চলুন ফ্রীল্যান্সিং করি এর প্রথম পর্বে সবাইকে স্বাগতম। ফ্রীল্যান্সিং নিয়ে মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠার শেষ নেই। দিন দিন যেন এর চাহিদা বেড়েই চলছে। কিন্তু নতুন অবস্থায় যারা আছেন সঠিক গাইডলাইন না পেলে হয়ত ফ্রীল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন শুরুতেই ভেঙ্গে যেতে পারে। আর আপনাদের এই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে দেশে চলছে প্রতারণার রমরমা ব্যাবসা। সঠিক তথ্য জানা না থাকলে আপনিও পা দিতে পারেন এই ফাদে। তাই চলুন ফ্রীল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানি এবং এরপর ফ্রীল্যান্সিং করার সিদ্ধান্ত নেই।
ফ্রীল্যান্সিং এ নতুনদের গাইডলাইন দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রায় এক বছর আগে আমি আইটি বাড়ি নামে একটি ওয়েবসাইট খুলি। সেখানে ফ্রীল্যান্সিং এর উপর বেশ কিছু টিউটোরিয়ালও তৈরি করি। এই টিউটোরিয়াল এর বদৌলতে এমন কিছু জঘন্য প্রতারণার কথা জানতে পারলাম যা আসলেই আমাদের পুরো বাঙ্গালী জাতির জন্য লজ্জাজনক। ওই সকল প্রতারকদের জন্য আজ মানুষ কোন প্রতিষ্ঠানকে ভরসা করতে চায় না, তাদের জন্য ভাল ভাল প্রতিষ্ঠান গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই রকম প্রতারণা যাতে আপনার সাথে না হয় এই জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র উদ্যেগ। যেহেতু আমি প্রায় দেড় বছর যাবত ফ্রীল্যান্সিং করছি তাই আমি মনে করি ফ্রীল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক তথ্য আপনাদের মাঝে শেয়ার করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। ফ্রীল্যান্সিং করা না করা আপনার ব্যাপার, তবে সঠিক ধারনা রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।সঠিক ধারনা থাকলে আপনি নিজে উপকৃত হবেন এবং আপনার বন্ধুকেও হেল্প করতে পারবেন।
আর টেকটিউন এর সাথে আমার সম্পর্ক অনেক বছরের। আমার ফ্রীল্যান্সিং শুরু করার পেছেন টিটি পরিবারের বেশ বড় অবদান আছে। এক সময় আমিও অনলাইনে আয়ের স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম, পরে টিটি এর সন্ধান পাই এবং অবশেষে বেশ কয়েকবার ব্যর্থতার পর কাজ পাই। তাই এই টিটি পরিবারের জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এতদিন লিখতে পারি নাই, শুধু বিভিন্ন লেখকের লেখা পরেই গেছি। এবার সিদ্ধান্ত নিলাম আপনাদের জন্য কিছু লিখি। বসে পড়লাম লিখতে। আশা করি আপনাদের সবার সাপোর্ট পাব। সবাই আমার সাথেই থাকবেন। আপনাদের সাপোর্ট ই আমার একমাত্র অনুপ্রেরণা।
আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব অনলাইনে আয়ের বিভিন্ন উপায় নিয়ে এবং কেন আপনি সেগুলোর মধ্য থেকে ফ্রীল্যান্সিংকে বেছে নিবেন সেটার উপর
ফ্রীল্যান্সিং হচ্ছে একটি স্বাধীন পেশা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজ। ডাটা এন্ট্রি এর মত সহজ কাজ থেকে শুরু করে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর মত বড় ধরনের কাজ রয়েছে এখানে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে কাজ করতে গেলে আপনাকে কোন টাকা ইনভেস্ট করতে হবে না। সম্পূর্ণ ফ্রীতেই আপনি আয় করতে পারবেন। শুধু আপনাকে জানতে হবে কাজ। কাজ জানা থাকলে আর ভাল দক্ষতা থাকলে আপনিও ফ্রীল্যান্সিং করে আয় করতে পারেন। এটা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ২য় পর্বে।
ব্লগিং করে আয়ের কথা অনেকেই শুনেছেন, কিন্তু হয়ত অনেকেই জানেন না কিভাবে আয় করা যায়। ব্লগিং হচ্ছে আপনার মতামত/আইডিয়া/নলেজ শেয়ারের অন্যতম মাধ্যম। একটি ব্লগ খুলে আপনি যদি বেশ ভাল সংখ্যক ভিজিটর আনতে পারেন তাহলে আপনি ব্লগিং করেও বেশ ভাল অর্থ আয় করতে পারেন। এখানে, ভিজিটর হচ্ছে যারা আপনার ব্লগ পড়বে অর্থাৎ আপনার ব্লগের পাঠক। যখন আপনার ব্লগের পাঠক সংখ্যা বেশ ভাল হবে তখন আপনি গুগল এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন। যদি অ্যাকাউন্ট পেয়ে যান তাহলে তাদের বিজ্ঞাপন আপনার ব্লগে প্রদর্শন করাতে পারবেন। এবং যখন আপনার কোন পাঠক এই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে তখন আপনি টাকা পাবেন। এটাই হচ্ছে অ্যাডসেন্স এর সিস্টেম।
অনেক সময় দেখে থাকবেন যে, আপনার ডাক্তার আপনাকে কোন টেস্ট করতে দিলে বলে দেয় অমুক যায়গা থেকে টেস্ট করাবেন। কিন্তু কেন এমন বলে? কারন অমুক যায়গা থেকে টেস্ট করালে ওই ডাক্তার ওই টেস্ট করাতে যত টাকা খরচ হয়েছে তার কিছু কমিশন পাবে। এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও ঠিক একই রকম। আপনি যদি অনলাইন থেকে কারো পন্য বিক্রি করে দিতে পারেন তাহলে আপনিও সেই পন্য থেকে কিছু টাকা কমিশন পাবেন। এটাই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে একজন দক্ষ মার্কেটার হতে হবে।
এই গুলোই হচ্ছে মোটামুটি আমাদের সবার চেনাজানা অনলাইন আরনিং সিস্টেম।
যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন অনলাইনে থেকে আয় করবেন তাহলে ফ্রীল্যান্সিং ই হবে সেরা উপায়। কেন? হ্যাঁ, ফ্রীল্যান্সিং হচ্ছে কাজ করার একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এটি নিজে কোন কাজের নাম হয়। এখানে রয়েছে ২০০টিরও বেশি ক্যাটাগরির কাজ। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া অনলাইনে আয়ের অন্যান্য যে সকল সেক্টর গুলো আছে সেখানে কাজ করাটা একটু সময় সাপেক্ষ, তবে ফ্রীল্যান্সিং এর যে কোন ক্যাটাগরিতে আপনি তুলনামূলক তাড়াতাড়ি ইনকাম শুরু করতে পারবেন এবং অবশ্যই সম্মানজনক ইনকাম করতে পারবেন।
ফেসবুক এ অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া থেকে শুরু করে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট এর মত কাজ পাবেন এখানে। আপনি অনলাইনের যেই অংশেই দক্ষ হোন না কেন, সকল সেক্টরের কাজই রয়েছে এখানে। তবে এখানকার চেনাজানা কিছু কাজ হচ্ছে- ডাটা এন্ট্রি, এসইও, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, পার্সোনাল হেল্প, গ্রাফিক্স ডিজাইন, গেমস ডেভলপমেন্ট, অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ, আইফোন অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি। এই গুলো হচ্ছে কাজ করার মোস্ট কমন ক্যাটাগরি।
তবে এই সকল ক্যাটাগরির মধ্যে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি এর কাজ। সহজ হওয়ার কারনে সবাই ই চায় ডাটা এন্ট্রি দিয়ে কাজ শুরু করতে। এই জন্য এই সেক্টরে ওয়ার্কার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যেহেতু এই সেক্টরে ওয়ার্কার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তাই এই সেক্টরে কাজের রেট সবচেয়ে কম।
হ্যাঁ, আপনি যেখানে কাজ করবেন সেখানকার সিস্টেম জানা অবশ্যই জরুরি। তাহলে চলুন প্রথম থেকে শুরু করা যাক-
অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনি কাজ করতে পারবেন। এই রকম কিছু সাইট হচ্ছে-
এই সকল সাইট গুলোকে বলা হয় ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেস। এই সকল সাইটে দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
বায়ার বা ক্লাইন্ট হচ্ছে ওই সকল ব্যাক্তি যারা আপনাকে কাজ দিবে। এমন অনেক লোক আছেন যারা তাদের কাজ গুলো কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে চান। এরা এই সকল সাইটে বায়ারের অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং জব টিউন করেন। এবং আপনি বা আমার মত যারা ওয়ার্কার আছেন তারা ওই সকল জবে বিড করি। এই ভাবে একটি কাজে গড়ে ৩০-৫০ জন বিড করে থাকে। ক্লাইন্ট এই সকল লোকদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেন তার কাজটি করানোর জন্য। এবং ওই ওয়ার্কার যখন কাজটি কমপ্লিট করে দেন তখন তাকে পেমেন্ট দিয়ে দেন। এই পেমেন্ট এর ১০% ওই ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেস কেটে রেখে দেয়। অর্থাৎ ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেস গুলো হচ্ছে এখানে একটি থার্ডপার্টি। এরা শুধু আপনাকে বায়ার এবং বায়ারকে আপনাকে খুজে পেতে সাহায্য করে। বিনিময়ে যখন কোন কাজ করানো হয় তখন তারা ১০% ফি কেটে নেয়। আশা করি বুঝতে পেরে গেছেন।
অনেক কিছুই তো বলে ফেললাম, এখন বলব ফ্রীল্যান্সিং সাইটে কাজ করতে গেলে আপনাকে কি করতে হবে?
উপরে উল্লেখিত কাজের বিভিন্ন ক্যাটাগরি থেকে যে কোন এক বা একাধিক বিষয়ে আপনি কাজ শিখতে পারেন এবং নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। কাজ শেখার পর কাজ করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ফ্রীল্যান্স সাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এবং অ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনার প্রোফাইল ১০০ ভাগ পূর্ণ করতে হবে। প্রোফাইল পূর্ণ করার পর আপনি যে কাজ শিখেছেন সেই সকল কাজে বিড করতে হবে। বিড করার অর্থ হচ্ছে কাজে আবেদন করা। একটা কাজে অনেকেই বিড করে থাকেন এবং সেখানে থেকে একজন বা একের অধিক জনকে সিলেক্ট করা হয় কাজটি করার জন্য এবং সেই ব্যক্তি যদি কাজটি সফলভাবে করে দিতে পারেন তাহলে তাকে টাকা পরিশোধ করেন।
মোট কথা, আপনাকে কাজ শিখতে হবে, ফীল্যান্সিং সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, আপনি যেই কাজ শিখেছেন সেই সকল কাজে বিড করতে হবে, যদি বিড করে কাজটি পেয়ে যান তাহলে কাজটি করতে হবে এবং কাজের ফলাফল জমা দিতে হবে। অবশেষে ক্লাইন্ট কাজটি চেক করবেন এবং আপনাকে পেমেন্ট করবেন। যেই কাজই করেন না কেন, ভাল করে শিখে এরপর কাজে হাত দিবেন। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই, প্রয়োজন শুধু সঠিক রাস্তায় সঠিক পরিশ্রম।
এক কথায় শেষ করে দিলাম। এটি হচ্ছে একদমই নতুনদের জন্য ধারনা দেয়ার জন্য। আশা করি নতুনরা একটু একটু বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝে থাকেন তাহলে দ্বিতীয় পর্বের আমন্ত্রণ রইল। দ্বিতীয় পর্বে আপনি কি কাজ শিখবেন সেই বিষয়ে আলোচনা করব।
যদি কোথায় বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই টিউমেন্টে জানাবেন। ফ্রীল্যান্সিং বিষয়ক আমাদের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, সময় থাকলে জয়েন করতে পারেন।
আমি আইটি বাড়ি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 41 টি টিউন ও 79 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
খুব সুন্দর । পরের টিউনের অপেক্ষায় রাইলাম ।