পেইড টু ক্লিক (পিটিসি): যেভাবে বদলে দিল লাখো তরুণের জীবন . . .

শুরু যখন করেছি একদম গোড়া থেকেই আসি। পেইড টু ক্লিক বা সংক্ষেপে পিটিসি হচ্ছে এমন একটি ব্যবসা (?) যা এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত অনলাইনে সর্বজনগ্রাহ্য সবচেয়ে সহজ আয়ের পন্থা বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। লাখ লাখ মানুষ কোটি কোটি টাকা দিয়ে তথাকথিত বেসিক ও আপগ্রেড একাউন্ট নিয়ে শুধুমাত্র ক্লিক করে কয়েক মিনিটেই হাতিয়ে নিচ্ছেন নগদ ডলার! আর এই সকল বিনিয়োগকে পিটিসি ব্যবসায়ীরা বাড়তি সৌন্দর্যমন্ডিত করে ইংরেজিতে “ইনভেস্ট” হিসেবে প্রচার করে বেড়ায়। পিটিসি নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে এবং আরও হবে। কিন্তু আপনি যদি চোখ কান খোলা রেখে ওয়েব দুনিয়ায় ঘোরাফেরা করে থাকেন, তবে অবশ্যই খেয়াল করে থাকবেন মাত্র কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে পেইড টু ক্লিক অর্থাৎ পিটিসি হচ্ছে একটি যাদুর কাঠি- যা অসংখ্য তরুণের চোখে এনেছে নতুন স্বপ্ন, প্রতিদিনের জীবনযাপনে এনেছে আমূল পরিবর্তন।

কি বুঝলেন? একটু খটকা লাগছে তাইনা? আমি নিশ্চিত, মাত্র দু-একজন ছাড়া বাকী সবাই ইতোমধ্যেই আমাকে গালিগালাজ করা শুরু করে দিয়েছেন। আমি জানি, শিরনাম দেখে কারোই বিশ্বাস হচ্ছেনা আসলে কি এক আশ্চর্য প্রদীপ লুকিয়ে আছে এই পিটিসির মধ্যে। ঠিক আছে, কয়েকটি ঘটনা বলি; আশা করি তাতে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে আপনার সামনে ধরা দেবে।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের দেয়ালে সাধারণত কোন পোস্টার লাগাতে দেখা যায়না। কেউ কেউ প্রিন্ট করার বিজ্ঞাপন দেয় আর মাঝে মাঝে অফিসিয়াল কোন বিজ্ঞপ্তি থাকলে হলের সামনে নোটিশ বোর্ডে দেয়া থাকে। কিন্তু হঠাৎ এক নতুন ব্যবসার বিজ্ঞাপনে হলের সাদা দেয়াল এমনকি সেন্ট্রাল কেন্টিনও রঙ্গিন হয়ে উঠল। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এটিই পিটিসির বিজ্ঞাপন। প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন অফার নিয়ে আসতে শুরু করল বাহারি সব সাইট। কোনটির নাম “ভিশন এডওয়ার্ল্ড” আবার কোনটি “এয়ারিপাল”, “গুগল এডক্লিক” আর সেই সাথে ডুল্যান্সার, স্কাইল্যান্সার তো রয়েছেই। ডেস্টিনি টাইপের পিটিসি এমএলএম এক্সিকিউটিভরা লোভনীয় সব সুবিধার কথা বলে ব্যাপক আকারে ক্লিক-ল্যান্সার গড়ে সমাজ গড়ে তুলতে লাগল। ৭০০, ৮০০, ১০০০ থেকে ৭০০০ টাকায় একাউন্ট বিক্রি শুরু হল। ইউনিভার্সিটির ফ্রি ওয়াইফাই এর কল্যাণে আর কোন বাড়তি খরচ ছাড়াই অনেকে শুরু করল “ক্লিক বিজনেস”।

এর মধ্যে ফেসবুকে অনেক দূরে থাকে এমন একজন “অনলাইন বন্ধু” হঠাৎ একদিন নক করে বলল তার নাকি প্রায় ৪২,০০০ টাকা নিয়ে ক্লিকল্যান্সার কোম্পানি “মাইক্রোক্লিকার” ভেগেছে। নিচে স্ক্রিনশট দেখে নিন। ভিকটিমের নাম ও ছবি সংগত কারণেই মুছে দেয়া হয়েছে।

এতো গেল দূরের কথা। এবার কাছে আসি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জুনিয়র, যে ডুল্যান্সারে ৭০০০ টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলেছে তাকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম ছাত্রজীবনে এতগুলো টাকা এরকম অনশ্চিত খাতে ব্যয় করার যুক্তি কি। সে বলল “এখন যদি মাত্র ৭০০০ টাকার রিস্ক নিতেই না পারি, তবে ভবিষ্যতে কি করব। আর খুলনায় তো লোকজন জমি বিক্রি করে এই ব্যবসায় ইনভেস্ট করছে”!!! চিন্তা করে দেখুন, আমাদের হুজুগে বাঙালি নাম কি এমনি এমনি হয়েছে?

আমার এক ক্লাসমেট সবসময় হাসিখুসি বা “রকিং” মুডে থাকে। এজন্য বন্ধুমহলে সে “রকো” বলেও পরিচিত। হঠাৎ একসময় লক্ষ্য করলাম সেই রকো আর রকিং মুডে নেই! ক্লাসে একা উদাস হয়ে বসে থাকে। ঘটনার গভীরে গিয়ে জানতে পারলাম সে নাকি পিটিসিতে ৬৫,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছিল যা থেকে রেফারেল, ল্যয়ালিটি ইত্যাদি মিলিয়ে ২০,০০০ এর মত টাকা তুলেছে আর বাকীটা জলে গেছে। অর্থাৎ সে একই সময়ে স্কাইল্যান্সার ও ডুল্যান্সের খপ্পরে পরেছে। ছাত্রজীবনে এতগুলো টাকা খোয়া গেলে কি অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

এরকম আরও অনেকে রয়েছে যারা ৪-৫ হাজার টাকার আইডি খুলে পুরোদমে ক্লিক করা শুরু করেছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সব কোম্পানিগুলো পালিয়ে গেছে।

আর পত্রপত্রিকা পড়লে তো অবশ্যই দেখে থাকবেন দেশজুড়ে স্কাইল্যান্সার, ডুল্যান্সার, কোয়াক্ল্যান্সার সহ আরো অনেক বেনামী পিটিসি গ্রাহকরা কিভাবে প্রতারিত হয়েছেন।

এখন ডিসক্লেইমারের পালা। চলুন আবার শিরনামে আসি। বলেছিলাম পিটিসি লাখো তরুণের জীবন বদলে দিয়েছে। সত্যিই তো তাই! স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে অনেক তরুণকে পথে বসিয়ে দিয়েছে এই পেইড টু ক্লিক সাইটগুলো। পজিটিভ ভাবে নাহোক, নেগেটিভ ভাবে তো বদলে দিয়েছে তাদের জীবন। সুতরাং শিরনামে ভুল ছিলনা। বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে যে সামান্য কয়েকজন কিছু টাকা তুলতে সমর্থ হয়েছেন সেইসব সৌভাগ্যবানদেরকেই বোঝানো হয়েছে।

আরও বলেছিলাম পিটিসি অনেকর চোখে স্বপ্ন এনে দিয়েছে।

এর অর্থ কি? পিটিসি গ্রাহকরা অল্প সময়ে অধিক টাকা আয় করে বিল গেটসের কাছাকাছি চলে যেতে চেয়েছিলেন। এটাই তাদের স্বপ্ন। এর বিনিময়ে টাকা পয়সা হারিয়ে এখন তারা নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছেন। সুতরাং সেই একই লোকদের চোখে আরও একদফা স্বপ্ন বুনে দিল পিটিসি- না, এবার আর বিল গেটস হবার স্বপ্ন নয়, বরং ধার-উদ্ধার বা বাসায় বিভিন্ন ভাউচার দিয়ে নিয়ে আসা টাকা হারানোর হতাশা থেকে আলোতে আসার স্বপ্ন.....

তাই আসুন, পিটিসি নামক প্রতারণার বিরুদ্ধে সচেতন হই আজই, এক্ষুণি। সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ্‌ আমাদের মঙ্গল করুন।

(আমার ব্লগিমেট ব্লগে পূর্বে প্রকাশিত)

Level 0

আমি আরাফাত বিন সুলতান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 197 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

vai abaro socheton mulok post niye aschhen ….Dhonnobad apnake . Ai post ti somoy upojogi post . But akti kotha manush jon bishes kore jara amader desher vuwa PTC r pichhone time + Invest korechhe sei time er jodi 10 vager 1 vago world er Best Elit Ptc site niyeo kaj korto …Tobe tader akta takoo noshto hoto na …Apni hoyto janben clixsense ja kina World er akti best Elit ptc site , sei site thekeo oneke per day 10 -20 $ ay korchhe , kintu akhane tader 1 takao dite hoyni ….Ata gelo Ptc r Kotha , Ar Je bangalira per day 1 $ ay korar jonno Bds / Dolancer e 7000 tk diye account kore ghontar ghontar por click korto …Tara jodi Shudhu https://microworkers.com/ e kaj korto tobe daily 2-3 $ ay + Seo r tuk tak kajo shikhte parto ……….Asole amra banggalira na bujhei hujoge jhapiye pori ,ata amader dosh …Ami amar akti blog site banachhi je site tir kaj akhono onek baki …….Je khane ami cheshta korbo akjon manush je Online e Earn korte hole je basic jinis gulo jante hoy ta shikhanor site ti te somoy pele gure asun http://onlinemoneyearnformula.blogspot.com/

Level New

vai aponar postgolo khob darun asha kori sara jibon amader arokom post upohar diben.thanks

দারুন লিখেছেন ভাইয়া,ভালো লাগলো । পিটিসির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে আজীবন । আমিও শুরু করেছিলাম সেই সংগ্রাম,কিন্তু কলেজ লাইফের জন্য শেষ করতে পারলাম না,সময় পেলে আবার শুরু করবো ইনশাহআল্লাহ । অনেক অনেক শুভকামণা রইলো আপনার জন্য । ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন ।

Level 0

মজা পাইলাম চমত্কার হইছে 😀

Level 0

পিটিসি এর মাধ্যমে আর যাই হোক সমাজের লোভী মানুষ গুল ভাল ভাবেই মার্ক হয়েছে। মাথা মোটা অই সকল লোভীদের থেকে সব সময় সবাই সাবধানে থাকবেন।

nice

এই পোস্টটি কোনপ্রকার লিংক উল্লেখ না করেই কোন এক ব্যক্তি আরেকটি ব্লগে কপি করে দিয়েছেন। http://www.tunerpage.com/archives/132095/
সেখানে মডারেশনের কারণে কমেন্ট করাও যাচ্ছেনা! আমরা বাঙালিরা এমন কেন???

যেখানেই দিন বদলের চেষ্টা সেখানেই……………….
নির্বাচিত করা হোক।

Level 0

অসাধারণ টিউন। শিরোনাম দেখে পড়তে ইচ্ছা করছিল না, ভেবেছিলাম নতুন পাগল। একটুর জন্য সুন্দর লেখা পড়তে বঞ্চিত হতাম। শিরোনামটা যদিও তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক, আমার মত কিছু লোক নাও পড়তে পারে। ধন্যবাদ আরাফাত ভাই।

Level 0

😀