ভাই, হতাশাকে মোটেও কাছে ভিড়তে দেয়া যাবে না। প্রথমেই মনের শঙ্কা বা ভয়গুলো দূর করুন। তার পর ইতিবাচক বিশ্বাসের সাথে সামনের দিকে এগুতে শুরু করুন।
আগে নিজে ঠিক করুন যে কোন কাজে আপনি নিজেকে পারদর্শী বলে মনে করেন অথবা আপনার দ্বারা কোন সেবা বা সার্ভিস অন্য কেউ পেতে পারেন। আর সেটি সুস্পষ্ট কিনা তা ভেবে দেখুন। আর তার পর নিজেকে প্রশ্ন করুন- "আমি কি তৈরি?"
মনে রাখবেন, ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেইসে বায়াররা যে ধরনের কাজের জন্য কন্ট্রাক্টরের সন্ধান করেন সেই কাজ তারা নিজেরাই করে নিতে পারতেন যদি না সেইটা করার জন্য যেই সময় দরকার সেইটা তাদের হাতে থাকত আর তারা নিজেরা জানতেন কিভাবে কাজটি করতে হয়।
সহজ ভাষায় কাজের (problem) নিজেরা সমাধান খুজে পাচ্ছেননা বিধায়ই তাদেরকে অন্য কারও শরণাপন্য হতে হচ্ছে। আর তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে তাদের কাজকে কোন একজন প্রোফেশনাল বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া।
তারা হয়তো দেখবেন আপনার পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা কিরকম, আপনার পোর্টফোলিও বা শোকেস অবশ্যই সেই ক্ষেত্রে অন্য রকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর আপনি কি অফার করছেন সেইটাও তারা লক্ষ্য করবেন তারপর আপনাকে কাজটি দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তারা যাচাই করে দেখবেন যে আপনি যা অফার করছেন তার সাথে তাদের কাজের সঙ্গে যথাযথ যৌক্তিক মিল আছে কিনা বা তারা সঠিক ব্যক্তিকে বাছাই করে তাকে ঐ কাজটি করতে দিচ্ছে কিনা।
ধরুন একজন বায়ার তার সাইটের ব্যানারে একটি এ্যানিমেটেড এড তৈরি করতে চাচ্ছেন। আর আপনি যদি তাকে বলেন, আমি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করতে পারি, আমার ওয়েব সাইট বানানোর অভিজ্ঞতা আছে, আমি এস,ই,ও এর কাজ জানি আমি একজন কন্টেন্ট রাইটার ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনি হয়ত ভাবছেন বায়ার আপনার অফারে অবিভূত হবেন আর কাজটি নিশ্চয়ই আপনাকে দিবেন। তাহলে আপনি যা জানেন পুরো বিষয়টা একেবারেই সঠিক নয়। আপনি মূলত বায়ারের কোন নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করতে যাচ্ছেন। তাই আপনার অফারে তথা বিডে এমন কিছু থাকা চাই যাতে করে বায়ার বুঝতে পারেন যে আপনি তার সমস্যাটি ভাল বোঝেন এবং আপনিই তার কাজটি সবচেয়ে ভাল পারবেন। বায়ার তখনি আপনাকে তার কাজের জন্য নির্বাচিত করবেন যখনে তিনি মনে করবেন তার কাজটি আপনাকে দিলেই তিনি লাভবান হবেন। এতে বায়ারের যেমন লাভ হবে তেমনি আপনারও লাভ হবে। আপনাকে আর বেকার বসে সময় গুনতে হবেনা।
বায়ারের জায়গায় একবার আপনি নিজেকে কল্পনা করুন। আপনার কাজের বিজ্ঞপ্তি দেখে বেশ কয়েকজন কন্ট্রাক্টর আপনার জব পোস্টে তাদের অফার লিখে বিড করেছে। আপনি কার অফারকে নির্ভরযোগ্য মনে করবেন। যে আপনাকে তার সকল কাজের ইতিহাস শোনাচ্ছেন আর তিনি কি কি করতে পারেন সেইগুলো জানাচ্ছেন তাকে? নাকি যার কথায় আপনার মনে হল যে তিনি আপনার সেই নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবে তাকে?
আশা করি প্রশ্নের উত্তর আপনি পেলেন। আর সব সময় বিড অথবা অফার লিখার আগে ক্লায়েন্টের জায়গায় নিজেকে রেখে সেই ক্লায়েন্টের পার্সেপশান থেকে তার চাহিদা বা সমস্যাটা ভালমত স্ট্যাডি করা উচিত। তারপর বিড বা অফারে কি লিখা উচিত সেই কনসেপ্ট আপনাআপনিই আপনার মনের মধ্যে চলে আসবে।
আর কাজটি পাওয়ার থেকে সেটিকে যথাযথভাবে সম্পন্ন করে বায়ারের হাতে হস্তান্তর করার বিষয়টার তাৎপর্য নিশ্চই অনেক বেশি। কেননা কাজটি সুন্দরমত করার পরই বায়ার আপনাকে ফিডব্যাক দিবেন এবং আপনার রেটিং উন্নত হবে যার ফলে আপনি আপের থেকেও আর সহজে ও আরও অনেক বেশি কাজ পাবেন। আর আপনার বায়ারকে যদি আপনি আপনার কাজের দ্বারা খুশি করতে পারেন তাহলেই আপনার সত্যিকারের সাফল্যের দিকে আপনার শুভযাত্রার সূচনা ঘটতে শুরু করবে। এমনকি সেই বায়ারের রেফারেন্সেই আপনি এত এত কাজ পাবেন যেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা।
অন্যদিকে, নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করার আগেই যদি আপনি ভাবেন আপনি কাজ শুরু করবেন তাহলে আপনি সত্যিই হতাশাগ্রস্থ হবেন। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে বসবেন এবং পরে আপনার সকল আগ্রহ খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যাবে। মোটকথা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের দরণ আপনার ক্যারিয়ার শুরুর আগেই ধ্বংস হবে।
কাজেই নিজের মূল্যবান সময়গুলো যাতে বৃথা না যায় সেই জন্য ঐ সময়গুলোর উত্তম ব্যবহার করা উচিৎ। সময়গুলো কাজে লাগিয়ে নিজেকে তৈরি করুন আরও ভালভাবে আর আরও যোপ্য করে তুলুন নিজেকে। যেন চ্যালেঞ্জে আপনিই জয়ী হতে পারেন, সফল হতে পারেন।
আর সব শেষে একটি কথা, আপনি যদি মনি করেন ফ্রীল্যান্সিং শুরু করার পূর্বে নিজেকে আপনি আরও ভালমত তৈরি করে নিতে চান বা যা যা আপনি জানেন সেগুলোকে আরও ভালভাবে ঝালাই করতে বা নতুন কিছু শিখতে চান আপনি নিজার আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে শুরু করুন।
আর বিষয়টি যদি হয় ওয়েব টেকনোলজি; HTML, CSS, Javascript, PHP, WordPress, Joomla, Drupal এক কথায় ওয়েব ডিভেলপমেন্ট; অথবা ডিজাইনের কাজ যেমন Photoshop, Illustrator, Gimp, Inkscape কিংবা যেকোন কিছু তাহলে সেগুলোর একটিকে ভালমত হাতে নিন আর সেটিকে যথাসম্ভব ভালমত রপ্ত করুন।
আমি নিজের ১৬ বছরের কম্পিউটিং এর সময়সীমার মধ্যে কখনো কোন যায়গায় কোন কোর্স কিংবা কার কাছ থেকে কিছু শিখিনি। যা যা জেনেছি আর যা যা শিখেছি তার সবই নিজের চেস্টায় শিখেছি। আর মনের মধ্যে প্রবল ইচ্ছা ছিল বলেই হয়ত নিজে নিজে উপরোল্লিখিত সবকটি বিষয় আমি শিখতে পেরেছি। সম্পূর্ণ নিজের আগ্রহ এবং চেস্টা আর সেই সাথে ছিল ধৈর্য।
এইসকল বিষয় যদি আপনার মাঝেও আপনি আবিষ্কার করেন তাহলে আপনি যেটা করতে চাইবেন সেটাই করতে পারবেন। শুধু দরকার জানার অদম্য আগ্রহ, অধ্যবসায়। ব্যস, আপনার রাস্তা পরিস্কার।
আর যত যত সাক্সেস স্টোরি আপনি পড়ছেন সেইগুলোর পেছনে রয়েছে কোঠের পরিশ্রম আর একাগ্রতা। তারা সকলেই একদিন শূন্য থেকে তাদের যাত্র শুরু করেছিলেন যারা আজ সাফল্যের দাড়প্রান্তে দণ্ডায়মান। তাদের চলার পথে নাজানি কত বাধা ও প্রতিকূলতা এসে দাড়াত আর তারা সাহসের সহিত সেটিকে মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেন। কিন্তু তারা কখনোই হতাশাকে তাদের মনে স্থান দিতেন না। আর কোন অবস্থাতেই তারা কখনো আশাহত হননি বা হাল ছাড়েননি। এভাবেই মামুন সৃজন, রাসেল আহমেদ, তমাল আনোয়ারের মত ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষ থেকে নিজেদেরকে সফল ব্যক্তিতে পরিণত করেছেন।
হতাশা নয়, সব কিছুকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সাফল্যের কথা মাথায় রেখে বিশ্বাসের সাথে যাত্রা শুরু করুন। আপনিও হবেন তাদেরই একজন। Best of luck!
আমি কাজী আলী নূর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আপনার কথায় অনুপ্রেরণা পেলাম । ভাল থাকবেন । ধন্যবাদ