মহাবিশ্বের তুলনায় সৌরজগৎ কিছুই নয়, একেবারে বালির মতো। আর সে তুলনায় পৃথিবী তো অনেক ছোট। এই মহাকাশের অনেক কিছুই এখনও অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। অধরা রয়ে গেছে মহাবিশ্বের অনেক রহস্যও। আমাদের জানার সীমাবদ্ধতায় হয়তো অচেনা রয়ে গেছে নানা বিস্ময়কর জগৎ। কতটা জানি আমরা? আরও কত কোটি কোটি গ্যালাক্সি রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা তো কেবল চাঁদে পা দিলাম, মঙ্গলে যান প্রেরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে প্রায় সবই আমাদের অজানা। অজানা সেই জগতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক নয় পৃথিবী ছাড়া বসবাসযোগ্য কোনো গ্রহের অস্তিত্বও। আর সেই অচীন গ্রহের বাসিন্দাদেরই আমরা এলিয়েন বলি। অর্থাৎ এলিয়েন বলতে এমন জীবকে বোঝায় যাদের উদ্ভব পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও। আর সেখানেই এদের বসবাস। এলিয়েন দেখতে কেমন হবে তার কোনো ঠিক নেই। তারা দেখতে পৃথিবীর প্রাণীদের কাছাকাছিও হতে পারে, আবার এ ধারণা থেকে সম্পূর্ণ আলাদাও হতে পারে। আবার সত্যি সত্যি মহাবিশ্বে এলিয়েনের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা এ নিয়েও দ্বিধার অন্ত নেই। তবে এলিয়েন আসলেই রয়েছে_ এরকম বিশ্বাসীদের সংখ্যাই বেশি। এলিয়েনরা দেখতে কেমন? আমাদের চেয়ে পিছিয়ে নাকি অনেক এগিয়ে? তাদের ভাষা কি?
এলিয়েনদের এসব বিষয় সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের অস্তিত্ব রয়েছে_ এ ধারণার পিছনে যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ খুঁজে পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। আর তাদের ধারণা এলিয়েন আমাদের মাঝেই হেঁটে বেড়াচ্ছে। ভিনগ্রহের প্রাণী বা 'এলিয়েন' আছে এবং তারা আমাদের মধ্যেই মানুষের ছদ্মবেশে হাঁটছে, চলছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাস্তবে তার প্রমাণ মিলুক বা না মিলুক অন্ততপক্ষে প্রতি পাঁচজনে একজন মানুষ এমনটাই বিশ্বাস করে।
এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে কি নেই থাকলে তারা কোথায় কিভাবে রয়েছে এ নিয়ে 'রয়টার্স বিসিএমএম'-এর এক বিশ্ব জরিপের ফলাফলে মানুষের এই বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে। ২২টি দেশের ২৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, ভারত এবং চীনে এ বিশ্বাস সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে এলিয়েনরা মানুষের ছদ্মবেশে আমাদের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবশ্য, বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ মানুষই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। বাজার গবেষণা সংস্থা ইপসস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জন রাইট বলেন, 'জরিপের ফলাফলে এটা মনে হচ্ছে যে, জনসংখ্যা বেশি হওয়ার সঙ্গে এলিয়েনে বিশ্বাস বেশি থাকার হয়তো একটা সম্পর্ক আছে। কেননা, কম জনসংখ্যার দেশের মানুষের মধ্যে এবিশ্বাস তুলনামূলকভাবে কম।'
এছাড়া দেখা গেছে, এলিয়েনে বিশ্বাস নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি। পুরুষদের মধ্যে এ বিশ্বাস ২২ শতাংশ হলেও নারীদের মধ্যে তা ১৭ শতাংশ। আর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এলিয়েনে বিশ্বাস বেশি।
পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোনো গ্রহে অন্য কোনো প্রাণী আছে কিনা সেই তর্ক-বিতর্ক চলছে এখনও। মহাশূন্যে কোথাও কেউ আছে কিনা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য চলছে বিরামহীন প্রচেষ্টা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো রিসার্চ প্রজেক্টের পিছনে ব্যয় করছে কোটি কোটি ডলার। আমেরিকান জ্যোতিবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে সৌরজগতের বাইরের কোনো সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে একটি প্রজেক্ট চালু করেন, যার নাম ছিল প্রজেক্ট ওজমা। এখন ১০টিরও বেশি দেশে সেটি অনুসন্ধান কাজ চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বর্হিবিশ্ব থেকে বিচ্ছুরিত কোনো সঙ্কেত ধরা পড়েনি। বিশাল মহাশূন্যে এই খোঁজার শুরু আর শেষ কোথায় সেটা নির্ণয় করাই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের পৃথিবী যে গ্যালাক্সির বাসিন্দা তার নাম হলো মিল্কিওয়ে। অন্য হাজার কোটি গ্যালাক্সির কথা বাদই দিলাম, শুধু মিল্কিওয়ে ছায়াপথেই রয়েছে ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র। আবার এই নক্ষত্র পরিভ্রমণরত প্রাণের উপযোগী কোনো গ্রহ খুঁজে ফেরা অনেকটা পাগলামোই মনে হতে পারে। এরপরও বিজ্ঞানীরা এলিয়েন রহস্যের মোড়ক উন্মোচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বিশ্বের অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা, এই মহাবিশ্বে আমরা মোটেও একা নই। আমাদের মতো আরও অনেক বুদ্ধিমান প্রাণীই নাকি ছড়িয়ে আছে মহাবিশ্বে। আর এদেরই আমরা এলিয়েন নাম দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এরকম কিছু যদি থেকেই থাকে, তাহলে এরা কেমন? তারা খায়ই বা কি? তাদের কি আমাদের মতোই বুদ্ধি আছে, নাকি স্রেফ পোকামাকড়ের মতো বোকাসোকা। তবে অধিকাংশেরই অভিমত, এরা আমাদের থেকেও অনেক বেশি বুদ্ধিসম্পন্ন। আজকের সভ্যতা যতটুকু এগিয়েছে, সে তুলনায় এলিয়েনরা নিশ্চয়ই আরও অনেক অগ্রগামী। আমাদের সভ্যতার শুরু থেকেই যদি তারা ভিন্ন গ্রহ থেকে এখানে আসতে পারে, তাহলে এতদিনে তাদের উন্নতি কতটুকু হতে পারে তা কেবল কল্পনা করা যায়। কে জানে তারা হয়তো নিয়মিতভাবেই পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করে চলেছে! আর এ কারণেই হয়তো পৃথিবীতে হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায় কিছু অদ্ভুত চেহারার জীব। চোখের পলকেই আবার তারা মিলিয়েও যায়। তারাই কি তবে ভিনগ্রহের বাসিন্দা, এলিয়েন?
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের ধারণা, এলিয়েন আছে, অবশ্যই আছে। এত বড় মহাবিশ্ব আর এত গ্রহ-নক্ষত্র-ছায়াপথ, এদের মধ্যে কি কোথাও নেই এলিয়েন! তিনি বিশ্বাস করেন, অবশ্যই এলিয়েন আছে। শুধু আমরাই তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। তবে একদিন তাদের খোঁজ পাওয়া যাবেই।
এলিয়েনের অস্তিত্ব নিয়ে কল্পনাবিলাসীদের যেমন আগ্রহের শেষ নেই, তেমনি দ্বিধা-দ্বন্দ্বেরও কমতি নেই। এলিয়েনরা যদি থেকেই থাকে তাহলে ওরা কী পৃথিবীতে আসে না। অনেকেই বিচিত্র প্রাণী, বিচিত্র আকারের সসার আর নভোযান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। আবার কেউ এসব ঘটনাকে নেহাতই দৃষ্টিভ্রম বা মতিভ্রম বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এলিয়েনরা যদি পৃথিবীতে এসেই থাকে, তাহলে ওরা কেন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে না? বিজ্ঞানীদের ধারণা, তারা হয়তো আমাদের ভাষা বুঝতে পারে না বা আমরা তাদের ভাষা বুঝি না। কিন্তু তাদের তো নিশ্চয়ই ভাষা পরিবর্তন করে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে। কারণ এলিয়েনদের আমরা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা সভ্যতার বাসিন্দা বলেই জানি। তাছাড়া সিনেমায় তাদেরকে সে রকম করেই দেখানো হয়। তবে এগুলো সবই কল্পনা। বিশেষ করে যারা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখেন, সেসব লেখকদের কল্পনা। আর বিভিন্ন সিনেমায় তাদের বিভিন্ন রূপে পরিচালকরা তুলে ধরেন।
প্রশ্ন আসে এলিয়েনরা কিসে চড়ে পৃথিবীতে আসে? অনেক সিনেমায় দেখা গেছে, এলিয়েনরা বিশাল বিশাল মহাকাশযানে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। এ মহাকাশযানগুলো নিয়েও গবেষণার শেষ নেই। কেউ এদেরকে বলে ফ্লাইং সসার বা উড়ন্ত চাকতি, আবার কেউ বলে আন-আইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট সংক্ষেপে ইউএফও। এই ফ্লাইং সসারে করে এলিয়েনরা দূর কোনো গ্রহ থেকে চোখের পলকে পৃথিবীতে আসে এবং আবার চলেও যায়। তাদের গতির কাছে আমরা হার মেনে যাই। অর্থাৎ আমাদের বিজ্ঞান হার মেনে যায়। যে কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় এই সসার দেখতে পেয়েও তাকে শনাক্ত করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই সেটি অশনাক্তই থেকে গেছে। আবার জোর করে কেউ বলতেও পারছে না যে এগুলো সব মিথ্যা। কারণ হিসেবে অনেক প্রমাণও রয়েছে সবার সামনে, যাতে এলিয়েনদের যান বলেই তাদেরকে শনাক্ত করা যায়।
কিছুদিন আগে নাসার গবেষকদের এক দাবিতে এলিয়েনের অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া গেছে। নাসার গবেষকরা নাকি শনির সবচেয়ে বড় চাঁদ টাইটানে এলিয়েন বা মহাজাগতিক প্রাণী থাকার প্রমাণ পেয়েছেন। নাসার ক্যাসিনি থেকে পাঠানো ডেটা বিশ্লেষণ করেই গবেষকরা টাইটানে এ সূত্র খুঁজে পেয়েছেন। গবেষকদের বরাতে টেলিগ্রাফ অনলাইনে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শনির অনেকগুলো চাঁদের মধ্যে একমাত্র টাইটানের আবহাওয়াই প্রাণ ধারণের উপযোগী। আর চাঁদের এই আবহাওয়ায় জীবনের উৎপত্তি হয়েছে এবং তারা শ্বাস নিতে পারছে। আরো জানা গেছে, এ ভূপৃষ্ঠের জ্বালানি খেয়েই নাকি বেঁচে আছে টাইটানের এসব এলিয়েন।
অবশ্য এর আগে জ্যোতির্বিদরা দাবি করেছিলেন, টাইটানের আবহাওয়া প্রাণ ধারণের পক্ষে অসম্ভব শীতল। এ গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে 'ইকারাস' এবং 'জিওফিজিক্যাল রিসার্চ' সাময়িকীতে। এদিকে ইকারাস সাময়িকীর বরাতে জানা গেছে, টাইটানের হাইড্রোজেন গ্যাস গ্রহটির আবহাওয়া মণ্ডলে প্রবাহিত হচ্ছে, কিন্তু পৃষ্ঠদেশে এসে এটি হারিয়ে যাচ্ছে। হাইড্রোজেন গ্যাসের এই প্রবাহ থেকেই প্রমাণিত হয় টাইটানে বসবাসরত এলিয়েনরা শ্বাস নিতে সক্ষম। অন্যদিকে গবেষকরা জানিয়েছেন, টাইটানের আবহাওয়ায় প্রাণ ধারণ সম্ভব। সূর্যরশ্মির সঙ্গে এ গ্রহের বায়ুমণ্ডলে থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলো বিক্রিয়া করে অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি করে বলে গবেষকরা ধারণা করছেন। যদিও ক্যাসিনির পাঠানো ডেটা থেকে এ ধরনের কোনো প্রমাণ তারা পাননি।
মানুষ যেভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নিতে অক্সিজেন ব্যবহার করে তেমনি টাইটানের এলিয়েনরা হাইড্রোজেনে শ্বাস নিয়ে টিকে আছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, আগামী ৪০০ কোটি বছর পরে সূর্য যখন লাল বামন দৈত্যের আকার ধারণ করবে, তখন টাইটানে বাস করাটাই হবে উপযুক্ত। কারণ তখন এটিই হবে স্বর্গতুল্য।
বিতর্ক থাকলেও যেহেতু এলিয়েন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আর কৌতূহলের কোনো শেষ নেই, তাই ধরে নেওয়া যায় সত্যিই হয়তো ভিনগ্রহের কিছু একটা আছে। যদি থেকেই থাকে তাহলে ওদের আকৃতি কেমন? এই বুদ্ধিমান প্রাণীরা দেখতে ঠিক কী রকম হবে তা নিখুঁতভাবে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এদের চেহারায় কী কী থাকতে পারে, তা অন্তত বলা যায়। কারণ, বিজ্ঞানের প্রাথমিক নিয়মগুলোকে কোনো ক্ষেত্রেই উতরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্বজগতের সব জায়গাতেই বিজ্ঞানের কিছু মৌলিক নিয়ম মোটামুটি একই রকম।
আমরা প্যান্ট, শার্ট, জুতা, হাতঘড়ি কতো কিছুই তো পরি, কিন্তু এলিয়েনরা কি পরে? যারা এলিয়েন দেখেছেন তাদের ভাষ্য, এলিয়েনরা নাকি কিছুই পরে না। ব্যাপারটা একটু খাপছাড়া মনে হতে পারে। প্রশ্ন জাগে, তবে কি ওরা এখনও কাপড় আবিষ্কার করতে পারেনি? এলিয়েনরা কি আমাদের চেয়ে বুদ্ধিতে এখনও পিছিয়ে আছে? বিষয়টি আসলে এমন নয়। কাপড় না পরলেও ওরা এক ধরনের হুড ব্যবহার করে। সম্ভবত আমাদের মতো স্পেস স্যুট টাইপের কিছু একটা। যেহেতু বুদ্ধিতে ওরা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে তাই কাপড়-চোপড়ের ব্যাপারে ওদের অতি আধুনিকায়ন একেবারে অবাস্তব নয়।
এলিয়েন দেখেছেন এমন মানুষদের দাবি_এলিয়েনরা লম্বা লম্বা জোব্বা পরে থাকে। তাদের মুখ ঢাকা থাকে লম্বা হুডে। আর আকৃতিতে অনেকটা মানুষের মতো হলেও তারা দেখতে রীতিমতো ভয়ঙ্কর। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এলিয়েনরা ক্লোজ ফিটিং জাম্পস্যুট পরে থাকে। অনেকটা সুপারম্যানের মতো। আবার রোবটের মতো বিভিন্ন পদার্থের আবরণও নাকি পরে থাকতে দেখা গেছে।
মজার ব্যাপার হলো_ এলিয়েনদের স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থাও নাকি আছে। তবে সবাই কিন্তু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না। কেবল যেসব এলিয়েন লম্বা তারাই পড়াশোনা করার সুযোগ পায়! আর এমনই একদল ছাত্র এলিয়েন নাকি পৃথিবীতে পড়তে এসেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের কোনো এক বনের মধ্যে এই এলিয়েন দলকে পড়াচ্ছিলেন তাদেরই এক শিক্ষক। আর এই ঘটনা দেখে ফেলেন বিখ্যাত লেখক হোয়াইটি স্ট্রেইকার। তিনি তার 'সিক্রেট স্কুল : প্রিপারেশন ফর কন্ট্রাট' বইতে এদের কথা লিখেছেন। এ নিয়ে অবশ্য বিতর্কও কম হয়নি।
টিভি পর্দায় নাটক কিংবা সিরিয়ালে অথবা মুভিতে আমরা বিচিত্র আকৃতির সব এলিয়েনদের দেখে থাকি। 'দি ব্লব' সিনেমার নায়ক স্টিভ ম্যাকুইন যাদের সঙ্গে লড়াই করলেন, সেই গ্রহান্তরের বুদ্ধিমানরা জেলির মতো থকথকে এক ধরনের প্রাণী। এরা এককোষী প্রাণী অথচ মাংসাশী! একেকোষী প্রাণীর মাংস গিলে খাওয়া যে কত হাস্যকর, তা জীববিজ্ঞানের প্রথম পড়ুয়ারাও জানে। কারণ, একটি কোষ যদি বিশাল আকৃতির হয় তা হলে তার প্রোটোপ্লাজমের কেন্দ্রস্থল হবে পরিধির থেকে অনেকটা দূরে। ফলে তার মধ্যে খাদ্য-নির্যাস ও গ্যাসীয় পদার্থের চলাচল হবে এত ধীরে যে, তার অস্তিত্ব রক্ষাই সম্ভব নয়।
উল্টো দিকে আবার একটা গল্পে দেখা যাচ্ছে যে, গ্রহান্তরের প্রাণীগুলো মসুর ডালের চেয়ে ছোট। এর লেখক হয়তো 'মাইকোপ্লাজমা' নামক ব্যাকটেরিয়ার কথা জেনে উৎসাহিত হয়েছিলেন। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চির এক কোটি ভাগের এক ভাগ। প্রাণীদের ছোট হওয়ার সীমা নেই বটে। তবে তারা বুদ্ধিমান হবেই না। কারণ বুদ্ধির জন্য যে কয়েক কোটি জটিল কোষ সমন্বিত মস্তিষ্ক দরকার, তা ওইটুকু মাথায় ধরবে না। তাই বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য আকৃতির একটা সীমা আছে। একটা জন্তুর আকৃতিকে যদি কোনো উপায়ে অর্ধেক করে দেওয়া যায়, তাহলে জ্যামিতিক নিয়মে তার উপরতলের ত্বক ও অভ্যন্তরীণ কলকব্জার অনুপাত হয়ে যাবে চার গুণ। ফলে তখন তার দেহের তাপ ছড়িয়ে পড়বে অনেক তাড়াতাড়ি। অর্থাৎ শরীরটা দ্রুত ঠাণ্ডা হতে থাকবে। এ কারণে তাকে ঘনঘন খাবার গ্রহণ করে দেহের তাপ ঠিক রাখতে হবে। এই ব্যাপারটাই ঘটে ছোট্ট হামিং বার্ডের ক্ষেত্রে। তাই গ্রহান্তরের বুদ্ধিমান প্রাণীরা এত ছোট হতে পারে না যে, তাদের খাওযা-দাওয়াতেই সময় চলে যাবে।
এলিয়েন নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন সবার মধ্যে গাঢ় আকারে রয়েছে। আর তা হলো এলিয়েনের কি ডানা থাকতে পারে। বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ এমনটি মোটেও সম্ভব নয়। কেননা, আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যেসব প্রাণীকে উড়তে দেখা গেছে, তাদের ওজন খুব বেশি হলে ২০ পাউন্ড। তার চেয়ে বেশি ওজনের কোনো প্রাণীকে উড়তে হলে ধড়ের চেয়ে মাথাটাকে হতে হবে অনেক বেশি হাল্কা। এটুকু মাথায় ঘিলু আর কতটুকু থাকবে! বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য অসংখ্য জটিল সেল থাকতে হয়। ছোট মাথায় তা কি করে সম্ভব? তবে আরেকটি যুক্তি রয়েছে। গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব যদি খুব বেশি হয় বা গ্রহটার মাধ্যাকর্ষণ খুব কম হয় তা হলে ভারী মাথার প্রাণীদেরও ওড়ার সুবিধা হতেও পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা হয়ে যায় সোনার পাথরের মতো। কারণ মাধ্যাকর্ষণের টান কম হলে ঘন বায়ুমণ্ডল থাকা খুব অস্বাভাবিক। আবার ঠিক তেমনই ঘন বায়ুমণ্ডল থাকা মানে মাধ্যাকর্ষণের টানও খুব বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। তাই গ্রহান্তরের উড়ন্ত বুদ্ধিমানের কল্পনা বাস্তবায়িত হওয়া খুব মুশকিল।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, পায়ে চাকা লাগানো থাকলে চলাফেরা বা দৌড়ানোর খুব সুবিধা হতো। তাই গ্রহান্থরের কিছু রোবট জাতীয় জীবকে চাকার সাহায্য দৌড়তে দেখানো হয়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, খুব মসৃণ রাস্তা বা রেললাইনের ওপর চাকার যে সুবিধা তা এবড়োথেবড়ো জায়গায় কখনোই পাওয়া যায় না। যদি সেটা হতো, তাহলে বিবর্তনের দয়ায় পৃথিবীতে কারও না কারও শরীরে একটু আধটু চাকা গজাবার লক্ষণ দেখা দিতই! কিন্তু চাকা না হোক, অনেকেরই প্রশ্ন এলিয়েনেরও কি দুটি করে পা থাকে? নাকি দুটোর বেশি পা রয়েছে? যদি সত্য জীবের দুটোর বেশি পা থাকত, তা হলে সুবিধা কি হতো? বিজ্ঞানীদের যুক্তি, মাথাটাকে উপরে তুলে শরীরটাকে খাড়া করে রাখার জন্য দুটো পা-ই সবচেয়ে আদর্শ। কারণ এর বেশি পা হলে জন্তুদের মতো দেহটাকে অনুভূমিক রাখতে হবে পায়ের ওপর ভর দিয়ে। এতে জন্তুদের মতো দৌড়ার জোর হবে বটে, কিন্তু তা হলে পেশি স্নায়ুর মধ্যে সামঞ্জস্য করার জন্য মস্তিষ্কেও স্নায়ুকেন্দ্রের কোষগুলোকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করে অনেক বেশি শক্তি ক্ষয় করতে হবে। ফলে মস্তিষ্কের এই অঞ্চলটুকুর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অন্য অঞ্চলগুলো হয়ে পড়বে দুর্বল। আবার অন্যদিক দিয়ে বলতে গেলে, পৃথিবীতে ৬ পা বা তার বেশি পা ওয়ালা পোকামাকড়ের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু কেউই বুদ্ধিমান নয়। চার পাখনা ওয়ালা আদিম মাছ 'ইউস্থেনোপ্টেরন' থেকে যেসব চার পা ওয়ালা জন্তু বিবর্তিত হয়েছে, তাদের বুদ্ধি বেড়েছে বেশি কিন্তু পায়ের সংখ্যা বাড়েনি। মানুষও এই বংশধারার উত্তরপুরুষ, তবে তার দুটো পা বদলে দিয়ে দুটো হাত হয়েছে বুদ্ধিপ্রয়োগের জন্য। আর তাই গ্রহান্তরের বুদ্ধমানদেরও এর চেয়ে বেশি হাত-পা থাকার কথা নয়।
চোখ সম্পর্কে ও একই কথা বলা যায়। সারা গায়ে গাদা গাদা চোখ থাকা মানে মস্তিষ্কেও গাদা গাদা দৃষ্টিকেন্দ্র থাকা বা একটা দৃষ্টিকেন্দ্রের মধ্যে জটিলতা বাড়ানো। আমরা যখন দেখি, তখন একটা জিনিসেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, দুটো জিনিসে একসঙ্গে দৃষ্টি দেয়া যায় না। বস্তু থেকে আলোক রশ্মি্ন দুটো চোখে পড়লেও চোখের লেন্স তাকে মস্তিষ্কের ভেতর একই বিন্দুতে মিলিত করে। অনেক চোখ থাকলে সবকিছু গুলিয়ে যাবে। সৃষ্টির আদি থেকে আজ পর্যন্ত যত প্রাণীর চোখ ফুটেছে, তাদের দুটো চোখের জায়গা থেকেছে একদম কাছাকাছি, এমনকি কিছু কিছু কীট পতঙ্গের পুঞ্জাক্ষিও তৈরি হয়েছে ঘেঁষাঘেঁষি করে। একটা বড় চোখ বা অনেক চোখ থাকলে জীবন সংগ্রাম যদি সামান্যও সুবিধা হতো তা হলে প্রকৃতি একবার অন্তত কোনো জীবের ক্ষেত্রে তা পরীক্ষা করে দেখত। তাই গ্রহান্তরের বুদ্ধিমানদের সামনে-পেছনে চোখ থাকতে পারে না, এটা নিশ্চিত। শুধু চোখ নয়, কান ও নাকের অবস্থান হবে মস্তিষ্কের একদম কাছে। এই ইন্দ্রিয়গুলো যদি দূরে থাকে, তা হলে সংবেদন অনুভূত হতে সময় লাগবে বেশি, ফলে প্রাণীরা চটপটে হবে না, প্রতিক্রিয়া হবে দেরিতে। তাই গ্রহান্তরের কোনো বুদ্ধিমানের মস্তিষ্ক যদি থাকে পেটের কাছে, তা হলে ওই ইন্দ্রিয়গুলোও থাকবে তার কাছাকাছি। কিন্তু সেটাও সম্ভ নয়। কারণ সবচেয়ে দরকারি নিয়ম হচ্ছে মস্তিষ্কে থাকতে হবে এমন জায়গায়, যাতে তা মাটি থেকে সবচেয়ে উঁচুতে উঠতে পারে। রেডিওর 'এরিয়াল' বা টিভির 'অ্যান্টেনা' যেমন উঁচু করে রাখতে হবে ভালোভাবে সংকেত পাওয়ার জন্য, তেমনি চোখ কান-নাকও যথাসম্ভব উঁচুতে রাখতে হবে পরিবেশ থেকে আলো-শব্দ-গন্ধের সংকেত গ্রহণ করার জন্য। তবে এ ধরনের ভুল অনেক কম হবে, যদি মনে করা যায় সেই গ্রহের পরিবেশ অনুযায়ী তাদের বিবর্তন হয়েছে। সে পরিবেশ যদি একদম পৃথিবীর মতো হয়, তা হলে বিবর্তনও হবে পৃথিবীর মতো। কিন্তু সে গ্রহের পরিবেশ যদি পৃথিবীর চেয়ে একদম আলাদা হয় তাহলে তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নতুন রকম চেহারা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতেই পারে। কিন্তু সেই শরীর নিয়ে পৃথিবীতে এসে লড়াই করা কখনোই সম্ভব নয়, পৃথিবীর পরিবেশই তাদের ধ্বংস করে দেবে। এমনকি, কৃত্রিম স্পেস স্যুট পরিধান করেও তারা এখানে আসার ঝুঁকি নেবে না, কৌতূহল মেটানোর জন্য তারা নিদেনপক্ষে স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযান পাঠাতে পারে। তাই এ পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে হাত মেলানো বা হাতাহাতি করা কোনো দিনই হয়তো সম্ভ্ব হবে না।
যাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাদের আবার রকম কি? অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য, অনিশ্চিত এই প্রাণীদের মধ্যেও বিজ্ঞানীরা প্রকারভেদ করেছেন। তাদের মতে, এলিয়েন প্রায় ৬০ রকমের হতে পারে। স্টার কিডজ প্রজেক্টের পরিচালক রিচার্ড বয়লান এই এলিয়েনদের বিভিন্ন ভাগের কথা বলেছেন। আমাদের মধ্যে যেমন মানুষ-পশুপাখি ইত্যাদি প্রজাতি রয়েছে, ঠিক তেমনি এলিয়েনদের মধ্যেও নাকি বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির অস্তিত্ব রয়েছে। এ পর্যন্ত পৃথিবীতে দেখা যাওয়া এলিয়েনের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। যদিও এরকম অনেক ঘটনা নিয়েই সন্দেহ রয়ে গেছে, তবু বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনে কিম্ভূতকিমাকার প্রাণীর ছবি-চিত্র, এ যাবৎকালে ধারণা করা এলিয়েনদের মধ্যে বিজ্ঞানীরা প্রকার করেছেন। সে অনুসারে পৃথিবীতে যতগুলো এলিয়েন দেখা গেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে জেটাস গোত্রের এলিয়েনদের। আর তাদের সম্পর্কেই বিজ্ঞানীদের ধারণা কিছুটা বিস্তৃত। তবে জেটাসদের মধ্যে প্রকার রয়েছে। একেক জেটাস একেক রকম। তবে কোনটি কোন গ্রহের জেটাস তার ওপর ভিত্তি করে এদের ভাগ করা হয়।
জেটাসের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো গ্রে এলিয়েন। এ জাতের এলিয়েনরা মোটামুটি মানুষের মতোই। তবে এরা কিছুটা ছোটখাটো গড়নের, মানুষের সমান লম্বা হতে পারে না। 'কোই মিল গ্যায়া' সিনেমার জাদু দেখতে যে রকম ছিল, গ্রে এলিয়েনরা দেখতে সেরকম। এদের গায়ের রং হয় ধূসর সাদা, মাথাটা বেশ বড়। তবে কোনো চুল থাকে না। চোখ টানা টানা, মাথার দিকে আড়াআড়ি, ভ্রু নেই। আর এদের চিবুক ঠিক ইংরেজি অক্ষর ভি-এর মতো। গ্রে এলিয়েনদের মুখ থাকলেও কোনো ঠোঁট থাকে না। এদের হাত খুব শক্ত এবং প্রায় হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হয়। হাতে মাত্র তিনটি আঙ্গুল থাকে। এ আঙ্গুলে কোনো গিঁট কিংবা নখ থাকে না। এরকম ছোট জেটাস ছাড়াও প্রায় মানুষের সমান লম্বা জেটাস এলিয়েনও আছে। তারা কেউ কেউ মাশরুমের মতো সাদা, বাদামি, কালো, চোখ লম্বা, নীল চোখও হয়ে থাকে। এদের গঠন সাধারণত কোন গ্রহে বাস করে তার ওপর নির্ভর করে।
আরেক জাতের এলিয়েন হলো 'রেপটেলিয়ানস বা রেপটোডিস'। এরা দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো। আবার কখনও কখনও ড্রাগনের মতোও হয়ে থাকে। মুখের আকার অনেকটা ডিম্বাকৃতির হতে পারে। রেপটেলিয়ানসদের চামড়া অত্যন্ত রুক্ষ হয়। অনেকটা পাথুরে পাথুরে। এদের চোখ হলদে-নীল এবং ডিম্বাকৃতির হতে পারে। এই প্রজাতির এলিয়েনদের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো এরা মনের ভাষা পড়তে পারে। রেপটেলিয়ানসদের সামনে যে যাই ভাবুক না কেন, তারা সেটা আগেভাগে বুঝে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
এ জাতের এলিয়েনরা লম্বাটে সরু মুখওয়ালা হয়ে থাকে। প্রেয়িং মেন্টিসদের চোখও জেটাসদের মতো লম্বা সরু। তবে প্রেয়িং মেন্টিসদের চোখ অনেকটা ইংরেজি ভি অক্ষরের মতো, ওঠানামা করে। এদের হাত-পাগুলো খুবই সরু হয়। ফলে এদেরকে দেখতে অনেকটা পোকার মতো লাগে। ঠিক কোমরের কাছ থেকে পোকার মতো হাত-পা গজায় এদের। দেখতে পোকার মতো হলেও মাথায় অনেক বুদ্ধি রাখে এরা। প্রেয়িং মেন্টিসদের পোশাক অনেক উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এমনকি সেটি সূর্যের মতো উজ্জ্বলও হতে পারে।
স্টার ওয়ার্স সিনেমায় দেখা চরিত্রগুলোর মতো যেসব এলিয়েন, তারাই জাওয়াস নামে পরিচিত। এদের কাপড়-চোপড় পরার ধরনটাই আলাদা, মাথায় হুড এবং মুখে পর্দা লাগিয়ে চলাফেরা করে। লম্বায় বেশ খাটো, মাত্র সাড়ে চার ফুটের মতো। জাওয়াসদের মুখ দেখা যায় না। কারণ যে হুড এরা পরে থাকে সেটির ছায়া এদের মুখকে অন্ধকার করে রাখে। এই এলিয়েনদের বিশেষত্ব হলো এরা টেলিপ্যাথি জানে। রেপটালিয়ানসদের মতো একজন কি ভাবছে তা এরা বুঝে নিতে পারে। এরা নাকি টেলিপ্যাথির মাধ্যমে মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। এভাবে জাওয়াসদের সঙ্গে দেখা করার কথা অনেকেই বলে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক পাইলট চার্লস হল, 'টল হোয়াইটস' নামের এক ধরনের এলিয়েনের বর্ণনা দিয়েছেন। এই এলিয়েনরা নাকি বাস করে আর্কাটারাস নামের একটি নক্ষত্রের কাছাকাছি কোথাও। লম্বায় ৬ ফুট এই এলিয়েনরা দেখতে অনেকটা মানুষের মতোই। তবে মানুষের চেয়ে বড় নীল রংয়ের চোখ এদের। চুল রাখে বড় বড়, আর এই চুলেরই পোশাক পরে থাকে। অনেকটা অ্যাভাটার সিনেমার দেখা এলিয়েনদের মতোই এদের গড়ন। তবে টল হোয়াইটসদের দেহের রং নীল না হয়ে সাদাটে হয়ে থাকে। হাতে থাকে ৪টি আঙ্গুল। এই আঙ্গুলে আবার খুবই শক্ত নখ থাকে। এদের কেউ কেউ আবার জাম্প স্যুট পরে। যেসব মহাকাশযানের গল্প আমরা হরহামেশাই শুনি, এরা সেইরকম মহাকাশযান নিয়েই ঘোরে। দ্রুতগামী নিজস্ব মহাকাশযানে তারা যে কোনো দূরত্ব নিমিষেই পার হয়ে যায়।
আরেক ধরনের এলিয়েন হচ্ছে রোবট এলিয়েন। তবে যেসব রোবট এলিয়েন পৃথিবীতে এসেছে তারা নাকি ঠিক এলিয়েন নয়। কেবল দূর কোনো গ্রহে বাস করা এলিয়েনদের পাঠানো দূত এরা। আমরা যেমন পৃথিবী থেকে অনেক রোবট বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছি, ব্যাপারটা অনেকটা সে রকমই।
পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন স্থান হিসেবে চিহ্নিত আমেরিকার নেভাদা অঙ্গরাজ্যের সামরিক ঘাঁটি এরিয়া ৫১। আজ পর্যন্ত কোনো বেসামরিক লোক এখানে ঢুকতে পারেনি। দুর্ভেদ্য বেষ্টনী ঘেরা এ ঘাঁটির প্রবেশপথে লেখা আছে 'অনধিকার প্রবেশকারীকে গুলি করা হতে পারে'। তাই কেউ যদি এখানে ঢুকেও থাকেন তাহলে তিনি হয়তো আর জীবিত থাকতে পারেননি। লাসভেগাস থেকে ৯৫ কিমি দূরে গ্রুমলেকের পাশে অবস্থিত এ জায়গাটি নানা কারণে বিতর্কিত। তবে এলাকাটিকে বিতর্কিত ও রহস্যময় করে তোলার পেছনে এর আশপাশের বাসিন্দারাই দায়ী। তাদের অনেকের দাবি, এরিয়া ৫১ এর আকাশে ফ্লাইং সসারের মতো কিছু উড়তে দেখেছেন তারা। আবার অনেকেই নাকি এমন দ্রুতগতির বিমান উড়তে দেখেছেন। যার গতি সাধারণ বিমান বা যুদ্ধবিমান কোনোটার সঙ্গেই মিলে না। এরিয়া ৫১ নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত বিতর্ক হচ্ছে মানুষের চন্দ্রাভিযানের নাটক। অ্যাপোলো-১১ এর চন্দ্রবিজয়ের ঘটনা নিয়ে সন্দেহবাদীদের সংখ্যা অনেক। তাদের ধারণা, মানুষ আসলে চাঁদে যেতে পারেনি। পুরো নাটকটি সাজানো হয়েছে এই এরিয়া ৫১ এর ভেতর। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এত বিতর্ক চললেও আমেরিকান সরকার এসব কোনো কিছুই স্বীকার করেনি। তাতে সন্দেহ না কমে বরং আরও বেড়েছে।
এসব সত্য-মিথ্যা নিয়ে সমগ্র বিশ্ব যখন দ্বিধাবিভক্ত, তখন বোমা ফাটান এরিয়া ৫১ এ কর্মরত পদার্থবিজ্ঞানী বব লেজার। এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন এরিয়া ৫১ এ এমন কিছু মৌলিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা করা হয় যা এখনো আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে তার বক্তব্যকে অনেকেই ধোঁয়াটে বলে বর্ণনা করেছেন। তার মতে সুপারনোভা বা বাইনারি স্টার সিস্টেম থেকেই সম্ভবত একটি মৌল সংগ্রহ করা হয়েছে। যেটি ৪৭টি ১০ মেগাটন হাইড্রোজেন বোমা বানানোর জন্য যথেষ্ট। ওখানে নাকি চাকতি আর বল দিয়ে তৈরি একটি সরল যন্ত্র আছে। যন্ত্রের বলের চিপে ওই মৌলটি রাখা হলে নাকি সময় স্থির হয়ে যায়। তারা নাকি সময় স্থির করে রাখার পরীক্ষা চালিয়ে সফলও হয়েছেন। তার মতে, ওই মৌল পদার্থটি বলের চিপে রাখামাত্র তা কোনো একভাবে অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করে এবং তার ফলে বিপুল শক্তি উৎপাদিত হয়। অ্যান্টিম্যাটার রিয়েক্টরে শক্তি উৎপাদনের ফলে বস্তুর নিজস্ব মহাকর্ষ বলের সৃষ্টি হয় এবং নিজস্ব শক্তিতে তা বিদ্যুৎ বেগে ছুটতে পারে। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চগতিসম্পন্ন ফ্লাইং সসার তৈরির গবেষণা চলছে।
তবে বিজ্ঞানী বব সবচেয়ে বড় বোমা ফাটান এলিয়েন প্রসঙ্গে। তিনি বলেন সেখানে নাকি এলিয়েনদের নিয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক ফ্লাইং সসার আছে। সেই সঙ্গে রয়েছে এলিয়েনের দেহাবশেষও। সেই এলিয়েনটির ব্যবচ্ছেদ করে নাকি জানা গেছে, ওই প্রাণীটি রেটিকুলাম-৪ নামক জ্যোতিষ্ক থেকে এসেছে। প্রাণীটির উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট। শরীর লোমহীন। কালো বড় বড় চোখ এবং শরীর কৃষ্ণকায়। এর দেহব্যবচ্ছেদ করে নাকি ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের বদলে বিশাল এক পতঙ্গ পাওয়া গেছে। সার্চ ইঞ্জিন গুগলে এ সংক্রান্ত ছবি ও ডেটার অসংখ্য লিংক পাওয়া গেছে। তবে যেহেতু এরিয়া ৫১ সংক্রান্ত কোনো বিষয়েরই সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা যাচাই-বাছাই সম্ভব নয়, তাই এসব বিতর্কেরও কোনো সমাধান খুঁজে বের করা যায়নি। আর বরাবরের মতো উড়ন্ত সসার আর এলিয়েন প্রসঙ্গেও আমেরিকা সরকার ও আমেরিকা সেনাবাহিনী নিশ্চুপ রয়ে গেছে। আর তাই এরিয়া ৫১ এ সত্যি কোনো এলিয়েন কানেকশন আছে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা যা রটে তা কিছুটা হলেও বটে। এরিয়া ৫১ এ এলিয়েন সংশ্লিষ্টতা থাকলেও থাকতে পারে।
এরিয়া ৫১ এর এই ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে পাওয়া। তবে এলিয়েনের দেহবশেষের ছবিগুলো নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
এলিয়েন নিয়ে কত মাতামাতি। বিজ্ঞানীরাও হন্যে হয়ে খুঁজছেন এলিয়েনের অস্তিত্ব। কেউ কেউ আবার এমনটিও বলছেন, পৃথিবীর ভেতরেই নাকি এলিয়েন পাওয়া যাবে খুব শিগগিরই। তবে এখন পর্যন্ত সত্যিকার এলিয়েন পাওয়া না গেলেও চীনের গুয়াংজি অঞ্চলের ডালু নামের একটি গ্রামে এলিয়েনের মতো মাছ দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়ের গুহায় থাকা লেকের তলদেশ থেকে ওটা পেয়েছেন চীনের প্রাণিবিদরা। মাটির প্রায় এক কিলোমিটার নিচেই সেটার বাস। অনেকটা হাঁসের মতো লম্বাটে মুখ আর লাল রঙের ঠোঁট। লম্বা ও পাতলা মাছটির মুখের বেশ কাছাকাছি চোখ। ঠোঁটের কাছে আছে লম্বা গোঁফ! ডালু গ্রামের বৃদ্ধ লি জুনেং জানান, 'স্থানীয়রা এ রকম মাছের কথা বড়দের মুখে অনেক শুনেছে।' মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফু ইয়ান ডং নামের যে গুহার লেক থেকে মাছটি পাওয়া গেছে, তাকে স্থানীয়রা 'সৌভাগ্যের গুহা' বলে ডাকে। এই গুহার লেকের পানিই গ্রামের পানির মূল উৎস। মনে করা হয়, এই লেকের পানি পান করেই গ্রামের মানুষ শত বছরের বেশি আয়ু পায়।
আমি সাইফুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 469 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জীবনে চলার পথে আনেক বাধা আসবে, সেই বাধাকে অতিক্রম করে বাঘের মত এক দিন বাচ, আর পৃথিবীর বুকে দাগ কেটে যাও নাম লিখে যাও স্বন্রাক্ষরে http://idmfordownload.blogspot.com
সারা রাত ভরে লিখেছি, কিন্তু 4 am এ পোষ্ট করতে গিয়ে দেখি নেট ডিসকানেক্ট আর লেখাটি খুজে পেলাম না,কাল থেকে এই ঘটনা ৩ বার ঘটেছে, তাই সকাল বেলা পোষ্টি করতে পেরে অনেক শান্তি লাগছে…………………