বর্তমান সময়ে তরুনদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগানো একটি পেশা ফ্রিল্যান্সিং । প্রতিদিন শত শত তরুন বুক ভরা সপ্ন নিয়ে , প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশায় ভীড় জমাচ্ছেন এ সেক্টরটিতে। লোভনীয় বিজ্ঞাপন আর আকর্ষণীয় সব অফারের ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার টাকা নষ্ট করে অবশেষে হতাশ হচ্ছেন। ফ্রিল্যান্সিং কি আসলে খুবই সহজ নাকি কঠিন কিছু । আজ আমার টিউনের মাধম্যে এ প্রশ্নেরই উত্তর দিব। এই সেক্টরটি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারনা না থাকার কারনেই প্রথমে যখন শুরু করছে তখন মনে হয় অনেক সহজেই প্রতিষ্ঠিত হওয়া যাবে।আবার কিছুদিন পর বাস্তবতা দেখে বেশিরভাগ মানুষিই হতাশ হচ্ছে । আমার এই লেখাটি ফ্রিল্যান্সিং সম্বন্ধে একটি পুরোপুরি দিকনিদের্শনাও বলতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং কেন সহজ ?
- ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয়তা পাওয়ার একটি মূল কারন হচ্ছে ঘরে বসে আয় করা যায়। আপনি ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোন জায়গার কাজ করতে পারবেন। আপনার প্রয়োজন নেই কোন অফিস। একটি কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই খুব সহজেই ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
- আর একটি কারন হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং করতে আপনার কোন মামা-চাচার সুপারিশ প্রয়োজন হবে না।আপনার যোগ্যতাই সবচেয়ে বড় ব্যপার।আপনি যদি নিজের যোগ্যতা প্রমান করতে পারেন তবে আর কিছুর দরকার নেই ।কাজ পাবেন আপনার যোগ্যতার ভিত্তিতে কোন সুপারিশ বা ঘুষের বিনিময়ে নয়।
- ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি অনেক বেশি আয় করতে পারবেন।একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের জন্য মাসে কয়েকলাক্ষ টাকা উপার্জন করা কোন ব্যাপারই না। আপনিত আর টাকা উপার্জন করবেন না, উপার্জন করবেন ডলার। এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে যারা ঘন্টায় ২০০-২৫০ ডলার উপার্জন করে। এবার একটা ক্যালকুলেটর নিন, মোবাইল হলেও চলবে । মনে করেন দিনে ৮ ঘন্টা কাজ করলে ১ ডলার সমান যদি ৮০ টাকা হয় মাসে কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন । দ্রুত এই সহজ হিসাবটা করে ফেলুন।
- ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের কোন অভাব নেই । মার্কেট প্লেসে দেখবেন মিনিটে শত শত কাজ টিউন হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর । এর কাজের পরিধিও বাড়ছে। বাংলাদেশের অনেকই আছে যারা কাজের কিছু না জেনেই কাজে এপ্লাই করে, কাজ যখন পায় তখন ফেসবুকে টিউন দেয়, ভাই কাজটা কিভাবে করব? চিন্তা করেন অবস্থা। শুধু কাজ আর কাজ।
- ফ্রিল্যান্সিং এ নির্দিষ্ট কোন অফিস টাইম নাই । প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা অফিস করতে হবে এমন কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই।আপনার যখন খুশি যেমন করে খুশি কাজ করবেন।
ভাবুনত এমন একটি পেশা, আপনি যেখানে খুশি যেমন খুশি তেমন ভাবে কাজ করছেন। অনেক অনেক টাকা ইনকাম করছেন। পরিবারের সাথে সময় দিতে পারছেন।যেখানে খুশি বেড়াতে যেতে পারছেন।যা খুশি করতে পারছেন। আর এইসব কারনেই ফ্রিল্যান্সিং এত জনপ্রিয় ।
এবার আসুন বাস্তবতায়, ফ্রিল্যান্সিং কেন সহজ নয়:
- আমি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে অনেক ব্লগ টিউন পড়েছি। নানা ধরনের আদেশ, উপদেশ, নির্দেশনা দেখেছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একতরফাভাবে মানুষকে মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে শুধু পজেটিভ দিকগুলো উপাস্থাপন করে মানুষকে ঠকানো হয়।
- আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হতে চান প্রথমেই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে আপনাকে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিযোগিতা করতে হবে। ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি, ধরুন একটা পন্য আপনি বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করবেন আর একটা পন্য আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করবেন। দুটো প্রডাক্ট কি রকম হবে? বাংলাদেশে যে কোন প্রডাক্টের সাধারন একটি মান থাকলেই বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের হতে হলে আপনার পন্যে মান আরও অনেক বেশি উন্নত হতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এ আপনার যোগ্যতাই হচ্ছে আপনার প্রডাক্ট।যেহেতু আপনি একজন আন্তর্জাতিক মানের পেশাদার কর্মী হতে চাচ্ছেন সেহেতু আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতাকে সেই রকম করে গড়ে তুলতে হবে।
- আর একটি বিষয় হচ্ছে এ সেক্টরটিতে যেমনি কাজ এর পরিমান বাড়ছে, তেমনি দিনে দিনে প্রতিযোগিতাও বেড়ে চলছে। আপনি যে বিষয় বেছে নেন না কেন, দেখবেন আপনার চেয়েও অনেক দক্ষ লোক আগে থেকেই আছে । আপনারা প্রতিযোগী হবে আপানার চেয়েও অনেক বেশি দক্ষ এবং অভিজ্ঞ্ । তাদের সাথে প্রতিযোগীতা করেই আপনাকে নিজেকে প্রমান করতে হবে।
- আপনার কাজের ব্যাপারে অনেক বেশি প্রফেশনাল হতে হবে। সময় মত কাজ জমা দেয়া, বায়ারের চাহিদা মত কাজ দেয়া ইত্যাদি বিষয়কে খুব ভালভাবে মেনন্টেইন করতে হবে।
- আমার কাছে যখন কেউ ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে পরামর্শ চাইতে আসে তখন আমি বলি, ”এখানে এক হাজার জনের মধ্যে একজন সফল হয় বাকি ৯৯৯ জন্য মাঝপথে হতাশ হয়ে ছেড়ে দেয় ।এখানে ঝড়ে পড়ার হার অনেক বেশি।
- আপনার অনেক বেশি ধৈর্য থাকতে হবে। কতটা ধৈর্যশীল হতে হবে তা বলে বুঝান যাবে না। আপনি দিনের পর দিন চেষ্টা করবেন কাজ পাবেন না, কাজ পাবেনত টাকা পাবেন না, টাকা পাবেনত উঠাতে গিয়ে ব্যাংক হাজার রকম ঝামেলা করবে , বায়ার কাজ নিয়ে ঝামেলা করবে, ছোট্ট একটা ভুলের জন্য সারারাত নষ্ট হবে ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে আপনাকে অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
- ফ্রিল্যান্সিং এ কোন শর্টকাট ওয়ে নাই । আপনি যতই শর্টকাট ওয়ে ফলো করতে যাবেন ততই ধরা খাবেন।যেকোন কাজ ভালভাবে শিখতে আপনাকে অনেক সময় দিতে হবে। আপনি যদি কয়েকবছর সময় না দিতে পারেন তবে এই সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কঠিন হয়ে যাবেব।আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস:
>>>> ২০,০০০ টাকা -৩০,০০০ টাকা চাকুরীর জন্য আমরা ২০ -২৫ বছর পড়াশুনা করি । আর ফ্রিল্যান্সিং এ লাক্ষ লাক্ষ টাকা কামানোর সপ্ন দেখি অথচ কষ্ট করে দুই – তিন বছর কাজ শিখতে পারি না >>>>>
- এ সেক্টরে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হবেন, তাই আপনাকে নিজে নিজে সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা থাকতে হবে। কারন বাস্তবতা হচ্ছে বেশিরভাগ সময়ই দেখবেন প্রয়োজনের সময় আশেপাশে কাউকে খুজে পাবেন না।
- এই সেক্টরে কাজ করতে হলে আপনাকে প্রতিনিয়তই আপডেট থাকতে হবে।আপনি যে কাজই শিখেন না কেন দেখবেন প্রতিদিনই আপনার শেখার বিষয়ের নতুন নতুন আপডেট হচ্ছে । তাই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই আপডেট রাখতে হবে।
- আপনি ফ্রিল্যান্সি এর যে বিষয়ে কাজ করেন না কেন আপনাকে মার্কেটিং দক্ষ হতে হবে। আপনাকে নিজেকে উপস্থাপন করতে জানতে হবে।কিভাবে কাভারলেটার লিখবেন, কিভাবে আপনার বায়ারকে আপনার প্রতি আগ্রহী করবেন, কিভাবে তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন ইত্যাদি বিষয়ে আপনাকে দক্ষ হতে হবে।
তাহলে কি ফ্রিল্যান্সিং খুব কঠিন কিছু, না সেরকম কিছু না । যদি আপনার ধৈর্য্য , মেধা আর পরিশ্রম করার দৃঢ় মানসিকতা তাকে তবেই আপনি এ জগতে টিকে থাকতে পারবেন। মনকে স্থির করুন । প্রতিজ্ঞা করুন এ সেক্টরে আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়েই ছাড়বেন। পরিকল্পনা করুন। আর প্রতিদিন একটু একটু করে হলেও নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যান। ইনশাল্লাহ একদিন সফল হবেনই।
বাংলাদেশের ব্লগিং জগতে ভাল কিছু উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে গড়ে তুলেছি WEBSOURCESBD । ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে যেকোন ধরনের পরামর্শের জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন আমার ব্লগে।
মানুষকে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে সচেতন করে তোলার জন্য, বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার জন্য আসুন আমরা এই টিউনটি শেয়ার করি । আপনার এই সামান্য কাজ অনেকের জীবনধারাকে বদলে দিতে পারে। অনেক ধোকাবাজী থেকে রক্ষা করতে পারে। আজকের দিনে এই একটা ভাল কাজ হলেও করার অনুরোধ করছি।