আপনি কি জানেন OEM এবং ODM কি? আজ আমরা আলোচনা করব এই OEM এবং ODM এর বিষয়ে; জানব কিভাবে ইলেক্ট্রনিক্স এর দুনিয়ায় কিভাবে প্রোডাক্ট বা গ্যাজেটস তৈরি করা হয়; আসল পার্টস ম্যানুফেকচারার কারা, আসল ডিজাইন ম্যানুফ্যাকচারার কারা; আর কিভাবে আপনি একটি রি-ব্র্যান্ডেড এবং কপি ফোন হাতে পান এ বিষয়ে।
সব কোম্পানি তাদের সব প্রোডাক্ট তৈরি করেনা; সব কোম্পানি সব প্রোডাক্ট বানাতেও পারে না। ধরুন আপনার কাছে একটা স্যামসাং এর ফোন আছে; আপনার কী মনে হয় ওই ফোন এর সকল পার্টস স্যমসাং বানিয়েছে? আবার ধরুন আপনার কাছে লিনোভো এর ল্যাপটপ আছে; আপনার কি মনে হয় ল্যাপটপ এর সব পার্টস লিনোভো বানিয়েছে? আবার আপনার কাছে ধরুন আইফোন আছে; আপনার কি মনে য় সেটা অ্যাপেল তাদের নিজেদের ফ্যাক্টরিতে বানিয়েছে? এইখানে দুটি প্রধান কনসেপ্ট সম্পর্কে জানতে হবে; একটা হল OEM এর কনসেপ্ট এবং ODM এর কনসেপ্ট।
প্রথমে OEM নিয়ে আলোচনা করা যাক। ধরুন আপনাকে একটা প্রোডাক্ট বানাতে হবে; ধরে নিন একটা সিম্পল সাউন্ডবক্স, স্মার্টফোন, মনিটর, মাদারবোর্ড বা এরকম কিছু। কিন্তু আপনার কাছে এমন ফ্যাসিলিটি নাই যে আপনি তাদের বানাতে পারবেন; কিন্তু আপনার কাছে সম্পূর্ন আইডিয়া আছে, সম্পূর্ন কনসেপ্ট আছে কী বানাবেন, কিভাবে কাজ করবে এ বিষয়ের। আপনি সহ আপনার টীম প্রোডাক্ট এর ওপর গবেষনা করছেন, ল্যাব এর ভার্চুয়ালি ডিজাইন করে সিমুলেট করছেন; অথবা ফিসিক্যালি একটি কপি আপনারা তৈরি করলেন।
তারপর সেটাকে দিলেন অন্য একটা কোম্পানিকে; তাদের বললেন আমি এই ডিজাইন এর, এই স্পেসিফিকেশন এর প্রোডাক্ট ডিজাইন করেছি; আপনারা এটা ম্যানুফেকচার করেন বা উৎপাদন করেন এবং বাস্তবে রূপান্তর করেন। এখানে সহজভাবে বলতে গেলে ব্যাপারটা এরকম; কাঠের চেয়ার বানাতে হবে; আপনি জানেন চেয়ারের ডিজাইন কেমন হবে; হাতল থাকবে কিনা তারপর ফার্নিচাররের দোকানে গিয়ে আপনার কনসেপ্ট তাদের জানিয়ে দিয়ে ১০ টি চেয়ারের অর্ডার দিয়ে আসলেন।
এখানে OEM এর কনসেপ্টটাও এরকম এখানে ক্লায়েন্ট প্রোভাইড করে; কেমন ডিজাইন হবে, স্পেসিফিকেশন কেমন হবে এগুলো; এখানে প্রোডাক্ট এর যত আইপি, স্বতাধিকার,ডিজাইন এর কন্ট্রোল এটা তাদের [যারা অর্ডার দিচ্ছে বা ক্লায়েন্ট] কাছেই থাকে । OEM এর কাজ হল তারা শুধু সেটা বানিয়ে দেয় টাকার বিনিময়ে।
উদাহরন হিসেবে Foxcon হল অ্যাপেল এর OEM তারা অ্যাপেল এর সব প্রোডাক্ট বানিয়ে দেয়। এখানে ডিজাইন সহ যাবতীয় সব কনসেপ্ট হল অ্যাপলের; শুধু ম্যানুফোকচার বা উৎপাদন করল হল Foxcon। এটাই হল মূলত OEM এর কনসেপ্ট। আবার কখন কখনও OEM কে আালাদা ভাবেও নেয়া হয়; যেমন আপনার ডিভাইস এর প্রোসেসর হল মিডিয়াটেক এর; তাহলে এক্ষেত্রে সে প্রোসেসর এর OEM হল মিডিয়াটেক।
এখন আসা যাক ODM এর কনসেপ্টটায়। ধরুন আপনার প্রোডাক্ট এর জন্য আপনার আইডিয়া আছে; যে আপনার প্রোডাক্ট এ এই এই করা যাবে; কিন্তু আপনার কাছে ডিজাইন নেই। তখন আপনি একটা কোম্পানির কাছে গিয়ে আপনার আইডিয়া জানালেন; এবং তাদের বললেন ডিভাইসটা বা প্রোডাক্টটা কেমন হবে সেটা তৈরি করতে। তারপর সেই কোম্পানি বা ODM আপনাকে বলবে হ্যা আমরা এই এই ডিজাইন করেছি বা প্রোডাক্ট এই এই রকমের হতে পারে; এভাবে তারা আপনার সামনে নানা ডিজাইন- গঠন তুলে ধরবে।
তারপর আপনার পছন্দ হলে আপনি অর্ডার দেবেন; তারপর আপনি যে লোগো দিবেন; যে বক্স দিবেন, যে মাদারবোর্ড দিবেন তারভেতরই তারা সেই প্রোডাক্ট প্রস্তুত করে আপনাকে দিয়ে দেবে। তবে এখানে ডিজাইন নিয়ে কোনো কন্ট্রোল বা স্বতাধিকার থাকে না। এখানে ডিজাইন এর সব পেটেন্ট থাকে ওই ODM এর কাছে।উদাহরন হিসেবে Quanta এর নাম নেয়া যায়; যারা Dell,HP,Lenovo এর মত বড় বড় কোম্পানির ল্যাপটপ প্রস্তুত করে দেয়।
এখন Dell তাদের Inspiron মডেল এর নতুন ল্যাপটপ বানাবে; এখানে তারা কিন্তু নিজে থেকে কোন ডিসিশন নিতে পারবে না। তাদের এজন্য Quanta এর সাথে মিটিং করতে হবে তাদের বলবে, দেখ আমামদের এই এই আইডিয়া; এখন তোমরা বল কিভাবে এটা তৈরি করা যায়। তারপর Quanta ল্যাপটপ প্রস্তুত করে দেয়; Dell সেটা মার্কেটিং করে।
এখন কপি বা রিব্র্যান্ডেড ফোন এর যে কনসেপ্টটা; সেখানে আসলে যা হয় তা হল। আপনার কোম্পানির জন্য একটা নতুন ফোন দরকার; আপনি চায়না চলে যান যেকোনো ODM এর কাছে। তারা আপনাকে রেস্টুরেন্টের মেনুর মত একটা পুরা ক্যাটালগ দেখিয়ে দেবে; তারপর বলবে আমাদের কাছে এই এই ফোন আছে, এই এই স্পেসিফিকেশন আছে; আপনি বলেন আপনার কোনটা লাগবে? এখন আপনার যেটা পছন্দ তারা ওই ফোন যেভাবে আপনি চান সেভাবে আপনাকে সময়মত ডেলিভার করে দেবে।
পিছে আপনার যে লোগো দরকার,যে বক্সে লাগবে এই সবই আপনি করতে পারবেন একটি ODM এর মাধ্যমে। এখন ধরুন Walton কয়েকবছর আগে একটা ফোন কপি করেছিলো Gionee এর। এইক্ষেত্রে Gionee এর যে ODM ছিলো Walton গিয়েছে সেই ODM এর কাছে এবং সেই মডেলটি অর্ডার করেছে তাদের লোগো দিয়ে [ একে রিব্র্যান্ডেড ফোন বলে ] । এখানে ODM এর কাছে সব রেডি থাকে; কেননা ডিজাইন এর পেটেন্ট, আইপি সব তাদের কাছেই থাকে।তারপর অর্ডার দেয়ার পর সেটা চলে এসেছে সরাসরি বাংলাদেশ। এটাই হল মূলত ODM এর কনসেপ্ট।
কিন্তু এখানে R&D বা রিসার্স এবং ডেভেলপমেন্ট যে বিষয়টা; সেটা কিন্তু ক্লায়েন্ট সাইডে হচ্ছে না। এখন অ্যাপেল নিজেরা রিসার্স করে সেটা ফক্সকন থেকে বানিয়ে নিচ্ছে সেটা আলাদা কথা;স্যমসাংও একই। কিন্তু আমাদের দেশের কোম্পানিদের ক্ষেত্রে তাদের একটাই চিন্তা; আমাদের ফোন বানাতে হবে; চায়নার ওই ODM ফোন বানাতে পারে ওদের টাকা দিয়ে বানিয়ে নেই; পরে আমরা সেটা মার্কেটিং করব; বিজনেস করব। এখন আমরা যদি অনলাইন স্টোর গুলোর দিকে তাকাই; তবে দেখতে পাব অনেক অনেক ভিআর গ্লাস; ডিজাইন একই শুধু দাম ও কোম্পানির নাম ভিন্ন। এখানে সেই ডিজাইন এর ভিআর গ্লাস এর ODM কিন্তু একই; তারা শুধু টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কোম্পানির জন্য তা বানিয়ে দিচ্ছে। এগুলো হল ODM প্রোডাক্ট বা রিব্র্যান্ডেড প্রোডাক্ট।
এখন কোন প্রোডাক্ট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে আছে; কিন্তু ভিতরে সেটা একই জিনিস। এখানে যদি কোন কোম্পানি বলে এটা আমরা ডেভেলপ ও রিসার্চ করেছি তাহলে এটা গ্রাহকদের ঠকানো হবে। আশা করি OEM এবং ODM এর ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। আরও জানতে পেরেছেন কপি বা রিব্র্যান্ডেড ফোন কিভাবে তৈরি হয়। ভালো লাগলে টিউমেন্টে জানাবেন। শেয়ার করতে ভুলবেন না। ইনসাআল্লাহ এভাবেই আমি হাজির হব নিত্যনতুন আর্টিকেল নিয়ে।ফেসবুকে আমি। ধন্যবাদ
যারা বলছে এই আর্টিকেল আমি কপি করেছি; তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আমাকে প্রমান দেন বাংলাদেশে কে এরকম আর্টিকেল আগে লিখেছে।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।
Hum tnx…. janie deyar jonno