গতকাল এক ফেসবুক পাঠক অনলাইনে আয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলো। আমি কয়েকটা লিঙ্ক শেয়ার করলাম। পরে আরেকটা মেসেজ পেলাম যেখানে সে বললো যে সে বাংলায় অনলাইন আয়ের ব্যাপারে শিখতে চায়। আমি তাকে আর্ন-ট্রিক্স এবং আর্ন-হেল্প এই দুটি ব্লগের লিঙ্ক দিলাম –কারন এই দুটি ব্লগে বাংলায় বিস্তারিত অনলাইন আয়ের বিষয়ে লেখা রয়েছে।
এখন আমি চিন্তা করতে থাকলাম, অনলাইন আয়ের ব্যাপারে, কেউ কি ভাল ইংরেজী না জেনেও অনলাইনে ভাল ইনকাম করতে পারবে? আমার মন্তব্য আমি সবার শেষে উপস্থাপন করবো কিন্তু জেনে নেয়া যাক অনলাইনে কোথায় কোথায় ইংরেজীর দরকারঃ
ইংরেজী হল আন্তর্জাতিক ভাষা। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ ইংরেজীতে কথা বলে। ২য় অবস্থানে আছে চীনা ভাষা এবং আরো আছে ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইতালীয়, স্প্যানিশ। বলা বাহুল্য ইন্টারনেটের ৮০ শতাংশ ওয়েবসাইট এর তথ্য ইংরেজীতে লেখা। ডোমেইন নেম সব ইংরেজীতে। (সোর্স)
এর অর্থ হল আপনি যদি কিছু জানতে চেয়ে ইন্টারনেটে খোজ করেন, তাহলে বেশিরভাগ তথ্যই পাবেন ইংরেজীতে। বাংলায় সে তুলনায় খুবই কম ওয়েবসাইট রয়েছে। এমনকি আমার নিজের ব্লগ, ব্লগ-করি এবং অনলাইন-আর্নিং-কিং ও ইংরেজী দুটো ব্লগ। টেক-টিউন্স কে আন্তরিক ধন্যবাদ কারন তারা বাংলায় বাংলা ভাষা-ভাষীদের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছেন।
তাই অনলাইন আয় করার আগে, অনলাইনে শিখতে হবে আর তার জন্য চাই ইংরেজী পড়ার এবং বোঝার ক্ষমতা।
বাংলায় ওয়েবসাইট করার সবচেয়ে প্রতিকূল ব্যপার হচ্ছে যে এতে তেমন কোন ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা নেই। বাংলা ওয়েবসাইটের জন্য নেই এডসেন্স, নেই পেইড রিভিউ আর নেই কোন এফাইলিয়েট মার্কেটপ্লেস। তাই ওয়েব-মাস্টারদের ঘুরতে হয় অফলাইন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিজ্ঞাপনের জন্য। এই বিজ্ঞাপন/টাকা তখনি পাবেন যখন আপনার কাছে বিশাল আকারের একটি সাইট থাকবে। কিন্তু বেশির ভাগ ব্লগার/ওয়েবমাস্টারেরই তা নেই। ইংরেজী ব্লগের/সাইটের সুবিধা হল অতি দ্রুত আপনি ভিজিটর পাবেন এবং অর্থ আয়ের সু্যোগ –সেটা যে ধরন/আকারেরই হোক না কেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১০ লাখ বা ৬% -২০১২ সাল পর্যন্ত (সোর্স)
যারা যারা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তাদের বেশীরভাগ মানুষই ফেসবুকে টাইমপাস করে/গেম খেলে সময় পার করে (অনুমান তবে এলেক্সাও এটাই বলে সোর্স)
যারা বাংলা সাইট খোজে তারা কেউ হয়তো অনলাইন আয়ের উপায় খোজে (যেমন এই ব্লগ) অথবা ম-চ জাতীয় সাইট পড়ে/দেখে –আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বলছি!!
আপনি হয়তো ডাক্তারি বিষয়ক একটি বাংলা ব্লগ/সাইট তৈরী করলেন কিন্তু সে সাইটের জন্য যত ভিজিটর দরকার, সেরকম ভিজিটর বাংলাদেশের ইন্টারনেটে নেই অথবা এখনো হয়নি। হয়তো আপনি পেয়েও গিয়েছেন সেই ধরনের ভিজিটর কিন্তু তারা আপনার সাইটের জন্য টার্গেটেড ভিজিটর নয়।
কিন্তু এর স্থানে যদি আপনি ইংরেজীতে সেই সাইট তৈরী করেন তাহলে আপনার কাছে রয়েছে ২৫০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। (সোর্স)
অর্থাৎ ব্যাপারটা দাড়ায়,
তাই আপনার শিখতে হবে কিভাবে ইংরেজীতে লিখতে হয়। ভাল ইংরেজী কন্টেন্ট তৈরী করা। যদি চান ভাল লিখতে, পড়তে থাকুন ইংরেজী ব্লগ, ওয়েবসাইট, কলাম, এবং একই সাথে ইংরেজী লিখার চর্চা করুন।
ওডেস্ক, ইলেন্স, ফ্রিল্যন্সার বা ফাইভার এ কাজ পেয়ে কি লাভ যদি আপনি বায়ার এর সাথে ইংরেজীতে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারেন? যে আপনাকে কাজ করাবে সে নিশ্চই বিদেশী? তার কি দরকার বা আপনি কিভাবে তাকে সাহায্য করতে পারবেন, তার জন্য অবশ্যই ইংরেজী লাগবে। ইংরেজীতে পড়া এবং লেখার সাথে ইংরেজীতে কথাও বলতে হবে আপনাকে।
আপনার বায়ার যদি আপনাকে বোঝাতে না পারে যে সে কি চায়, তাহলে কেন সে আপনাকে দিয়ে কাজ করাবে। আমি সব সময়ই দেখি ফ্রিল্যান্স গ্রুপগুলোতে, যে কাজ পায়, পেয়ে অন্যকে জিজ্ঞ্যাসা করে যে বায়ার কি চেয়েছে।
দেখুন আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার, আপনি ইংরেজী না জানলে কখনোই ফ্রিল্যান্সিং এ সফল তথা অনলাইনে সফল হবেন না।
এখনকার বায়াররা স্কাইপে ভিডিও চ্যাট করে কথা বলে। ইংরেজী কথা না জানলে, এই ধরনের হাই পেইড কাজ আপনি পাবেন না।
বিদেশে চাকরি করতে গেলে তো ইংরেজী স্পোকেন, আই-এল্টস করতে হয়। করে ফেলুন না একটা শর্ট কোর্স।
অফলাইনে আপনি একটা ইন্সটিটিউট খুলতে পারেন “এক্স-ওয়াই-জেড ইন্সটিটিউট” আর সেখানে আপনি নিজে একজন অনলাইন আয়ের পন্ডিত সেজে অনলাইনে কিভাবে আয় করতে হয় তার কোচিং দিতে পারেন। কোচিং শেষে সবাইকে একটা লেমিনেটেড সার্টিফিকেট দিতে পারেন।
ইংরেজী ছাড়া অনলাইনে কোন কাজ আছে তা আমার জানা নেই তবে আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টে শেয়ার করবেন, আমি এই লেখাটাতে আপডেট করবো।
একটা প্রশ্ন আমাকে ইন্টারনেটে সবাই করে...
আর তা হল আমি কিভাবে ইংরেজী শিখলাম। আমার সব ব্লগগুলো ইংরেজীতে লিখা। জবাবে আমি এটাই বলি, যা আবার শেয়ার করলাম,
ছোটবেলা থেকেই আমার ইংরেজীর প্রতি আগ্রহ ছিল। স্কুলে আমি কোন রকম না পড়েই ইংরেজীতে ৭০-৮০ নাম্বার পেতাম। ছোটবেলা থেকেই আমি প্রচুর ইংরেজী কার্টুন, ছবি আর সিরিয়াল দেখি। যখন ইন্টারনেটে কাজ শুরু করি তখন ইংরেজীতে লিখি, কিন্তু সে লেখা ছিল ভূলে ভর্তি। এখন আমি বুঝি যে ৬ বছর আগের আমার ইংরেজী লিখা কাউকে দেখাবার মত লিখা ছিল না।
অন্যান্য ইংরেজী ব্লগ পড়তে পড়তে, লিখতে লিখতে আর শিখতে শিখতে আজ এই পর্যন্ত এসেছি, এখনো শিখছি।
যখন আমি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি তখন আমি প্রথম বিদেশীদের সাথে ইংরেজীতে কথা বলি। আমার ধারনা ছিল আমি যেমন ইংরেজী লিখায় উস্তাদ, তেমনি কথায়ও উস্তাদ হব। কিন্তু আমার ধারনা ছিল ভূল, আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। সে থেকে কথা বলতে বলতে আর শুনতে শুনতে আমি ইংরেজীতে কথা বলাও শিখেছি, এখনো শিখছি।
এখানেই ইতি টানছি তবে আমি আপনার মূল্যবান বক্তব্যের জন্য অপেক্ষায় থাকবো। কমেন্ট করুন আর আমাকে জানান আপনি অনলাইনে কি করছেন, আপনার কি ইংরেজী কোন সাইট/ব্লগ আছে?
আর সময় করে অবশ্যই আমার ব্লগ দুটোতে ভিসিট করবেন, ব্লগ-করি (ব্লগিং বিষয়ে) এবং অনলাইন-আর্নিং-কিং (অনলাইন আয় বিষয়ক) ইংরেজী ব্লগ।
ভাল থাকুন!
তমাল আনোয়ার
আমি তমাল আনোয়ার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
It’s natural! 🙂
মাতৃভাষা নিয়ে পরে থাকলে চলবে না। কারণ আমার মাতৃভাষা তো আর অন্য কেউ বুঝবে না।