ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বায়ারের সাথে ইন্টারভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারভিউয়ে সন্তুষ্ঠ হওয়ার পরই বায়ার কাজ দিয়ে থাকেন। বায়ারের সামনে নিজেকে তাই এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন মনে হয় আপনাকে হায়ার করাই হবে তাঁর উত্তম সিদ্ধান্ত!
অনেকে প্রায়ই প্রশ্ন করেন, ইন্টারভিউয়ের সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। এটি আসলে এক কথায় বলে দেয়া সম্ভব নয়। ভাল ইন্টারভিউয়ের জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরী। বিষয়গুলো নিয়ে এ পোস্টটির মাধ্যমে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ইন্টারভিউয়ের সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। স্কাইপ কিংবা ইমেইল, যেভাবেই যোগাযোগ হোক না কেন, বায়ার যেন বুঝতে পারে আপনি খুবই বন্ধুভাবাপন্ন ও তাঁর সাথে কথা বলে আনন্দ পাচ্ছেন। লেখা/বলার মাধ্যমেই বোঝাতে হবে আপনি কাজের ক্ষেত্রে কতোটা আগ্রহী।
বায়ায়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তিনি কি চাচ্ছেন, কি কাজ করাবেন, আপনাকে নির্বাচন করলে তাঁর প্রত্যাশাগুলো বুঝতে হবে। বায়ার যা বলবে সেগুলো নোট করে রাখুন। মনে রাখতে হবে, কাজটি সম্পর্কে যত আগ্রহ দেখাবেন বায়ার ততটাই সন্তুষ্ঠ হবেন।
যে কাজটি করতে যাচ্ছেন তা সম্পর্কে ভাল ধারণা না থাকলে কাজটি করা সহজ হবে না। প্রজেক্টটিতে সর্বোচ্চ আউটপুট দিতে বায়ারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জেনে নিন। যতক্ষণ ভালভাবে পুরো প্রজেক্ট সম্পর্কে না জানছেন ততক্ষণ পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন। অনেকে মনে করতে পারেন বায়ার এতে রেগে যেতে পারেন। কিন্তু এটি একেবারেই ভুল ধারণা। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বায়ার এতে বিরক্ত না হয়ে বরং আপনার আগ্রহ দেখে খুশি হবে।
ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে ভাল পোর্টফোলিও থাকা জরুরী। ইন্টারভিউতে অংশ নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ঠ কাজের পোর্টফোলিওগুলো রেডি রাখতে হবে। যাতে বায়ার আগের কাজগুলো দেখতে চাইলে সেটি সহজেই প্রদর্শণ করা যায়। কিভাবে আগের কাজটি করেছেন এবং নতুন বায়ারের কাজটি কিভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন সেটি দেখাতে পারলে কাজ পাওয়া আর কেউ ঠেকাতে পারবে না বস!
পরিকল্পনা শেয়ার করে বায়ারকে বেশি সন্তুষ্ট করা যায়। ক্লায়েন্টের কাজটি কিভাবে সম্পন্ন করবেন সে পরিকল্পনা শেয়ার করবেন। ভালহয় পুরো প্রজেক্টটি আপনি কিভাবে করবেন, কোনটির পর কোনটি ধরবেন এইটার বিস্তুারিত প্রজেক্ট ফ্লো তুলে ধরতে পারলে।
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার সময়ের মূল্য অবশ্যই আছে। আপনি কাজটি পাচ্ছেন কিনা সেটি জানার জন্য অবশ্যই আপনি ৩ ঘন্টার ইন্টারভিউ দিবেন না! তাই আপনাকে অবশ্যই আগে থেকে আপনার পেমেন্ট, সম্ভাব্য ডেডলাইনসহ সংশ্লিষ্ঠ বিষয়গুলো জানিয়ে দিতে হবে। তাঁর সাথে আলোচনার মাধ্যমে নেগোসিয়েশন করতে পারেন।
কাজের প্রয়োজনে বায়ারকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আগে থেকেই যোগাযোগের ইমেইল, স্কাইপ আইডি এবং প্রয়োজনে ফোন নম্বরটি শেয়ার করতে হবে। কখন অনলাইনে থাকবেন, কখন যোগাযোগ করবেন সেটি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিতে হবে। আপনাকে তিনি হায়ার করবেন কিনা সেটা নিশ্চিত নয়, তবে প্রয়োজনে যেন যোগাযোগ করতে পারে সে সুযোগটি তৈরি করে দিতে হবে।
প্রজেক্ট পাওয়া নিশ্চিত হোক কিংবা না হোক, অবশ্যই বোঝাতে হবে আপনি কাজটি করতে আগ্রহী, জানাতে হবে আপনার দক্ষতা ও একাগ্রতার কথাও। নিজেকে প্রমাণ করতে হবে সব ভাল আউটপুট প্রদানকারী ফ্রিল্যান্সার হিসাবে।
হুমায়ুন আহমেদের রাবেয়া-র কথা মনে আছে আপনাদের? ঐ যে প্রতি বছরই প্রেগন্যান্ট হয়ে যেত যে মেয়েটা! তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হত ‘কি ব্যাপার? তুমি আবার প্রেগন্যান্ট হলে কি করে?’ ‘আমি কাউকে না করতে পারি না!’
ফ্রিল্যান্সার বন্ধুরা, এই না করতে পারার পরিণাম? 😉
প্রফেশনাল কাজের ক্ষেত্রে আপনাকেও না বলতে শিখতে হবে। ক্লায়েন্ট আপনাকে আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ না সে বিষয়ে কাজ করতে বললে, কম মূল্যে কাজ করতে বললে কিংবা বিনামূল্যে স্যাম্পল করে দিতে বললে না বলতে হবে। এতে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমবে না, বরং বাড়বেই!
এই টিপসটি শেয়ার করেছিলেন বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। কিউবি ল্যাপটপ মেলা ২০১৩ ভেন্যুতে আয়োজিত ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘Taking Freelancing to next height’ অনুষ্ঠানে তিনি ফ্রিল্যান্সারদের এ টিপসটি দেন। মুনির হাসানের মতে, ক্লায়েন্টকে সবসময় কাজটি পারবো, কাজটি পারবো এমন বলা যাবে না। মাঝে মাঝে না বলাও শিখতে হবে। এতে কাজ পাওয়ার হার কমবে না। বরং অনেক বেড়ে যাবে। না বললে কাজের ক্ষেত্র বাড়ে অনুষ্ঠানে এমন বাস্তব কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছিলেন বেসিস ফ্রিল্যান্সার অব দ্যা ইয়ার ২০১১, এনায়েত হোসেন রাজিবও!
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ইন্টারভিউয়ের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। পাশাপাশি এই ধরণের গাইডলাইনমূলক তথ্য আরো জানতে চান কিনা সেটি জানাতে ভুলবেন না।
আপনার বন্ধুরাও যাতে এই দরকারি বিষয়গুলো দেখতে পারেন সেজন্য লেখাটি শেয়ার করুন। ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে। 🙂
আমি আবু তাহের সুমন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 1212 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহের অনলাইন উদ্যোক্তা এবং ইন্টারনেট মার্কেটিং স্ট্রেটেজিস্ট হিসাবে কাজ করছি দীর্ঘ ১দশক যাবত। ২০১৭'তে প্রতিষ্ঠা করি ' আওয়ামাহ টেকনোলজিস লিমিটেড ' বর্তমানে এর প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। আমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইংরেজি ব্লগ 'ক্লিক করুন' । ধন্যবাদ।
অনেক দিন পর লিখলেন।ভালো জিনিস।অনেকের কাজে দিবে।ধন্যবাদ।