"ফ্রিল্যান্সিং" ইদানীং কালের ইন্টারনেট ইউজারদের জন্য একটা হট টপিক, বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর জন্য। গত কিছুদিন যাবত ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন জরিপে আমাদের দেশ - এর বেশ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষের জন্যে এটি সৌভাগ্য যে আমরা এখন দেশে বসেই অন্য দেশের কাজ করে নিজেদের প্রয়োজনীয় টাকা আয় করতে পারছি, যদিও সবাই এ বিষয়ে সফল না। সফল না হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ গুলোর মধ্যে ইংরেজি কম জানা, ধৈর্য না থাকা, রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার চিন্তা(!!), নিজের ক্ষমতার বাইরের কাজ করতে চাওয়া(যে কাজ পারবেনা সেই কাজ করতে যাওয়া), কোন বিষয়ে শক্ত ভিত্তি নেই তবুও সে কাজ করতে যাওয়া ইত্যাদি অন্যতম।
তবে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চিন্তাটা কেমন যেন বোকা টাইপের চিন্তাভাবনা, বাহিরের দেশের মানুষরা(উন্নত) অন্য দেশের মানুষকে(তুলনামূলক কম উন্নত) দিয়ে কাজ করাচ্ছে তাদের ব্যয় কমানোর জন্য। তারা কারো জন্য টাকার বস্তা নিয়ে বসে নেই, এক কাজে একাধিক মানুষ আবেদন করবে সেটাই স্বাভাবিক, আর এর মধ্যে আপনাকে ভেঙ্গে না পড়ে নিজের সেরাটুকু দিয়ে যান, সব কাজ যে আপনি পাবেন এমটি ভেবে বসবেন না। ভালো ভালো ফ্রিল্যান্সাররাও অনেক গুলো কাজে আবেদন করে খুব অল্প সংখ্যকই কাজ পায়। আপনি প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজেক্টে আবেদন করুন, ভালো কাজ পারলে এবং যে কাজ দিয়েছে তাকে বিভিন্ন স্যাম্পল দেখিয়ে এবং ভালো ব্যবহার করে যদি আকৃষ্ট করতে পারেন তবেই আপনি কাজ পাবেন, তাছাড়া পাবেন না। মাসে মাত্র ৪-৫টা ভালো মানের কাজ করতে পারলেই কিন্তু আর কাজ করার প্রয়োজন হয় না।
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যে কোন লক্ষ্য ঠিক না করেন তবে আপনি সফল হতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক, এর ব্যতিক্রমও যদি হয়ে থাকে তবে সেটা হবে কাকতালীয়। একজন ভ্রমণকারীকে যেমন ঠিক করতে হয় কোথায় ভ্রমণ করবেন অর্থাৎ তার গন্তব্য কোথায় অনেকটা তেমনি একজন ফ্রিল্যান্সারকেও ঠিক করতে হবে তার গন্তব্য কোথায়।
অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সারই বোঝেন যে ফ্রিল্যান্সিং এ নির্দিষ্ট লক্ষ বা গন্তব্য থাকা আবশ্যক। কিন্তু অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সারই যেটা বোঝেন না বা বুঝেও করেন না সেটা হলো কিভাবে গন্তব্য তৈরি করতে হবে এবং কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌছতে হবে।
নিজের ফ্রিল্যান্সিং লক্ষ্য তথা গন্তব্য খুব সহজ ভাবেই সেট করা এবং সেটা কায়েম করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। ইচ্ছাশক্তি, দক্ষতা আর লক্ষে পৌঁছানোর জন্যে মনোবল ও আত্মবিশ্বাস থাকলেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব। যা কিনা যেকোনো ফ্রিল্যান্সারকে আরো একটিভ এবং সফল করে তুলতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং এ কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানোর তিনটি মূল মন্ত্র তথা ধাপ তুলে ধরা হল:
আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই, লক্ষে পৌঁছানোর জন্যে লক্ষ নির্ধারণই প্রথম মন্ত্র। আপনি কখনোই কোন লক্ষের দেখা পাবেন না যদি না আপনার নিজস্ব কোন লক্ষ থেকে থাকে।
তাই নিজের লক্ষ নির্ধারণই আপনার প্রথম কাজ। লক্ষ নির্ধারণ করুন, এক্ষেত্রে আপনাকে রিয়েলিস্টিক এবং সৎ হতে হবে। যা চান ঠিক সেদিকেই আগাবেন, এর অন্যথা করবেন না। লক্ষ পূরণের মাঝপথে থেমে গেলে মনোবল নষ্ট হবে। তাই ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা ভাবনা করুন, ফ্রিল্যান্সিং এ আপনার উদ্দেশ্য কি এবং লক্ষ কি। আপনি ফ্রিল্যান্সিং এ কতদুর এগোতে চান এর উপর নির্ভর করে আপনার লক্ষ সিলেক্ট করুন। লক্ষ নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন:
কিন্তু একজন ছাত্র, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ীর জন্যে ১০-১২ ঘণ্টা ম্যাসেজ করা বেশ কঠিন ব্যাপার। তাও প্রতিদিনই সময় দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাই আপনি সাধ্যমত যতটুকু সময় ব্যয় করতে পারবেন তার উপর ভিত্তি করে লক্ষ নির্ধারণ করুন
অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার যারা নিজেদের লক্ষ নির্ধারণ করে ফেলেছেন তাদের মধ্যে বেশ সামঞ্জস্য রয়েছে। বলা যায় তারা অনেকটা একই রকম লক্ষ নির্ধারণ করে। নিচে বেশ কিছু কমন লক্ষ দেয়া হল:
বি.দ্রঃ Xকে আপনার কাঙ্ক্ষিত সংখ্যা দিয়ে পূরণ করুন
উপরের লক্ষগুলো ছাড়াও আপনার নিজস্ব আরো হাজারো লক্ষ থাকতে পারে। কারো একাধিক লক্ষও থাকতে পারে, এতে সমস্যা নেই। আপনি নিজের লক্ষ পূরণে অবিচল থাকুন, সফলতা আসবেই। তো আশা করি যাদের লক্ষ ছিলো না তারা লক্ষ নির্ধারণ করে ফেলেছেন 😉 ।
আপনি হয়তো একটি বা একাধিক লক্ষ নির্ধারণ করে ফেলছেন যে লক্ষে আপনাকে পৌছুতেই হবে। এবার ক্যালকুলেট করে ফেলুন আপনাকে কি কি করতে হবে লক্ষে পৌছুতে। কখনোই সহজ পথে এগোবেন না, ফ্রিল্যান্সিং এ অল্প বিদ্যা প্রয়োগ করতে গেলে কখনোই মহৎ কিছু সম্ভব না। তাই আপনার লক্ষে পৌছুতে যা যা দরকার ঠিক তেমন ভাবে সঠিক ও মোক্ষম পথে আগান।
ধরে নিলাম আপনার লক্ষ আপনি ফ্রিল্যান্স রাইটার হতে চাচ্ছেন। তো এজন্য প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে কি কি বিষয় আপনার জানা বাধ্যতামূলক, কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে ফ্রিল্যান্স রাইটার হওয়ার কিছু টিপস দেয়া হলোঃ
অর্থাৎ মূল কথা হলো আপনি যে লক্ষে পৌছুতে চাচ্ছেন সে লক্ষ অর্জন করতে আপনাকে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কিভাবে এগিয়ে যেতে হবে এবং কি করতে হবে সেটা নির্ধারণ করুন। আবারও বলছি শর্টকাট পথে এগোবেন না, এটা নিজের পায়ে নিজেই কুড়োল মারার সমান। সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়ে সঠিক পথে আগানোর জন্যে কি কি করা উচিত এবং করতে হবে তা ঠিক করে ফেলুন। ধরে নিলাম আপনি সেটা করে ফেলেছেন, এবার পরবর্তী ধাপে যাওয়া যাক।
আপনার ফাইনাল ধাপ এটাই, আপনার লক্ষে পৌছুতে যা যা করতে হবে সেগুলোকে বাস্তবতায় রূপ দিতে হবে, অর্থাৎ আপনাকে একশন নিতে হবে। অনেকেই হয়তো জানেন কি করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে কিন্তু কখনোই করার চেষ্টা করেন নি, তাই সফলতার মুখ দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই দরকারি পদক্ষেপগুলো হাতে নিতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় আপনি নির্দিষ্ট একটা সময় ঠিক করে ফেলুন আপনার লক্ষ পূরণের জন্যে। পরিমাণ মতোই সময় সিলেক্ট করবেন। সময় সিলেক্ট করা হয়ে গেলে কাজে নেমে পড়ুন, ঢিলেমির রেশও যেন না থাকে। সবসময়ই আপনাকে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার জন্যে। শিডিউল ছাড়া কাজ করলে সেটা সময় মত না হওয়াটাই স্বাভাবিক, তাই আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার জন্যে শিডিউল তৈরি করে নিতে হবে। শিডিউল মোতাবেক কাজ করতে হবে এবং কাজ সম্পাদন না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকতে হবে বদ্ধপরিকর-ভাবে।
আপনি নিজেই নিজেকে কিছু প্রশ্ন নিয়মিত করতে পারেন, অথবা এমন কোন স্থানে লিখে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন যেখানে আপনি সচরাচর থাকেন (যেমনঃআপনার কম্পিউটারের আশেপাশে)। নিজেকে যে প্রশ্নগুলো করতে পারেন:
প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন এবং নিজেই নিজেকে যাচাই করুন... আশা করি সফলতা লাভ করবেন আপনার ফ্রিল্যান্সিং লাইফে আর আপনার সফলতার গল্প আমাদের শোনাবেন... 😀
আমি ডিজে আরিফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 60 টি টিউন ও 1478 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আরিফ, সাধারণ একজন আরিফ! চাই অসাধারণ কিছু করতে, সম্ভব কিনা জানিনা কিন্তু ইচ্ছাশক্তির বলে অনেক কিছুই করতে চাই। ব্লগিং - এর সাথে পরিচয় খুব বেশি দিনের না, তবুও বিষয়টাকে ব্যাপকভাবে উপভোগ করছি। ভালো মানের ব্লগার হওয়ার ইচ্ছা আছে। বর্তমানে আমি দশম শ্রেণীতে ঢাকার স্বনামধন্য বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত তথ্যগুলো বিস্তারিত ও সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ। আমার মত অনেকেরই কাজে লাগবে।