদ্যোক্তাদেরই প্রথম কয়েকটা ব্যবসা ব্যার্থ হয়। এমনকি একেকজন উদ্যোক্তা গড়ে ৭ টি ব্যবসায়ে ব্যার্থ হয়েই বরং সাফল্যের মুখ দেখেন।

আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা দোকানদার/ব্যবসায়িদের মোটেও স্বম্মানের চোখে দেখে না। তারা ভাবে যারা মূর্খ কেবল তারাই ব্যবসা করে, যারা অপদার্থ কেবল তারাই দোকান দিয়ে বসে; যে ভাল কোন কাজ পায় না, কেবল তারাই বাধ্য হয়ে দোকান খুলে; দোকানদারেরা কেবল মানুষকে ঠকানোর জন্যই বসে থাকে।

এজন্য যে ব্যক্তি তার প্রথম ব্যবসায়ে ব্যার্থ হবে (যা খুবই স্বাভাবিক), তাকে তো তার পরিচিতরা তিরষ্কার করতে করতে রাখবেই না।

তাহলে সেই ব্যক্তি কিভাবে আবার ব্যবসা করার উৎসাহ পাবে?

অনলাইনের কাজ সেই তূলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। এখানে আপনাকে লাখ লাখ টাকা খাটাতে হবে না। আমি মাসে মাত্র ২০-৩০ ডলার খরচ করি আমার ওয়েবসাইটের ডোমেইন/হোস্টিং এর জন্য। এই সামান্য খরচ করেই আমি মাসে হাজার হাজার ডলার আয় করছি।

আমি নিজের পকেট থেকে একটি টাকাও বিনিয়োগ করিনি; যা আয় করেছি সেটা দিয়েই আমার অনলাইন ব্যাবসাটা তৈরী করেছি।

শুনুন, ইন্টারনেটে কাজ করতে টাকা লাগে না, লাগে নতুন নতুন চিন্তা, অধ্যাবসায় আর পরিশ্রম।

আর প্রয়োজন এই কাজটাকে সিরিয়াসলি একটা পেশা হিসেবে নেয়া।

আপনি কখনোই ভাল কিছু করতে পারবেন না, যদি আপনি নিজের মন থেকে ইন্টারনেট কাজকে শ্রদ্ধা না করেন।

আপনি যদি ইন্টারনেট মার্কেটিং কাজ নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগেন, নিজেকে ছোট মনে করেন, আপনি বড় কোন সাক্সেস পাবেন না।

ইন্টারনেট মার্কেটারদের মিটাপ

ইন্টারনেট মার্কেটিং এর মিটাপে শুনলাম যে ছেলেরা বিয়ে করতে পারছে না কারন তারা নাকি ফ্রিল্যান্সার। আপনি যদি কনফিডেন্ট হন, নিজের ওপর যদি আস্থা থাকে তাহলে আপনি রিজেক্ট হবেন কেন? বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেশা হল ইন্টারনেটের কাজ।

অনলাইনে কাজ করছেন টু-পাইস কামাই করার জন্য আর মনে মনে খুজছেন একটি চাকরি যেখানে মাসে মাসে বেতন পাবেন, তাহলে আপনার জন্য চাকরিটাই বেস্ট; দরকার নেই আপনার অনলাইন প্রফেশনাল হবার –কিন্তু পরে আবার পেয়াজের দাম বেশি বলে কম্পলেইন করবেন না যেন।

এত কথার সারাংশ হল এই,

আপনি যদি অনলাইনে কাজ করতে চান, এটা সিরিয়াসলি করুন, বড় কিছু করার চিন্তা করুন। নিজেকে ঢেলে দিন অনলাইন কাজের জন্য, পড়ুন, শিখুন, আর কাজ করুন।

ইন্টারনেটে কাজটা ভার্চুয়াল হতে পারে কিন্তু যে টাকাটা পাওয়া যায় সেটা তো আসল, তাহলে কিসের এত সংকোচ? আপনি এই বাংলাদেশের জন্য বাইরে থেকে ডলার/পাউন্ড রেমিটেন্স এনে দিচ্ছেন যেটা এই সময়ে দেশের জন্য বিশাল বড় একটা সাপোর্ট। আপনি এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

আর আপনার দ্বারা যদি এটা সম্ভব না হয় তাহলে একটা চাকরি খুজে নিন, দয়া করে আমার আর আপনার মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করবেন না।

এই সব কথা লিখে, অন্যকে শিখিয়ে আমি কোন টাকা নেই না। আমার একটাই উদ্দ্যেশ্য এই দেশের মানুষকে অনলাইন আয়ে স্বনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা। ১-২ ডলার না, বরং এক একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সবাইকে গড়ে তুলতে চাই।

তমাল আনোয়ার’স একাডেমী Tamal Anwar’s Academy

Level New

আমি তমাল আনোয়ার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

তমাল আনোয়ার ভাই, সেই রকম লিখছেন। সবাই যথা-পুযুক্ত শিক্ষা পাবে আশা করি। অনলাইন যে ৬ মাসের কিছু না, এটা যে আপনার ঘরে রয়ালেটি আনতে পারে সারা জীবন, এটা আমাদের বুঝতে হবে।
ধন্যবাদ ভাই।

    @আই,টি সরদার: অনেকেই ভাবে যে অনলাইন কাজ আর কয় বছর পর থাকবে না; হ্যা যেভাবে দেশে ফ্রিল্যান্সার বানাচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং উঠে যেতে পারে কিন্তু যারা প্রফেশনালি কাজটা করবে, তারা টিকে থাকবে। ইন্টারনেট সেক্টর অন্যান্য সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী এখন, অনেক টাকা বিনিয়োগ করছে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো -ওরা নিশ্চই বোকা না!

vai nice likhchen

plz amk poth dekhan
coz u & me on same way…………………

Khub valo likhechen, amar aktu help dorkar, ami o site niye anek din dhore kaj korchi kintu akhono porjonto site a add dewa suru korini, kon site theke dewa valo sei bepare jodi aktu bolten to khub valo hoto, dhonyobad

তমাল ভাই, অনেক ধন্যবাদ বাস্তবতাটাকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করার জন্য।

অসাধারন লিখছেন ভাই।

Thank You Bro.

Level 0

সত্য কথা বলার জন্য ধন্যবাদ

অনেক অনেক সুন্দর এবং উৎসাহ প্রদানকারী একটা Tune হইছে …
নতুনদের অনেক উপকারে লাগবে… Thanks a lot !

Level 0

লেখা টা ভালো হয়েছে ।
আমার বন্ধু বান্ধব মনে করে ফ্রিল্যান্সিং টা হাতের মোয়া । ১মাস কোর্স করলেই কাজ সেস তারপর টাকা আর টাকা । কিন্তু এর পেছনে রাতের পর রাত কি শ্রম টা দেয়া লাগে, গুগল মামার মাথা কতটা চষে বেড়ানো লাগে আর কত কেস স্টাডি করা লাগে তার কোন ইয়াত্তা নাই। আর যদি আমার মত C++ এর প্রেমে কেও পইরা জান তাইলে ত হইসে…
সুন্দর একটি লেখা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ।

খুবি ভালো লেখা। কমেন্টস না করে পারলাম না। ধন্যবাদ।

অনেক অনেক সুন্দর
Tune হইছে …

এইচ. এস. সি পাশ কইরা সারি।
তারপর ফ্রিলান্সিংয়ে কি আছে দেইখা ছাড়মু