ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আমাদের সবারই এখন কমবেশি ধারণা আছে ইন্টারনেট, ব্লগ ও পত্রপত্রিকার কল্যাণে। তবে উল্লেখ করার মত ব্যাপার যেটা তা হল , বিভিন্ন যায়গায় এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যাখ্যা শুনতে শুনতে আমরা মানে হুজুগে বাঙ্গালি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা আসলে কোনটা ব্যাখ্যা আর কোনটা অপব্যাখ্যা। যেমন ধরি কোন একটা জনপ্রিয় কমিউনিটি ব্লগের কথা , এখানে আপনি যদি একটা "ঘরে বসেই আয় করুন ইন্টারনেটে" এ জাতীয় একটা চটকদার শিরোনামযুক্ত একটা পোস্ট দেখেন তাহলে ভিতরে কিছু থাকুক কিংবা না থাকুক সেখানে একবার ঢু মারতে কিন্তু দেরি করবেন না।তবে ভিতরে গিয়ে পিটিসি বা সহজ কথায় লিংক ক্লিক কিংবা অনলাইন সার্ভে করার মত বিষয়ই বেশি দেখা যায়। এসব অশ্বডিম্বমার্কা কাজ করে আজ পর্যন্ত ওনাদের কে কত ইনকাম করেছেন সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।এ ব্যাপারে তর্কে না যাওয়াই ভালো।
তবে চক্ষুলজ্জ্বাহীন এমএলএম কোম্পানির সদস্যরা তাদের "মাল্টিন্যাশনাল কোম্পনি"তে বড় চাকুরির সুবাদে একটা জিনিস বেশ ভালো রপ্ত করে ফেলেন।তা হল , কিভাবে নিজের ডানহাত , বামহাত , ডান পা , বাম পা ইত্যাদি পূর্ণ করতে হবে। তাই চাকুরির পাশাপাশি অনলাইন ইনকামের এ দিকেও একটু মনোযোগ দেন । যার ফলাফল ব্লগে আমরা পাই। নির্লজ্জ্বের মত রেফারেল লিংক বিলি করে তারা হাত,পা,কাধ ভরানোর চেষ্টা করে থাকেন আর কি।যাহোক একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। কিছুদিন আগে আমাদের এক জুনিয়র ছোটভাই খুন হয়।খুবই মর্মান্তিক ঘটনা , স্বভাবতই আমাদের সকলেই খুব আপসেট।ফেসবুকে গ্রুপে আলোচনা , স্মৃতিচারণ চলছে।সবার মন মন খুবই খারাপ।এর মধ্যে ঐ ছেলের ব্যাচের এক ডেস্টিনি সদস্য সকল মেসেজ থ্রেডগুলোতে নিজের পিটিসির রেফারেল লিংক পেস্ট করে যাচ্ছে।গ্রুপের অ্যাডমিন আমরা যারা ছিলাম , প্রতিবাদ জানালাম , ব্যান করার হুমকি দিলাম।সেই ছেলে আমাদের সেই কমেন্টগুলো লাইক মেরে তার নিচে আবার রেফারেল পেস্ট করতে লাগল। এই হল অবস্থা।
যাহোক , আপনি ইন্টারনেটে আয় করতে চান । হোক সেটা নিজের ব্যক্তিগত খরচ চালানোর জন্য কিংবা আরও বড় কিছু যেমন এন্টারপ্রেনার হতে চান তাহলে সবার প্রথমে দুইটা কথা মাথায় রাখতে হবে । প্রথমটা হল , টাকা ইনকাম এত সহজ জিনিস না এবং টাকা এত সহজলভ্য কোন জিনিস না যে আপনি চাইলেই পাবেন , দুইটা ক্লিক করবেন আর মাসে হাজার হাজার টাকা আসতে থাকবে। আর দ্বিতীয়ত , আপনার আয়টা যেন সৎ পথে আসে।ফাকিবাজি করে কখনোই এই পথে বেশিদূর যাওয়া সম্ভব নয়।
যাহোক একটা কথা এখানে বলা ভালো।গ্রামের একজন চুরি করলে কিন্তু সেই গ্রামের সবাইকে চোর বলা হয় এটা আমরা জানি। অনেকেই হয়ত জানেন আমাদের বাংলাদেশ এখন ফ্রিল্যান্সিং এ বিশ্বের প্রথমসারির একটা দেশ।এ তালিকায় পাকিস্তানও আছে , হ্যাঁ প্রথমদিকে আছে।কিন্তু পাকিস্তানিদের কিন্তু একটা ব্যাপারে চরম দুর্ণাম এখানে।সেটা হল, প্রতারণাতে ওদের তুলনা নেই।কোন ক্লায়েন্ট কাজ দিল , এরপর তার থেকে অ্যাডভান্সের টাকা নিয়ে পলায়ন করে থাকেন এদের কেউ কেউ। আমি এরকম অনেক প্রজেক্ট দেখেছি যেখানে উল্লেখ করাই থাকে যে , " নো পাকিস্তানি প্রোগ্রামার প্লিজ " , পেছনের ঘটনা উপরে যেটা লিখলাম এমনই কিছু। আবার বাংলাদেশিদের এই যায়গাতেই সুনাম। এজন্য বিদেশি এমপ্লয়াররা বাংলাদেশিদের প্রতি যথেষ্ট আস্থাশীল।তাই , এই জিনিসটা মাথায় রাখা খুবই জরুরি। আপনি যদি কাজ করতে এসে একটা আকাম করে বসেন , সেটার শাস্তি কিন্তু আপনি পাবেন না।পাবে আপনার দেশটা।একজন বাংলাদেশি কারো সাথে প্রতারণা করলে সেটার ফলশ্রুতিতে আর ৫০ জন বাংলাদেশি যে কাজটা পেত সেটা কিন্তু পাবে না। অন্যদিকে আপনি আপনার একটা ক্লায়েন্টকে আপনার কাজ দিয়ে খুশি করতে পারলে , আপনার স্বদেশি আর একশো জন কিন্তু তাতে উপকৃত হবে।তারা বুঝবেন যে , বাংলাদেশের লোকজন ভালো , এদের উপর আস্থা রাখা যায়।বিদেশিদের সাথে কাজ করার অর্থ হল নিজের দেশের সম্মান জড়িত এখানে। তাই নিজেকে ও দেশকে ছোট করার চিন্তা মাথাতেই আনা যাবে না।
এখন ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে অল্প কিছু কথা বলি।সামনের পর্বে বিস্তারিত আরো লিখব। আমার মতে ফ্রিল্যান্সিং হল , আপনি যে কাজটা ভালো পারেন সেটা কারো দরকার মত তাকে করে দেওয়া , অবশ্যই উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। ঐসব পিটিসি/সার্ভে/রেফারেল ভুলে যান , একশো হাত দূরে থাকুন এসব থেকে। যে কাজটা পারেন সেটাতেই নিজেকে আরো ভালো করে তুলুন। আমি একজন প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং রিলেটেড এত প্রকারের , এত ভাষার , এত প্ল্যাটফর্মের কাজ আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। সবকিছু কিন্তু একজন কখনোই পারবে না।তাই যেকোন এক দিকে যেতে হবে। যেমন , আমি শুধুমাত্র স্মার্টফোন (অ্যান্ড্রয়েড/আইফোন) নিয়ে কাজ করি। আপনি যে ফিল্ডে দক্ষ শুধু সেই ফিল্ডেই নিজের দক্ষতা আরো বাড়ান।আপনার কাজের অভাব হবে না। আপনি ভাবতে পারেন , আপনি তো প্রোগ্রামিং পারেন না , কাজ পাবেন কিভাবে। আপনি কি পারেন সেটা ভাবুন তো একবার।
১. ফেসবুকে একটা লিংক পেস্ট তো করতে পারেন , কিংবা একটা কমেন্ট তো লিখতে পারেন।
২. চেস্টা করলে ভালো মানের আর্টিকেল লিখতে পারেন।
৩. ফটোশপে বা ইলাস্ট্রেটরে ছবি এডিট করতে পারেন।
৪. আপনার ব্যাকগ্রাউন্ডে পড়াশোনা করছে এমন কারো অ্যাসাইনমেন্ট করে দিতে পারবেন।
৫. সিভিলের/ মেকানিক্যালের ছাত্ররা অটোক্যাডে ডিজাইন করতে পারেন।
৬. পাওয়ারপয়েন্ট দিয়ে প্রেজেন্টেশান স্লাইড বানাতে পারেন।
এরকম অসংখ্য কাজ আছে যেটাতে হয়ত আপনি দক্ষ। কিন্তু কাজ করেন না বিধায় ঠিকভাবে নিজেকে বিচার করতে পারেন না। এখানে একটু দেখে নিন একবার।দেখবেন অনেক কিছুই আছে যেটা হয়ত আপনার কাছে কঠিন কিছু না।
এরপর প্রশ্ন হল , কাজ আপনি পারেন।কিন্তু কাজ পাবেন কিভাবে।হ্যাঁ , এটাই সবচেয়ে কঠিন , চ্যালেজ্ঞিং ও ধৈর্য্যের ব্যাপার ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে।তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আপনার সাফল্য নির্ভর করবে আপনি আপনার প্রথম কাজটা কত তাড়াতাড়ি পাচ্ছেন ও সেই কাজটা কত ভালোভাবে শেষ করছেন। আপনি যদি শুরুর কাজটায় ভালো করেন তাহলে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।কাজ পেতে সমস্যা হবে না খুব একটা।আর কয়েকটা কাজ ভালোভাবে শেষ করার পর মানে ভালো রেটিং সহকারে শেষ করার পর , আপনাকে কাজের পেছেনে খুব একটা না দৌড়ালেও চলবে।কাজই আপনাকে খুঁজে নেবে।অর্থাৎ এই পোস্টটা তখন আপনি লিখবেন আর কি 😉
যাহোক , পরের পর্বে বিভিন্ন কাজ , কাজের সাইট , পেমেন্ট ও কাজ পাওয়া নিয়ে কিছু আলোচনা থাকবে। আমি আমার গত ৫ মাসের ফ্রিল্যান্সিং এর অভিজ্ঞতা শেয়ার করার চেস্টা করব।সাথে থাকুন , হয়ত কারো কাজে আসলেও আসতে পারে 🙂
চলবে...
আমি অয়ন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 56 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি অয়ন।ব্লগিং করতে পছন্দ করি সত্যি কিন্তু আমি টেক ব্লগার নই।যেহেতু এটা টেক ব্লগ তাই আমাকে চেস্টা করতে হবে টেক ব্লগারের অভিনয় করার।এই মুহূর্তে ঠিক জানিনা কতটুকু সফল অভিনয় করতে পারব :)।পড়াশোনা আপাতত বুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্টে,ফাইনাল ইয়ার।আর বেশিদিন হয়তো ছাত্র থাকা হবে না,মাত্র এক বছর কিন্তু ছাত্র হয়ে থাকতে পারলেই...
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আমাদের পরিষ্কার ধারনা থাকা দরকার যা তৈরি হবে এরকম কিছু টিউনের দ্বারা ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভ্রাতা 🙂
সাথে থাকলাম কিন্তু …